Inqilab Logo

শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৬ বৈশাখ ১৪৩১, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

ধনীদের ঘরে দরিদ্রের চাল ভাগ্যাহতদের বুকে কষ্টের কাঁটা

প্রকাশের সময় : ১৯ অক্টোবর, ২০১৬, ১২:০০ এএম

বাউফল (পটুয়াখালী) উপজেলা সংবাদদাতা

পটুয়াখালীর বাউফল উপজেলায় ইউনিয়নভিত্তিক খাদ্যবান্ধব কর্মসূচি তালিকা তৈরিতে ব্যাপক অনিয়মের অভিযোগ পাওয়া গেছে। এই তালিকায় প্রকৃত দুস্থ জনগোষ্ঠীর নাম অন্তর্ভুক্তির নিয়ম থাকলেও তা মানা হয়নি। প্রকৃত দুস্থ বিবেচনা না করে জনপ্রতিনিধিরা সরকারি চাকরিজীবী, স্কুলশিক্ষক, ইউপি মেম্বার ও অবস্থাপন্ন ব্যক্তিদের নাম ও নির্বাচনকালীন পক্ষপাতিত্ব বিবেচনা করে ওই তালিকা তৈরি করেন। এ নিয়ে হত দরিদ্রদের মাঝে ক্ষোভ বিরাজ করছে। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, উপজেলার মোট ১৯ হাজার ২৩২ জন দুস্থ পরিবারকে এই খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির আওতায় আনা হয়েছে। দুস্থদের তালিকা প্রণয়নের বিষয়ে নিতিমালায় বলা হয়েছেÑ সুবিধাভোগী পরিবারকে ইউনিয়নের স্থায়ী বাসিন্দা হতে হবে। নারী প্রধান (বিধবা, তালাকপ্রাপ্ত, স্বামী পরিত্যক্তা) এবং যে পরিবারে দুস্থ শিশু আছে সেই পরিবার অগ্রাধিকার পাবে। একই পরিবারের একাধিক ব্যক্তিকে তালিকাভুক্ত করা যাবে না। সরকারি সামাজিক নিরাপত্তাবেষ্টনীর আওতাভুক্ত ভিজিডির কর্মসূচির সুবিধাপ্রাপ্তদের এই তালিকায় অন্তর্ভুক্তি করা যাবে না। এ ধরনের কোনো নীতিমালাই মানা হয়নি পটুয়াখালীর বাউফল উপজেলায় দুস্থদের তালিকা তৈরির ক্ষেত্রে। অনুসন্ধানে পাওয়া গেছে, দুস্থদের তালিকায় ১১৯ নম্বরে রয়েছে কালাইয়া ইউনিয়নের ১নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য ফখরুল ইসলাম ফোরকানের বড় ভাই বিশিষ্ট ব্যবসায়ী সালাম খানের নাম। সালাম খানের ছোট ছেলে সরকারি একজন কর্মকর্তা। শুধু তাই নয়, ওই তালিকায় ১৯ নম্বরে রয়েছে সালাম খানের বড় ছেলে মনির হোসেনের নাম। অভিযোগ রয়েছে, কালাইয়া ইউনিয়নের তালিকা তৈরির সময় ইউপি সদস্য ফখরুল ইসলাম ফোরকান ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান থাকায় তার পরিবারের সদস্যসহ নির্বাচনকালীন পক্ষপাতিত্ব বিবেচনা করে ওই তালিকা তৈরি করেন। সরেজমিন কনকদিয়া ইউনিয়নের কনকদিয়া বাজারে গিয়ে কথা হয়, ডিলার ও ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি এবিএম ইউনুস মিয়ার সঙ্গে। তিনি তালিকা অনুযায়ী কার্ডধারীদের কাছে চাল বিক্রি করছেন। এর বেশি কিছু তিনি বলতে পারেন না বলে জানান। ডিলারের কাছ থেকে পাওয়া তালিকা অনুযায়ী ওই তালিকায় ১২৬৩ ক্রমিক নম্বরে নাম রয়েছে মো. জালাল আহম্মেদ নামে এক ব্যক্তির। যিনি স্বাস্থ্য সহকারী পদে কর্মরত। তালিকার ১২৫৩ ক্রমিক নম্বরে রয়েছে মোসা. পারভীন নামে এক নারীর নাম। যিনি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক পদে কর্মরত। একই তালিকার ১২৫৮ ক্রমিক নম্বরে রয়েছে মোসা. উম্মে কুলসুম ও ১২৬৬ ক্রমিক নম্বরে রয়েছে তার স্বামী এস এম জাহাঙ্গীরের নাম। কুলসুম হলেন কনকদিয়া ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) ৭, ৮ ও ৯ নম্বর ওয়ার্ডের নারী ইউপি সদস্য (মেম্বার)। ১২৬২ ক্রমিক নম্বরের ব্যক্তির নাম কাজী মিজানুর রহমান। যিনি একজন ব্যবসায়ী ও কনকদিয়া বাজারের ইজারাদার। ১২৭৮ ক্রমিক নম্বরের ব্যক্তির নাম মো. জামাল সিকদার। যিনি একটি মাধ্যমিক বিদ্যালয় ও কলেজের শিক্ষক। ওই তালিকায় তার বাবার নামও রয়েছে। এ ছাড়াও একই পরিবারের স্বামী-স্ত্রীর নামও রয়েছে তালিকায়। যারা খুবই অবস্থাপন্ন। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন বলেন, ‘এ রকম অনেক বিত্তশালীর নাম রয়েছে হতদরিদ্রদের মাঝে ১০ টাকা কেজি দরে চাল বিক্রির তালিকায়।’ হতদরিদ্রদের তালিকা বাছাই কমিটির উপজেলা সভাপতি ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মোহম্মাদ আবদুল্লাহ আল মাহমুদ জামান বলেন, ‘কিছু অনিয়ম হচ্ছে। আশা করি কয়েক দিনের মধ্যে এসব অনিয়ম দূর করা যাবে। তবে কোনোভাবেই সরকারি কর্মকর্তা, মাধ্যমিক ও সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক, ইউপি সদস্য ও অবস্থাপন্ন ব্যক্তিদের নাম হতদরিদ্রদের চালের তালিকায় থাকার কোনো সুযোগ নেই। এ ব্যাপারে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: ধনীদের ঘরে দরিদ্রের চাল ভাগ্যাহতদের বুকে কষ্টের কাঁটা
আরও পড়ুন
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ