Inqilab Logo

শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৬ বৈশাখ ১৪৩১, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

ইউপি নির্বাচনে বিএনপির স্বতন্ত্র প্রার্থী

ফারুক হোসাইন | প্রকাশের সময় : ৩১ অক্টোবর, ২০২১, ১২:০২ এএম

বর্তমান নির্বাচন কমিশন (ইসি) ও সরকারের অধীনে সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব নয় জানিয়ে উপ-নির্বাচন ও স্থানীয় সরকার নির্বাচন বর্জনের ঘোষণা দিয়েছে বিএনপি। বিশেষ করে বিগত একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনসহ কয়েকটি উপ-নির্বাচন ও স্থানীয় সরকার নির্বাচনে সরকার দলীয়দের মারমুখী অবস্থান, নির্বাচন কমিশনের কাছ থেকে আশানুরূপ সাড়া না পাওয়ায় এই সিদ্ধান্ত নেয় রাজপথের বিরোধী দলটি। এই সিদ্ধান্ত উপেক্ষা করে যেসব নেতা নির্বাচনে অংশ নিয়েছে তাদেরকে ইতোপূর্বে দল থেকে বহিষ্কারও করা হয়েছে। এবারও ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) ও পৌরসভা নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পরও একই অবস্থানে থাকে বিএনপি। স্থানীয় সরকার নির্বাচনে বিএনপি অংশ নেবে না জানিয়ে দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) নির্বাচনে দলগতভাবে বিএনপি অংশ নেবে না। এই নির্বাচনে আমরা কাউকে মনোনয়ন দেব না। তিনি বলেন, সাম্প্রতিককালে অনুষ্ঠিত স্থানীয় সরকারের বিভিন্ন উপজেলা পরিষদে উপনির্বাচনে ও সব পৌরসভা নির্বাচনে সরকারের নগ্ন হস্তক্ষেপ এবং নির্বাচন কমিশনের সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠানে চরম ব্যর্থতা নিয়ে দলের স্থায়ী কমিটির বৈঠকে এই সিদ্ধান্ত হয়েছে। বিএনপি মহাসচিব বলেন, বিএনপি গণতন্ত্রে বিশ্বাস করে বলেই চরম প্রতিকূল অবস্থায় স্থানীয় নির্বাচনে অংশ নিয়েছিল। কিন্তু বর্তমান নির্বাচন কমিশনের কোনো নির্বাচনই নিরপেক্ষ, অবাধ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নয়- এটা প্রমাণিত। অনির্বাচিত সরকারের এজেন্ডা বাস্তবায়নই তাদের (ইসি) প্রধান কাজ।

তবে মাঠের চিত্র বলছে ভিন্ন কথা। দলীয়ভাবে স্থানীয় সরকার নির্বাচন বর্জনের ঘোষণা দেয়া হলেও স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে সারাদেশেই প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন বিএনপির স্থানীয় নেতারা। চলমান দ্বিতীয় ধাপের নির্বাচনে অন্তত: ৫ শতাধিক ইউনিয়ন পরিষদে চেয়ারম্যান পদে প্রার্থী হয়েছেন তারা। কোন কোন ইউপিতে বিএনপির একাধিক প্রার্থীও ভোটের মাঠে রয়েছেন। বিশেষ করে যেসব এলাকায় বিএনপির ভোটব্যাংক রয়েছে সেখানে তাদের তৎপরতা বেশি। এছাড়া যেখানে আওয়ামী লীগের শক্ত বিদ্রোহী প্রার্থী রয়েছে সেখানেও জয় ছিনিয়ে আনার ব্যাপারে আশাবাদী বিএনপির প্রার্থীরা।

জানা যায়, আগামী ১১ নভেম্বর দ্বিতীয় ধাপের ৮৪৬টি ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন হচ্ছে। এ ধাপে ৮১ জন চেয়ারম্যান পদে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছেন। ফলে ৭৬৫ ইউপিতে চেয়ারম্যান পদে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। নির্বাচনের শুরু থেকেই স্থানীয় বিএনপি নেতারা জেলা ও কেন্দ্রের সাথে যোগাযোগ শুরু করেন নির্বাচনে অংশগ্রহণ বিষয়ে নির্দেশনা চেয়ে। বিএনপির একাধিক সাংগঠনিক সম্পাদক জানান, দল যেহেতু সিদ্ধান্ত নিয়েছে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবে না, এজন্য আমরা জানিয়ে দিয়েছি আমরা দলীয়ভাবে কোন প্রার্থী দিচ্ছি না। এছাড়া নির্বাচনী কার্যক্রম শুরুর পর থেকেই বিভিন্ন জেলা ও উপজেলা থেকে দলের প্যাডে বিজ্ঞপ্তি দিয়ে জানিয়ে দেয়া হয়েছে, নির্বাচনে বিএনপির কোন প্রার্থীর অংশগ্রহণ না করার বিষয়ে।

তবে সারাদেশের বিভিন্ন উপজেলায় খবর নিয়ে জানা যায়, যেসব উপজেলায় বিএনপির অবস্থান ভালো এবং যেখানে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের একাধিক প্রার্থী রয়েছে সেখানে বিএনপির প্রার্থীরা নির্বাচনে অংশগ্রহণ করছেন। দলের স্থানীয় নেতাদেরকে তারা বিজয় ছিনিয়ে আনার বিষয়ে আশ্বস্ত করছেন।
তৃণমূলের কথা শোনার পর নীতিনির্ধারণী নেতারাও বিষয়টি নিয়ে দ্বিধাদ্বন্দ্বে। একপক্ষ মনে করেন, নির্বাচন বর্জন না করে কোন উপায় নেই। কারণ বিগত নির্বাচনগুলোর প্রতিটিতে দেখা গেছে সরকার, সরকার দল এবং নির্বাচন কমিশন নগ্ন হস্তক্ষেপ করেছে। হামলা, মামলার ঘটনাও ঘটেছে। তাই এই সরকারের অধীনে নির্বাচনে যাওয়ার কোন মানে নেই। তবে আরেকটি পক্ষ মনে করেন, বিএনপি গণতান্ত্রিক এবং নির্বাচনমুখী রাজনৈতিক দল। সারাদেশে বিএনপির বিপুল সংখ্যক সমর্থন রয়েছে। আর ইউপি নির্বাচন যেহেতু দলীয় প্রতীকে হচ্ছে না, সেক্ষেত্রে ব্যক্তিগতভাবে অংশগ্রহণ দোষের কিছু নেই। এর মাধ্যমে নেতাকর্মীরাও চাঙ্গা থাকলো এবং বিএনপির যে জনসমর্থন সেটিরও প্রতিফলন ঘটবে।

জানতে চাইলে বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স বলেন, আমাদের দলীয় সিদ্ধান্ত হচ্ছে স্থানীয় সরকার নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবো না। এর বাইরে কেউ অংশ নিচ্ছে কিনা সেটি আমাদের জানা নেই। ব্যক্তিগতভাবে কেউ নির্বাচন করলে সেটা দলের বিষয় না।
একই কথা বলেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী। তিনি বলেন, আমরা দলীয়ভাবে বর্তমান সরকার ও নির্বাচন কমিশনের অধীনে কোন নির্বাচনে অংশগ্রহণ করছি না।
বিএনপির নীতিনির্ধারক এক নেতা বলেন, ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে দলীয়ভাবে কেউ অংশ নিচ্ছে না। কোনো প্রার্থীর পক্ষে নেতারা প্রচারেও নামছে না। কেউ যদি স্বতন্ত্রভাবে নির্বাচন করতে চায় আমরা তাদের বাধাও দেব না। সারা দেশে দলের লাখ লাখ সমর্থক রয়েছে। এখন কোনো সমর্থক যদি স্বতন্ত্র নির্বাচন করে আমরা কীভাবে তাকে বিরত রাখি। দলীয় পদ থাকলে হয়তো তার কাছে এর ব্যাখ্যা চাওয়া যায়। কিন্তু কোনো সমর্থকের কাছে তো ব্যাখ্যা চাওয়া সম্ভব নয়।



 

Show all comments

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: ইউপি নির্বাচন

৯ ফেব্রুয়ারি, ২০২২
২৭ ডিসেম্বর, ২০২১

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ