Inqilab Logo

শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৬ বৈশাখ ১৪৩১, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

রোহিঙ্গা নেতা মুহিবুল্লাহ হত্যায় একজন আটক

আশ্রয়শিবিরে থমথমে অবস্থা : বিচার চায় রোহিঙ্গারা মুহিবুল্লাহ হত্যার স্বচ্ছ তদন্তের আহ্বান মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রীর

কক্সবাজার ব্যুরো | প্রকাশের সময় : ২ অক্টোবর, ২০২১, ১২:০০ এএম

কক্সবাজারের উখিয়ার কুতুপালংয়ের লম্বাশিয়া ক্যাম্পে রোহিঙ্গাদের শীর্ষ নেতা মোহাম্মদ মুহিবুল্লাহকে গুলি করে হত্যার ঘটনায় সন্দেহভাজন একজনকে আটক করেছে এপিবিএন। এপিবিএন-১৪-এর অধিনায়ক পুলিশ সুপার মোহাম্মদ নইমুল হক গতকাল জানিয়েছেন, শুক্রবার সকালে কুতুপালংয়ের ৬ নম্বর ক্যাম্প থেকে এপিবিএন সদস্যরা তাকে আটক করেন। ওই ব্যক্তির নাম সেলিম উল্লাহ (৩০)। তাকে উখিয়া থানায় হস্তান্তর করা হয়। অন্যদিকে রোহিঙ্গা নেতা মুহিবুল্লাহ হত্যার স্বচ্ছ তদন্ত ও জড়িতদের বিচার নিশ্চিতের আহ্বান জানিয়েছেন মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্থনি ব্লিনকেন। গতকাল শুক্রবার এক বিবৃতিতে তিনি এ আহ্বান জানান। মার্কিন পররাষ্ট্র দফতরের ওয়েবসাইটে অ্যান্থনি ব্লিনকেনের বিবৃতি প্রকাশিত হয়েছে।

ক্যাম্পের নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা ১৪ আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক ও পুলিশ সুপার নাইমুল হক বলেন, গ্রেফতার সেলিম উল্লাহ একটি সন্ত্রাসী বাহিনীর সদস্য। মুহিবুল্লাহ হত্যার সঙ্গে তিনি জড়িত থাকতে পারেন। তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে।

পুলিশ ও স্থানীয় রোহিঙ্গারা জানায়, গত বুধবার রাত সাড়ে আটটায় লাম্বাশিয়া আশ্রয়শিবিরের ডি ব্লকের জামে মসজিদে এশার নামাজ আদায় করে ৭০ ফুট দূরত্বে থাকা আরাকান রোহিঙ্গা সোসাইটি ফর পিস অ্যান্ড হিউম্যান রাইটস (এআরএসপিএইচ) সংগঠনের কার্যালয়ে ঢোকার সময় বন্দুকধারীদের গুলিতে নিহত হন মুহিবুল্লাহ (৪৮)। তিনি ওই সংগঠনের চেয়ারম্যান ছিলেন। কার্যালয় থেকে ৩০ ফুট দূরেই তার ঘর। গত বৃহস্পতিবার রাত ১১টায় উখিয়া থানায় অজ্ঞাতনামা আসামিদের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা করেন মুহিবুল্লাহর ছোট ভাই হাবিবুল্লাহ। মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ও উখিয়া থানার এসআই কার্ত্তিক চন্দ্র পাল গতকাল সাংবাদিকদের বলেন, তিনি মুহিবুল্লাহ হত্যা মামলার তদন্ত করছেন। এ পর্যন্ত তিনি কাউকে শনাক্ত করতে পারেননি। আটককৃত ব্যক্তিকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে।
একাধিক গোয়েন্দা সংস্থার তথ্য অনুযায়ী, মিয়ানমার সরকারের জন্য এক চাপের নাম হয়ে উঠেছিলেন মুহিবুল্লাহ। বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থা ও রাষ্ট্রের কাছে মিয়ানমার সেনাবাহিনী ও সরকারের চালান অমানবিক হত্যাকাণ্ড এবং নির্যাতনের বিবরণ তুলে ধরতেন তিনি। বিভিন্ন ফোরামেও রোহিঙ্গাদের দাবি-দাওয়া তুলে ধরতেন মুহিবুল্লাহ।

আশ্রয়শিবিরে থমথমে অবস্থা : লম্বাশিয়া আশ্রয়শিবিরে গত বুধবার রাতে অস্ত্রধারীদের গুলিতে শীর্ষনেতা মুহিবুল্লাহ হত্যার ঘটনায় সাধারণ রোহিঙ্গাদের মধ্যে উত্তেজনা বিরাজ করছে। সেখানকার পরিস্থিতি থমথমে। মুহিবুল্লাহ আরাকান রোহিঙ্গা সোসাইটি ফর পিস অ্যান্ড হিউম্যান রাইটস (এআরএসপিএইচ) সংগঠনের চেয়ারম্যান ছিলেন। এই সংগঠনের হয়ে তিনি রোহিঙ্গাদের অধিকারের কথা তুলে ধরতেন। ২০১৯ সালের ১৭ জুলাই রোহিঙ্গাদের প্রতিনিধি হিসেবে যুক্তরাষ্ট্রের হোয়াইট হাউসে তৎকালীন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনান্ড ট্রাম্পের সঙ্গে দেখা করে আলোচনায় এসেছিলেন মুহিবুল্লাহ। এর এক মাস পর ২০১৯ সালের ২৫ আগস্ট উখিয়ার কুতুপালং শিবিরের ফুটবল মাঠে কয়েক লাখ রোহিঙ্গার উপস্থিতিতে গণহত্যাবিরোধী যে মহাসমাবেশ হয়েছিল, তা সংগঠিত করেছিলেন তিনি। মুহিবুল্লাহর হত্যাকাণ্ডে পর থেকে আশ্রয়শিবিরের মোড়ে মোড়ে অবস্থান নেয় পুলিশ। শরণার্থীদের ঘরে থাকতে উৎসাহিত করার পাশাপাশি ক্যাম্পের ভেতরে-বাইরে যাতায়াত ও হাঁটাচলায় কড়াকড়ি করছে পুলিশ। গতকাল শুক্রবারও সকাল সাতটা থেকে ক্যাম্পের দোকানপাট বন্ধ রয়েছে। রাস্তায় লোকজনের চলাচল তেমন নেই। দোকানপাটও বন্ধ, পরিস্থিতি থমথমে।

মুহিবুল্লাহ হত্যার স্বচ্ছ তদন্তের আহ্বান মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রীর : রোহিঙ্গা নেতা মুহিবুল্লাহ হত্যার স্বচ্ছ তদন্ত ও জড়িতদের বিচার নিশ্চিতের আহ্বান জানিয়েছেন মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্থনি ব্লিনকেন। শুক্রবার এক বিবৃতিতে তিনি এ আহ্বান জানান। মার্কিন পররাষ্ট্র দফতরের ওয়েবসাইটে অ্যান্থনি ব্লিনকেনের বিবৃতি প্রকাশিত হয়েছে।
বিবৃতিতে তিনি বলেন, বাংলাদেশে রোহিঙ্গা নেতা মুহিবুল্লাহর হত্যার খবর আমাদের গভীরভাবে মর্মাহত-বিপর্যস্ত করেছে। সারা বিশ্বে রোহিঙ্গাদের মানবাধিকার সুরক্ষায় তিনি ছিলেন এক সাহসী এবং শক্তিশালী প্রচারক। তিনি জেনেভায় জাতিসংঘ মানবাধিকার কাউন্সিলের পাশাপাশি ২০১৯ সালে যুক্তরাষ্ট্রে অনুষ্ঠিত ধর্মীয় স্বাধীনতাবিষয়ক মন্ত্রীপর্যায়ের সভায় বক্তৃতা দিয়েছিলেন। যুক্তরাষ্ট্র সফরের সময় তিনি মার্কিন প্রেসিডেন্ট ও ভাইস প্রেসিডেন্টের সঙ্গে ধর্মীয়ভাবে নিপীড়িত হওয়া জনগোষ্ঠী হিসেবে নিজের অভিজ্ঞতা তুলে ধরেছিলেন। মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, হত্যাকাণ্ডের মতো জঘন্য অপরাধে জড়িত ব্যক্তিদের বিচারের আওতায় আনতে আমরা মুহিবুল্লাহ হত্যার পূর্ণাঙ্গ ও স্বচ্ছ তদন্তের আহ্বান জানাই। যুক্তরাষ্ট্র রোহিঙ্গাদের পক্ষে সমর্থন অব্যাহত রাখবে। রোহিঙ্গারা নিজেদের ভবিষ্যতের ব্যাপারে উচ্চকণ্ঠ হতে পারে, সে জন্য সহায়তার মাধ্যমে মুহিবুল্লাহর কাজের প্রতি শ্রদ্ধা জানাব।

এক টুইট বার্তায় ব্লিনকেন লিখেছেন, বাংলাদেশে রোহিঙ্গা নেতা মুহিবুল্লাহর মৃত্যুতে আমরা গভীরভাবে মর্মাহত। সারা বিশ্বে রোহিঙ্গাদের পক্ষে একজন সাহসী নেতা হিসেবে তিনি বেঁচে থাকবেন। গত বুধবার ২৯ সেপ্টেম্বর রাতে রোহিঙ্গা নেতা মুহিবুল্লাহকে গুলি করে হত্যা করে দুর্বৃত্তরা। মুহিবুল্লাহ হত্যার তদন্তের দাবিতে এর আগে ঢাকায় যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, জাতিসংঘ, ইউরোপীয় ইউনিয়নের পাশাপাশি জাতিসংঘের শরণার্থী সংস্থা, হিউম্যান রাইটস ওয়াচ ও অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল বিবৃতি দিয়েছে।



 

Show all comments
  • Rezoan Ahmed Tushar ২ অক্টোবর, ২০২১, ১:১১ এএম says : 0
    রোহিঙ্গাদের মধ্যে একটা সশস্ত্র গোষ্ঠী চায় না রোহীঙ্গারা তাদের দেশে ফিরুক মহিবুল্লাহর কার্যক্রম ছিলো তাদের স্বার্থবিরোধী, তাই এই পরিকল্পিত হত্যা। সহায় সম্বলহীন কোনভাবে প্রাণ নিয়ে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গারা কোথায় পাচ্ছে এত অস্ত্র কে তাদের মদদ দিচ্ছে এগুলো উদ্ঘাটন করা সময়ের দাবি।
    Total Reply(0) Reply
  • Masud Rahman ২ অক্টোবর, ২০২১, ১:১২ এএম says : 0
    বাঙ্গালী সব বুঝে , এটাও বুঝে কারা হত্যা করেছে, কেন হত্যা করা হয়েছে, অস্ত্র কারা সর্বরাহ করেছে
    Total Reply(0) Reply
  • Md Tarek ২ অক্টোবর, ২০২১, ১:১২ এএম says : 0
    মুহিবুল্লাহ যখন বাংলাদেশের সাথে একাত্ব হয়ে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের পক্ষে কাজ করা শুরু করল, তখনই তাকে সরিয়ে দিলো। তারা চায়না বাংলাদেশ ভালো থাকুক। তবুও আমরা দাদাদের পিছনেই পরে থাকি। তবে যত ষড়যন্ত্রই করো দাদা, বাংলাদেশ ভালো থাকবে। দাদা, তোমার সময় শেষ!
    Total Reply(0) Reply
  • Harun Rashid ২ অক্টোবর, ২০২১, ১:১৩ এএম says : 0
    এদেশের এজেন্টদের সহযোগিতায় মায়ানমার হত্যাকান্ড ঘটিয়েছে এটার সম্পুর্ণ দায়ী বর্তমান সরকার
    Total Reply(0) Reply
  • M R Paul ২ অক্টোবর, ২০২১, ১:১৩ এএম says : 0
    দেশের অন্যতম বড় নেতা মহিবুল্লাহ । তাকে নিঃসংশ ভাবে হত্যা করা হয়েছে। দুষ্কৃতীদের অবিলম্বে গ্রেপ্তার করতেই হবে।
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: রোহিঙ্গা

১৮ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ