Inqilab Logo

মঙ্গলবার, ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১, ১৩ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

নদীর ৪৬ কোটি টাকা হজম

ভদ্রা ও সালতা খননে আবারো পৌনে ২ হাজার কোটি টাকার প্রকল্প

ডিএম রেজা, খুলনা থেকে | প্রকাশের সময় : ১৭ নভেম্বর, ২০২১, ১২:০২ এএম

খুলনার ডুমুরিয়া উপজেলার ভদ্রা ও সালতা নদী। এক সময়ের প্রমত্তা নদী দুটি এখন সরু খালে পরিণত হয়েছে। নদীর দু’পাশ ও তলদেশ পলি পড়ে ভরাট হয়ে গেছে। নদীর বুকে চলে চাষাবাদ। প্রভাবশালীরা যে যতটুকু পেরেছে, নদীর জমি দখল করে নিয়েছে। চলছে মৎস্যঘের করে মাছ চাষ। কোথাও কোথাও নদীর মাটি ও বালু কেটে তা বিক্রি করে দিচ্ছে প্রভাবশালীরা। নদী ভরাট হওয়ায় বর্ষা মৌসুমে উপজেলার ছয় ইউনিয়নের ৫৫টি গ্রামের অর্ধ লক্ষ মানুষ পানিবদ্ধতাসহ নানা সমস্যায় পড়েন। বছর তিনেক আগে, নদী খনন প্রকল্পের নামে সংশ্লিষ্টরা প্রায় পুরো টাকা হজম করে ফেলায় ভদ্রা-সালতা আজ মরতে বসেছে। এ অবস্থায় আবারো প্রায় পৌনে ২ হাজার কোটি টাকার খনন প্রকল্প তৈরি করেছে খুলনা পানি উন্নয়ন বোর্ড। ভুক্তভোগীরা মনে করছেন, এবারেও প্রকল্পের নামে কোটি কোটি টাকা লুটপাট হবে, কাজের কাজ কিছুই হবে না।

সূত্র জানায়, পানিবদ্ধতা নিরসন ও নদীর নাব্য বজায় রাখতে ২০১৮-১৯ অর্থবছরে ভদ্রা ও সালতা নদী পুনঃখননের কাজ শুরু করে পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো)। এর জন্য ব্যয় ধরা হয় প্রায় ৪৬ কোটি টাকা। কথা ছিল দুটি নদীর ৩০ কিলোমিটার ১২০ ফুট চওড়া আর ১৬ ফুট গভীর করে পুনঃখনন করা হবে। এলাকাবাসীর অভিযোগ, নদী দুটি খননের ক্ষেত্রে নিয়মনীতি যথাযথভাবে অনুসরণ করা হয়নি। চরম অনিয়ম করা হয়েছে। খর্নিয়া ইউনিয়নের গোনালী গ্রাম ও শোভনা ইউনিয়নের গাবতলা এলাকায় নদীর মাঝে নির্মিত একটি বাঁধ না কেটে নদী খনন করা হয়। সেখানে কোনো সেতু তৈরি করা হয়নি। ফলে নদী খননের পর জোয়ারের পানি এসে ওই বাঁধে বাধাপ্রাপ্ত হয়ে ফের ভরাট হতে থাকে। খননকৃত ভদ্রার পশ্চিমাংশে তেলিগাতি থেকে গাবতলা পর্যন্ত এখন আবার ভরাট হয়ে গেছে। তাছাড়া নদী থেকে মাটি উত্তোলন করে দুই পাড়ে রেখে দেয়ায় বর্ষা মৌসুমে মাটি ধুয়ে আবার তা নদীতে গিয়ে পড়ে। ফলে এক বছরের মধ্যে নদী পুনরায় ভরাট হয়ে য়ায়। এলাকাবাসী মনে করেন, প্রকল্পের টাকা সংশ্লিষ্টরা হজম করে ফেলায় আজ নদী দুটির এ অবস্থা।

এদিকে, পুনরায় নদী দুটি খননের প্রকল্প হাতে নিচ্ছে পানি উন্নয়ন বোর্ড। এবার প্রকল্পের অঙ্ক ১ হাজার ৮১৯ কোটি টাকা। নদী দুটিসহ আশেপাশের ছোট খাটো কয়েকটি নদী ও খাল পুনঃখনন হবে। সদর, শোভনা, খর্নিয়া, রঘুনাথপুর, রুদাঘরা ও রংপুর ইউনিয়নের মানুুষকে দুর্ভোগ থেকে মুক্তি দিতেই নতুন করে বৃহৎ পরিসরে প্রকল্প তৈরি করা হয়েছে, এমন দাবি পানি উন্নয়ন বোর্ডের।

ভদ্রা-সালতা নদী খনন প্রকল্পটি পুরোপুরি সফল না হওয়ার কথা স্বীকার করে পাউবো খুলনার নির্বাহী প্রকৌশলী আশরাফুল আলম জানান, নদী দুটির নাব্য ফিরে পেতে ৩০ কোটি টাকা ব্যয়ে দুটি সøুইস গেট নির্মাণের পরিকল্পনা নেয়া হলেও পরে তা বাতিল হয়ে যায়। অপরদিকে আশপাশের আরো কয়েকটি নদীতে পলি জমায় অতিদ্রুত নদী দুটি প্রায় আগের অবস্থায় ফিরে গেছে। এ জন্য ভদ্রা, সালতা নদীসহ আশপাশের ছোট ছোট নদী-খাল পুনঃখনন করা প্রয়োজন। এগুলো খননের জন্য ১ হাজার ৮১৯ কোটি টাকার একটি প্রকল্প সংশ্লিষ্ট দফতরে প্রেরণ করা হয়েছে। আমরা অপেক্ষায় আছি প্রকল্পটি অনুমোদনের এবং আশা করছি নতুন প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে এলাকাবাসীর সকল সমস্যার সমাধান হবে।

সচেতন নাগরিক কমিটি (সনাক) খুলনার সাবেক সভাপতি অধ্যাপক আনোয়ারুল কাদির জানান, আমরা মনে করি ভদ্রা ও সালতা নদী খনন প্রকল্পে ব্যাপক অনিয়ম ও দুর্নীতি হয়েছে। কেন এটা হয়েছে, কিভাবে হয়েছে এবং কারা এর সঙ্গে জড়িত সেটা তদন্ত করা প্রয়োজন। এক বছরের মাথায় নদীতে পুনরায় পলি জমে ভরাট হওয়ার পেছনে খনন কাজে পরিকল্পনারও অভাব ছিল। আগামীতে যে প্রকল্প গ্রহণ করা হবে, সেগুলোতে শতভাগ স্বচ্ছতা নিশ্চিত করতে হবে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: প্রকল্প


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ