Inqilab Logo

শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

মাত্র ১৪ মাসে সম্পূর্ণ কুরআনের ক্যালিগ্রাফি করলেন তরুণী

অনলাইন ডেস্ক | প্রকাশের সময় : ৬ নভেম্বর, ২০২১, ২:৩৬ পিএম

মাত্র ১৪ মাসের মধ্যে সম্পূর্ণ কুরআনের ক্যালিগ্রাফি করে সবাইকে তাক লাগিয়ে দেন উনিশ-বছর বয়সী লাজুক ফাতিমা সাহাবা। শুধু আত্মীয়-স্বজন বন্ধু-বান্ধবই না, তার এই সাফল্যের কথা শুনে তাকে অভিনন্দন জানিয়েছেন অপরিচিত জনেরাও। ফাতিমা থাকেন দক্ষিণ ভারতের কেরালার কান্নুর জেলায়। ছোটবেলা থেকেই ছবি আঁকা এবং ক্যালিগ্রাফির প্রতি ছিল তার বিশেষ ঝোঁক। প্রায়ই তিনি ছবি এঁকে মা-বাবাকে দেখাতেন। তারাও তাকে উৎসাহ দিতেন।

ক্লাস নাইনে পড়ার সময় তিনি লিপিবিদ্যা বা ক্যালিগ্রাফির দিকে বেশি মনোযোগ দিতে থাকেন। এই বিশেষ বিদ্যার প্রতি ভালবাসার টানে তিনি প্রায় প্রতিদিনই ক্যালিগ্রাফিতে হাত পাকাতেন। স্কুল থেকে বাসায় ফিরে একটু রেস্ট নিয়েই আঁকার কাজ শুরু করতেন বলে জানান তিনি। তিনি বলছেন, কোরআন শরিফ এবং আয়াতগুলো তাকে বরাবরই মুগ্ধ করতো। তাই সেরা ক্যালিগ্রাফ লিপি দিয়ে তিনি কোরআনের কপি করতে চাইছিলেন।

"প্রথম দিকে একটা বা দুটো আয়াত কপি করতাম," বলছেন ফাতিমা, "মা-বাবা খুব প্রশংসা করতেন। আয়াতগুলো ফ্রেমে বাঁধিয়ে দেয়ালে ঝুলিয়ে রাখতাম। কিছুদিন পর দেখা গেল আমার পরিচিত জনেরা সে সব ফ্রেম কিনে নিচ্ছেন। আর আমি মনের আনন্দে তাদের জন্য আঁকতে থাকলাম। এতে করে আমার মধ্যে আত্মবিশ্বাস বাড়তে থাকে। আমিও যে কিছু একটা করতে পারি, আমি এটা বিশ্বাস করতে শুরু করি।"

ক্লাস টেন পর্যন্ত পড়ার সময় ফাতিমা সাহাবা তার পরিবারের সাথে ওমানে থাকতেন। এক ছোট বোন এবং এক ছোট ভাই আর মা-বাবা নিয়েই তার পরিবার। এক সময়ে তার পরিবার ভারতে ফিরে আসে। কান্নুর জেলার কোডাপারমবা শহরে তাদের বাস। স্কুল শেষ করার পর ফাতিমা কলেজে ছবি আঁকা শিখতে চেয়েছিলেন। তাই তিনি ইন্টিরিয়ার ডিজাইন পড়া শুরু করেন।

এখন কান্নুরের কলেজেই তিনি ইন্টিরিয়ার ডিজাইন পড়ছেন। তিনি বলেন, সুযোগ থাকলে প্রতিটি মানুষেরই উচিত তিনি যে পেশা পছন্দ করেন তা বেছে নেওয়া, এবং তার জন্য কঠোর পরিশ্রম করা। কোরআনের ক্যালিগ্রাফির কাজে হাত দেওয়ার আগে ফাতিমা সাহাবার বাবা একজন মওলানার সাথে কথা বলেন। তিনি জানতে চান, ফাতিমা কোরআন নকল করতে পারেন কিনা। তবে এনিয়ে কোন ধর্মীয় বিধিনিষেধ না থাকার ফলে ফাতিমাকে অনুমতি দেওয়া হয়।

"আমি বাবাকে বললাম আমাকে কালো বল পয়েন্ট কলম আর ছবি আঁকার কাগজ কিনে দিতে। কাছের একটি দোকান থেকে বাবা সব জোগাড় করলেন। প্রতিদিন স্কুল থেকে ফিরে আমি একটু বিশ্রাম নিতাম। তারপর মাগরিবের নামাজ পড়ে আমি কোরআনের ক্যালিগ্রাফি কাজে হাত দিতাম।"

"গত বছর অগাস্ট মাসে আমি ক্যালিগ্রাফির কাজ শুরু করি এবং ২০২১ সালের সেপ্টেম্বরে শেষ করি। আমার পরিবারের সবাই আমাকে এ কাজে সহযোগিতা করেছে।"

ফাতিমা জানতেন তিনি যে কাজে হাত দিয়েছেন, সেটি কত বড় কাজ। তাই কাজটা তিনি যেনতেনভাবে শেষ করতে চাননি।তিনি বলেন, আমার ভয় ছিল যে আমি হয়তো কোরআন ক্যালিগ্রাফির কাজে কোন একটা ভুল করে ফেলবো,ছবি আঁকার সময় আমার মা তাই আমার পাশে বসে থাকতেন, এবং কোথাও কোন ত্রুটি-বিচ্যুতি দেখলে সেটা ধরিয়ে দিতেন।

যাতে কোন ধরনের ভুল না হয় সে জন্য ফাতিমা প্রথমে পেন্সিল দিয়ে ক্যালিগ্রাফের নকশা তৈরি করতেন। যখন আমি সম্পূর্ণভাবে নিশ্চিত হতাম যে কোথাও কোন ভুল নেই তারপর আমি কলম দিয়ে নকশাগুলোকে পাকা করতাম, বলে জানান তিনি।

"আমার শুধু মনে হতো এত বড় এবং কঠিন একটা কাজ কি আমি শেষ করতে পারবো? আমার নিজের ক্ষমতা নিয়েও মাঝে মধ্যে সন্দেহ তৈরি হতো। "কিন্তু দেখা গেল প্রতিদিন কাজটা করতে গিয়ে আমি বেশ আনন্দই পাচ্ছি। ঘণ্টা পর ঘণ্টা সময় যেকোন দিক থেকে কেটে যেত তা টেরই পেতাম না।"

কোরআন ক্যালিগ্রাফি করতে গিয়ে ফাতিমা মোট ৬০৪টি পাতা তৈরি করেন। শুরুর দিকে কাজগুলো ভালই ছিল। কিন্তু পরের দিকে কাজ আরও ভাল হয়। করতে করতে হাতের কাজ আরও সুন্দর হতে থাকে, বলে জানান তিনি।

সূত্র: বিবিসি



 

Show all comments
  • Abdul Wahab ৬ নভেম্বর, ২০২১, ২:৪৬ পিএম says : 0
    JAJAKILLAH KHAIR.
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: ভারত


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ