Inqilab Logo

বুধবার, ১৭ এপ্রিল ২০২৪, ০৪ বৈশাখ ১৪৩১, ০৭ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

খাদ্য সঙ্কট এবং প্রচণ্ড শীতে মানবিক পরিস্থিতি সীমান্তে

বেলারুশ ভ্রমণে কঠোর পদক্ষেপ তুরস্কের, উদ্বিগ্ন যুক্তরাষ্ট্র

ইনকিলাব ডেস্ক | প্রকাশের সময় : ১৪ নভেম্বর, ২০২১, ১২:০৫ এএম

তুরস্কের বিমানবন্দর ব্যবহার করে বেলারুশ ভ্রমণে ইরাক, সিরিয়া ও ইয়েমেনের নাগরিকদের উপর ভ্রমণে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করলো আঙ্কারা। পরবর্তী নির্দেশনা না দেওয়া পর্যন্ত এই সিদ্ধান্ত বহাল থাকবে বলে জানিয়েছে দেশটির বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ। বেলারুশ-পোল্যান্ডে সীমন্তে শরণার্থী ইস্যুতে এমন পদক্ষেপ নিল দেশটি। শুক্রবার এক টুইট বার্তায় সিভিল এভিয়েশনের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, ‘ইউরোপীয় ইউনিয়ন এবং বেলারুশের মধ্যে সীমান্তে ক্রসিংয়ের কারণে কঠোর অবস্থানে আঙ্কারা। ইরাক, সিরিয়া এবং ইয়েমেনের নাগরিক যারা তুর্কি বিমানবন্দর থেকে বেলারুশ যেতে ইচ্ছুক পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত তাদের টিকিট দেওয়া হবে না’। গত কয়েকদিন ধরে পোল্যান্ড-বেলারুশ সীমান্তে শরণার্থীদের ঢল নেমেছে। মধ্যপ্রাচ্যের এসব অভিবাসনপ্রত্যাশীদের ঠেকাতে ১০ থেকে ১৫ হাজার সেনা মোতায়েন করেছে পোল্যান্ড। ইউরোপীয় ইউনিয়ন- ইইউ’র অভিযোগ, ষড়যন্ত্র করে ইউরোপের দিকে এসব শরণার্থীদের ঢেলে দিচ্ছে বেলারুশের আলেক্সেন্ডার লুকাশেঙ্কোর সরকার। পূর্বের বেশ কিছু ইস্যুতেও মিনস্কের উপর নিষেধাজ্ঞা দিয়ে রেখেছে ইইউ। সম্প্রতি পোল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী অভিযোগ করে বলেন, সীমান্তে অস্থিরতা তৈরির পেছনে লুকাশেঙ্কোর ঘনিষ্ঠ রুশ প্রেসিসেডেন্ট ভøাদিমির পুতিনের হাত রয়েছে। এমন বাস্তবতায় শরণার্থী নিয়ে বেলারুশের সঙ্গে ইউরোপের অন্যান্য দেশের সম্পর্কের আরও অবনতি হচ্ছে। খাদ্য সংকট এবং প্রচণ্ড শীতে মানবিক পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। বেলারুশকে শিক্ষা দিতে নতুন করে নিষেধাজ্ঞা আরোপের কথাও ভাবছে ইইউ। অপর এক খবরে বলা হয়, পোল্যান্ড, লিথুনিয়ায় ঢোকার আকাক্সক্ষায় বেলারুশ সীমান্তে হাজির হওয়া কয়েক হাজার অভিবাসন প্রত্যাশীকে ঘিরে যে সংকটময় পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে তাতে যুক্তরাষ্ট্র গভীর উদ্বিগ্ন বলে জানিয়েছেন দেশটির প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) অভিযোগ, বেলারুশ অভিবাসন প্রত্যাশীদের পোল্যান্ড, লিথুনিয়া দিয়ে ইইউতে ঢোকার সুযোগ করে দেওয়ার প্রলোভন দেখিয়েছে, নিজেদের ভূখণ্ড ব্যবহার করতে দিয়েছে। মিনস্ক শুরু থেকেই এই অভিযোগ অস্বীকার করে আসছে বলে জানিয়েছে বার্তা সংস্থা রয়টার্স। “আমরা মনে করছি, এটি খুবই উদ্বেগের বিষয়। আমাদের উদ্বেগের কথা আমরা রাশিয়াকে জানিয়েছি, বেলারুশকে জানিয়েছে,” অবকাশযাপন কেন্দ্র ক্যাম্প ডেভিডের উদ্দেশ্যে হোয়াইট হাউস ছাড়ার সময় এমনটাই বলেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট। ইই্উ’র ভাষ্য, বেলারুশ তাদের ২৭ দেশের জোটকে অস্থিতিশীল করতে ‘হাইব্রিড আক্রমণ’ চালানোর কথা ভাবছে, তারই অংশ হিসেবে যুদ্ধবিধ্বস্তু এলাকগুলো থেকে হাজার হাজার অভিবাসন প্রত্যাশীকে উড়িয়ে বেলারুশ সীমান্তে এনে জড়ো করা হয়েছে এবং তাদেরকে সীমান্ত টপকে ইইউতে অবৈধভাবে ঢুকতে উৎসাহ দিচ্ছে। বেলারুশ সীমান্তে অবস্থান করা অভিবাসন প্রত্যাশীদের বেশিরভাগই ইরাক ও আফগানিস্তানের মতো দেশগুলো থেকে এসেছেন; বছরের পর বছর বিপর্যয়ের মধ্যে কাটানো এই মানুষগুলোকে এখন বেলারুশ এবং পোল্যান্ড ও লিথুনিয়ার সীমান্তের মাঝে প্রচণ্ড ঠাণ্ডার মধ্যে খোলা আকাশের নিচে দিন কাটাতে হচ্ছে। ইইউর সদস্য দেশ পোল্যান্ড ও লিথুনিয়া ওই অভিবাসনপ্রত্যাশীদের ঢুকতে দিচ্ছে না। এরই মধ্যে সীমান্তে আটকে থাকা অভিবাসন প্রত্যাশী কয়েকজনের মৃত্যু হয়েছে; তীব্র শীতে বাকিদেরও একই পরিণতি হতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। বাইডেন বেলারুশ পরিস্থিতি নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের উদ্বেগের কথা জানানোর কয়েক ঘণ্টা আগে ফ্রান্স সফরে থাকা মার্কিন ভাইস প্রেসিডেন্ট কমলা হ্যারিসের কণ্ঠেও একইরকম উদ্বেগ ধ্বনিত হয়েছিল। বেলারুশ পরিস্থিতি নিয়ে ফরাসী প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাখোঁর সঙ্গে তার কথাও হয়েছে। “বেলারুশ খুবই বিরক্তিকর কার্যকলাপে জড়িয়েছে। প্রেসিডেন্ট ম্যাখোঁর সঙ্গে এ প্রসঙ্গে কথা হয়েছে আমার। বিশ্ব এবং এর নেতারা এখন সেখানে কী ঘটছে তা দেখছে,” সংবাদ সম্মেলনে বলেছেন হ্যারিস। বেলারুশ অভিবাসন প্রত্যাশীদের নিয়ে যে সংকট দেখা দিয়েছে তার দায় নিতে অস্বীকৃতি জানিয়েছে। ইউরোপ তাদের ওপর থেকে নিষেধাজ্ঞা তুলে না নিলে সংকট সমাধানে মিনস্ক সহায়তা করতে পারছে না বলেও জানিয়েছে তারা। ২০২০ সালে আলেক্সান্ডার লুকাশেঙ্কোর শাসনের বিরুদ্ধে গড়ে ওঠা আন্দোলনে ব্যাপক দমনপীড়ন চালানোর অভিযোগে ইইউ বেলারুশের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছিল। অভিবাসন প্রত্যাশীদের মানবঢাল হিসেবে ব্যবহার করে নতুন সংকট সৃষ্টি করায় মিনস্কের ওপর আরও নিষেধাজ্ঞা দেওয়ার কথাও ভাবছে তারা। রাশিয়ার ঘনিষ্ঠ মিত্র লুকাশেঙ্কো বলেছেন, নতুন নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হলে বেলারুশ তাদের ভূখণ্ড হয়ে যে গ্যাস ই্ইউ-র সদস্য দেশগুলোতে যায়, তার লাইন বন্ধ করে দেবে। শুক্রবার ক্রেমলিন বলেছে, গ্যাস লাইন বন্ধ করে দেওয়ার মন্তব্য লুকাশেঙ্কোর একার, মস্কোর সঙ্গে এ বিষয়ে তার কোনো ধরনের কথাবার্তা হয়নি। রাশিয়া তাদের প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী ইউরোপে গ্যাস সরবরাহ অব্যাহত রাখবে বলেও আশ্বস্ত করেছে তারা। রয়টার্স, বিবিসি, আল-জাজিরা।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: তুরস্ক

২৮ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ