Inqilab Logo

শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ০৭ বৈশাখ ১৪৩১, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

রানীনগরে চাষ হচ্ছে ভিয়েতনামের ড্রাগন ফল

প্রকাশের সময় : ১১ অক্টোবর, ২০১৬, ১২:০০ এএম

নওগাঁ জেলা সংবাদদাতা : নওগাঁর রানীনগর উপজেলায় কৃষি ফসলের পাশাপাশি অত্যন্ত লাভজনক, মুখরোচক, রসালো, ক্যান্সার ও ডায়াবেটিসসহ বিভিন্ন রোগের উপকারী ড্রাগন ফল চাষে সফল ব্যক্তি উপজেলার গুয়াতা গ্রামের উদ্যানতত্ত¡বিদ গোলাম রব্বানি (৪৫)। ড্রাগন ফল চাষে জেলার একমাত্র উজ্জ্বল অনন্য দৃষ্টান্ত এই গোলাম রব্বানি। তিনিই প্রথম জেলায় বাণিজ্যিকভাবে ড্রাগন ফল চাষে এক সফল ব্যক্তিতে পরিণত হয়েছেন।
সরেজমিনে জানা যায়, উপজেলার একডালা ইউনিয়নের গুয়াতা গ্রামের গোলাম রব্বানি নিজ উদ্যোগে ও উপজেলা কৃষি কর্মকর্তার পরামর্শক্রমে তৈরি করেছেন ভিয়েতনামের ড্রাগন ফলের বাগান। তিনি প্রায় দু’বছর আগে ৬০ শতাংশ জমিতে এই ফলের বাগান তৈরি করার উদ্যোগ গ্রহণ করেন। গোলাম রব্বানি যেহেতু কৃষি বিভাগের একজন উদ্যানতত্ত¡িবদ সেহেতু এই ফলের জন্য কোন কোন বিষয় জানা প্রয়োজন তা জানেন। তিনি বর্তমানে নাটোরে উদ্যানতত্ত¡ বিভাগে কর্মরত আছেন। দীর্ঘদিনের ইচ্ছাশক্তি থেকেই তিনি এই ফলের বাগান তৈরি করেন। তার বাগানে গিয়ে দেখা যায় ড্রাগন ফলের গাছে শোভা পাচ্ছে ভিনদেশী এই ফল। ফলটি পাকার পর অত্যন্ত মিষ্টি ও সুস্বাদু। এটি ক্যান্সার, ডায়াবেটিসসহ বিভিন্ন রোগের জন্য অত্যন্ত উপকারী। তার বাগানে বর্তমানে ১২০টি ড্রাগন ফলের গাছ রয়েছে। সবগুলো গাছেই ফল এসেছে। ড্রাগন ফলের পাশাপাশি তার বাগানে থাই জাতের পেয়ারার গাছ রয়েছে ১৬০টি। তবে অন্যান্য ফলের চেয়ে ড্রাগন ফলের মূল্য অনেক বেশি। গত বছর তিনি প্রতি কেজি ড্রাগন ফল বিক্রি করেছেন ৪শ’ থেকে ৫শ’ টাকায়।
উদ্যানতত্ত¡বিদ গোলাম রব্বানি জানান, এটি অত্যন্ত লাভজনক একটি ফল। দেশের বিভিন্ন জায়গায় চাকরি করার সুবাদে অনেক লোককে এই লাভজনক ফলের বাগান করার জন্য উৎসাহিত করেছি এবং তারা এখন এই ড্রাগন ফলের বাগানকে অনেক প্রসারিত করেছেন। তাদের কাছে এই ড্রাগন ফল এখন অত্যন্ত লাভজনক একটি ফসলে পরিণত হয়েছে। এলাকার মানুষের কাছে এই সংবাদটি পৌঁছে দেয়ার লক্ষ্যে নিজ উদ্যোগে গ্রামের বাড়িতে তৈরি করেছি এই ফলের বাগান। ড্রাগন ফলের গাছ মূলত কাÐ থেকে হয়। এই গাছের কাÐ কেটে লাগালে তা থেকে গাছ হয়। এটি চাষ করার জন্য অতিরিক্ত কোনো রাসায়নিক সার ও ওষুধের প্রয়োজন হয় না শুধু জৈব সারই এর জন্য যথেষ্ট।
বর্তমানে ভিয়েতনাম, থাইল্যান্ড ও ইন্দোনেশিয়ায় এই ফল অত্যন্ত জনপ্রিয় ও প্রধান খাবারের অংশে স্থান করে নিয়েছে। এই ফল ক্যান্সার, ডায়াবেটিসসহ বিভিন্ন রোগের জন্য অনেক উপকারী বলে বিদেশে ডাক্তাররা এই ফল খাওয়ার জন্য বলেন। যে কেউ এই ফলের বাগান তৈরি করতে পারেন। বাংলাদেশের মাটি ও আবহাওয়া এই ফল চাষের জন্য অনুক‚ল। একটি ড্রাগন ফলের গাছ ২৫ থেকে ৩০ বছর পর্যন্ত বেঁচে থাকে এবং বছরে ৬ মাস ফল দেয়। সাধারণত মে মাসে গাছে ফুল আসে এবং ফুল আসার ৩৫ দিনের মধ্যেই এই ফল খাওয়ার উপযোগী হয়। ইচ্ছে করলে অন্যান্য কৃষি ফসলের পাশাপাশি অত্যন্ত লাভজনক এই ফলের বাগান তৈরি করা যায়। শুধু তাই নয়, উপযুক্ত পরিবেশ তৈরি করে এই ফল বিদেশে রফতানি করে প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রা আয় করাও সম্ভব।
তিনি আরো জানান, বর্তমানে নাটোর জেলার বিভিন্ন উপজেলার লোকেরা এই ড্রাগন ফলের বাগান তৈরির দিকে ঝুঁকে পড়েছেন। কারণ কম পুঁজি বিনিয়োগ করে অধিক লাভ করা যায় এই ফসল থেকে। আমাদের দেশে শুধু প্রচার ও সচেতনতার অভাবের কারণে এই ড্রাগন ফল চাষের তেমন প্রসার ঘটেনি। এলাকায় এই বাগান করার উদ্দেশ্য হলো যেন এলাকার মানুষ আমার দেখাদেখি এই ফল চাষ করার অনুপ্রেরণা পায়। আগামী বছরে এই ফলের বাগানকে আরো সম্প্রসারিত করে বড় করব। প্রথম বছরে প্রতি কেজি ড্রাগন ফল ৫শ’ থেকে ৬শ’ টাকায় বিক্রি করেছি। রানীনগর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ এস এম গোলাম সারওয়ার জানান, গোলাম রব্বানির এই উদ্যোগ নিঃসন্দেহে প্রশংসার দাবিদার। তিনি এলাকার মানুষের মধ্যে এই ফলের চাষ সম্পর্কে তথ্য পৌঁছে দেয়ার জন্যই এই বাগানটি তৈরি করেছেন। আমরা সার্বক্ষণিকই তার বাগানের যাবতীয় খোঁজখবর রাখছি এবং পরামর্শ দিয়ে আসছি। আমরা চাই তার দেখাদেখি উপজেলার আরো অনেকেই এই লাভজনক ফলের বাগান তৈরি করার উদ্যোগ গ্রহণ করুক। এই লাভজনক বাগান তৈরি করার জন্য আমরা মানুষকে সার্বিক সহযোগিতা করব। এই ফলের বাগানে কম পুঁজি ও পরিশ্রম প্রয়োগ করে অধিক লাভ করা সম্ভব।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: রানীনগরে চাষ হচ্ছে ভিয়েতনামের ড্রাগন ফল
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ