Inqilab Logo

শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ০৭ বৈশাখ ১৪৩১, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

রোগ প্রতিরোধে জলপাই

| প্রকাশের সময় : ২৯ অক্টোবর, ২০২১, ১২:০৩ এএম

শীতের বিভিন্ন রকম ফলের মধ্যে জলপাই অত্যন্ত পরিচিতি ও পুষ্টিকর ফল। জলপাইকে জয়তুনও বলা হয়। এটি টক জাতীয় ফল। ফলটিতে বিভিন্ন খাদ্য উপাদান প্রচুর পরিমাণে বিদ্যমান। জলপাই থেকে তেল তৈরি করা হয়। যা মানব শরীরের জন্য অত্যন্ত উপকারী। জলপাইয়ের তেল অসম্পৃক্ত চর্বির একটি ভালো উৎস জলপাইয়ের তেল হাত পায়ে গায়ে বিশেষ করে শীতকালে ব্যবহার করলে চামড়া বা ত্বক সুন্দর ও মোলায়েম হয়। জলপাই ফল কাঁচা ও পাকা অবস্থায় খাওয়া যায়। ফলের খাদ্য উপাদান সরাসরি শরীরে গৃহীত হয়। এতে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন এ, সি, লৌহ, শর্করা বিদ্যমান। জলপাইয়ের ইংরেজি নাম ঙষরাব, বৈজ্ঞানিক নাম ঊশধপপধৎঢ়ঁং ঝবৎৎধঃঁং, ঊষধপড়-ঈধৎঢ়ধপবধব গোত্রের উদ্ভিদ। ফল ড্রপ জাতীয় এবং একটি করে বীজ থাকে। পাতায় থাকে ভিটামিন সি, মাইরেসেটিন, মাইরিকট্রিন ও এলাজিক এসিড। ফলে থাকে ট্যানিন, সাইট্রিক এসিডসহ প্রচুর পরিমাণে উদ্ভিজ্জ এসিড। জলপাই আমাদের দেহের ভিটামিন এ, সি অভাবজনিত রোগের হাত থেকে বাঁচিয়ে রাখে। বিশেষ করে চামড়ার, চোখের হাড় ও দাঁতের নানা সমস্যা দূর করে। দেহের আয়রণের অভাব পূরণ করে। যা দেহের রক্ত শূন্যতা দূর করতে কার্যকরী ভ‚মিকা পালন করে। এ উপকারী ফলটি সম্পর্কে পবিত্র কোরআনে আল্লাহ বলেন “এবং ঐ বৃক্ষ সৃষ্টি করেছি, যা সিনাই পর্বতে জন্মায় এবং আহারকারীদের জন্য তৈল ও নানা রং ও গুণাগুণ উৎপন্ন করে”। আংশিক (সূরা-মুমিনুন, আয়াত-২০) ওমর বিন খাত্তাব (রা.) হতে বর্ণিত মহানবী (সা.) বলেছেন, তোমরা জলপাই তৈল খাও এবং খাদ্যের সাথে এর তৈল মিশাও। (তিরমিজি ও ইবনে মাজা)। পুষ্টিবিদদের ১০০ গ্রাম খাবার উপযোগী জলপাইয়ে পুষ্টি উপাদান নিম্ন রূপ :

১। খাদ্য শক্তি ১৪৬ কিলোক্যালরি, শর্করা ১৬.২ গ্রাম, আঁশ ৩.৩ গ্রাম, আমিষ ১.০৩ গ্রাম, ভিটামিন-ই ৩.৮১ মিলিগ্রাম, ভিটামিন কে-১.৪ আইইউ, আয়রন ৩.১ মিলিগ্রাম, ক্যালসিয়াম ৫২.০০ মিলিগ্রাম, পটাশিয়াম ৪২ মিলিগ্রাম, ম্যাগনেসিয়াম ১১ মিলিগ্রাম।

জলপাই চুলের সৌন্দর্য ও হজমের কাজে সাহায্য করে। এতে প্রচুর পরিমাণে আঁশ থাকে। যা পেটের মল তৈরি ও বের হতে সাহায্য করে। মানব দেহের লাইপো-প্রোটিনের পরিমাণ কমিয়ে হার্ট বা হৃদপিন্ডকে সুস্থ রাখে। জলপাইয়ে প্রাকৃতিক অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট থাকে যা ক্যান্সারের জীবাণু ধ্বংস করতে সাহায্য করে। রক্তে চর্বির পরিমাণ কমায় এবং রক্ত চলাচলে সাহায্য করে। জলপাইয়ে উচ্চ হারে অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল এজেন্ট থাকে। যা দেহে কোন রোগ জীবাণু ঢুকলে বা তৈরি হলে তা মেরে ফেলে এবং সূর্যের অতি বেগুনি রশ্মি থেকে ত্বককে বাঁচিয়ে রাখে। দেহে আয়রণের অভাব পূরণ করে এবং দেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়িয়ে দেয়। দেহে ক্যান্সার প্রতিরোধে বিশেষ ভূমিকা পালন করে। জলপাই দেহের ক্ষতিকর কোলেস্টেরলের মাত্রা কমিয়ে উপকারী কলেস্টেরল এইচডিএল (হাই ডেনসিটি লাইপ্রোটিন) তৈরি করে।

জলপাই হতে যে তেল তৈরি করা হয় তা খুবই উপকারী। * জলপাই তেল বা অলিভ অয়েল দিয়ে রান্না খাবার খেলে বিষন্নতা কমে। * বৃদ্ধ বয়সে হাড়ের অস্টি ও পরোসিসজনিত ক্যালসিয়াম হাড়ের ক্ষয়ের পরিমাণ কমায়। * অলিভ অয়েল হার্টের এজিং প্রসেস ধীরগতি করে। এর অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট ধ্বংস প্রতিরোধ করে। * জলপাই তেলের মিশ্রিত খাবার খেলে কোলন ক্যান্সার কম হয়। * অলিভ অয়েল শরীরে ব্যবহার করলে চামড়া সুস্থ, উজ্জ্বল ও মসৃন থাকে। * শরীরে কাঁটা চিরার দাগ থাকলে নিয়মিত দাগে অলিভ অয়েল লাগালে দাগ সেরে যায়। * শীতকালে অনেকেরই পায়ে ফাটল দেখা দেয়, প্রতিদিন রাতে পা ভালো করে পরিষ্কার করে অলিভ অয়েল লাগলে দাগ সেরে যায়। * যাদের চুল ঝরে চুল ভঙ্গুর হয় তারা এ তেল নিয়মিত ব্যবহার করলে চুল ঝরা কমে এবং চুল সুন্দর হয়। * অলিভ অয়েলে মনোস্যচুরেটেডফ্যাট থাকে যা ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখতে সাহায্য করে। * নিয়মিত অলিভ অয়েল ব্যবহার করলে উচ্চ রক্তচাপ কমে। যে সব মহিলাদের সিজারের মাধ্যমে বাচ্চা হয়েছে তারা সুস্থ পর তলপেটে কাটার স্থানে অলিভ অয়েল নিয়মিত ব্যবহার করলে দাগ মিলিয়ে যায় ও চামড়া মসৃণ হয়। * জলপাইয়ে এন্টি-অক্সিডেন্ট ক্যান্সার প্রতিরোধ করে। * বাতের ব্যথায় জলপাই বা জলপাই পাতা গুঁড়ো করে খেলে উপকার পাবেন। * মাথায় উকুন হলে জলপাই পাতার রস নিয়ে সারা মাথায় লাগিয়ে ১৫ মিনিট পর ধুয়ে ফেলুন। উকুন কমে যেতে পারে। * ভাইরাস জনিত জ্বর, ক্রমাগত মোটা হওয়া, জন্ডিস, কাশি ইত্যাদির জন্য জলপাই পাতা গুঁড়ো করে খান উপকার পাবেন। * জলপাই এর খোসায় বা বাকলে প্রচুর আঁশ থাকে যা খেলে কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে। জলপাই দিয়ে বিভিন্ন আচার বানানো যায়। এই আচার সংরক্ষণ করে সারা বছর খাওয়া যায়।

সতর্কতা- যাদের অপারেশন হয়েছে তারা পুরোপুরি সুস্থ না হওয়া পর্যন্ত জলপাই খাবেন না। এ উপকারী গাছটি বাড়ির আশপাশে লাগান ও যতœ নিন।

মো. জহিরুল আলম শাহীন
স্বাস্থ্য বিষয়ক কলাম লেখক
ফুলসাইন্দ দ্বি-পাক্ষিক উচ্চ বিদ্যালয় ও কলেজ
গোলাপগঞ্জ, সিলেট।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: রোগ প্রতিরোধে জলপাই

২৯ অক্টোবর, ২০২১
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ