নিত্যপণ্যের লাগামহীন মূল্য বৃদ্ধির ধারা অব্যাহত থাকার মধ্যে সেতুর টোল পাঁচ থেকে ৭ গুন বৃদ্ধির পরে জ্বালানী তেলের দামও প্রায় ২৫ ভাগ বৃদ্ধিতে সমগ্র দক্ষিণাঞ্চলের সুষ্ঠু সমাজ ব্যবস্থায় চরম অস্থিরতা তৈরী হয়েছে। সাধারণ মানুষের নাভিম্বাস উঠতে শুরু করেছে। নি¤œবিত্ত ও নিম্ন-মধ্যবিত্ত পরিবারে অনেকটাই হাহাকার সৃষ্টি হতে শুরু করেছে। পরিবহন ধর্মঘটে পথে পথে নাকাল হচ্ছেন নিত্য যাত্রীরা। সড়ক পরিবহনের সাথে নৌপথ বন্ধের হুমিকও প্রদান করেছে বেসরকারী নৌযান মালিকদের সংগঠন। ইতোমধ্যে দক্ষিণাঞ্চলের অভ্যন্তরীন ও আঞ্চরিলক নৌ রুটে অঘোষিতভাবে ভাড়া বৃদ্ধি করা হলেও আরো শতভাগ বৃদ্ধির দাবীতে নৌ যযোগাযোগ বন্ধেরও হুমিক দিয়েছে মালিক সংগঠন।

অপরদিকে সদ্য চালু হওয়া ঢাকা-ফরিদপুর-বরিশাল-পটুয়াখালী-কুয়াকাটা জাতীয় মহাসড়কে পায়রা সেতুতে টোল হার ৫Ñ৭গুন বৃদ্ধির বিষয়টিকে ভালভাবে নেননি সড়ক পরিবহন মালিকÑশ্রমিক সংগঠনগুলো। তারা এ সেতুর টোল বৃদ্ধিকে কেন্দ্র করে বাসভাড়া বৃদ্ধি দাবী তুলেছে আগেই। সেতুটিতে ট্রাক পারাপারে টোল বৃদ্ধি করা হয়েছে প্রায় ৭গুন। ফলে পাণ্য পরিবহন ব্যায় বৃদ্ধির সাথে তা ক্রমবর্ধমান পণ্যমূল্য বৃদ্ধির ওপর আরো বিরূপ প্রভাব ফেলছে।

অপরদিকে জ্বালানীর মূল্য বৃদ্ধির প্রতিবাদে শুক্রবার সকাল থেকেই সমগ্র দক্ষিণাঞ্চলে সড়ক পরিবহন ধর্মঘট অব্যাহত রয়েছে। স্থাণীয় ও দুরপল্লার যাত্রীদের দূর্ভোগ ইতোমধ্যে সব বর্ণনার বাইরে চলে গেছে। শুক্র ও শণিবার সাপ্তাহিক দুটি ছুটির দিন পরিবহন ধর্মঘটের বিরূপ প্রভাব ততটা না পরলেও রোববার থেকে পরিস্থিতি আরো ভয়াবহ আকার ধারন করবে বলে মনে করছেন সাধারন মানুষ। দক্ষিণাঞ্চলের ২৫টি সড়ক পথের সাথে রাজধানী ঢাকা ছাড়াও খুলনা ও রজশাহী বিভাগেরও সব বাসসার্ভিস বন্ধ করে দিয়েছে মালিকÑশ্রমিকদের সংগঠনগুলো। এমনকি পটুয়াখালী ও বরগুনা থেকে বরিশাল হয়ে চট্টগ্রাম রুটের বাস সার্ভিসও বন্ধ।
অপারদিকে দক্ষিণাঞ্চলের প্রায় ৩০টি রুটে বেসরকারী নৌযান মালিকপক্ষ যাত্রী ভাড়া বৃদ্ধিকরে নিয়েছে তাদের মত করে। ভাড়া বেড়েছে দক্ষিণাঞ্চল থেকে রাজধানীর সব বেসরকারী নৌযানের ডেক শ্রেণীতেও। তবে মালিক পক্ষের দাবী, ‘তারা কোন ভাড়া বৃদ্ধি করেনি। এতদিন সরকার নির্ধরিত হারের চেয়ে কম ভাড়ায় যাত্রী পরিবহন করতেন। কিন্তু বর্ধিত জ্বালানীর মূল্য বৃদ্ধির কারণে এখন আর তা সম্ভব নয় বিধায়, সরকার নির্ধরিত ভাড়াই আদায় করছেন। উপরন্তু নৌযান মালিক পক্ষ জ¦ালানীর মূল্য ২৫ভাগ বৃদ্ধির কারণে নতুন করে শতভাগ ভাড়া বৃদ্ধির দাবী তুলেছেন তারা।

এদিকে নিত্যপণ্যের মূল্য বৃদ্ধিতেও দক্ষিণাঞ্চলের কোটি মানুষের জীবনে নভিশ্বাস উঠতে শুরু করেছে। ভোজ্য তেলের লিটার ১৬০ টাকার ওপরে। চিনি ৮৫ টাকা, পেয়াঁজের কেজি এখনো ৪৫ টাকা। ‘গরিবের খাদ্য ডাল’এর দামও আকাশচুম্বি। মুশুর ডাল প্রায় ৯০ টাকা। মুগডাল ১৩০ টাকা কেজি দরে বিক্রী হচ্ছে। সব ধরনের সবজির দামও আকাশ ছোয়া। রাষ্ট্রীয় বানিজ্য সংস্থা-টিসিবি ৪দিন বন্ধ রাখার পরে পণ্য মূল্য বাড়িয়ে অতি সিমিত আকারে ৪ নভেম্বর থেকে অতি সিমিত আকারে আবার চিনি,ডাল,সয়াবিন তেল ও পেয়াঁজ বিক্রী শুরু করলেও তা সিন্ধুতে এক ফোটা বিন্দু মতই। বরিশাল মহানগরীর ৩০টি ওয়ার্ড সহ দক্ষিণাঞ্চলের ৬টি জেলার ৪২টি উপজেলায় মাত্র ১৮টি পীকআপে এসব পণ্য বিক্রর জন্য দেয়া হলেও লাইনের শেষভাগে থাকা বেশীরভাগ মানুষের ভাগ্যে আর তা কেনার সুযোগ থাকছে না।
পণ্যমূল্য বৃদ্ধির দূর্ভোগের মধ্যেই জ¦ালানী তেলের মূল্য বৃদ্ধির অস্থিরতায় সমগ্র দক্ষিণাঞ্চল এখন চরম সংকটকাল অতিক্রম করছে বলে মনে করছেন সাধারন মানুষ। সার্বিক পরিস্থিতিতে সাধারন মানুষের কষ্ট বৃদ্ধির সাথে হতাশা ও ক্ষোভও বৃদ্ধি করছে।