Inqilab Logo

শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ০৭ বৈশাখ ১৪৩১, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

রাজধানীর আবাসিক হোটেলে তিল ধারণের ঠাঁই নেই

প্রকাশের সময় : ২০ অক্টোবর, ২০১৬, ১২:০০ এএম

বিপাকে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষার্থীরা
পূর্বঘোষণা ছাড়াই উত্তরবঙ্গের বাস চলাচল বন্ধ, দেশের অন্যান্য এলাকা থেকে ঢাকাগামী ট্রেন ও বাসের টিকিট সঙ্কট
স্টাফ রিপোর্টার : আওয়ামী লীগের সম্মেলনে যোগ দিতে দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে ইতোমধ্যেই হাজার হাজার নেতা কর্মী এসেছেন রাজধানীতে। যারা এখনো আসেননি তারাও হোটেলগুলোতে অগ্রীম সিট বুকিং করে রেখেছেন। এ কারণে রাজধানীর আবাসিক হোটেলগুলোতে তিল ধারণের ঠাঁই নেই। ফলে বিপাকে পড়েছেন ঢাকার বাইর থেকে আসা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তিচ্ছু পরীক্ষার্থী ও তাদের অভিভাবকেরা। আগামীকাল শুক্রবার তাদের ভর্তি পরীক্ষা অনুষ্ঠানের কথা রয়েছে। অন্যদিকে পূর্বঘোষণা ছাড়াই গতকাল বুধবার উত্তরবঙ্গ থেকে ঢাকাগামী দূরপাল্লার বাস চলাচল বন্ধ করে দিয়েছে সিরাজগঞ্জের বাস মালিক ও শ্রমিকেরা। বগুড়ার বাস মালিক-শ্রমিকদের সঙ্গে সিরাজগঞ্জ বাস মালিক-শ্রমিকদের বিরোধের জের ধরে এ ঘটনা ঘটে। এতে চরম দুর্ভোগের শিকার হয়েছেন যাত্রীরা। বিশেষ করে আগামীকাল শুক্রবার অনুষ্ঠেয় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষার্থীরা বিপাকে পড়েছেন। এছাড়া, দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে ভর্তি পরীক্ষার্থীদের একটি বড় অংশ আজ বৃহস্পতিবার রাজধানীতে আসছে। তাদের অভিভাবকেরা জানিয়েছেন, রাজধানীর আবাসিক হোটেলগুলোতে থাকার সিট সঙ্কট। কোন হোটেলেই আগামী ২৪ অক্টোবর পর্যন্ত সিট নেই। এক সপ্তাহ আগ থেকেই এসব সিটি বুকিং করে রেখেছেন আওয়ামী লীগের নেতা কর্মীরা। বিষয়টি আগতে বুঝতে না পারায় ভর্তি পরীক্ষার্থীরা সিট বুকিং দিতে পারেননি। এছাড়া দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে আসা ঢাকাগামী ট্রেন ও বাসের টিকেট সঙ্কট দেখা দিয়েছে। আজ বৃহস্পতিবারে টিকেট পেয়ে চরম বিড়ম্বনায় পড়তে হয়েছে শিক্ষার্থীদের।
গতকাল সিলেট থেকে আসা ৬/৭ শিক্ষার্থী জানান, রাজধানীর ফকিরাপুল, পল্টন, নয়াপল্টন, উত্তরা, যাত্রাবাড়ী গুলিস্থান, নবাবপুর রোডসহ বিভিন্ন এলাকার আবাসিক হোটেল ঘুরে কোন সিট পাননি। ফলে আজ বৃহস্পতি ও কাল শুক্রবার কোথায় রাত্রিযাপন করবেন এ নিয়ে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠার মধ্যে আছেন। সিলেট সরকারী মহিলা কলেজ থেকে এ বছর এইচএসসি পাস করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষা দিতে আসা দীপালী জানান, ঢাকায় তার কোন আত্মীয়-স্বজন নেই। তাই বাধ্য হয়ে তাকে আবাসিক হোটেলে অবস্থান করতে হবে। তিনি জানান, তার বাবা ও এক বোনসহ গতকাল ফকিরাপুলের একটি আবাসিক হোটেলে রাতে অবস্থান করেছেন। কিন্তু হোটেল ম্যানেজার জানিয়ে দিয়েছেন, আজ ২০ অক্টোবর থেকে ২৩ অক্টোবর পর্যন্ত হোটেলের সকল রুম আগেই বুকিং হয়ে গেছে। তাই তাদের আজই হোটেল ছাড়তে হবে। এখন কোথায় অবস্থান করবেন এ নিয়ে তারা বিপাকে পড়েছেন।
একই ধরনের বিড়ম্বনার কথা জানালেন, চট্টগ্রাম থেকে আসা পরীক্ষার্থী ফরহাদ হোসেন। তিনি জানান, ফকিরাপুল হোটেল উপবন, রাহমানিয়া, ক্যাপিটাল, ভিক্টোরিয়া কোথাও সিট নেই। তিনি আরো জানান, গতকাল বিকালে জয়কালি মন্দির হোটেল সুপার এবং ওসমানীতে গিয়েও তিনি কোন সিট পাননি। তারা ৪ বন্ধু ঢাকায় এসেছেন শুক্রবার ভার্সিটির ভর্তি পরীক্ষায় অংশ নিতে। সর্বশেষ কমলাপুর রেল স্টেশন সংলগ্ন একটি আবাসিক হোটেলে রাত যাপন করেন। কিন্তু বৃহস্পতিবারে ও শুক্রবারে সেখানেও কোন সিট খালি নেই বলে তারা জানান।
এদিকে উত্তরবঙ্গ-ঢাকা মহাসড়কের সিরাজগঞ্জের চান্দাইকোনা থেকে যাত্রীবাহী সব বাসকে ফিরিয়ে দেওয়া হয়। গতকাল সকালে ঢাকা, সিলেট, চট্টগ্রামসহ বিভিন্ন জেলার উদ্দেশে বগুড়ার মালিকদের কয়েকশ’ দূরপাল্লার বাস উত্তরবঙ্গের বিভিন্ন জেলা থেকে যাত্রী নিয়ে রওনা দিয়ে সিরাজগঞ্জে এসে বাধার মুখে পথে আটকে থাকে।
জানা গেছে, সকাল থেকে বেলা আড়াইটা পর্যন্ত দেড় শতাধিক বাস মহাসড়কে আটকে থাকে। কিছু বাস বগুড়ার ঠনঠনিয়া কোচ টার্মিনালে ফিরে এসে যাত্রী নামিয়ে দিয়েছে। হঠাৎ এ ঘটনায় চরম দুর্ভোগের শিকার হয়েছে যাত্রীরা। এসব বাসের বেশিরভাগ যাত্রীই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষার্থী। মাঝরাস্তায় বাস থেকে নামিয়ে দেয়ায় দুর্ভোগে পড়েছেন ভর্তি পরীক্ষার্থীরা। আগামীকাল শুক্রবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘ক’ ইউনিট এবং জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞান অনুষদের ভর্তি পরীক্ষায় অংশ নেয়ার জন্য উত্তরবঙ্গের বিভিন্ন জেলা থেকে দূরপাল্লার বাসে ঢাকায় যাচ্ছিলেন তারা।
সকাল আটটায় নওগাঁ থেকে ঢাকার উদ্দেশে ছেড়ে আসা শাহ ফতেহ আলী পরিবহনের একটি বাসে রওনা দিয়েছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বেশ কয়েকজন ভর্তি পরীক্ষার্থী।
পরীক্ষার্থী পৃথা মজুমদার বলেন, শাহ ফতেহ আলী পরিবহনের ওই বাসে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষার্থীই ছিলেন ১০ জনের মতো। সকাল ১০টার দিকে বাসটি সিরাজগঞ্জের চান্দাইকোনায় পৌঁছালে সেখানে আটকে দেয়া হয়। পরে বাস থেকে যাত্রীরা নেমে দেখতে পান, অর্ধশত বাস রাস্তায় আটকে আছে। ঘণ্টা খানেক অপেক্ষার পর বাসটি যাত্রী নিয়ে বগুড়ার শেরপুরে এসে নামিয়ে দেয়।
শাহ ফতেহ আলী পরিবহনের আরেকটি বাসে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ৪০ জন ভর্তি পরীক্ষার্থী বগুড়া থেকে সকালে ঢাকার উদ্দেশে রওনা দেন। বেলা ১১টার দিকে বাসটি সিরাজগঞ্জের চান্দাইকোনায় বাধার মুখে পড়ে। দুপুর ১২টার দিকে বাসটি বগুড়ার ঠনঠনিয়া কোচ টার্মিনালে এসে যাত্রীদের নামিয়ে দেয়। বগুড়ার সরকারি আজিজুল হক কলেজ থেকে এইচএসসি পাস করা এসব শিক্ষার্থী জানান, শুক্রবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষা। বৃহস্পতিবারের মধ্যে ঢাকায় পৌঁছাতে হবে। এমনিতেই আওয়ামী লীগের জাতীয় সম্মেলনের কারণে আগামী বৃহস্পতিবার বাসের টিকিট মিলছে না। এখন রিজার্ভ বাসও ঢাকায় যেতে দিচ্ছে না।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষার্থী ফারজানা সুলতানা বলেন, কোনো কারণ ছাড়াই হুট করে মাঝরাস্তায় বাস আটকে দিয়ে চরম অরাজক পরিস্থিতি তৈরি করা হয়েছে। সকাল থেকে ঢাকা বিশ্ববিদালয়ের শত শত ভর্তি পরীক্ষার্থী মাঝরাস্তায় চরম বিপাকে পড়েছেন। অথচ প্রশাসনের কোনো টনক নড়ছে না।
বগুড়ার মোটর মালিক সমিতি সূত্রে জানা গেছে, ভোর থেকে বগুড়া, নওগাঁ, জয়পুরহাট, গাইবান্ধাসহ বিভিন্ন জেলা থেকে ঢাকা, সিলেট, চট্টগ্রাম, গাজীপুর, ময়মনসিংহ, মানিকগঞ্জ, সিরাজগঞ্জ, পাবনার উদ্দেশে ছেড়ে যাওয়া দেড় শতাধিক বাস মহাসড়কের চান্দাইকোনা থেকে ফিরিয়ে দিয়েছে সিরাজগঞ্জের বাস মালিক-শ্রমিকেরা।
বগুড়া মোটর মালিক গ্রুপের আহ্বায়ক কমিটির সদস্য ও শাহ ফতেহ আলী পরিবহনের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আমিনুল ইসলাম বলেন, সিরাজগঞ্জ বাস মালিক সমিতির দুটি বাস এত দিন নওগাঁ সড়কপথে চলছিল। তারা নতুন করে আরও দুটি বাস একই সড়কপথে চালাতে চায়। বিনিময়ে বগুড়া মালিক সমিতিও নতুন করে দুটি বাস সিরাজগঞ্জের অভ্যন্তরীণ সড়কে চালাতে চায়। কিন্তু সিরাজগঞ্জ বাস মালিক সমিতি এতে রাজি নয়। আলোচনা ছাড়াই হুট করে আজ সকাল থেকে বগুড়ার মালিকদের দূরপাল্লার ও অভ্যন্তরীণ সব ধরনের বাস সিরাজগঞ্জ থেকে ফিরিয়ে দিচ্ছে সেখানকার বাস মালিক-শ্রমিকেরা। বাধ্য হয়ে এসব বাস বগুড়ায় ফিরে এসেছে। যাত্রীদের বেশির ভাগই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষার্থী হওয়ায় বিষয়টি সিরাজগঞ্জের পুলিশ প্রশাসনকেও জানানো হয়েছে।
সিরাজগঞ্জ বাস মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক মো. মনিরুজ্জামান মুঠোফোনে বলেন, বিষয়টি নিয়ে বৈঠক চলছে। সিদ্ধান্ত পরে জানানো হবে।
এ বিষয়ে সিরাজগঞ্জের পুলিশ সুপার মিরাজ উদ্দিন আহমেদ বলেন, সিরাজগঞ্জের মালিকেরা বাস আটকেছেন সত্যি। তবে সব বাস নয়। শুধু বগুড়ার মালিকদের বাস তাঁরা আটকে রেখেছেন। এটা পরিবহন মালিকদের অভ্যন্তরীণ বিষয়। বগুড়ার মালিকদেরও সমঝোতায় এগিয়ে আসতে হবে। বাস চলাচল বন্ধ হলে যাত্রী দুর্ভোগ হবেই। সেখানে ভর্তি পরীক্ষার্থী থাকলেও সেটা দেখার বিষয় পুলিশের নয়।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: রাজধানীর আবাসিক হোটেলে তিল ধারণের ঠাঁই নেই
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ