Inqilab Logo

শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৬ বৈশাখ ১৪৩১, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

মার্কিন নাগরিকদের মুক্ত করা কে এই রিচার্ডসন?

অনলাইন ডেস্ক | প্রকাশের সময় : ১৭ নভেম্বর, ২০২১, ১:১১ পিএম

মাত্র চার দিন আগে তাকে ১১ বছরের কারাদণ্ড দিয়েছে মিয়ানমারের আদালত। সেই মার্কিন সাংবাদিক ড্যানি ফেনস্টার এখন মুক্ত হয়ে যুক্তরাষ্ট্রের পথে। প্রায় অসম্ভব এই কাজ আবার সম্ভব করেছেন বিল রিচার্ডসন!

উত্তর কোরিয়া, ইরাক, ইরান, মিয়ানমার- যেখানেই আটক মার্কিন নাগরিক, সেখানেই ছুটে যান বিল রিচার্ডসন। এ কারণে গত ২৭ বছরে অনেকবার সংবাদ শিরোনামে এসেছেন কূটনীতিক থেকে ‘ফ্রিল্যান্স-ফিক্সার' হয়ে যাওয়া এই মার্কিন নাগরিক। তার সর্বশেষ সাফল্য ‘ফ্রন্টিয়ার মিয়ানমার' নামের অনলাইন ম্যাগাজিনের ব্যবস্থাপনা সম্পাদক ড্যানি ফেনস্টারকে মিয়ানমার থেকে মুক্ত করা।

সরকারবিরোধী আন্দোলনে উসকানি দেয়াসহ বেশ কিছু অভিযোগে গত সপ্তাহেই ৩৭ বছর বয়সি ফেনস্টারকে ১১ বছরের কারাদণ্ড দেয় মিয়ানমারের আদালত। তাকে মুক্ত করার আশা দৃশ্যত ছেড়েই দিয়েছিল যুক্তরাষ্ট্র সরকার। তবে আশা ছাড়েনি ফেনস্টারের পরিবার। প্রিয়জনকে মুক্ত করতে তারাও ভরসা রেখেছিলেন বিল রিচার্ডসনের ওপর। বলা বাহুল্য, ভরসার ষোল আলা মর্যাদা রেখেছেন নিউ মেক্সিকোর সাবেক গভর্নর।

১৯৯৪ সালে বিল রিচার্ডসন ছিলেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিনিধি পরিষদের সদস্য। যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট বিল ক্লিন্টন তখন উত্তর কোরিয়ার সঙ্গে পারমাণবিক অস্ত্র নিয়ন্ত্রণ সংক্রান্ত এক চুক্তির উদ্যোগ নিয়েছেন। চুক্তির বিষয়ে আলোচনার জন্য উত্তর কোরিয়ায় গিয়েছিলেন রিচার্ডসন। কিন্তু পিয়ংইয়ং-এ পৌঁছানোর আগেই ঘটে যায় অপ্রত্যাশিত এক ঘটনা।

যুক্তরাষ্ট্রের একটি সামরিক হেলিকপ্টার উত্তর কোরিয়ার আকাশসীমায় ঢুকে পড়ায় গুলি চালায় উত্তর কোরীয় সেনাবাহিনী। গুলিতে বিধ্বস্ত হয় হেলিকপ্টার। নিহত হন এক পাইলট। অন্যজনকে আটক করে উত্তর কোরিয়ার সেনাবাহিনী। ফলে বাধ্য হয়ে কয়েক সপ্তাহ পিয়ংইয়ংয়ে থাকতে হয় রিচার্ডসনকে।

পিয়ংইয়ং থেকে ফেরার পরই ইরাকে যেতে হয় তাকে। কুয়েত থেকে ইরাকে ঢুকে পড়েছিলেন যুক্তরাষ্ট্রের দুই নাগরিক। তাদের আটক করে ইরাকের সীমান্তরক্ষী বাহিনী। দুই সহনাগরিককে ছাড়ানোর জন্যও ডাক পড়েছিল রিচার্ডসনের। ব্যর্থ হননি। ইরাকের সাবেক প্রেসিডেন্ট সাদ্দাম হোসেনের সঙ্গে আলোচনা করে আটকে পড়া দুজনকে যুক্তরাষ্ট্রে ফিরিয়ে এনেছিলেন রিচার্ডসন।

কেমন করে স্বৈরাচারী শাসকদেরও প্রাভাবিত করে সফল হয়ে ফেরেন? ২০১৮ সালে ফরেন পলিসি ম্যাগাজিনকে এ প্রশ্নের উত্তর দিয়েছিলেন সাবেক কূটনীতিক বিল রিচার্ডসন । এক সাক্ষাৎকারে তিনি জানিয়েছিলেন, যে কোনো ব্যক্তি বা রাষ্ট্রের সঙ্গে সমঝোতার আলোচনায় তার প্রাথমিক লক্ষ্য থাকে পারস্পরিক সম্মান নিশ্চিত করা। তার মতে, ‘সমঝোতায় পৌঁছাতে চাইলে তাদেরও (প্রতিপক্ষ) সম্মান দিতে হবে আপনাকে।... তাছাড়া অন্যপক্ষ যাতে মুখরক্ষার একটা সুযোগ পায় সেদিকেও লক্ষ্য রাখতে হবে, এমন একটা পথ বের করতে হবে যাতে তারাও কিছুটা কৃতিত্ব বা আলোচনা থেকে কিছু একটা যেন পায়।’

বিল ক্লিন্টনের সময়ে জাতিসংঘে যুক্তরাষ্ট্রের দূত করা হয় রিচার্ডসনকে। ক্লিন্টনের বিদায়ের পর আবার ফেরেন রাজনীতিতে। ২০০২ সালে নিউ মেক্সিকোর গভর্নর নির্বাচিত হন রিচার্ডসন। তারপর ২০০৮ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ডেমোক্র্যাট দলের প্রার্থীও হতে চেয়েছিলেন। তবে সে আশা পূরণ হয়নি।

তাই বলে হতোদ্যম হয়ে অবসরে চলে যাননি বিল রিচার্ডসন। বরং বেসরকারি পর্যায়ে কাজ করার জন্য প্রতিষ্ঠা করেছেন সেন্টার ফর গ্লোবাল এনগেজমেন্ট নামের প্রতিষ্ঠান। প্রতিষ্ঠানটির মূল লক্ষ্য বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে আটক বা নিহত ব্যক্তিদের নিয়ে কাজ করা। মার্কিন সরকারের সহায়তায় সেই ব্যক্তিদের পরিবারের অনুরোধেই কাজ করেন তারা।

২০১৪ সালে এই প্রতিষ্ঠানের হয়েই গুগলের সিইও এরিক শ্মিড্টের সঙ্গে উত্তর কোরিয়ায় গিয়েছিলেন রিচার্ডসন। লক্ষ্য ছিল কোরিয়ান-আমেরিকান মিশনারি কেনেথ বে-কে মুক্ত করা। ২০১৭ সালে যুক্তরাষ্ট্রের কলেজ ছাত্র অটো ওয়ার্মবিয়ারকে ছাড়াতেও উত্তর কোরিয়ায় গিয়েছিলেন তার পরিবারের অনুরোধে, সেন্টার ফর গ্লোবাল এনগেজমেন্টের হয়ে। খুব কাহিল অবস্থায় ওয়ার্মবিয়ারকে দেশে ফিরিয়েছিলেন ঠিকই, তবে ফেরার পর বেশিদিন বাঁচেননি তরুণ শিক্ষার্থী।

এছাড়া ২০১৯ ও ২০২০ সালে দুবার ইরানেও গিয়েছেন বিল রিচার্ডসন। প্রথমবার গিয়েছিলেন যুক্তরাষ্ট্রের আরেক ছাত্র শিয়ে ওয়াংকে মুক্ত করতে। পরেরবার লক্ষ্য ছিল ইরানে আটক নৌবাহিনীর সাবেক কর্মকর্তা মাইকেল হোয়াইটকে ছাড়িয়ে আনা। ইরান সরকারকে রাজি করিয়ে দুবারই যুক্তরাষ্ট্রের দুই নাগরিককে ফিরিয়ে এনেছিলেন বিল রিচার্ডসন।

সোমবার ছিল বিল রিচার্ডসনের ৭৪তম জন্মদিন। এমন দিনেই সাংবাদিক ফেনস্টারকে মুক্তি দেয়ার খবর প্রচার করে মিয়ানমারে সেনাবাহিনী পরিচালিত টিভি চ্যানেলে। সেখান বলা হয় ‘মানবিক কারণে' মুক্তি দেয়া হয়েছে ফেনস্টারকে। কয়েকদিন আগেই মিয়ানমারের আদালত যাকে ১১ বছরের কারাদণ্ড দিয়েছিল, তাকে মুক্ত করে টুইটারে ফেনস্টারের সঙ্গে নিজের ছবিও পোস্ট করেছেন রিচার্ডসন।

মিয়ানমারের সামরিক জান্তার সঙ্গে এর আগেও একাধিকবার আলোচনায় বসেছেন তিনি। ১৯৯০-এর দশকে গিয়েছিলেন তখনকার গৃহবন্দি নেত্রী অং সান সুচিকে মুক্ত করতে। ২৮ বছর পর আবার যেতে হয়েছিল মিয়ানমারে। তখন নোবেলজয়ী সুচি ক্ষমতায়। তাই তার সঙ্গেই বসেছিলেন রয়টার্সের দুই সাংবাদিককে কারামুক্ত করার বিষয়ে কথা বলতে। আবার পালাবদল হয়েছে মিয়ানমারে। সুচি আবার কারাগারে। আবার ক্ষমতায় সেনাবাহিনী। আবার আলোচনায় বসলেন রিচার্ডসন যুক্তরাষ্ট্রের সাংবাদিক ফেনস্টারকে মুক্ত করতে। আবার সফল হয়েই ফিরলেন তিনি। সূত্র: রয়টার্স।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: যুক্তরাষ্ট্র


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ