Inqilab Logo

শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৬ বৈশাখ ১৪৩১, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

কয়লার ব্যবহার বন্ধে বিশ্বনেতাদের প্রতিশ্রুতি

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ৫ নভেম্বর, ২০২১, ১২:০৬ এএম

জলবায়ু পরিবর্তন নিয়ে কপ২৬ সম্মেলনে কয়লার ব্যবহার বন্ধের প্রতিশ্রুতি দিয়েছে ১৯০টি দেশ ও সংগঠন। এর মধ্যে আছে কয়লার সবচেয়ে বেশি ব্যবহারকারী পোল্যান্ড, ভিয়েতনাম এবং চিলি। তারাই ফসিল ফুয়েল বা জীবাশ্ম জ্বালানি সবচেয়ে বেশি ব্যবহার করে। জলবায়ু পরিবর্তনে এককভাবে সবচেয়ে বেশি ভ‚মিকা রাখছে কয়লা।

আয়োজক দেশ ব্রিটেন বলেছে, এ জ্বালানি ব্যবহার বন্ধ করতে ওইসব দেশ ও সংগঠন প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। কয়লার ওপর খুব বেশি নির্ভরশীল দেশের মধ্যে আছে অস্ট্রেলিয়া, ভারত, চীন ও যুক্তরাষ্ট্র। তারা সহ বেশ কিছু দেশ এখনও এ বিষয়ক প্রতিশ্রুতিতে স্বাক্ষর করেনি। তবে যারা এ চুক্তিতে স্বাক্ষর করেছে তারা প্রতিশ্রæতি দিয়েছে দেশের ভিতরে বা আন্তর্জাতিকভাবে নতুন করে কয়লাচালিত বিদ্যুত কেন্দ্রে সব রকম বিনিয়োগ বন্ধ করবে। তারা ২০৩০-এর দশকে বড় অর্থনীতিতে পর্যায়ক্রমে কয়লার ব্যবহার কমিয়ে আনার প্রতিশ্রæতি দিয়েছে। আর ২০৪০-এর দশকের মধ্যে এই প্রতিশ্রুতি পালন করবে দরিদ্র দেশগুলো। ব্রিটিশ ব্যবসা ও জ্বালানি বিষয়ক মন্ত্রী কসি করতেঙ্গ বলেছেন, কয়লার ব্যবহার বন্ধ এখন দৃষ্টিগোচর হচ্ছে। বিশ্ব এগিয়ে যাচ্ছে যথার্থ পথে। কয়লার ব্যবহার বন্ধ করে দিতে প্রস্তুত এ বিশ্ব। ক্লিন এনার্জি দ্বারা পরিচালিত এমন একটি ভবিষ্যত গড়ে তুলতে চাইছে বিশ্ব, যেখানে পরিবেশগত এবং অর্থনৈতিক সুবিধা থাকবে।

ব্রিটেন বলেছে, এ বিষয়ক বিবৃতিতে এখন পর্যন্ত কমপক্ষে ৪০টি দেশ স্বাক্ষর করেছে। এর মধ্যে রয়েছে পোল্যান্ড, ভিয়েতনাম এবং চিলি। তারা এমন ১৮টি দেশের মধ্যে রয়েছে, যারা পর্যায়ক্রমে কয়লার ব্যবহার বন্ধ করে দিতে প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। নতুন কোনো কয়লাচালিত বিদ্যুতকেন্দ্র নির্মাণ করবে না এবং বিনিয়োগ করবে না। তবে বৃটেনের ছায়া বাণিজ্যমন্ত্রী এড মিলিব্যান্ড বলেছেন, চীন এবং অন্য বড় কার্বন নির্গমনকারী দেশগুলোর মধ্যে রয়েছে বিশাল ব্যবধান। তারা দেশের ভিতরে ক্রমবর্ধমান হারে কয়লার ব্যবহার বাড়িয়ে যাচ্ছে। তা বন্ধে প্রতিশ্রæতি দেয়নি তারা। তিনি বলেন, তেল এবং গ্যাস ব্যবহার থেকে আস্তে আস্তে বেরিয়ে আসার বিষয়ে কোনো কথা নেই। যদিও বিশ্বজুড়ে কয়লার ব্যবহার কমিয়ে আনায় অগ্রগতি হয়েছে, তবু ২০১৯ সালে বিশ্বে মোট যে পরিমাণ বিদ্যুত উৎপাদন হয়েছে, তার মধ্যে শতকরা প্রায় ৩৭ ভাগ কয়লাচালিত। জ্বালানি খাতকে পরিষ্কার বা উপযোগী করতে বড় রকমের বিনিয়োগ প্রয়োজন হবে দক্ষিণ আফ্রিকা, পোল্যান্ড এবং ভারতের মতো দেশের।

বিশ্বের আর্থিক সম্পদের ৪০ শতাংশ নিয়ন্ত্রণ যাদের হাতে, এমন সাড়ে চারশো কোম্পানি বৈশ্বিক উষ্ণায়ন বৃদ্ধির হার চলতি শতকের শেষে দেড় ডিগ্রিতে সীমিত রাখার লক্ষ্য অর্জনে কাজ করার অঙ্গীকার করেছে। তাদের নিয়ন্ত্রণে থাকা সম্পদের পরিমাণ হচ্ছে ১৩০ নিযুত কোটি (ট্রিলিয়ন) ডলার। তবে কয়লাসহ জ্বালানি খাতে বর্তমানে অন্যতম প্রধান বিনিয়োগকারী দেশ চীন ও জাপান এই সমঝোতায় অংশ নেয়নি। এ ছাড়া নেট জিরো অর্জনে বেসরকারি খাত কীভাবে অর্থায়ন করবে এবং গ্রিনহাউস গ্যাস নির্গমন কমাবে, তা নিয়েও নতুন করে উদ্যোগ প্রকাশ করা হয়েছে। ক্রীড়াঙ্গনে ২০৪০ সালের মধ্যে নেট জিরোর লক্ষ্য নির্ধারণ এবং সেই উদ্দেশ্যে ২০৩০ সালের মধ্যে খেলাধুলার আয়োজনে গ্রিনহাউস গ্যাস নির্গমন অর্ধেকে নামিয়ে আনার কথাও এদিন ঘোষণা করা হয়।

তবে সম্মেলনস্থলের বাইরে গ্লাসগো শহরের নানা প্রান্তে বিক্ষোভকারীরা ব্যাংক ও অন্যান্য বহুজাতিক ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানের মুনাফালিপ্সার কারণে প্রকৃতি ধ্বংস বন্ধের দাবিতে প্রতিবাদী কর্মসূচির আয়োজন করে। সম্মেলনস্থলের বাইরে জলবায়ু সংকটের জন্য ঔপনিবেশিকতা দায়ী বলে ফেস্টুন বহন করেনক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর মানুষেরা। তারা বলছেন, কার্বন গ্যাস নিঃসরণ বন্ধের জায়গায় তার ক্ষতি পুষিয়ে দেওয়ার নীতি তাদের সমাজকে ভেঙে ছিন্নভিন্ন করে দিচ্ছে। খনিজ সম্পদ আহরণ, বাণিজ্যিক কৃষি এবং জলবিদ্যুৎ প্রকল্পের উদ্যোক্তারা তাদের ভ‚মি গ্রাস করছে। জলবায়ু সংকট মোকাবিলায় অর্থায়নের বিষয়ে কাজ করা আন্দোলনকারী সংগঠন মার্কেট ফোর্সেসও সোচ্চার। তারা দূষণকারী জীবাশ্ম জ্বালানি খাতে ২০২১ সালে সর্বাধিক বিনিয়োগকারী ব্রিটিশ ব্যাংক বার্কলেজকে লজ্জা দিতে গøাসগোতে প্রতিষ্ঠানটির শাখাগুলোর ভবনের দেয়ালে সেঁটে দিয়েছে নানা পোস্টার। পরিবেশবাদীরা বেশ কিছুদিন ধরে অভিযোগ করে আসছেন যে বিভিন্ন ব্যবসায়প্রতিষ্ঠান নবায়নযোগ্য জ্বালানি ও প্রযুক্তিতে বিনিয়োগ এবং লোকদেখানো কিছু পরিবেশবান্ধব বিজ্ঞাপন দিয়ে নিজেদের অতীত দূষণকে আড়াল করতে বা গ্রিনওয়াশিং করতে চাইছে। এবারের প্রতিবাদ-বিক্ষোভে এসব কোম্পানির বেশ কটিই প্রতিবাদকারীদের লক্ষ্য হয়েছে।

জীবাশ্ম জ্বালানি ও উচ্চ হারে গ্রিনহাউস গ্যাস উদ্গিরণকারী শিল্প এবং পরিবেশ বিপন্নকারী প্রকল্পে মুনাফার জন্য বিনিয়োগকারী প্রতিষ্ঠানগুলোকে নবায়নযোগ্য জ্বালানি ও প্রযুক্তিতে বিনিয়োগের জন্য যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্যসহ বিভিন্ন শিল্পোন্নত দেশ উৎসাহিত করার নীতি নিয়েছে। তারই ধারাবাহিকতায় ব্রিটিশ অর্থমন্ত্রী ঋশি সুনাক ঘোষণা করেছেন যে তিনি চান অর্থবাজারের হিসাবে লন্ডন নেট জিরোর নীতিগুলো গ্রহণ করবে। ব্যাংক-বিমা-বিনিয়োগসহ আর্থিক সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠানগুলোকে এখন ২০২৩ সালের মধ্যে তাদের কার্যক্রমে কার্বন নিঃসরণে ভারসাম্য আনতে কী কী পরিবর্তন আনা হচ্ছে, তার পরিকল্পনা প্রকাশ করতে হবে। তবে এই নির্দেশনা বাধ্যতামূলক হবে না। সূত্র : বিবিসি, রয়টার্স।

 

 



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: কয়লা

১০ ফেব্রুয়ারি, ২০২২
১৩ জানুয়ারি, ২০২২

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ