Inqilab Logo

শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৬ বৈশাখ ১৪৩১, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

কুসংস্কারের উপশম কোরআন-সুন্নায়

মাওলানা মুহাম্মাদ আব্দুল মালেক | প্রকাশের সময় : ৯ অক্টোবর, ২০২১, ১২:০২ এএম

আল্লাহর রাসূল (সা.)-এর অবির্ভাবের অন্যতম প্রধান উদ্দেশ্য ছিল তাযকিয়া ও পরিশুদ্ধি। আল্লাহর আদেশে তিনি মানবের কর্ম ও চরিত্রের পাশাপাশি তাঁর মন-মানস এবং বিশ্বাস ও চেতনাকে পরিশুদ্ধ, পরিচ্ছন্ন ও নির্মল করেছেন। এবং কিয়ামত পর্যন্ত বিশ্ব মানবতার জন্য ঐ দুই পরশপাথর রেখে গেছেন, যার স্পর্শে মানবের সকল ‘লোহা’ খাঁটি ‘সোনায়’ পরিণত হতে পারে। সেই দুই পরশপাথর হচ্ছে- আল-কোরআন এবং আসসুন্নাহ। কুসংস্কার কাকে বলে? কুসংস্কার বলে নিছক ধারণা ও কল্পনা ভিত্তিক প্রমাণহীন বিশ্বাস এবং সেই বিশ্বাস-প্রসূত ভিত্তিহীন প্রথা ও কর্ম। যে হৃদয় ও মস্তিস্ক কোরআন-সুন্নাহর আলো থেকে বঞ্চিত তা-ই নানাবিধ বিভ্রান্তি ও কুসংস্কারের প্রজননক্ষেত্রে পরিণত হয়। এ কারণে দেখা যায়, পার্থিব শিক্ষা-দীক্ষায় অগ্রসর হওয়ার পরও আজব আজব বিভ্রান্তি ও কুসংস্কারে মানুষ লিপ্ত থাকে। এমনকি ঐসবকেই গৌরবের বিষয় মনে করে।

আরব জাহেলিয়াতের মতো এখনও অনেক নারী-পুরুষ কুলক্ষণে বিশ্বাস করে। জপতপ, তন্ত্রমন্ত্রে আস্থা রাখে। জটাধারী ফকিরের পিছনে পিছনে ঘোরে। মূর্খ বে-শরা লোকদের অশ্লীল কথাবার্তাকে শিল্প-সংস্কৃতি গণ্য করে, এদের ‘জীবন’ ও ‘আদর্শ’ উদ্ঘাটনের পিছনে জাতীয় অর্থ পানির মতো ব্যবহৃত হতে থাকে। সর্বোপরি জগতের সর্ব প্রাচীন ও সর্ব নিকৃষ্ট কুসংস্কার-পৌত্তলিকতা ও মূর্তিপুজা তো এই বিজ্ঞানের যুগেও বিপুল সংখ্যক মানবের কাছে পরম গ্রহণীয়। ন্যক্কারজনক বিষয় এই যে, মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ এই দেশেও একশ্রেণির ‘মুসলিম’ নামধারী ‘শিক্ষাবীদ’, বুদ্ধিজীবী, শিল্পী-সাহিত্যিক প্রতিমা পূজা এবং প্রতিমা কেন্দ্রিক সংস্কৃতিতেই শান্তি ও প্রশান্তি খুঁজে বেড়ায়। মুসলিম সমাজে পৌত্তলিকতাপ্রবণ চিন্তা ও মানসিকতা ছড়িয়ে দেওয়াকেই তারা অতি বড় মঙ্গলকার্য জ্ঞান করে।

এই সকল অনাচার ও কুসংস্কারের সুরক্ষায় তারা ব্যবহার করে উদারতা, আসা¤প্রদায়িকতা, পরমতসহিষ্ণুতার মতো শব্দাবলি। অথচ দেশে দেশে চরম সা¤প্রদায়িক পৌত্তলিক জনগোষ্ঠীর মুসলিম নিধনের সময় এই সকল শব্দ উচ্চারিত হয়।

মুসলিম কখনো আদর্শত্যাগী অর্থে ‘উদার’ হতে পারে না। ধর্মত্যাগী অর্থে ‘অসা¤প্রদায়িক’ হতে পারে না এবং ইসলাম, কোরআন, ইসলামের নবী এবং মুসলিম ভাইবোনের জান-মাল ইজ্জত-আব্রæর বিষয়ে নির্জীব ও নিস্পৃহ অর্থে ‘পরমতসহিষ্ণু’ হতে পারে না। মুসলিম যে উদারতা, অসা¤প্রদায়িকতা ও পরমত সহিষ্ণুতায় বিশ্বাসী তা সত্যিকার অর্থেই উদারতা, অসা¤প্রদায়িকতা এবং পরমতসহিষ্ণুতা। এর নানান উজ্জ্বল দৃষ্টান্তে মুসলিম জাতির ইতিহাস-গগণ আলোকিত।

কোরআন-সুন্নাহর আলোক বঞ্চিত মানব-সমাজে আশ্লীলতা অভিহিত হয় ‘বিনোদন’ নামে। অনাচার অভিহিত হয় ‘তারুণ্যের ধর্ম’ নামে। আর নারীর রূপ-যৌবন বাজারজাত হয় ‘নারীমুক্তির’ নামে। সর্বোপরি চিন্তা-চেতনায় এই বিকৃতিকেই মনে করা হয় শিল্প ও প্রগতি। এই বিকৃতির পৃষ্ঠপোষকতার জন্য যে শ্রেণিটি আছে তারা ‘প্রগতিশীল’ নামে পরিচিত।

আলোকিত ধর্ম-ইসলামের প্রধান শিক্ষা ঈমান। ঈমানের বিপরীত হচ্ছে কুফর। ঈমান হচ্ছে আলো আর কুফর হচ্ছে অন্ধকার। সুতরাং কুফরের অন্ধকার থেকে মুক্তি পেতে হলে ঈমানের দিকে আসতে হবে। ঈমানের অন্যতম প্রধান বিষয় ‘তাওহীদ’। তাওহীদের বিপরীত বিষয়টি শিরক। তাওহীদ হচ্ছে আলো আর শিরক হচ্ছে অন্ধকার। সুতরাং অন্ধকার থেকে মুক্তি পেতে হলে তাওহীদের আলোই গ্রহণ করতে হবে।

ইসলামের অন্যতম প্রধান শিক্ষা ‘আদাবে হাসান’ অর্থাৎ সুরুচি ও সুনীতি। এর বিপরীতে আছে ‘ফাওয়াহিশ’ অর্থাৎ অনাচার ও অশ্লীলতা। ‘আদাবে হাসান’ হচ্ছে আলো আর ‘ফাওয়াহিশ’ হচ্ছে অন্ধকার। সুতরাং ‘ফাওয়াহিশে’র অন্ধকার থেকে মুক্তি পেতে হলে ‘আদাবে হাসানে’র দিকেই আসতে হবে।

মানবজাতির সর্ববিধ অন্ধকার থেকে মুক্ত করার জন্যই কোরআনের আগমন। মহান আল্লাহ কত দ্ব্যর্থহীন ভাষায় বলেছেন : এটি সেই কিতাব যা আমি তোমার প্রতি নাযিল করেছি যেন তুমি মানুষকে বের করো অনেক অন্ধকার থেকে এক আলোর দিকে। (সূরা ইবরাহীম : ০১)। আলোর স্রষ্টা মহান আল্লাহ যেন আমাদের সকল অন্ধকার থেকে মুক্তি দান করেন; এই প্রার্থনা।

 

 



 

Show all comments
  • Parvej Mahmud ৮ অক্টোবর, ২০২১, ৭:১৬ এএম says : 0
    আল্লাহ 'বাহিরা', 'সায়েবা', 'ওয়াসিলা' ও 'হাম'কে শরিয়তসিদ্ধ করেননি। কিন্তু যারা কাফির, তারা আল্লাহর ওপর মিথ্যা অপবাদ আরোপ করে। আর তাদের অধিকাংশেরই বিবেকবুদ্ধি নেই। (সুরা আল মায়েদা : ১০৩)
    Total Reply(0) Reply
  • দেওয়ান মাহদী ৮ অক্টোবর, ২০২১, ৭:১৬ এএম says : 0
    কুসংস্কার বলা হয় যুক্তিহীন অন্ধবিশ্বাসকে। সেটি হতে পারে ধর্মের নামে, সামাজিকতার নামে, মতবাদ ও শাস্ত্রের নামে। দীর্ঘদিন ঐশী বার্তার জ্ঞান ও নবী-রাসুলদের সংস্পর্শ-বঞ্চিত আরব জাতি অজ্ঞতা, বর্বরতা ও কুসংস্কারে নিমজ্জিত হয়ে গিয়েছিল। সমাজের রন্ধে রন্ধ্রে ঢুকে পড়েছিল অন্ধকার। ভ্রান্ত বিশ্বাস, কুপ্রথা ও কুসংস্কারে ছেয়ে গিয়েছিল গোটা সমাজ। রাসুল (সা.) জাহেলি যুগের সব কুপ্রথার মূলে কুঠারাঘাত করেছেন। বিদায় হজের ভাষণে তিনি স্পষ্ট করেই বলেছেন, 'জাহেলি যুগের সব কুপ্রথা আমার পায়ের নিচে নিক্ষেপ করা হলো।'
    Total Reply(0) Reply
  • মুক্তিকামী জনতা ৮ অক্টোবর, ২০২১, ৭:১৭ এএম says : 0
    কুসংস্কারের প্রধান কারণ হলো অজ্ঞতা। ইসলামের প্রথম কথাই হলো 'ইকরা' বা তুমি পড়ো। অজ্ঞতাকে জয় করা গেলে কুসংস্কার নির্মূল করা সম্ভব।
    Total Reply(0) Reply
  • তারেক আজিজ ৮ অক্টোবর, ২০২১, ৭:১৭ এএম says : 0
    ইসলামে অশুভ বলতে কিছু নেই। সৃষ্টির কোনো কিছুই অশুভ নয়। কোরআনের ভাষায়, 'হে আমার রব, তুমি এসব নিরর্থক সৃষ্টি করোনি।' (সুরা আলে ইমরান : ১৯১)।
    Total Reply(0) Reply
  • তোফাজ্জল হোসেন ৮ অক্টোবর, ২০২১, ৭:১৮ এএম says : 0
    ইসলামে কুসংস্কারের কোনো স্থান নেই। এই কুসংস্কারের জন্যই আল্লাহর ওপর আস্থা ও ধর্মবিশ্বাস এবং আল্লাহর প্রতি পরম নির্ভরতা বা তাওয়াক্কুল বহুলাংশে লোপ পায়।
    Total Reply(0) Reply
  • নোমান মাহমুদ ৮ অক্টোবর, ২০২১, ৭:১৮ এএম says : 0
    রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এরশাদ করেন (অর্থ) রোগ লেগে যাওয়া, কুলক্ষণ, প্যাঁচা ও সফর-সবের কোনো বাস্তবতা নেই। (বোখারি : ৫৭৫৭; মুসলিম : ৫৭৪৩)।
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: কোরআন

২৩ জানুয়ারি, ২০২৩

আরও
আরও পড়ুন