Inqilab Logo

বুধবার, ১৭ এপ্রিল ২০২৪, ০৪ বৈশাখ ১৪৩১, ০৭ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

বাইডেন বিপজ্জনক অস্ত্র তৈরি অব্যাহত রেখেছেন : চমস্কি

চীনের উন্নয়ন মার্কিন আধিপত্যের পথে চ্যালেঞ্জ

ইনকিলাব ডেস্ক | প্রকাশের সময় : ১১ অক্টোবর, ২০২১, ১২:০০ এএম

সম্প্রতি ট্রুথআউটকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে বিশ^খ্যাত পণ্ডিত, চিন্তাবিদ এবং বিশ^সম্পদ হিসেবে আখ্যায়িত এবং এই মুহুর্তে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ জীবিত বুদ্ধিজীবী নোয়াম চমস্কি বলেছেন, ‘বিশে^র অস্ত্র নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা যা বহু দশক ধরে শ্রমসাধ্যভাবে নির্মিত হয়েছিল তা গত দুটি রিপাবলিকান প্রশাসনের দ্বারা পরিকল্পিতভাবে ভেঙে ফেলা হয়েছে। বাইডেন অব্যাহত সামরিক বাজেটকে সমর্থন করছেন এবং আরও বিপজ্জনক অস্ত্র তৈরির দৌড় অব্যাহত রেখেছেন এবং অত্যন্ত উস্কানিমূলক কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন যেখানে কূটনীতি এবং আলোচনা অবশ্যই সম্ভব।’

চমস্কি বলেন, ‘আমরা এমন এক সঙ্কটের যুগে বাস করছি যার মানব ইতিহাসে কোন নজির নেই। এটি এখন বিশ্বব্যাপী সংগঠিত মানব সমাজ, যা ধনী দেশগুলিতে কেন্দ্রীভূত ধনীদের পরিবেশ ধ্বংসকারী আঘাতে বিলুপ্তির হুমকির সম্মুখীন। ক্রমবর্ধমান হুমকির পাশাপাশি এটি পারমাণবিক গণহত্যা থেকে কম অশুভ নয়। যদিও সময় কম, এগুলির প্রত্যেকটির জন্য সম্ভাব্য সমাধানগুলি রয়েছে।’ তবে, এই মুহূর্তে যুক্তরাষ্ট্রের মাথাব্যাথার একটি প্রধান বিষয় হ’ল, দক্ষিণ চীন সাগরে নৌ চলাচলের স্বাধীনতা। আরো নির্ভুলভাবে, অস্ট্রেলিয়ার কৌশলগত বিশ্লেষক ক্লিনটন ফার্নান্দিস উল্লেখ করেছেন, দ্বন্দ্বটি চীনের এক্সক্লুসিভ ইকোনমিক জোন (ইইজেড)-এর ২ শ’ মাইল উপকূলে বিস্তৃত সামরিক/গোয়েন্দা কার্যক্রম পরিচালনা করা।

যুক্তরাষ্ট্র মনে করে যে, তাদের এই ধরনের অভিযান বিশে^র সমস্ত ইইজেড-এ অনুমোদিত। চীন দাবি করে যে, যুক্তরাষ্ট্রের সেই এখতিয়ার নেই। ভারত চীনের দাবির সাথে একমত, এবং তার ইইজেডে সাম্প্রতিক মার্কিন সামরিক অভিযানের তীব্র প্রতিবাদ করেছে। ইইজেড ১৯৮২ সালে ল অফ দ্য সি (ইউএনসিএলওএস) দ্বারা প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। যুক্তরাষ্ট্রই একমাত্র সামুদ্রিক শক্তি যা আইনটিকে অনুমোদন করেনি, কিন্তু দাবি করে যে, তারা এটি লঙ্ঘন করবে না।’

চীনের কথিত হুমকি মোকাবেলা করতে সাম্প্রতি মার্কিন নৌ কমান্ড এইউকেইউএস (অস্ট্রেলিয়া-যুক্তরাজ্য-যুক্তরাষ্ট্র) অস্ট্রেলিয়ার কাছে ৮টি উন্নত পারমাণবিক সাবমেরিন বিক্রির চুক্তির প্রতিক্রিয়ার একটি বাস্তবসম্মত মূল্যায়নে অস্ট্রেলিয়ার সাবেক প্রধানমন্ত্রী পল কিটিং বলেন, ‘এই সবই চীনকে নিয়ন্ত্রণ করার জন্য মার্কিন প্রচেষ্টার অংশ, অথবা এটিকে অন্যভাবে বলা যায়, এই সত্যটি প্রতিষ্ঠা করা যে, একরকম চরম দারিদ্র্য থেকে মানবতার ২০ শতাংশে উন্নীত হয়ে একটি আধুনিক রাষ্ট্রে পৌঁছানো অবৈধ কিন্তু তার চেয়েও বড় হ’ল, এটি করে যুক্তরাষ্ট্রের আঁতে ঘা দেয়া। এমন নয় যে, চীন যুক্তরাষ্ট্রের জন্য এমন কোনো হুমকি উপস্থাপন করে যা, চীন কখনো প্রকাশ করেছে বা ঘটিয়েছে, বরং এর উপস্থিতি যুক্তরাষ্ট্রের আধিপত্যের পথে একটি চ্যালেঞ্জের প্রতিনিধিত্ব করে।’

অস্ট্রেলিয়া-যুক্তরাষ্ট্র চুক্তিটি ফলে অস্ট্রেলিয়া প্রচলিত সাবমেরিন বিক্রির জন্য ফ্রান্স-অস্ট্রেলিয়া চুক্তি বাতিল করে দেয়। সাম্রাজ্যবাদের অহংকারে ওয়াশিংটন ফ্রান্সকে সেটি অবহিত করার প্রয়োজন বোধ করেনি। এটি করে যুক্তরাষ্ট্র ইউরোপীয় ইউনিয়নকে মার্কিন নিতৃত্বাধীন বৈশ্বিক শাসনে তার স্থান সম্পর্কে সতর্ক করেছে। অস্ট্রেলিয়ার সামরিক সংবাদদাতা ব্রায়ান টুহে বলেন যে, যুক্তরাষ্ট্রের প্রতি অস্ট্রেলিয়ার আনুগত্য তার নিরাপত্তাকে বাড়ায়নি। বরং বিপরীতভাবে এইউকেইউএস’র কোন স্পষ্ট কৌশলগত লক্ষ্যও নেই।

টুহেই বলেন যে, সাবমেরিনগুলি এক দশকেরও বেশি সময় ধরে চলবে না, ততদিনে চীন অবশ্যই এই সামরিক হুমকি মোকাবেলায় তার সামরিক বাহিনীকে সম্প্রসারিত করবে, যেমনটি তারা এই সত্যটি মোকাবেলা করছে যে, বিশ্বজুড়ে যুক্তরাষ্ট্রের ৮ শ’ সামরিক ঘাঁটিতে সশস্ত্র ক্ষেপণাস্ত্র রয়েছে, যেখানে চীনের রয়েছে মাত্র একটি। জিবুতিতে। এই তথ্যটুকুই যুক্তরাষ্ট্র-চীনের নৌ সামরিক ভারসাম্যের রূপরেখার সত্যটি বোঝানোর জন্য যথেষ্ট। এবং ক্যারিবিয়ান বা ক্যালিফোর্নিয়া উপকূলে নয়, চীনের সীমানায় চীন কীভাবে যুক্তরাষ্ট্রকে হুমকি, তাও বোঝার জন্য মূল্যবান।

আফগানিস্তানে যখন বুশ প্রশাসন ২০ বছর আগে আক্রমণ করেছিল, তখন দেশটি নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের কোন আগ্রহ ছিল না। যুক্তরাষ্ট্রের আসল পুরস্কার ছিল ইরাক আক্রমণ। বুশ এটাও স্পষ্ট করে দিয়েছিলেন যে, ওসামা বিন লাদেন বা আল-কায়েদার ব্যাপারে প্রশাসনেরও খুব একটা আগ্রহ ছিল না। সেসময় তালেবান আত্মসমর্পণের প্রস্তাব দিলে মার্কিন প্রতিরক্ষামন্ত্রী ডোনাল্ড রামসফেল্ড স্পষ্ট বলেছিলেন, ‘আমরা আত্মসমর্পণের বিষয়ে আলোচনা করি না।’

এপ্রসঙ্গে সেসময় তালেবান বিরোধী প্রতিরোধের সবচেয়ে সম্মানিত নেতা আব্দুল হাকিন এশিয়া বিশেষজ্ঞ আনাতোল লিভেনের একটি সাক্ষাৎকারে বলেছিলেন, ‘এই আক্রমণ অনেক আফগানকে হত্যা করবে এবং তালেবান শাসনকে দুর্বল করার আফগান প্রচেষ্টাকে ক্ষতিগ্রস্ত করবে, কিন্তু সেটা ওয়াশিংটনের উদ্বেগ নয়, যুক্তরাষ্ট্র তার পেশী দেখানোর চেষ্টা করছে, বিজয় অর্জনের এবং বিশে^র প্রত্যেককে ভয় দেখানোর চেষ্টা করছে।’ এই উদাহরণটিও চীনকে নিয়ন্ত্রণে বর্তমান মার্কিন কৌশলের ন্যায্য বর্ণনা বলে প্রতীয়মান হয়। সূত্র : ট্রুথআউট।



 

Show all comments
  • MD Mahedi Hossain ১১ অক্টোবর, ২০২১, ৬:৫০ এএম says : 0
    কিন্তু চীনের উন্নয়ন হবে আর আমেরিকা ভেঙ্গে যাবে! ওরা তো তাই plan করছে!
    Total Reply(0) Reply
  • M. Jubayer Ahmad ১১ অক্টোবর, ২০২১, ৬:৫১ এএম says : 0
    এগুলো তো ওদের একটা চাল মাত্র, আগে অনেক বেশি বাড়িয়ে অল্প কিছু কমালো।একরকম তেলের দাম আট টাকা বাড়িয়ে তিন টাকা কমানো।
    Total Reply(0) Reply
  • Sheikh Milon ১১ অক্টোবর, ২০২১, ৬:৫১ এএম says : 0
    সাম্রাজ্যবাদ মার্কিন যুক্তরাস্ট্রকে মোড়ল গীড়ি থেকে সরে যেতে হবে চীনকে এগিয়ে আসতে হবে সামনের সারিতে এটা এখমন সময়ের দাবী।
    Total Reply(0) Reply
  • DM Rashed ১১ অক্টোবর, ২০২১, ৬:৫১ এএম says : 0
    চীনের পরমানু শক্তিতে আমেরিকার ঘুম হারাম
    Total Reply(0) Reply
  • Shibbir Ahammad ১১ অক্টোবর, ২০২১, ৬:৫২ এএম says : 0
    পশ্চিমারা কখনও চায় না যে এশিয়রা তাদের উপরে উঠুক
    Total Reply(0) Reply
  • Khandoker Habibur Rahman ১১ অক্টোবর, ২০২১, ৬:৫২ এএম says : 0
    প্রত্যেকটি দেশ উন্নত হয় প্রকৃতিকে ধ্বংস করে। বস্তুবাদী মানুষ যত বস্তু তৈরী করতে পারবে ও রফতানি করতে পরবে, সেই দেশ ততো সমৃদ্ধশালী। প্রকৃতপক্ষে এরা সবই প্রকৃতির বিনষ্টকারী দেশ।
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: চীন


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ