Inqilab Logo

শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৬ বৈশাখ ১৪৩১, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

বেগমগঞ্জ থানার ওসিসহ পাঁচ জনকে বরখাস্তের নির্দেশ

নারীকে বিবস্ত্র করে নির্যাতন

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ২৯ অক্টোবর, ২০২১, ১২:০১ এএম

গৃহবধূকে বিবস্ত্র করে নির্যাতন, ভিডিও ধারণ এবং অনলাইনে তা ছড়িয়ে দেয়ার মামলায় নোয়াখালীর বেগমগঞ্জ থানার তৎকালিন ওসি (অফিসার ইনচার্জ)সহ ৫ জনকে সাময়িক বরখাস্ত এবং তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়ার নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট। ঘটনার সময় দায়িত্বে অবহেলা প্রমাণিত হওয়ায় ওই সময়কার ওসি মো. কামরুজ্জামান শিকদারসহ ৫ জনের বিরুদ্ধে।

অন্য চার জন হলেন, উপপরিদর্শক (এসআই) হাবিবুর রহমান, সহকারী উপ-পরিদর্শক (এএসআই) মফিজুল ইসলাম, স্থানীয় ইউপি সদস্য মোয়াজ্জেম হোসেন সোহাগ, গ্রামপুলিশ সদস্য আলী আসগর।
গতকাল বৃহস্পতিবার বিচারপতি মো. মজিবুর রহমান মিয়া এবং বিচারপতি মো.কামরুল হোসেন মোল্লার ডিভিশন বেঞ্চ এ আদেশ দেন। বেঞ্চটির সংশ্লিষ্ট ডেপুটি এটর্নি জেনারেল নওরোজ রাসেল চৌধুরী সাংবাদিকদের এ তথ্য জানান। তিনি বলেন, নোয়াখালীর বেগমগঞ্জে নারীকে বিবস্ত্র করে অবমাননার ঘটনায় ওই সময়কার ওসি,এস.আই. এবং এএসআইকে বরখাস্ত করতে স্বরাষ্ট্র সচিব এবং স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের সচিবকে নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট। এছাড়া ওই ওয়ার্ডের গ্রাম পুলিশ ও ইউপি সদস্যকে বহিষ্কার ও ভুক্তভোগীর নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে বলেন আদালত।

এর আগে গত ৩ অক্টোবর এ মামলায় ২ জনের যাবজ্জীবন কারাদন্ড দেন নারী নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল। কারাদন্ডপ্রাপ্ত আসামিরা হলেন, মো. দেলোয়ার হোসেন দিলু এবং মোহাম্মদ আলী ওরফে আবু কালাম। গতবছর অক্টোবরে গৃহবধূকে বিবস্ত্র করে নির্যাতন এবং ভিডিও চিত্র ভাইরাল করে দেয়ায় সারা দেশে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়। ঘটনার এক মাস পর ওই বছর ৬ অক্টোবর নির্যাতিতা নারী নিজে বাদী হয়ে বেগমগঞ্জ থানায় নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন এবং পর্ণোগ্রাফি আইনে পৃথক দু’টি মামলা করেন। মামলায় উল্লেখ করা হয়, নির্যাতিতা নারী ২০১৯ সালের ৫ অক্টোবর ও ২০২০ সালের ৭ এপ্রিল দুই দফায় তাকে ধর্ষণের অভিযোগে দেলোয়ার ও কালামের বিরুদ্ধে বেগমগঞ্জ মডেল থানায় মামলা করেছিলেন। পরেরবার তাকে বিবস্ত্র করে নির্যাতন এবং ভিডিও ধারণ করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে দেয়ার ঘটনায় নারী ও শিশু নির্যাতন দমন অইন এবং পর্ণগ্রাফি আইনে আরও দুটি মামলা করেন ওই নারী। কিন্তু প্রথমোক্ত মামলার প্রেক্ষিতে বেগমগঞ্জ থানার ওসি এবং তদন্ত কর্মকর্তা আসামিদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেয়নি।

এজাহারের তথ্য মতে, ২০২০ সালের ২ সেপ্টেম্বর একলাশপুর ইউনিয়নের জয়কৃষ্ণপুর গ্রামে স্বামীকে বেঁধে রেখে দেলোয়ার বাহিনীর সদস্যরা রাতে ৩৭ বছর বয়ষ্ক এক নারীকে ঘরে প্রবেশ বিবস্ত্র করে নির্যাতন করে। এ সময় মোবাইল ফোনে ভিডিও চিত্র ধারণ করা হয়। একমাস পর ওইবছর ৪ অক্টোবর ডিভিওটি অনলাইনে ছড়িয়ে দেয়া হয়। এতে ভিডিওটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়। ৮ জনকে আসামি করে মামলা দায়েরের এক বছরের মাথায় নোয়াখালী জেলা নারী ও শিশু নির্যাতন ট্রাইব্যুনাল-১ এর বিচারক জয়নাল আবেদীন দুই আসামিকে কারাদন্ড দেন। মামলাটি অধিকতর তদন্ত করে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)। দাখিলকৃত তদন্ত প্রতিবেদনের ভিত্তিতে গত ১৭ ফেব্রæয়ারি আসামি দেলোয়ার হোসেন দেলু, মোহাম্মদ আলী ওরফে আবুল কালামের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করে আদালত।

এদিকে নারীকে বিবস্ত্র এবং ভিডিও ক্লিপ ছড়িয়ে দেয়ার ঘটনাটি গতবছর ৫ অক্টোবর হাইকোর্টের দৃষ্টিতে আনেন এডভোকেট জেডআই খান পান্না ও ব্যারিস্টার অনীক আর হক। শুনানি শেষে আদালত প্রেনডাইভে কপি রেখে অনলাইন থেকে ওই নারীর ভিডিও ফুটেজ সরাতে বিটিআরসিকে নির্দেশ দেন। এছাড়া ওই নারীর পরিবারকে সব ধরণের নিরাপত্তা দিতে নোয়াখালীর পুলিশ সুপারকে নির্দেশ দেয়া হয়। একইসঙ্গে ঘটনার বিষয়ে ভিকটিমের বক্তব্য গ্রহণে পুলিশের কোনো অবহেলা আছে কিনা তা অনুসন্ধান করতে একটি কমিটি করে দেন। কমিটিকে এ বিষয়ে অনুসন্ধান করে ১৫ কার্যদিবসের মধ্যে হাইকোর্টের রেজিস্ট্রারের কাছে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়। প্রতিবেদন দাখিল করা হলে সেটির ওপর শুনানি হয়। শুনানি শেষে উপরোক্ত আদেশ দেন আদালত।

 



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: গৃহবধূ


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ