Inqilab Logo

শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ০৭ বৈশাখ ১৪৩১, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

কুমিল্লায় ইজিবাইক থেকে তোলা প্রতিদিনের ৫০ হাজার টাকা যায় কোথায়

প্রকাশের সময় : ১২ অক্টোবর, ২০১৬, ১২:০০ এএম

সাদিক মামুন, কুমিল্লা থেকে : একসময় কুমিল্লা শহর ও বাইরের এলাকায় চলাচলকারি অনুমোদনহীন ব্যাটারিচালিত যান ইজিবাইক মালিক বা চালকদের প্রতিমাসে কল্যাণ সমিতি বা শ্রমিক ঐক্য পরিষদকে দুইশ থেকে দুইশ পঞ্চাশ টাকা হারে চাঁদা দিতে হতো। ২০১২ সালের জুলাই মাস থেকে ওইসব সংগঠন বন্ধ হওয়ার পর ইজিবাইক থেকে প্রতিমাসে চাঁদা নেয়াও বন্ধ হয়ে যায়। তবে ২০১২ সালের শেষের দিক থেকে সংগঠন কেন্দ্রিক না হলেও একাধিক গ্রæপ নগরীতে পার্কিংয়ের নামে প্রায় দশ হাজার ইজিবাইক থেকে চারটি পয়েন্টে কিছু লোক ৪০ টাকা করে প্রতিদিন ৪০ হাজার টাকা আদায় করছে। আর নির্ধারিত পয়েন্টের বাইরে নগরীর অন্যান্য মোড় থেকে প্রতিদিন ট্রাফিক ও কমিউনিটি পুলিশ আদায় করছে অন্তত দশ হাজার টাকা। এভাবে প্রতিদিন ইজিবাইক চালকদের কাছ থেকে নেয়া প্রায় ৫০ হাজার টাকা কাদের পকেটি যায় এমন প্রশ্ন যেমন সাধারণ মানুষের তেমনি ইজিবাইক চালকদেরও। প্রতিদিন এভাবে টাকা নেয়ার কারণে ইজিবাইক চালকরা নগরীর ব্যস্ততম সড়ক দখল করে প্রতিনিয়ত যাত্রী উঠা-নামা করছে। কিন্তু চাঁদা নেয়ার কারণে ট্রাফিক পুলিশ কিছুই করতে পারছেন না।
পার্কিংয়ের নামে ইজিবাইক থেকে টাকা আদায় চলছে নগরীর কয়েকটি পয়েন্টে। বছর খানেক আগে সাদা ও রঙিন কাগজে ‘টোল আদায়ের রশিদ’ লিখা টোকেন ইজিবাইক চালকদের হাতে ধরিয়ে দিয়ে নেয়া হত দশ টাকা। নগরীর চারটি পয়েন্টে ইজিবাইক চালকরা যাত্রী উঠানামা করার সময় সারদিনে চারবার টোকেনের মাধ্যমে চারটি পয়েন্টে দশ টাকা করে ৪০টাকা দিতেন। এখনও সেই ৪০ টাকা দেন। তবে টোকেনের বিপরীতে নয়। সরাসরি আদায়কারির হাতে তুলে দেন। গত বছরের জুলাই মাসে দৈনিক রূপসী বাংলা পত্রিকায় ইজিবাইক ঘিরে টোকেন বাণিজ্য সংক্রান্ত সংবাদ প্রকাশের পর আদায়কারিরা টোকেন সিষ্টেম বন্ধ করে লোক মারফত টাকা আদায় চালু রাখে। এসব লোক নগরীতে চলাচলকারি প্রায় দশ হাজার ইজিবাইক থেকে প্রতিদিন ৪০ হাজার টাকা আদায় করছে। আর যেসব পয়েন্টে লোক নেই যেখানে কমিউিনিটি পুলিশ ও ট্রাফিক পুলিশ মোড়ে মোড়ে দাঁড়িয়ে যাত্রী উঠা-নামা করার সুযোগ দিয়ে প্রতি ইজিবাইক চালক থেকে দশ টাকা হারে আদায় করছে। প্রতিদিন কমিউিনিটি পুলিশ ও ট্রাফিক পুলিশের আদায় করা টাকার পরিমাণও দাঁড়ায় প্রায় দশ হাজার। ইজিবাইক চালকদের কাছ থেকেই এসব তথ্য জানার পর সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে টাকা আদায়ের চিত্র।
প্রতিদিন কমিউিনিটি পুলিশ ও ট্রাফিক পুুলিশ ছাড়া নগরীর আশ্রাফপুর বাস টার্মিনালের সামনে, টমসমব্রীজ মোড়, শাসনগাছা ও রাজগঞ্জ বজ্রপুর মোড়ে দাঁড়িয়ে কারা ইজিবাইক থেকে টাকা আদায় করছে ? এমন প্রশ্নের জবাবে ইজিবাইক চালকরা জানান, যারা টাকা নেয় তারা নিজেদের ইজারাদারের লোক বলে পরিচয় দিয়ে থাকে। টাকা না দিলে পরবর্তীতে ট্রাফিক পুলিশ দিয়ে ইজিবাইক পুলিশ লাইনে পাঠিয়ে দেয়া হয়। তাই বাধ্য হয়ে টাকা দিতে হয়। ইজিবাইক থেকে টাকা আদায়কারিদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, তাদেরকে সিটি কর্পোরেশন থেকে ওইসব পার্কিং পয়েন্টে নিয়োগ করেছে। কমিশনের ভিত্তিতে তারা ইজিবাইক ও সিএনজি অটোরিকশা থেকে টোল আদায়ের দায়িত্ব পালন করছেন। আদায়কৃত টাকার একটি অংশ কমিউিনিটি পুলিশের বেতনে ব্যয় হয় বলেও আদায়কারিরা জানান। টাকা আদায়কারিদের হিসেব মতে প্রতিদিন ইজিবাইক থেকে ৪০ হাজার এবং সিএনজি অটোরিকশা থেকে প্রায় আট হাজার টাকা আদায় করা হয়। কুমিল্লা সিটি কর্পোরেশনের নির্বাহী প্রকৌশলী শেখ নুরুল্লাহ বলেন,‘বাসটার্মিনালগুলো ইজারা দেয়া হয়েছে। কিন্তু টার্মিনালের বাইরে রাস্তায় পার্কিংয়ের নামে ইজিবাইক, সিএনজি অটোরিকশা থেকে টাকা আদায়ের অনুমতি সিটি কর্পোরেশন কর্তৃপক্ষ কাউকে দেয়নি।
এমনকি এ ধরণের টাকা আদায় করার জন্য সিটি কর্পোরেশন কর্তৃপক্ষ কাউকে নিয়োগও দেয়নি। যারা এটা করছে, সম্পূর্ণ বেআইনি। এদিকে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন ট্রাফিক পুলিশ সদস্যের সঙ্গে এবিষয়ে কথা হলে তারা বলেন, ইজিবাইক চালকদের মুখে শুনেছি তারা নগরীর কয়েকটি পয়েন্টে দশ টাকা করে চাঁদা দিয়ে থাকেন। তবে কারা নিচ্ছে এসব টাকা তা আমাদের জানা নেই। তবে ট্রাফিক পুলিশ ইজিবাইক চালকদের কাছ থেকে কোন চাঁদা নেয় না।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: কুমিল্লায় ইজিবাইক থেকে তোলা প্রতিদিনের ৫০ হাজার টাকা যায় কোথায়
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ