Inqilab Logo

শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৬ বৈশাখ ১৪৩১, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

সৈয়দপুর স্টেডিয়াম এখন গোচারণভূমি

প্রকাশের সময় : ১৫ অক্টোবর, ২০১৬, ১২:০০ এএম

নজির হোসেন নজু, সৈয়দপুর (নীলফামারী) থেকে

নীলফামারীর সৈয়দপুরের সাথে রাজধানীসহ দক্ষিণ ও উত্তরাঞ্চলের বিভিন্ন এলাকায় রয়েছে আকাশ, রেল ও সড়কপথের যোগাযোগ ব্যবস্থা। আছে এ শহরে আন্তর্জাতিকমানের আবাসন সুবিধা। এ সুবিধা দ্বারা সৈয়দপুরের সুবিশাল গ্যালারীবিহীন স্টেডিয়ামে বিভিন্ন প্রান্তের ফুটবল ও ক্রিকেট দল আসত। কানায়-কানায় পূর্ণ হতো দর্শকে। যা সুখস্মৃতিতে মলিনের পথে আয়োজন আর পরিচর্যার অভাবে। ক্রীড়াহীন এ স্টেডিয়ামটি এখন পোকামাকড়ের বসতি আর গোচারণভূমিতে পরিণত হয়েছে। তবে সংশ্লি­ষ্ট ঊর্ধ্বতনরা উদ্যোগ নিলে বাঁচত এ জনপদের ক্রীড়াঙ্গন। বাড়ত দেশের ক্রীড়াঙ্গনে আর একটি আন্তর্জাতিক ভেন্যু। পাশাপাশি প্রত্যন্ত এলাকায় লুকিয়ে থাকা মেধাবীরা সুযোগ পেয়ে দেশের ক্রীড়াঙ্গনকে সমৃদ্ধ করে সুনাম বয়ে আনত বলে মনে করছেন স্থানীয় ক্রীড়াবিদ ও সচেতন রাজনীতিকরা। জানা যায়, শহরের দিনাজপুর সড়কে ঢাকা কোচ স্ট্যান্ড সংলগ্ন পৌর ১১নং ওয়ার্ডে কুন্দল দহলা এলাকায় তৎকালীন প্রেসিডেন্ট মেজর জিয়াউর রহমান ১৯৮০ সালে প্রায় ১২ একর জমি প্রাচীর দিয়ে ঘিরে এ উপজেলাবাসীর খেলাধুলার জন্য স্টেডিয়ামটি নির্মাণ করেন। এরপর হতেই এখানে উপজেলা ক্রীড়া পরিষদের উদ্যোগে ফুটবল লীগ, অ্যাথলেট প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হতো। এছাড়া এলাকাবাসীর উদ্যোগে ১৯৯৫ সালে ঢাকা গাজীপুরের ব্রাদার্স ইউনিয়নসহ দেশের বিভিন্ন প্রান্তের ১৬টি অতিথি দল নিয়ে আফতাব-জহীর নামে একটি গোল্ডকাপ অনুষ্ঠিত হয়েছিল। সে প্রতিযোগিতায় ঢাকার অতিথি দলটি দেখেছে এ উপজেলার হাজার হাজার ফুটবল প্রেমীর উম্মাদনা। এরপর সে প্রতিযোগিতা নিয়মিত আর হয়নি। তবে আচমকা দীর্ঘ বিরতিতে এ উপজেলার ফুটবল লীগ আয়োজন হলেও দর্শকরা মাঠে এসেছিলেন। আবার বন্ধ। আর ক্রিকেট প্রতিযোগিতা আয়োজনের অবস্থা একই। আর মাঠটি পরিচর্যা না হওয়ায় পিচ থাকলেও কোন ক্লাবই অনুশীলন করতে আসেন না। এভাবে এ জনপদের ফুটবল ও ক্রিকেট খেলা ও খেলোয়াড় প্রায়ই হারিয়ে যেতে বসেছে। অথচ সৈয়দপুরের খেলোয়াড়দের নিয়ে গড়া হতো নীলফামারী জেলা ক্রিকেট দল। দীর্ঘদিন ধরে চলায় এটি ঐতিহ্যে পরিণত হয়েছিল। আর অন্যান্য ইভেন্টে তো এ উপজেলার অ্যাথলেটরা জানে না। অথচ ১৯৯১ সালে ক্রীড়া সংস্থার উদ্যোগে স্থানীয় ক্লাবদের নিয়ে অ্যাথলেটের ২৫টি ইভেন্টে প্রতিযোগিতা হয়েছিল। পরে এ প্রতিযোগিতাও আর হয়নি। এভাবে দিনের পর দিন কোন খেলাধুলা না হওয়ায় হুমকিতে পড়েছে এ জনপদ হতে সকল খেলা। স্টেডিয়ামটিতে গিয়ে দেখা যায়, ৮০-১২০ মিটারের মাঠটিতে দেড়ফুট উচ্চতার ঘাস। একই মাপের উভয়দিকের ২টি আউটফিল্ডে অবস্থা আরো ভয়ংকর। প্রায় ৮ হতে ১০ ফুট উচ্চতার জঙ্গলে ভরে গেছে। আর এর আড়ালে চলে তরুণদের জুয়া ও নেশার আড্ডা। যেন দেখার কেউ নেই। অথচ যোগাযোগ ব্যবস্থায় এ শহরের বিমানবন্দরে ঢাকা হতে প্রতিদিন ৫টি ফ্লাইট ওঠানামা করে। যার আকাশ পথের দূরত্ব ৫০ মিনিট। ট্রেনে খুলনা, যশোর, ঢাকাসহ সকল রেল এলাকায় যাওয়া-আসা। আবার বাসে সুদূর বরিশালসহ দেশের সকল এলাকায় সহজ যাতায়াত ব্যবস্থা থাকায় এ স্টেডিয়ামে সহজেই বিদেশী দল আসতে পারবে। আর এ কারণে উপজেলার ক্রীড়ামোদীসহ রাজনীতিবিদরা এ স্টেডিয়ামকে আন্তর্জাতিক স্টেডিয়াম করার জন্য সর্বমহলে দাবি তুলেছেন। এ উপজেলার প্রবীণ রাজনীতিক ও সাবেক পৌর চেয়ারম্যান আলহাজ বখতিয়ার কবির বলেন, উত্তরবঙ্গেও ১৬ জেলার চেয়ে আমরা মাঠ ও যোগাযোগ ব্যবস্থা, আবাসন ও নিরাপত্তা সুবিধায় এগিয়ে আছি। তাই এটি আমাদের প্রাণের দাবি। বাংলাদেশ এ দলের সাবেক উইকেটকিপার মুহাম্মদ মুখতার সিদ্দিকী বলেন, দীর্ঘদিন ঢাকার মাঠে খেলেছি। সৈয়দপুরকে ক্রিকেট নিয়েই চিনত। এখন এ অবস্থা আর নেই। শুধু মাঠ আর খেলার অভাবে। এরপরেও এতবড় গ্রাউন্ডের স্টেডিয়াম উত্তরাঞ্চলে দ্বিতীয়টি নেই। অথচ সংশ্লিষ্টরা এ নিয়ে কোন পদক্ষেপ নেন না। যা খুবই দুঃখজনক। এলাকাবাসী জানান, এখানে শুধু মহান স্বাধীনতা ও বিজয় দিবস উদযাপন হয়। আর খেলা বলতে প্রাথমিক ও উচ্চ বিদ্যালয়গুলোকে নিয়ে বঙ্গবন্ধু এবং বঙ্গমাতা প্রতিযোগিতা ছাড়া আর কোন খেলাই হয় না। এ স্টেডিয়ামে ফুটবল খেলে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী দলে বগুড়া এরিয়া দলে খেলছেন ফেরদৌস হাসান বাপ্পি। তিনি জানান, বাংলাদেশে এত বড়মাপের মাঠ কোথাও নেই। তাই অন্যান্য সকল সুবিধা সৃষ্টি করে এটি আন্তর্জাতিক হলে উত্তরাঞ্চলের ক্রীড়ায় উন্নয়নের বিপ্লব ঘটবে। উন্নয়নের শতভাগ সম্ভাবনা থাকলেও মাঠটির জরাজীর্ণ দশা নিয়ে সৈয়দপুর উপজেলা ক্রীড়া সংস্থার ফুটবল আহ্বায়ক মোঃ জোবায়দুল হক শাহীন বলেন, বাংলাদেশ অলিম্পিক এসোসিয়েশন হতে বছরে মাত্র ৬৫ হাজার টাকা আসে। এ টাকা দিয়ে খেলা ছাড়া অন্যান্য কার্যক্রম চালানো হচ্ছে। তবে ফুটবল ও ক্রিকেট লীগ শুরু করার পরিকল্পনা রয়েছে। আর এ সময় মাঠটি পরিস্কার করা হবে। মাঠটিকে শুধু জীর্ণদশা থেকে নয়। আমরা ভৌগোলিক ও অন্যান্য প্রস্ততকৃত সুবিধার ক্ষেত্র হতেই এ স্টেডিয়ামটি আন্তর্জাতিকমানের পাওয়ার দাবি রাখি। তাই এ বিষয়টি নিয়ে সংসদে অবশ্যই প্রস্তাব পেশ করব বলে মতামত দেন নীলফামারী-৪ আসনের সাংসদ আলহাজ শওকত চৌধুরী।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: সৈয়দপুর স্টেডিয়াম এখন গোচারণভূমি
আরও পড়ুন
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ