Inqilab Logo

শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৬ বৈশাখ ১৪৩১, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

সমান্তরাল বিশ্বের প্রমাণ পেয়েছেন বিজ্ঞানীরা!

ইনকিলাব ডেস্ক | প্রকাশের সময় : ২৬ অক্টোবর, ২০২১, ১২:০০ এএম

প্যারালাল ইউনিভার্স বা সমান্তরাল বিশ্ব হচ্ছে এমন একটি তত্ত্ব যেখানে বলা হয়েছে মহাবিশ্বে একাধিক পৃথিবী রয়েছে এবং তারা একটি অন্যটির প্রতিরূপ। প্যারালাল ইউনিভার্স আমাদের ব্রহ্মাণ্ডের মতো আরও একটি বা একাধিক ব্রহ্মাণ্ড যা ঠিক আমাদেরই মতো। সেখানকার প্রকৃতি, ভূমণ্ডল এমনকি প্রাণিজগৎও একেবারে আমাদেরই মতো। হুবহু আমাদেরই মতো দেখতে সবকিছু। একেবারে যেন আমাদের যমজ বিশ্ব। এমনকি এটাও ধারণা করা হয় যে, প্যারালাল ইউনিভার্স এর পৃথিবীর মত যে গ্রহগুলো আছে সেগুলোতে একই ধরনের মানুষ আছে। হতে পারে আপনি যেমন এই লেখাটি এই মুহূর্তে পড়ছেন ঠিক আরেকটি প্যারালাল ইউনিভার্স এ আপনার প্রতিরূপ আরেকজন আছে, যে এই মুহূর্তে এ লেখাটিই পড়ছে এবং আপনারা দু’জনেই দু’জনের কথা ভাবছেন। তবে বিষয়টি নিয়ে বিজ্ঞানীদের মধ্যে মতভেদ আছে। কেউ কেউ এর অস্তিত্ব রয়েছে বলে বিশ্বাস করলেও অনেকেই একে উড়িয়ে দেন। তবে সম্প্রতি কয়েকটি ঘটনায় প্যারালাল ইউনিভার্স সম্বন্ধে ধারণা আরও জোরদার হয়েছে।

২০১৬ সালে নাসার বিজ্ঞানীরা অনিটা (অ্যান্টার্কটিক ইমপালসিভ ট্রানসিয়েন্ট অ্যান্টেনা ) নিয়ে গবেষণা শুরু করেন। এটি হচ্ছে মূলত অনেকগুলো এন্টেনা বসানো একটি হিলিয়াম ভর্তি বেলুন। এটি তৈরি করা হয়েছিল উচ্চ শক্তি সম্পন্ন মহাজাগতিক রশ্মির নিউট্রিনোস শনাক্ত করার জন্য। এগুলোই হল একমাত্র নিউট্রিনোস যা শক্তির ক্ষয় ছাড়াই পৃথিবীতে পৌঁছাতে পারে। কিন্তু নাসার বিজ্ঞানীরা অবাক হন যখন তারা দেখতে পান অনিতা ‘টাও নিউট্রিনোস’ নামক আরও শক্তিশালী কণা শনাক্ত করেছে যেগুলো পৃথিবী থেকে বের হয়ে আসছে। এর অর্থ এটা হতে পারে যে কণাগুলোর সময়ের বিপরীতে ভ্রমণ করছে যা প্যারালাল ওয়ার্ল্ডের একটি প্রমাণ হতে পারে। আবার এর মানে এটি হতে পারে যে প্যারালাল ওয়ার্ল্ড সময় এর বিপরীতে চলছে। সম্প্রতি, ইউরোপিয়ান স্পেস এজেন্সির প্লাঙ্ক স্যাটেলাইটক্ষুদ্র রশ্মির পটভূমির (সিএমবি) ম্যাপ তৈরি করেছে, আমাদের মহাবিশ্ব কিভাবে স্পিত এবং বর্ধিত হয়েছে এটি হচ্ছে তার রেকর্ড। আপাতদৃষ্টিতে সিএমবির তাপমাত্রা স্বাভাবিক দেখালেও মাইক্রো কেলভিন স্কেলে তাপমাত্রার অনেক তারতম্য দেখা যায়। ক্ষুদ্র কোয়ান্টাম কণার ঘনত্বের তারতম্যে এমন হয়। কিন্তু প্রশ্নের সৃষ্টি হয় যখন সিএমবির একটি বড় অংশে নিম্ন তাপমাত্রার এলাকা দেখা যায়। যদিও এর কোন সঠিক ব্যাখ্যা খুজেঁ পাওয়া যায়নি। তবে অনেক বিজ্ঞানীই ধারণা করেন আমাদের বিশ্বের সাথে প্যারালাল ওয়ার্ল্ডের সংঘর্ষের কারণেই এমনটি ঘটেছে।

পদার্থবিজ্ঞানের তত্ত্বমতে, আমাদের এ বিশাল বিশ্বব্রহ্মাণ্ডে আমাদের মহাবিশ্বের মতোই সমান্তরাল কিছু মহাবিশ্ব রয়েছে, যেখানে সময় আমাদের উল্টোদিকে প্রবাহিত হয়। অর্থাৎ, বিশ্বজগতের কোথাও ঠিক এমন একটি মহাবিশ্ব আছে, যেখানে হয়তো আমাদের মতোই মিল্কিওয়ে ছায়াপথ আছে, আছে নানা নীহারিকা। সেখানেও সৌরজগতের মাঝে পৃথিবী নামে নীলাভ একটি গ্রহ আছে, যে গ্রহে হয়তো এই মুহুর্তে আপনার মতো দেখতে কেউ একজন অসীম আগ্রহ নিয়ে প্যারালাল ইউনিভার্সের তত্ত্ব সম্পর্কে পড়াশোনা করছে। অর্থাৎ, বিশ্বব্রহ্মাণ্ডের কোথাও না কোথাও একইরকমের কিছু সমান্তরাল মহাবিশ্ব রয়েছে, যারা একে অপরের অস্তিত্ব সম্পর্কে জানে না। একেই সাধারণভাবে প্যারালাল ইউনিভার্স বলা হয়ে থাকে। প্যারালাল ওয়ার্ল্ডের বিষয়ে স্ট্রিং থিওরি (পরবর্তীকালে সুপার স্ট্রিং থিউরি)-কে ‘থিওরি অফ এভ্রিথিং’ বলা হয়। সম্ভবত আইনস্টাইনের স্পেইস-টাইম থিওরির পর এই স্ট্রিং থিওরিই পদার্থবিজ্ঞানের সবচেয়ে সাড়া জাগানো তত্ত্ব। এর সাহায্যে বিজ্ঞানীরা মূলত মহাবিশ্বের চারটি বল (মহাকর্ষ বল, তড়িৎ চৌম্বকীয় বল, সবল নিউক্লিয় বল ও দুর্বল নিউক্লিয় বল)-কে একত্রে ব্যাখ্যা করার চেষ্টা করেছেন। এ তত্ত্বের মূলকথা হচ্ছে, মহাবিশ্বের সকল কিছুই কিছু স্ট্রিং-এর কম্পন থেকে তৈরি। প্রশ্ন হচ্ছে, এই স্ট্রিংগুলোর কোথায় অবস্থান করে?

আমরা যদি কোনো পদার্থকেক্ষুদ্রক্ষুদ্র অংশে বিভক্ত করতে থাকি, তবে আমরা অণু, পরমাণু, নিউক্লিয়াস, ইলেকট্রন, প্রোটন, নিউট্রন, কোয়ার্ক ইত্যাদির দেখা পাবো। তবে আধুনিক পদার্থবিজ্ঞান বলে, কোয়ার্কের পরেও আরো একটি ক্ষুদ্র অংশ রয়েছে পদার্থের। যদি আমরা কোয়ার্ককে বর্ধিত করি তাহলে পাবো এক শক্তি, যা সুতো বা তারের মতো। যখন কেউ গিটারে সুর তোলে গিটারের তার কেঁপে শব্দগুলো তৈরি করে। এখানেও স্ট্রিং অর্থাৎ সুতোটি ভাইব্রেট করে আর কোয়ার্ক তৈরি করে। কোয়ার্ক তৈরি করে নিউট্রন। এভাবে যদি আমরা সবগুলোকে আবার একত্রিত করি তাহলে পাবো সেই মূল মৌলিক পরমাণুটি। আমরা এখন পর্যন্ত যা কিছু আবিষ্কার করলাম তার সবই মূলত কিছু স্ট্রিং প্রতিটি ধাপে তার নিজের রূপে কম্পিত হয়ে এগুলো সৃষ্টি করছে। এটাই স্ট্রিং থিওরির মৌলিক ধারণা। এখন, বিজ্ঞানীরা এ স্ট্রিং থিওরি নিয়ে কাজ করতে গিয়ে একপর্যায়ে দেখলেন, এগুলোকে ব্যাখ্যা করার জন্য বেশ কিছু মাত্রার প্রয়োজন হচ্ছে, যা কি না আমাদের চতুর্থমাত্রিক মহাবিশ্বের থেকেও অধিক মাত্রার। অর্থাৎ, এই স্ট্রিং থিওরির সাহায্যে কণিকাগুলোকে ব্যাখ্যা করার জন্য প্রয়োজন দশটি ভিন্ন ভিন্ন মাত্রার। যেক্ষেত্রে এই মাত্রাগুলো এই চার মাত্রার বাইরেও থাকতে পারে, আবার ঘুরে-ফিরে এই চার মাত্রার ভেতরেও থাকতে পারে। প্রশ্ন জাগতে পারে, মাত্রার ভেতরে আবার মাত্রা কীভাবে থাকে! একটু কঠিন লাগছে? আরেকটু সহজভাবে ব্যাখ্যা করা যাক!

ধরে নেই, আপনি একটি একটি সরু বাঁশের সাঁকোর উপর দিয়ে হেঁটে যাচ্ছি। বাঁশটি আপনার কাছে একটি সরলরেখার মতোই, একমাত্রিক। আপনি শুধুমাত্র এর দৈর্ঘ্য বরাবরই হাঁটতে পারবেন। কিন্তু একটি পিঁপড়ার কাছে বাঁশটি দ্বিমাত্রিক। কারণ সে চাইলে বাঁশের পরিধি বরাবরও ঘুরে আসতে পারবে। ঠিক একইভাবে, আমাদের চারপাশের মাত্রাগুলোর মধ্যেও এমন ভিন্ন ভিন্ন মাত্রা থাকা সম্ভব, যেসকল মাত্রায় আমাদের অধিগমনের ক্ষমতা না থাকলে অন্য মাত্রায় অধিগমন করার ক্ষমতা অন্য কারোর থাকতেই পারে। আবার, যে পিঁপড়াটি যখন বৃত্তাকার বাঁশের ভেতরের ঢুকবে, তখন তার মনে হবে সে একটি বেলনাকার ত্রিমাত্রিক তলের মধ্যে আছে। এখন ভেবে দেখুন, বাঁশের দ্বিমাত্রিক তলে চলাচল করার সময় সে কিন্তু বাঁশের উপরে শুধুমাত্র একমাত্রিক তলে হেঁটে যাওয়া আপনাকে দেখতে পাচ্ছে না। অর্থাৎ, ভিন্ন ভিন্ন মাত্রায় প্রবেশ সাপেক্ষে আমরা একে অন্যকে অনেক সময় দেখতে পাইনা। দশমাত্রিক এই মহাবিশ্বের ধারণা থেকেই প্যারালাল ইউনিভার্স ধারণা আসে। ধারণা করা হয়, আমাদের এই মহাবিশ্বের মাঝেই অন্য কোনো মহাবিশ্ব বিদ্যমান আছে, কিন্তু মাত্রাসংক্রান্ত জটিলতার কারণে আমাদের সেসকল মহাবিশ্বে অধিগমনের ক্ষমতা নেই।

স্ট্রিং তত্ত্বের অন্য একটি দিক আমাদের মাল্টিভার্সের সম্ভাবনার দিকেও ইঙ্গিত প্রদান করে। বিজ্ঞানীরা মনে করেন, আমাদের বিশ্বব্রহ্মাণ্ড এত বেশি পরিমাণে অসীম ব্যপ্তিসম্পন্ন যে, এখানে একাধিক পরিমাণে ইউনিভার্স থাকা সম্ভব। বিজ্ঞানীদের মতে, আমাদের মহাবিশ্বের বাইরেও আরো কিছু বিগ ব্যাং হয়েছে বা হয়ে চলেছে, যার ফলে প্রতিনিয়ত সৃষ্টি হচ্ছে একাধিক মহাবিশ্ব। অর্থাৎ একটি বড় বাবলের মধ্যে যদি আমরা অনেকগুলো ছোট ছোট বাবলের কথা চিন্তা করি তাহলে আমরা বুঝতে পারবো মাল্টিভার্স কীভাবে সৃষ্টি হচ্ছে বা টিকে আছে। সূত্র : দ্য ফিউচারিস্ট।



 

Show all comments
  • বাশীরুদ্দীন আদনান ২৬ অক্টোবর, ২০২১, ৩:২৩ এএম says : 0
    সময়ের সাথে সাথে আরও অনেক কিছু জানা যাবে
    Total Reply(0) Reply
  • মোঃ রহমান ২৬ অক্টোবর, ২০২১, ৬:১৪ এএম says : 0
    আমদের এই পৃথিবীর মতো মোট ৭টা পৃথিবী আছে, প্রত্যেক জায়গাতেই আমাদের মতো এমন মানুষ আছে, কাজী ইব্রাহীম হুজুর নতুন কিছু বলেননি। যা অন্তত আমি শুনে এসেছি, জেনে এসেছি তাইই আবার উনার মতো উচ্চ শিক্ষিত হুজুর থেকে শুনলাম। তাতে আমাদের বিশ্বাস আরো পোক্ত হলো। আর এখানে তো দেখছি দুনিয়ার বিজ্ঞানীরাও প্যারালাল ইউনিভার্স, মাল্টিভার্স বলে যে কিছু আছে সেদিকেই ইংগিত করছে। উলটা পালটা বকার জন্য এখন কি এই বিজ্ঞানিদের গ্রেফতার করা হবে নাকি কাজি ইব্রাহিম সাহেবকে ছেড়ে দেওয়া হবে?
    Total Reply(0) Reply
  • Rajib Choudhury ২৬ অক্টোবর, ২০২১, ৬:০০ পিএম says : 0
    Eagerly waited outer space story.
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: সমান্তরাল বিশ্বের প্রমাণ পেয়েছেন বিজ্ঞানীরা
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ