Inqilab Logo

শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ০৭ বৈশাখ ১৪৩১, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

দুই রাজ্য নির্বাচনেও এসপিডির জয়

জোট গড়তে চান লাশেটও

ইনকিলাব ডেস্ক | প্রকাশের সময় : ২৮ সেপ্টেম্বর, ২০২১, ১২:০০ এএম

সংসদ নির্বাচনের পাশাপাশি রোববার জার্মানির দুটি রাজ্যেও নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে। মেকলেনবুর্গ ওয়েস্টার্ন পমেরানিয়া ও বার্লিন রাজ্যেও এসপিডি দল সরকার গড়তে চলেছে। ফলে সংসদের উচ্চকক্ষে দলের শক্তি অক্ষত রইলো। এগিয়ে শলৎসের এসপিডি। কিন্তু কারা জোট করে সরকার গঠন করবে, কে নেতৃত্ব দেবেন, তা এখনো স্পষ্ট নয়।

শলৎসের সামাজিক গণতন্ত্রী এসপিডি অন্য দলগুলির তুলনায় এগিয়ে আছে। তারা পেয়েছে ২৫ দশমিক আট শতাংশ ভোট। বিদায়ী চ্যান্সেলার ম্যার্কেলের দল খ্রিষ্টীয় গণতন্ত্রী সিডিইউ/সিএসইউ পেয়েছে ২৪ দশমিক এক শতাংশ ভোট। গ্রিন পার্টি বা সবুজ দল ১৪ শতাংশ ভোট পেয়ে তৃতীয় স্থানে আছে। মুক্ত গণতন্ত্রী এফডিপি পেয়েছে ১১ দশমিক পাঁচ শতাংশ ভোট। অতি দক্ষিণপন্থি এএফডি পেয়েছে ১০ দশমিক তিন শতাংশ ভোট। বামপন্থিরা চার দশমিক নয় শতাংশ ভোট পেয়েছে। শলৎসের নেতৃত্বাধীন এসপিডি এগিয়ে থাকলেও কোন দলগুলি জোট করে সরকার গঠন করবে তা এখনো পরিষ্কার নয়। শলৎসের দল সরকার গঠনের দাবি করেছে। আবার এসপিডি-র থেকে কম ভোট পেলেও সিডিইউ/সিএসইউ-ও সরকার গঠনের চেষ্টা করবে বলে জানিয়ে দিয়েছে। ফলাফল পুরো বেরিয়ে গেলে ভোট পরবর্তী জোট গঠনের প্রক্রিয়া শুরু হবে। দলগুলি আলোচনায় বসবে। তারপরই বোঝা যাবে, কারা সরকার গঠন করছে। কে চ্যান্সেলার হবেন, জার্মানিতে অনেক সময়ই জোট নিয়ে আলোচনায় বেশ কিছুটা সময় লাগে। সিডিইউ/সিএসইউ ও এসপিডি এর আগেও জোট করে সরকার চালিয়েছে। তারা একসঙ্গে এলে সরকার গঠন করতে পারবে। কিন্তু তারা যেহেতু আলাদা আলাদাভাবে সরকার গঠনের চেষ্টা করবে বলে জানিয়েছে, তাই তারা গ্রিন এবং এফডিপি-র সঙ্গে জোট নিয়ে কথা বলবে। দুই বড় দলই গ্রিন ও এফডিপি-র সঙ্গে মিলে জোট করতে পারলে সরকার গঠন করতে পারবে।

জার্মানির সামাজিক গণতন্ত্রী দলের জয়জাত্রা শুধু বুন্ডেসটাগ নির্বাচনেই সীমাবদ্ধ নেই। সামান্য ব্যবধানে হলেও ওলাফ শলৎসের নেতৃত্বে এসপিডি দলের জয় হয়েছে। তবে ম্যার্কেলের ইউনিয়ন শিবিরের নেতা আরমিন লাশেট এখনো পরাজয় মেনে না নেয়ায় সরকার গঠনের প্রক্রিয়া জটিল হতে পারে। সমর্থনে বিশাল ঘাটতি সত্ত্বেও লাশেট সরকার গড়ার আশা ছাড়ছেন না। যে দলের নেতৃত্বেই নতুন সরকার গঠন করা হোক না কেন, ক্ষমতার নিরিখে এসপিডি দল সুবিধাজনক অবস্থান নিশ্চিত করেছে। জার্মানির সংসদের উচ্চ কক্ষ বুন্ডেসরাট ১৬টি রাজ্যের প্রতিনিধিদের মঞ্চ। সব গুরুত্বপূর্ণ আইন সেখানেও অনুমোদন করাতে হয়। ফলে যে দলের হাতে বেশিরভাগ রাজ্যের রাশ রয়েছে, সেই দলের জোর যথেষ্ট বেশি। রোববার উত্তর পশ্চিমের জনবিরল রাজ্য মেকলেনবুর্গ ওয়েস্টার্ন পমেরানিয়া এবং বার্লিনে এসপিডির জয়ের পর বুন্ডেসরাটে এসপিডি দলের ক্ষমতা অক্ষুণ্ন রইলো।

মুখ্যমন্ত্রী মানুয়েলা শ্ভেসিকের নেতৃত্বে জনবিরল রাজ্য মেকলেনবুর্গ ওয়েস্টার্ন পমেরানিয়ায় এসপিডি দল প্রায় ৪০ শতাংশ ভোট পেয়ে বিশাল জয়ের মুখ দেখেছে। সেখানেও সিডিইউ দলের ভরাডুবি হয়েছে। প্রায় ১৩ শতাংশ ভোট পেয়ে ঐতিহাসিক বিপর্যয়ের মুখ দেখেছে বিদায়ী চ্যান্সেলর আঙ্গেলা ম্যার্কেলের দল। উল্লেখ্য, সেই রাজ্যেই ম্যার্কেলের এতকাল নির্বাচনি কেন্দ্র ও বাসস্থান অবস্থিত। এমন স্পষ্ট জয়ের পর এসপিডি জোট সরকার গড়ার একাধিক সুযোগ পাবে। রাজ্যের কাণ্ডারী হিসবে প্রথমবার নির্বাচনে অংশ নিয়ে এমন জয়ের মুখ দেখে মুখ্যমন্ত্রী শ্ভেসিক গভীর সন্তুষ্টি প্রকাশ করেন।

বার্লিন রাজ্যের নির্বাচনে এসপিডি দলের জয়ের ব্যবধান অবশ্য খুব বেশি নয়। প্রায় ২১ শতাংশ ভোট পেয়ে শহরের শাসক মেয়র হিসেবে শপথ নিতে চলেছেন ম্যার্কেলের মন্ত্রিসভার প্রাক্তন সদস্য ফ্রানৎসিস্কা গিফাই। এসপিডি দলের এই নেতাকে পিএইচডি থিসিসে অনিয়মের অভিযোগে সরে দাঁড়াতে হয়েছিল। সবুজ দল প্রায় ১৯ শতাংশ ভোট পেয়ে তার জয়কে কিছুটা ম্লান করে দিয়েছে। ফলে তাকে তিন দলের জোট সরকার গঠন করতে হবে। শুধ্যু লোয়ার স্যাক্সনি রাজ্যে এসপিডি দলকে ক্ষমতা ধরে রাখতে হবে।

২০২২ সালে জার্মানির চারটি রাজ্যে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। সিডিইউ নেতা আরমিন লাশেটের নর্থরাইন ওয়েস্টফেলিয়াও তার মধ্যে রয়েছে। এসপিডি দলের জয়যাত্রা অব্যাহত থাকলে এই রাজ্যও সিডিইউ-র হাতছাড়া হতে পারে। রবিবারের সংসদ নির্বাচনে এসিপিডি নর্থরাইন ওয়েস্টফেলিয়ায় সবচেয়ে শক্তিশালী রাজনৈতিক শক্তি হিসেবে নিজেদের প্রতিষ্ঠা করেছে। ২০০৫ সালের পর এসপিডি এমন সাফল্য অর্জন করলো। উত্তরের শ্লেসভিক হলস্টাইন ও দক্ষিণের সারলান্ড রাজ্যেও ২০২২ সালে সিডিইউ পরাজয়ের মুখ দেখলে এসপিডি সংসদের উচ্চ কক্ষে নিজস্ব ক্ষমতা আরও জোরদার করতে পারবে।

শলৎস বলেছেন, ‘কবে, কোন তারিখের মধ্যে জোট হয়ে যাবে, একথা বলা সম্ভব নয়। তবে আমরা বড়দিনের আগে জোট চূড়ান্ত করার চেষ্টা করব। তার আগে হলে আরো ভালো।’ সিডিইউ-এর চ্যান্সেলার পদপ্রার্থী লাশেটও বলেছেন, ‘বড়দিনের আগেই জোট হয়ে যাবে।’ ততদিন পর্যন্ত ম্যার্কেলই চ্যান্সেলার থাকবেন। বার্লিনে দলের সদর দফতরের সামনে তার সমর্থকদের শলৎস বলেছেন, ‘ভোটদাতারা বুঝিয়ে দিয়েছেন, পরবর্তী চ্যান্সেলার হিসাবে তারা আমাকে দেখতে চান। আমরা দেশ-শাসনের জন্য প্রস্তুত। চূড়ান্ত ফলের জন্য অপেক্ষা করছি। তারপরই আমরা কাজে নেমে পড়ব।’ লাশেট বলেছেন, নির্বাচনে তারা কিছুটা ধাক্কা খেয়েছেন ঠিকই, কিন্তু রক্ষণশীলরা সরকার গঠনের জন্য যথাসাধ্য চেষ্টা করবে। লাশেট জানিয়ে দিয়েছেন, ভোটের ফলে তিনি একেবারেই সন্তুষ্ট নন। তিনি বলেছেন, ‘জার্মানরা এমন একটা জোট চান, যা দেশকে আরো আধুনিক হতে সাহায্য করবে। সম্ভবত তিনজন জোটসঙ্গী নিয়ে সরকার গঠন করতে হবে।’

গ্রিন দলের চ্যান্সেলার প্রার্থী বেয়ারবক বলেছেন, তার দল প্রত্যাশা মতোই ফল করেছে। তবে তিনি জানিয়েছেন, ‘আমরা আরো ভোট চেয়েছিলাম। পাইনি, কারণ প্রচারের শুরুতে আমি কয়েকটি ভুল করে ফেলেছিলাম।’ বামেরা এবার পাঁচ শতাংশ থেকে সামান্য কম ভোট পেয়েছে। জার্মানির নিয়ম হলো, দ্বিতীয় ভোটের কমপক্ষে পাঁচ শতাংশ না পেলে কোনো দল সংসদের নিম্ন কক্ষ বুন্ডেসটাগে স্থান পায় না। তবে নির্বাচনী কেন্দ্রে কমপক্ষে তিনটি আসন পেলেও সংসদীয় দলের মর্যাদা পাওয়া সম্ভব। বামেরা তাই পাঁচ শতাংশের কম ভোট পেলেও বুন্ডেসটাগে থাকছেন। সূত্র : এপি, এএফপি, রয়টার্স, ডিপিএ।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: জার্মান


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ