Inqilab Logo

শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ০৭ বৈশাখ ১৪৩১, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

হিন্দু পল্লীতে আগুন রহস্যজনক

স্থানীয়দের বক্তব্য কোনো মুসলমান হিন্দুর বাড়িতে আগুন দিতে পারে না এসব অপ্রীতিকর ঘটনা প্রতিরোধে সরকারের গোয়েন্দা সংস্থা ব্যর্থ : বদিউল আলম মজুমদার এর পেছনে ভারতীয় গোয়েন্দা বাহিনীর

ইনকিলাব রিপোর্ট | প্রকাশের সময় : ১৯ অক্টোবর, ২০২১, ১২:০০ এএম

কুমিল্লায় পূজামণ্ডপে পবিত্র কোরআন অবমাননার খবরে ঘটে যাওয়া ঘটনার পর দেশের বিভিন্ন স্থানে আরো অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটছে। কুমিল্লার পর চাঁদপুরের হাজীগঞ্জ, চট্টগ্রাম, নোয়াখালীতে অনাকাক্সিক্ষত ঘটনা ঘটেছে। এরপর সর্বশেষ রংপুরের পীরগঞ্জের জেলে পল্লীতে আগুন দেয়ার যে ঘটনা তাতে এসব পরিকল্পিত বলে রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন। এসব ঘটনার পেছনে ভারতীয় গোয়েন্দা বাহিনীর সম্পৃক্ততা রয়েছে সরাসরি এমন অভিযোগও করছেন কেউ কেউ। আবার অনেকে বলছেন, দেশের গোয়েন্দাদের চরম ব্যর্থতায় সারাদেশে এ অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটছে। রংপুরের পীরগঞ্জের স্থানীয় বাসিন্দারা বলছেন এ ঘটনা খুবই রহস্যজনক। সেখানকার হিন্দু-মুসলিম উভয় সম্প্রদায়ের লোকজনের সঙ্গে কথা বললে তারা বলেন, কে বা কারা জেলে পল্লীতে আগুন ধরিয়েছে তা রহস্যজনক। আমরা শত শত বছর ধরে এই গ্রামে বসবাস করে আসছি। হিন্দু-মুসলমান সবাই আমরা সম্প্রীতির সাথে বসবাস করছি জন্মের পর থেকে। কিন্তু গত রাতের ঘটনায় আমরা হতবাক। কোনো মুসলমান হিন্দুর বাড়িতে আগুন দিতে পারে না। যারা এ ধরনের কাজে উস্কানি দিয়েছে এবং এহেন ন্যক্কারজনক ও অমানবিক ঘটনা ঘটিয়েছে তারা যে ধর্মেরই হোক তাদের চিহ্নিত করে আইনের আওতায় আনার দাবি জানিয়েছেন স্থানীয়রা।

সারাদেশে ঘটে যাওয়া এসব ঘটনা প্রতিরোধে সরকার আপ্রাণ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল সচিবালয়ে সাংবাদিকদের বলেন, কুমিল্লার ঘটনা সুনিশ্চিতভাবে সাজানো। এসব ঘটনা উদ্দেশ্যমূলক কি না, কে এটা ঘটিয়েছে সেটা বের করতে আমাদের গোয়েন্দারা সেখানে কাজ করছে। এ বিষয়ে র‌্যাব, কাউন্টার টেররিজমসহ সবাই কাজ করছে। কুমিল্লার ঘটনার পর সরকার কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। রংপুর ও ফেনীসহ বাংলাদেশ পুলিশের ৭ পুলিশ সুপার (এসপি) পদমর্যাদার কর্মকর্তাকে বদলি করা হয়েছে। উল্লেখ্য, গত বুধবার থেকে দেশের অন্তত ১০ জেলায় পূজামণ্ডপে, মন্দিরসহ হিন্দুদের বাসাবাড়ি ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে হামলার ঘটনা ঘটেছে। এসব হামলার ঘটনায় ২৮টি মামলায় অজ্ঞাতসহ ৯ হাজার ৫২৫ জনকে আসামি করা হয়েছে। মামলায় এ পর্যন্ত প্রায় ২৫০ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে।

তবে এসব ঘটনায় সরকারের গোয়েন্দাদের কার্যক্রম নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন সুশাসনের জন্য নাগরিকের (সুজন) সম্পাদক রাজনৈতিক বিশ্লেষক ড. বদিউল আলম মজুমদার। তিনি গতকাল দৈনিক ইনকিলাবকে বলেন, সরাদেশে হিন্দু সম্প্রদায়ের মন্দির ও বাড়িঘরে যে হামলা হচ্ছে তা অত্যন্ত নিন্দনীয়। দ্রুত এসব ঘটনার অবসান হোক এটাই কাম্য। তবে এসব ঘটনা প্রতিরোধে সরকারের গোয়েন্দা সংস্থা ব্যর্থ। কারা এসব ঘটাচ্ছে, দেশের বাইরের কোনো ইন্ধন আছে কি না এসব তো সরকার উদঘাটন করবে। সরকারের গোয়েন্দা সংস্থা এসব তো জানার কথা। তারা কি করছে? তিনি বলেন, এ ঘটনায় সরকার এবং বিরোধী দল পরস্পরের প্রতি যে ব্লেম-গেইম দিচ্ছে তাতে তৃতীয় পক্ষ ঘোলা পানিতে মাছ শিকারের ক্ষেত্র তৈরি হবে।

তবে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী তাদের ব্যর্থতার বিষয়টি মানতে নারাজ। র‌্যাবের মহাপরিচালক চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন গতকাল দৈনিক ইনকিলাবকে বলেন, সম্প্রতি কুমিল্লায় পূজামণ্ডপে পবিত্র কোরআন পাওয়া যাওয়ার প্রেক্ষিতে যেসব ঘটনা ঘটেছে এসব নিয়ে আমরা কাজ করছি। বেশ কয়েকজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। একটি মহল অতীতেও দেশে বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি সৃষ্টির চেষ্টা করেছে এবং তা এখনও চলছে। আমরা সব বিষয় নজরদারির মধ্যে নিয়েই কাজ করছি। পূজামণ্ডপে পবিত্র কোরআন শরীফ রাখা এবং পরের ঘটনায় পুলিশের বা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কোনো ব্যর্থতা রয়েছে কি না এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এ ধরনের ঘটনার প্রেক্ষিতে পুলিশের ব্যর্থতা বলা যাবে না।

চট্টগ্রাম রেঞ্জের ডিআইজি মো. আনোয়ার হোসেন গতকাল দৈনিক ইনকিলাবকে বলেন, কুমিল্লাসহ যেসব জায়গায় পূজাকে কেন্দ্র করে সংঘর্ষ বা ভাঙচুরের ঘটনা ঘটেছে তা আমরা সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে তদন্ত করছি। প্রতিটি পয়েন্টে নিরাপত্তা জোরদার এবং এর সাথে সম্পৃক্তদের আইনের আওতায় আনার জন্য পুলিশ কাজ করছে।

বাংলাদেশে কুমিল্লার এক পূজামণ্ডপে ঘটে যাওয়া ঘটনার পর ভারতের গণমাধ্যমে তা ফলাও করে প্রচার করা, বিজেপি সরকারের দায়িত্বশীলদের বক্তৃতা-বিবৃতি, ইন্টারন্যাশনাল সোসাইটি ফর কৃষ্ণ কনশাসনেসের (ইসকন) থেকে জাতিসংঘের মহাসচিবকে চিঠি এবং বাংলাদেশের কিছু মুখচেনা মানুষের হম্বিতম্বি, হরতালের হুঙ্কার ও অপপ্রচারে ভিন্ন ইঙ্গিত বহন করে বলে অনেক রাজনৈতিক বিশ্লেষক মনে করেন। তারা বলছেন, বাংলাদেশের এ ঘটনা থেকে রাজনৈতিক ফায়দা নেয়ার জন্য ভারতের ইন্ধন থাকতে পারে। বাংলাদেশের এ ঘটনা ইতোমধ্যে ভারতের আসন্ন উপনির্বাচনের ময়দানেও ইস্যু হয়ে দাঁড়িয়েছে। গত রোববার শান্তিপুরে নির্বাচনী প্রচারে গিয়ে বাংলাদেশের ঘটনাকে হাতিয়ার করেছেন শুভেন্দু অধিকারী। তিনি বলেন, বাংলাদেশের ঘটনার পর আরো তিন গুণ বেশি ভোটে এই আসনে জিতবে বিজেপি, যা নিয়ে ইতোমধ্যেই শুরু হয়েছে জোর আলোচনা।

বিশিষ্ট মুক্তিযোদ্ধা গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী সরাসরি অভিযোগ করে বলেছেন, কুমিল্লার অপ্রীতিকর ঘটনার পর চাঁদপুরের হাজীগঞ্জ, নোয়াখালী এবং রংপুরের পীরগঞ্জে সংঘটিত ঘটনার পেছনে ভারতীয় গোয়েন্দা বাহিনীর সম্পৃক্ততা রয়েছে। এসব ঘটনার পেছনে ভারতীয় গোয়েন্দা বাহিনীর একটা চক্রও জড়িত আছে। ভারতের রাজনীতির সঙ্গে আমার দেশের রাজনীতি জড়িত হয়ে গেছে। প্রধানমন্ত্রীকে বোঝাতে চায়, ভারত ছাড়া এখানে সংখ্যালঘুর কোনো উপায় নেই। এ ছাড়া ভারতের বিভিন্ন স্থানে সামনে নির্বাচন রয়েছে। সে সব নির্বাচনে জেতার জন্যও বিজেপি সরকার এ ধরনের ইস্যু সৃষ্টি করছে। এ থেকে আমাদের অবশ্যই সাবধান থাকতে হবে।

যুগের পর যুগ ধরে হিন্দু-মুসলিম-খ্রিষ্টান-বৌদ্ধ বাংলাদেশে একসঙ্গে বসবাস করে আসছে। একে অপরের সামাজিক অনুষ্ঠানে যাচ্ছেন; অপ্রীতিকর পরিস্থিতি তেমন ঘটেনি। তাছাড়া বর্তমান সরকার হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের সরকারি চাকরিসহ সব ক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশি সুযোগ-সুবিধা দিচ্ছে। এবার দুর্গাপূজায় ধর্ম মন্ত্রণালয়ের বরাদ্দ ছাড়াও প্রধানমন্ত্রী নিজেও ৩ কোটি টাকা পূজা উদযাপনের জন্য অনুদান দিয়েছেন। তারপরও এমন অঘটনের রহস্য কি? হঠাৎ করে বাংলাদেশকে অস্থিতিশীল করার ষড়যন্ত্র কেন? পর্দার আড়ালে পবিত্র কোরআন অবমাননার মতো ঔদ্ধত্যপূর্ণ ঘটনার রহস্য কি?

রংপুরে ঘটে যাওয়া ঘটনার বিস্তারিত জানিয়েছেন আমাদের সংবাদদাতা আব্দুল হালিম আনছারী। তিনি তার প্রতিবেদনে জানান, পবিত্র কাবা শরীফ এবং ইসলাম ধর্মকে অবমাননা করে ফেসবুকে পোস্ট দেয়ার অভিযোগে রংপুরের পীরগঞ্জে হিন্দু জেলে পল্লীর বেশ কয়েকটি বাড়িতে অগ্নিসংযোগ করেছে উত্তেজিত জনতা। এতে একটি মন্দিরসহ বেশ কয়েকটি বাড়ি ভাঙচুর ও ২০টি ঘর পুড়ে যায়। পরে ফায়ার সার্ভিসের একটি দল ঘটনাস্থলে গিয়ে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে।

জানা গেছে, রংপুরের পীরগঞ্জের বড় করিমপুর মাঝিপাড়া এলাকার পরিতোষ সরকার নামের ১৬-১৭ বছর বয়সী এক যুবক পবিত্র কাবা শরীফ এবং ইসলাম ধর্মকে অবমাননা করে ফেসবুকে পোস্ট দেয় এবং সেই পোস্টটি নিমিষেই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হয়ে যায়। বিষয়টি জানতে পেরে স্থানীয় হাজার হাজার লোক জড়ো হতে থাকে এবং তারা একত্রিত হয়ে বিক্ষোভে নামেন। একপর্যায়ে উত্তেজিত জনতা রাত সাড়ে ৯টার দিকে ঐ হিন্দু জেলে পল্লীতে হামলা চালিয়ে বেশ কয়েকটি বাড়ি ভাঙচুর করে। এ সময় উত্তেজিত জনতা হিন্দুদের কয়েকটি বাড়িতে আগুন লাগিয়ে দেয়। এতে সেখানকার ১টি মন্দিরসহ প্রায় ২০টি ঘর পুড়ে ছাই হয়ে যায়। ফায়ার সার্ভিস ঘটনাস্থলে পৌঁছলেও উত্তেজিত মানুষের ভিড়ে দ্রুত আগুন নেভাতে সক্ষম না হওয়ায় অনেকের বাড়িঘরসহ আসবাবপত্র, গবাদিপশু, মন্দিরের অবকাঠামো পুড়ে যায়। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে পুলিশ বেশ কয়েক রাউন্ড রাবার বুলেট নিক্ষেপ করে। পরে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে সক্ষম হয় পুলিশ। এরপর থেকে সেখানে পুলিশ, র‌্যাব, বিজিবি মোতায়েন রাখা হয়।

ঘটনাস্থলে গিয়ে পুলিশ ও গ্রামবাসীর সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, গ্রামের বটের হাট পাড়ায় হিন্দু ধর্মাবলম্বী ১৬-১৭ বছরের এক ছেলে রোববার বিকেলে ফেসবুকে একটি পোস্টে আপত্তিকর কমেন্ট করে। তা মুহূর্তেই আশপাশের গ্রামের মুসল্লিদের মধ্যে ছড়িয়ে পড়ে। সন্ধ্যা সাড়ে ৬টার দিকে কয়েকশ’ বিক্ষুব্ধ জনতা ওই কিশোরের বাড়িতে উপস্থিত হন। খবর পাওয়া মাত্র সন্ধ্যায় পুলিশ ওই কিশোরের বাড়ি যায়। সেখানে বিক্ষুব্ধ লোকজনকে বুঝিয়ে ফেরত পাঠায়। কিন্তু হঠাৎ রাত ৯টার দিকে কয়েক হাজার লোক লাঠিসোটা নিয়ে ওই কিশোরের বাড়ি থেকে কিছুটা দূরে ক্ষেতের ওপারে স্থানীয় মসজিদে জড়ো হন। পরে গ্রামের কসবা উত্তরপাড়ায় প্রবেশ করে হামলা চালায়। এ সময় লোকজন আতঙ্কে বিভিন্ন জায়গায় লুকিয়ে গেলে উত্তেজিত জনতা কয়েকটি বাড়িতে আগুন ধরিয়ে দেয়। আগুন মুহূর্তেই একটি বাড়ি থেকে অন্য বাড়িতে ছড়িয়ে পড়ে। মানুষের ভিড়ের কারণে ফায়ার সার্ভিস ঠিকমতো কাজ করতে না পারায় ১৮-২০টি বাড়ি পুড়ে ছাই হয়ে যায়। পরে অতিরিক্ত পুলিশ, র‌্যাব মোতায়েন করা হলে রাত ১টার দিকে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসে।

পরে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন রংপুর রেঞ্জের ডিআইজ দেবদাস ভট্টাচার্য, জেলা প্রশাসক আসিব আহসান, রংপুরের পুলিশ সুপার বিপ্লব কুমার সরকার, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বিরোদা রানী রায়, পীরগঞ্জ পৌরসভার মেয়র এ এস এম তাজিমুল ইসলাম শামীমসহ আওয়ামী লীগের নেতৃবৃন্দ। এ ঘটনায় এখন পর্যন্ত ৪২ জনকে আটক করেছে পুলিশ। বর্তমানে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আছে।

ঘটনা প্রসঙ্গে হিন্দু ধর্মাবলম্বীরা জানিয়েছেন, রাতে তাদের অনেকেই খাওয়া-দাওয়া শেষে ঘুমানোর প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন। এ সময় হৈ-হুল্লোড় করে আকস্মিক হাজার খানেক লোক লাঠিসোটা নিয়ে তাদের পাড়ায় হামলা চালিয়ে ভাঙচুর করতে থাকে। এ সময় গোটা পাড়ায় আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়লে তারা পালিয়ে পার্শ্ববর্তী ধানক্ষেতসহ বিভিন্ন ঝোপ-ঝাড়ে আশ্রয় নেয়। পরে তাদের বাড়িতে আগুন ধরিয়ে দিলে ঘরের সমস্ত মালামাল, গবাদিপশু পুড়ে যায়। এতে অনেকেই নিঃস্ব হয়ে গেছে। তারা দ্রুত তাদের ক্ষতিপূরণ প্রদানসহ পুনর্বাসনের দাবি জানিয়েছেন।

পক্ষান্তরে মুসলিম সম্প্রদায়ের লোকজন জানিয়েছেন, ফেসবুকে আপত্তিকর পোস্ট দেয়ায় সন্ধ্যায় শত শত লোক ঐ ছেলের বাড়িতে জড়ো হতে থাকে। এ সময় পৌর মেয়রসহ পুলিশের লোকজন তাদের শান্ত করে ফেরত পাঠায়। এর পর রাত ৯টার দিকে আকস্মিকভাবে হাজার হাজার উত্তেজিত জনতা পাশের জেলে পল্লীতে হামলা চালিয়ে ভাঙচুর করে। এ সময় কে বা কারা আগুন ধরিয়ে দেয় এটা এখন পর্যন্ত অজানা। তারা আরো জানান, আমরা বছরের পর বছর ধরে এই গ্রামে বসবাস করে আসছি। হিন্দু-মুসলমান সবাই আমরা সম্প্রীতির সাথে বসবাস করে আসছি জন্মের পর থেকে। কিন্তু গত রাতের ঘটনায় আমরাও হতবাক হয়েছি। যারা এ ধরনের কাজে উস্কানি দিয়েছে এবং এহেন ন্যক্কারজনক ও অমানবিক ঘটনা ঘটিয়েছে তারা যে ধর্মেরই হোক তাদের চিহ্নিত করে আইনের আওতায় আনা হোক।

রংপুর রেঞ্জের ডিআইজি দেবদাস ভট্টাচার্য জানিয়েছেন, রাতে হিন্দু সম্প্রদায়ের ওপর এই বর্বরোচিত ঘটনায় পীরগঞ্জ থানা পুলিশসহ জেলা পুলিশের সদস্য, বিজিবি ও ফায়ার সার্ভিসের কয়েকটি ইউনিট ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। এ ঘটনায় এখন পর্যন্ত ৪২ জনকে আটক করা হয়েছে। যে ছেলেটির নামে ফেসবুকে কমেন্টের অভিযোগ এসেছে সে পলাতক রয়েছে। সেসহ এ ঘটনায় জড়িত সকলকে দ্রুত আইনের আওতায় আনতে কাজ করে যাচ্ছে পুলিশ।

বিভাগীয় কমিশনার আব্দুল ওয়াহাব ভুঁইয়া বলেন, এ ঘটনায় পুলিশ, বিজিবি ও ফায়ার সার্ভিস আন্তরিকভাবে কাজ করেছে। বর্তমানে এলাকার পরিস্থিতি শান্ত রয়েছে। আমরা ক্ষতিগ্রস্ত সকল পরিবারের ক্ষতির পরিমাণসহ তালিকা করে পুনর্বাসনসহ যাবতীয় সহায়তা করতে কাজ শুরু করেছি।



 

Show all comments
  • Md Mehedi Hasan ১৯ অক্টোবর, ২০২১, ১২:৪৩ এএম says : 1
    এটা ইন্ডিয়ার চক্রান্ত।
    Total Reply(0) Reply
  • Mohammad Saiful Islam ১৯ অক্টোবর, ২০২১, ১২:৪৩ এএম says : 0
    সত্য কথা বালার জন্য ধন্যবাদ
    Total Reply(0) Reply
  • Rafsanjani Khandakar Shojol ১৯ অক্টোবর, ২০২১, ১২:৪৩ এএম says : 0
    সরকার ও প্রশাসনের ব্যর্থতাই এর জন্য দায়ী, যেকোন মূল্যেই হক সকল নাগরিকের নিরাপত্তা সরকারকে নিশ্চিত করতে হবে
    Total Reply(0) Reply
  • Nipun Howlader ১৯ অক্টোবর, ২০২১, ১২:৪৩ এএম says : 0
    সন্দেহ অনেক কিছু হতে পারে কিন্তু আমাদের পবিএ মন্দিরে হামলা ও ঘর বাড়ি আগুন ও লুটপাট করেছে তারা কারা? তারাও কি রহস্যজনক এলিয়েন???
    Total Reply(0) Reply
  • MD Sunny Dhali ১৯ অক্টোবর, ২০২১, ১২:৪৪ এএম says : 0
    সরকার যেই মামলা করছে বা করবে সব বিএনপি জামাত হেফাজতের লোক, আসামী বানাবে।
    Total Reply(0) Reply
  • Md Alom ১৯ অক্টোবর, ২০২১, ১২:৪৪ এএম says : 0
    এইটা ভারতীয় চক্রান্ত আওয়ামীলীগ জড়িত
    Total Reply(0) Reply
  • Md Mahabub Alam ১৯ অক্টোবর, ২০২১, ১২:৪৫ এএম says : 0
    "হে ঈমানদারগণ! তারা আল্লাহকে বাদ দিয়ে যেসব দেব-দেবীর পূজা-উপাসনা করে, তোমরা তাদেরকে গালি দিও না। কেননা তারা সীমালংঘন করে অজ্ঞানতাবশতঃ আল্লাহকেও গালি দেবে।" (সূরা আনআম: ১০৮) যেখানে অন্য ধর্মের দেবতাকে গালি দেওয়া নিষিদ্ধ, সেখানে মন্দির ভাঙচুর ও মানুষ হত্যা কীভাবে বৈধ হতে পারে? যারা এমনটি করে, তাদের পরিচয় আর যা-ই হোক তারা মুসলমান নয়। একজন প্রকৃত মুসলমান কখনোই ভিন্নধর্মাবলম্বীদের অনুভূতিতে আঘাত আসে এমন কোনো কাজ করতে পারে না।
    Total Reply(1) Reply
    • ১৯ অক্টোবর, ২০২১, ১০:১১ এএম says : 0
  • এ. আর. শাওকী ১৯ অক্টোবর, ২০২১, ১২:৪৫ এএম says : 0
    সবকিছুর পিছনেই ওপারের দাদা আর এপারের নৌকা বাহিনীর হাত রয়েছে এটি আপাতত নিশ্চিত।
    Total Reply(0) Reply
  • Hanif Biplob ১৯ অক্টোবর, ২০২১, ১২:৫৪ এএম says : 0
    ইসলাম শান্তির ধর্ম শ্রেষ্ঠ ধর্ম ইসলাম ধর্মরে কথাও বলে নাই নিরপরাধ মানুষের জানমালের উপর হামলা করতে যারা এই জঘন্য কাজ করেছে তারা জানোয়ারের সমতুল্য এদের কঠিন বিচার হওয়া উচিত যাতে ভবিষ্যতে এধরনের কাজ কেউ না করতে পারে।
    Total Reply(0) Reply
  • Abdul Alim ১৯ অক্টোবর, ২০২১, ১২:৫৪ এএম says : 0
    যারা রংপুরে হিন্দুপল্লীতে আগুন দিয়েছে তারা অমানুষ। দ্রুত এদের আইনের আওতায় এনে কঠোর শাস্তি দেওয়া হোক।
    Total Reply(0) Reply
  • Muhammad Reaz Uddin ১৯ অক্টোবর, ২০২১, ১২:৫৫ এএম says : 0
    কতটা নিকৃষ্ট হলে সংখ্যা লঘুদের ওপর হামলা করে!!! ভালো থাকুক পৃথিবীর যে কোন ভাষার, যে কোন ধর্মের, যে কোন বর্ণের সংখ্যা লঘুরা।
    Total Reply(1) Reply
    • sagor ১৯ অক্টোবর, ২০২১, ১১:১৪ এএম says : 0
      Muhammad Reaz uddin, sobai jodi apner moto vabto bhai tahole eto problem hoto na.
  • Atikur Rahman ১৯ অক্টোবর, ২০২১, ১২:৫৫ এএম says : 0
    সাম্প্রদায়িকতার আড়ালে থাকা। রাজনৈতিক দুর্বৃত্তদের সমূলে নির্মূল না করলে। কোনদিন সাম্প্রদায়িকতা দূর করা যাবে না,যাবে না, যাবে না।
    Total Reply(0) Reply
  • Bojlur Rahaman ১৯ অক্টোবর, ২০২১, ২:০২ এএম says : 1
    This jealous Indian HIndu nation cannot tolerate the prosperity of Bangladesh or any other country that goes above India. So India will create an environment to step foreign investment to come to Bangladesh.
    Total Reply(0) Reply
  • Salman ১৯ অক্টোবর, ২০২১, ৬:০৯ এএম says : 0
    সাধারন মানুষ যেকোন ধর্মাবলম্বী হোক না কেন সে তার নিজের ধর্ম পালন করবে... কোন ধর্ম কাউকে অন্যায়ভাবে জুলুম করতে শেখায় না...যারা এসব কর্মকাণ্ড করেছে এবং যারা সাথে জরিত সবার দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানাচ্ছি....
    Total Reply(0) Reply
  • বিকাশ চন্দ্র রায় ১৯ অক্টোবর, ২০২১, ৯:১৭ এএম says : 0
    যারা অন্যায় করবে তাদের দৃষ্টান্ত মুলক শাস্তি হউক এটাই সংখ্যলঘুদের চাওয়া!
    Total Reply(0) Reply
  • Abul Kalam ১৯ অক্টোবর, ২০২১, ১০:৪৬ এএম says : 0
    বাস্তবতা এমনই মনে হয়। এখানে বড় কোন স্বার্থ সংশ্লিষ্ট আছে।
    Total Reply(0) Reply
  • ফিরদাউস হাসান ১৯ অক্টোবর, ২০২১, ১০:৪৭ এএম says : 0
    ছেলেটি নিজ থেকেই এই কাজটি করেনি বরং তাকে দিয়ে কেউ করিয়েছে বলে মনে হচ্ছে। একদিকে যারা মুসলিমদের আবেগি মনে উস্কানি দিবে, আপনি সেটাকে অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা বলবেন! অপরদিকে উস্কানির কারণে যে অনাকাঙ্খিত ঘটনা ঘটেছে, তাকে দুষ্কৃতকারীদের পরিকল্পিত ঘটনা বলবেন! এটা কিভাবে মেনে নিতে পারে বাংলার মানুষ?
    Total Reply(0) Reply
  • Hasan Munna ১৯ অক্টোবর, ২০২১, ১০:৪৭ এএম says : 0
    কোন মন্দিরে হামলা তো বহুদূর, মূর্তিকে গালি দেওয়া পর্যন্ত ইসলামে নিষেধ করেছে। মহান আল্লাহ্ পাক বলেন, ‘হে ঈমানদারগণ! তারা আল্লাহকে বাদ দিয়ে যেসব দেবদেবীর পূজা-উপাসনা করে, তোমরা তাদের গালি দিও না। যাতে করে তারা শিরক থেকে আরো অগ্রসর হয়ে অজ্ঞতাবশত আল্লাহকে গালি দিয়ে না বসে। (সূরা আনআম: ১০৮)
    Total Reply(0) Reply
  • গিয়াস উদ্দিন ১৯ অক্টোবর, ২০২১, ১০:৫০ এএম says : 0
    বিশিষ্ট মুক্তিযোদ্ধা গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরীর বক্তব্যের সাথে আমি একমত
    Total Reply(0) Reply
  • ইলিয়াস ১৯ অক্টোবর, ২০২১, ১০:৫১ এএম says : 0
    যারা এ ধরনের কাজে উস্কানি দিয়েছে এবং এহেন ন্যক্কারজনক ও অমানবিক ঘটনা ঘটিয়েছে তারা যে ধর্মেরই হোক তাদের চিহ্নিত করে আইনের আওতায় আনার দাবি জানাচ্ছি
    Total Reply(0) Reply
  • TR Tahid ১৯ অক্টোবর, ২০২১, ১০:৫৯ এএম says : 0
    কিছু লোকের উস্কানিতে দাঙ্গা সৃষ্টির উদ্দেশ্যে এগুলো করা হচ্ছে। প্রকৃত ধার্মিক ব‍্যক্তি এ ধরনের কাজ করে না। প্রকৃত দোষীদের আইনের আওতায় এনে কঠোর শাস্তি দেওয়া হোক
    Total Reply(0) Reply
  • সফিক আহমেদ ১৯ অক্টোবর, ২০২১, ৩:৫৭ পিএম says : 0
    আশা করি খুব শিঘ্রই এই রহস্যের উৎঘাটন হবে
    Total Reply(0) Reply
  • জসিম ১৯ অক্টোবর, ২০২১, ৩:৫৮ পিএম says : 0
    সকলে সম্মিলিতভাবে এই ধরনের সকল ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে হবে।
    Total Reply(0) Reply
  • jack ali ২৩ অক্টোবর, ২০২১, ১২:৩৯ পিএম says : 0
    আমাদের নবীজি সাঃ বলেছেন যে মুসলিম সংখ্যালঘু দের উপর অত্যাচার করবে আমি কেয়ামতের দিন ওই মুসলিমদের এগেইন্সটে আমি আল্লাহর কাছে বিচার দিব যদি নবীজি ওই মুসলিমের বিরুদ্ধে আল্লাহর কাছে বিচার দেয় তবে ওই মুসলিম কোন জাহান্নামে যাবে আমাদের দেশের লোক কিছু আছে আবেগি লোক আছে এরা জঘন্যতম অন্যায় কাজ করে .............
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: পবিত্র কোরআন

১৯ অক্টোবর, ২০২১

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ