Inqilab Logo

শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ০৭ বৈশাখ ১৪৩১, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

ভ্রাম্যমাণ আদালত ভীতিকর পরিবেশ তৈরি করছে

রেস্তোরাঁ মালিক সমিতি

অর্থনৈতিক রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ২১ নভেম্বর, ২০২১, ১২:০০ এএম

ভ্রাম্যমাণ আদালতের নামে রেস্তোরাঁ খাতে ভীতিকর পরিবেশ তৈরি করা হচ্ছে বলে অভিযোগ করেছে বাংলাদেশ রেস্তোরাঁ মালিক সমিতি। আর তাই প্রশাসনিক হয়রানি বন্ধ করে এই খাতকে একটি নির্দিষ্ট মন্ত্রণালয়ের আওতায় আনার দাবি জানিয়েছেন তারা। গতকাল রাজধানীর প্যান প্যাসিফিক সোনারগাঁও হোটেলে এক সংবাদ সম্মেলনে এ দাবি জানানো হয়। সংবাদ সম্মেলনে লিখিত দাবি তুলে ধরেন রেস্তোরাঁ মালিক সমিতির মহাসচিব ইমরান হাসান। এসময় সভাপতি মো. ওসমান গণি, প্রথম যুগ্ম মহাসচিব ফিরোজ আলম সুমন, যুগ্ম মহাসচিব ফয়সাল মাহবুব, সাংগঠনিক সম্পাদক সৈয়দ মোহাম্মদ আন্দালিবসহ সমিতির বিভিন্ন পর্যায়ের নেতারা উপস্থিত ছিলেন।

নেতারা বলেছেন, ভ্রাম্যমাণ আদালতের নামে সারা দেশে নৈরাজ্যকর পরিস্থিতি তৈরি করছেন আমলারা। একই সঙ্গে সরকারি সাতটি সংস্থা ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করছে। ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনার জন্য একটি সুনির্দিষ্ট নীতিমালা তৈরির দাবি জানিয়েছেন রেস্তোরাঁ মালিক সমিতির নেতারা। রেস্তোরাঁ মালিকদের অভিযোগ, শিল্পের অন্যতম এ খাতে ভ্রাম্যমাণ আদালতের নামে ভীতিকর পরিবেশ তৈরি করা হয়েছে। এছাড়া বর্তমানে রেস্তোরাঁ খাতকে ১১টি সংস্থার অধীনে কাজ করতে হয়। প্রতিবছর নতুন করে লাইসেন্স করতে বা নবায়নে ছোট ছোট উদ্যোক্তারা হয়রানির শিকার হওয়ার পাশাপাশি আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছেন। তাদের দাবি, সরকারি সংস্থাগুলোর মধ্যে সমন্বয় করে রেস্তোরাঁ খাতকে একটি মন্ত্রণালয়ের আওতায় নিয়ে আসতে হবে।
মহাসচিব ইমরান হাসান বলেন, খোলা ফুটপাতে বা যেখানে সেখানে খাবার তৈরি ও বিক্রি হয় কিন্তু সেখানে কোনো অভিযান হয় না। আমরা যারা বিনিয়োগ করে রেস্তোরাঁ করি সেখানে অহেতুক ১৫-২০ জন পুলিশ, বিজিবি, র‌্যাব, আনসার ভয়ভীতি দেখায়। মোবাইল কোর্ট বিধি মোতাবেক পরিচালনা করতে হবে।
ইমরান হাসান বলেন, রেস্তোরাঁ খাতে খাবারের মান পরীক্ষা ও দাম নিয়ন্ত্রণে বর্তমানে অনেকগুলো মোবাইল কোর্ট পরিচালিত হচ্ছে। এগুলো হলো-বাংলাদেশ নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ, বিএসটিআই, ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতরের বাজার মনিটরিং টিম, পৌরসভা বা সিটি করপোরেশনের ভ্রাম্যমাণ আদালত, জেলা প্রশাসনের মোবাইল কোর্ট, কল-কারখানা পরিদর্শন অধিদফতরের সার্ভে অভিযান ও স্বতন্ত্রভাবে র‌্যাবের মোবাইল কোর্ট। এছাড়া রেস্তোরাঁ খাত পরিচালনার জন্য ১১টি সংস্থার অধীনে কাজ করতে হয়। এতে নতুন লাইসেন্স কিংবা নবায়ন করতে গিয়ে উদ্যোক্তাদের হয়রানি হতে হয়। এত সংস্থায় না গিয়ে ওয়ান-স্টপ সার্ভিসের মাধ্যমে একটি সংস্থার কাছ থেকে অনুমতি নেয়ার দাবি জানান তিনি।
তিনি বলেন, মোবাইল কোর্টের নামে বাংলাদেশে একটি ভুল বার্তা প্রচার হচ্ছে যে আমরা ভেজাল খাবার পরিবেশন করছি। আমরা বলছি না এই খাতে সব ঠিক আছে এবং কোথাও কোনো ভেজাল নেই। আমরা কমার্শিয়াল সবকিছু দিচ্ছি অথচ একজন স্ট্রিট ফুডের মালিক কোনো ভ্যাট দিচ্ছে না। সে কোথায় রান্না করে, উপাদান কী দিচ্ছে তার কোনো মনিটরিং টিমও নাই। নেতাদের দাবি, রেস্তোরাঁ খাতে ব্যবসা করতে গেলে স্থানীয় প্রশাসন অবশ্যই রেস্তোরাঁ মালিক সমিতির ছাড়পত্র আছে কি না সেটি দেখবে। নিরাপদ খাদ্য ও অন্যান্য কর্তৃপক্ষ যারা আছে তারা সমন্বয় করে তাদেরকে মনিটরিং করবে।
ই-কমার্সে আটকে আছে রেস্তোরাঁর কোটি কোটি টাকা
ই-কমার্সে রেস্তোরাঁগুলোর কয়েক কোটি টাকা আটকে আছে বলে জানান তারা। সংবাদ সম্মেলনে এক প্রশ্নের উত্তরে তারা জানান, কত টাকা আটকে আছে তার সঠিক কোনো পরিসংখ্যান নেই। বিভিন্ন রেস্তোরাঁ সূত্রে তারা জেনেছেন, মিরপুর ও মোহাম্মদপুর এলাকায় চার থেকে পাঁচ কোটি, গুলশান-বাড্ডা এলাকায় ১০ কোটি ও ধানমন্ডি এলাকায় পাঁচ থেকে সাত কোটি টাকা আটকে আছে। সবচেয়ে বেশি টাকা আটকে আছে ই-ভ্যালির কাছে। ই-কমার্সের টেকওয়ে, পার্সেল ও অনলাইন ডেলিভারি প্রতিষ্ঠানগুলো স্বেচ্ছাচারীভাবে ব্যবসা পরিচালনা করছেন বলে অভিযোগ তাদের।
মালিকদের অভিযোগ, বর্তমান ই-কমার্স নীতিমালা অনুযায়ী ডেলিভারি কোম্পানিগুলো শুধু চার্জ নেয়ার কথা, সেখানে তারা ইচ্ছামতো কমিশন চার্জ করছে। এজন্য ১০ শতাংশ কমিশন করে দ্রুত নীতিমালা করার দাবি জানান তারা।
শিল্প হিসেবে ঘোষণা জরুরি
সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, রেস্তোরাঁ খাতে দুই কোটি মানুষ প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে জড়িত। সরকারি হিসেবে দেশে চার লাখের বেশি রেস্তোরাঁ পরিচালিত হচ্ছে। এই খাতে ৩০ লাখ শ্রমিক-কর্মচারী কাজ করছেন। তবে সরকারিভাবে রেস্তোরাঁ খাতকে শিল্পের মর্যাদা না দেয়ায় চরম অবহেলিত অবস্থায় পড়েছেন তারা। অবিলম্বে হোটেল-রেস্তোরাঁ খাতকে শিল্পের মর্যাদা দেয়ার দাবিও জানান নেতারা।
ভ্যাট ও ট্যাক্স আদায়ের প্রতিবন্ধকতা ও প্রতিকার
সব খাদ্য ব্যবসা প্রতিষ্ঠানকে ভ্যাট নিবন্ধনের আওতায় আনার দাবি তুলে রেস্তোরাঁ মালিক সমিতির নেতারা দাবি জানান, পণ্যের মূল্যের সঙ্গে ভ্যাট সংযুক্ত করে মূল্য নির্ধারণ করার নতুন আইন বাদ দিতে হবে। জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) নির্ধারিত হারে ভ্যাট আদায় করে সম্পূর্ণ টাকা ট্রেজারি চালানের মাধ্যমে জমা দিয়ে থাকে। ভ্যাট আইনে ওই আদায় করা টাকার মধ্যে রেয়াত অন্তর্ভুক্ত আছে, যা একজন রেস্তোরাঁ ব্যবসায়ী প্রাপ্তির অধিকার সংরক্ষণ করেন। ব্যবসার স্থাপনা, বিদ্যুৎ বিল, গ্যাস বিল, পানি বিলসহ অন্যান্য কেনা পণ্যে এবং সেবা যেখানে ভ্যাট প্রদান করা হয়েছে, সেগুলোকে উপকরণ বিবেচনা করে আদায় করা ভ্যাটের ৫০ শতাংশ রেয়াত সুবিধা প্রদানের প্রস্তাব করেন তারা। একই সঙ্গে সব জায়গায় ইএফডি মেশিন দেয়ার দাবিও জানান নেতারা। এছাড়া স্টাফদের দক্ষতা বৃদ্ধির জন্য প্রশিক্ষণ দেয়ার দাবি জান নো হয়।
মহাসচিব ইমরান হাসান বলেন, আমরা নিরাপদ খাদ্যের সঙ্গে একসঙ্গে কাজ করতে চাই। নিরাপদ খাদ্যের অধীনে সমস্ত সংস্থাকে একসঙ্গে এনে প্রথমে একটা নীতিমালা তৈরি করতে হবে, যা রেস্তোরাঁ খাতের জন্য যুগোপযোগী। এই নীতিমালা সব রেস্তোরাঁ মালিককে দিতে হবে এবং তাদেরকে জেলাভিত্তিক, থানাভিত্তিক ভাগ করে করে প্লট করে করে ট্রেনিংয়ের ব্যবস্থা করতে হবে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: রেস্তোরাঁ মালিক সমিতি
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ