Inqilab Logo

শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৬ বৈশাখ ১৪৩১, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

হাফ ভাড়া দেওয়ায় বাসে ধর্ষণের হুমকি

শিক্ষার্থীদের আল্টিমেটামে সেই বাসের চালক-হেলপার আটক

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ২২ নভেম্বর, ২০২১, ১২:০৯ এএম

গণপরিবহনে শিক্ষার্থীদের জন্য হাফ ভাড়া নিশ্চিতের দাবিতে রাজধানীজুড়ে আন্দোলন শুরু করেছেন শিক্ষার্থীরা। এছাড়া হাফ ভাড়া দিতে গিয়ে বেগম বদরুন্নেসা সরকারি মহিলা কলেজের এক ছাত্রীকে ধর্ষণের হুমকি দেওয়ার ঘটনাও ঘটেছে। হুমকি দেওয়া ঠিকানা পরিবহনের বাস চালকের সহকারীকে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে গ্রেফতারের আল্টিমেটাম দিয়েছে প্রতিষ্ঠানটির শিক্ষার্থীরা। বাসচালকের সহকারীকে গ্রেফতার ছাড়াও বাসে নারী শিক্ষার্থীদের হয়রানি বন্ধ করা ও সারা দেশে শিক্ষার্থীদের হাফ পাস চালুর দাবি জানান শিক্ষার্থীরা।

এদিকে, শিক্ষার্থীদের আল্টিমেটামের কয়েক ঘন্টার মধ্যেই ঠিকানা পরিবহনের চালক মো. রুবেল ও হেলপার মো. মেহেদী হাসানকে নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জ থেকে আটক করেছে র‌্যাব। গতকাল রাত ৮টার দিকে ইনকিলাবকে এ তথ্য জানিয়েছেন র‌্যাবের লিগ্যাল আ্যন্ড মিডিয়া উইংয়ের সহকারী পরিচালক এএসপি আ ন ম ইমরান খান

জানা যায়, গত এক সপ্তাহে গণপরিবহন শ্রমিকদের বিরুদ্ধে হাফ ভাড়া নিয়ে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রীকে হেনস্থা, ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে বাকবিতণ্ডা, সরকারি তিতুমীর কলেজের ৪ শিক্ষার্থীকে পিটিয়ে আহত, বেগম বদরুন্নেসা সরকারি মহিলা কলেজের এক ছাত্রীকে ধর্ষণের হুমকি, সাইন্স কলেজের শিক্ষার্থীদের লাঞ্চিত করাসহ একাধিক জায়গায় শিক্ষার্থীদের হেনস্তার অভিযোগ উঠে। এরপর থেকে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় বাসে অর্ধেক ভাড়া নেয়ার দাবিতে ‘হাফ পাশ আন্দোলন’ শুরু করেন সাধারণ শিক্ষার্থীরা। গণপরিবহনে হাফ ভাড়া নিয়ে বিক্ষিপ্তভাবে ছড়িয়ে পড়া এ আন্দোলনে দাবি আদায় না হলে সংঘবদ্ধ আন্দোলনের হুশিয়ারিও দিচ্ছেন তারা।

শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, জ্বালানি তেলের দাম বাড়ানোর পর বাস ভাড়া ২৬ শতাংশ বাড়ানো হয়েছে। তবে বাসের চালক সহকারীরা কোনো ধরণের নিয়মনীতি না মেনে দুই থেকে তিনগুণ বেশি ভাড়া আদায় করছে। ওয়েবিলের নামে সর্বনিম্ন ১৫ টাকা বাস ভাড়া আদায় করছে। শিক্ষার্থীদের ক্ষেত্রে হাফ ভাড়া নেয়ার কথা থাকলেও তাও মানছেন পরিবহন মালিকরা।

সম্প্রতি জ্বালানি তেলের দাম বাড়ার পর সরকারের পক্ষ থেকে বাস ভাড়া বাড়ানোরও ঘোষণা দেয়া হয়। এরপর থেকে যাত্রীদের সঙ্গে পরিবহন শ্রমিকদের বাকবিতণ্ডা নিত্যদিনের ঘটনায় পরিণত হয়েছে। এর মধ্যে গণপরিবহনে হাফ ভাড়া নিয়ে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে শ্রমিকদের দ্বন্দ্ব প্রকট আকার ধারণ করেছে।

রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় গাড়ি থামিয়ে গত বৃহস্পতিবার শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে বাসে হাফ ভাড়া নেয়ার দাবিতে ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থীরা বিক্ষোভ করেন। ঢাকা কলেজের সামনে মিরপুর রোড বন্ধ করে বাসে অর্ধেক ভাড়া নেয়ার দাবিতে সেøাগান দিতে থাকেন তারা। এ সময় মিরপুর রোডসহ আশপাশের সড়কে তীব্র যানজটের সৃষ্টি হয়। এদিন সন্ধ্যায় রাজধানীর আগারগাঁওয়ে হাফ ভাড়া নিয়ে বিতর্কের জেরে বাসচালক ও সহকারীর বিরুদ্ধে সরকারি তিতুমীর কলেজের চার শিক্ষার্থীকে মারধর করার অভিযোগ উঠে।

এরপর গত শনিবার দুপুর সোয়া ১২ টার দিকে এক শিক্ষার্থী বাসে হাফ ভাড়া দিতে চান। হাফ ভাড়া না নিয়ে তাকে লাঞ্চিত করার অভিযোগে স্বাধীন পরিবহনের একটি বাস ভাঙচুর করে শিক্ষার্থীরা। এরপর হাফ ভাড়ার দাবিতে রাস্তা বন্ধ করে বিক্ষোভ শুরু করে সাইন্স কলেজের শিক্ষার্থীরা। এদিন সকালে রাজধানীর ঠিকানা বাসে হাফ ভাড়া দেয়ায় প্রকাশ্যে এধর্ষণের হুমকি দেয়ার অভিযোগ করেন রাজধানীর বেগম বদরুন্নেসা সরকারি মহিলা কলেজের উচ্চমাধ্যমিক দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী।

ফেসবুকে দেয়া পোস্টে বদরুন্নেসা কলেজের ওই শিক্ষার্থী লিখেন, আমার বাসা শনির আখড়া। এখান থেকে কলেজের (বকশী বাজার এলাকা) ভাড়া ১০ টাকা, প্রতিদিন ১০ টাকা দিয়েই যাচ্ছি। আজকে কলেজে যাওয়ার সময় ঠিকানা বাসে করে গিয়েছিলাম। তো আজকে হেলপারকে ২০ টাকার নোট দিলে সে ভাড়া রাখছে ১৫ টাকা। আমি তাকে ভালো করেই বলছিলাম আমার ১০ টাকা ফেরত দিতে, বাট সে দেয় তো নাই উল্টা বলে ‘দিমু না কী করবি কর’। এরপর চিল্লানোর পর সে বলে ‘গলা বড় করবি না, পাঁচ টাকা নে না হয় নাইমা যা। বাসের একটা মানুষও তাকে একটা কথাও বলে নাই। কেউ কিচ্ছু বলে নাই। ইভেন একটা পুলিশও ছিল, সেও কিছুই বলে নাই। এরপর নামার সময় পাঁচ টাকা হাতে ধরায় দিয়ে বলে “নে তোর টাকা, প্রতিদিনই তো আসবি একদিন ধইরা .... কোথাকার।

এ ঘটনার জেরে গতকাল মতিঝিলের শাপলা চত্বরে আন্দোলন করেন নটরডেম কলেজের শিক্ষার্থীরা। বকশীবাজার মোড় অবরোধ করেন বেগম বদরুন্নেসা সরকারি মহিলা কলেজের বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা। তাদের সঙ্গে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় অধিভুক্ত বাকি ৬ কলেজের শিক্ষার্থীরাও যোগ দেন। এ সময় আশপাশ এলাকায় তীব্র যানজটের সৃষ্টি হয়। প্রায় ৪ ঘণ্টা অবরোধ করার পর দুপুর ১টার দিকে তারা সড়ক থেকে সরে যায়। তবে অবরোধ তুলে নেওয়ার আগে তারা ৯টি দাবি উত্থাপন করে। দাবি আদায় না হলেও সোমবারও সড়ক অবরোধ করার ঘোষণা দিয়েছেন শিক্ষার্থীরা। তাদের দাবিগুলো হলো-শিক্ষার্থীদের হাফ ভাড়া নিশ্চিত করতে হবে, বাসে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে হয়রানিমূলক আচরণ করা যাবে না, কলেজের সামনে সব বাস থামতে হবে, মহিলা সিট নিশ্চিত করতে হবে, সম্মানের সঙ্গে বাসে ওঠার ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হবে, মেয়েদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে, ধর্ষণের হুমকি দেওয়া বাস কর্মচারীর শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে, রায়েরবাগ, শনির আখড়া, কাজলা, সাইনবোর্ডসহ প্রত্যেক বাস স্টপে সব ধরনের বাস থামাতে হবে ও শিক্ষার্থীদের তুলতে হবে এবং শিক্ষার্থীদের সঙ্গে উগ্র ব্যবহার করা যাবে না।

বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতির মহাসচিব মোজাম্মেল হক চৌধুরী ইনকিলাবকে বলেন, আমরা কিছুদিন আগে গণপরিবহন যাত্রীদের সুবিধায় ১৩ দফা দাবি জানিয়ে সংবাদ সম্মেলন করেছি। তার মধ্যে অন্যতম দাবি ছিলো শিক্ষার্থীদের জন্য হাফ পাশ ব্যবস্থা চালু বর্তমান সরকার বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের ৬ দফায় ছিলো ছাত্র-ছাত্রীদের হাফ পাশ নিশ্চিত করা। আমরা দাবি করবো নিষ্পত্তি কার্যকর উদ্যোগ নিবেন এবং তার জন্য একটা নির্দেশনা সহসা জারি করবেন। চলমান আন্দোলন থামানোর উদ্যোগ নিবেন।

তিনি বলেন, পরিবহন শুধু ব্যবসা খাত নয় এটি তো একটি সেবা খাতও। পরিবহন মালিকরা সামাজিক দায়বদ্ধতার জায়গা থেকে হাফ পাশের বিষয়টি নিশ্চিত করতে পারেন। সামাজিক দায়বদ্ধতার জায়গা থেকে এটি করতে পারেন।

ঢাকা সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক খন্দকার এনায়েত উল্লাহ বলেন, হাফ ভাড়া নেয়ার পজিশন দেশে এই মূহুর্তে নাই। এটা বিআরটিসিতে থাকে, সেখানে ভর্তুকি দেয়া হয়। বেসরকারি গাড়িতে সরকার কোনো ভর্তুকি দেয় না। এখানে হাফ ভাড়া নেয়ার বিষয় নেই।

তিনি বলেন, ঢাকা শহরে লাখ লাখ শিক্ষার্থী আছে। প্রতিদিন প্রতিটি গাড়িতে ৮-১০ জন শিক্ষার্থী চলাচল করে। ছাত্রদের হাফ ভাড়া দেয়াটা কি সেবার মধ্যে পড়ে? হাফ ভাড়া নিলে এ টাকাটা আমাদের কে দিবে? এমন প্রশ্ন রাখেন তিনি।

জানা যায়, ঠিকানা পরিবহনের মালিকের নাম মো. রিপন। তিনি পুলিশের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার আত্মীয় হিসেবে পরিবহন সেক্টরে নিজেকে পরিচয় দেন। তবে তার সাথে যোগাযোগ করেও তার বক্তব্য পাওয়া যায়নি।



 

Show all comments
  • মোহাম্মদ দলিলুর রহমান ২২ নভেম্বর, ২০২১, ১:৫২ এএম says : 0
    এত বড় সাহস কোথায় থেকে পেলেন,বাসের ডাইবার ও হেলপার,আমাদের ছেলে মেয়েদের সাথে দুর্ব্যবহার এদের উপযুক্ত শাস্তি দেয়া হউক,আমরা আইন হাতে তুলে নিব না,আর যদি এই ধরনের কিছু ঘটে আমরা সবাই একত্রিত হয়ে এদের পিঠাইয়া মেরে ফেলব,সাবধান বাসের ডাইবার হেলপার হারমজাদারা,আর সারাজীবন দেখছি আমাদের ছাত্র ছাত্রী সন্তানদের হাফ ভাড়া দিতেন,বর্তমান দলীয় আমলাতান্ত্রিক চৌরাচার দলীয় সংসদীয় পদ্ধতি আসার পর এই গুলি কি জন্য,সাবধান সাপ নিয়ে খেলা করার দরকার নেই,সাবধান সাবধান।
    Total Reply(0) Reply
  • Parvez ২২ নভেম্বর, ২০২১, ৫:৩৫ এএম says : 0
    ঢাকা সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক খন্দকার এনায়েত উল্লাহ বলেন, হাফ ভাড়া নেয়ার পজিশন দেশে এই মূহুর্তে নাই। এটা বিআরটিসিতে থাকে, সেখানে ভর্তুকি দেয়া হয়। বেসরকারি গাড়িতে সরকার কোনো ভর্তুকি দেয় না। এখানে হাফ ভাড়া নেয়ার বিষয় নেই। ...... ডাহা মিথ্যা। ৮২-৮৮ সময়কালে আমি ঢাবি-র ছাত্র ছিলাম। সব ধরণের বাসে হাফ-ভাড়া দিতাম। ৩৩% ক্ষেত্রে ID কার্ড দেখাতে হয়েছে। বেশীর ভাগ ক্ষেত্রে লাগত না। তখনকার কনডাকটর গণ যথেষ্ট ভদ্র ছিল। সবচে বড় কথা সরকার ছাত্রদের পক্ষে ছিল। এরশাদ ক্ষমতায় আসার কিছুদিন পরে, তৎকালীন রেডিও বাংলাদেশ থেকে কোন এক রাতের খবরে বলা হয়েছিল, ঢাকা শহরে ছাত্ররা হাফ ভাড়ায় চলতে পারবে। দিন-তারিখ মনে নেই, কিন্তু কণ্ঠটা আজো কানে বাজে। কারণ ওটা ছিল আমাদের জন্য ভীষণ খুশীর খবর।
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: হাফ ভাড়া

২ ডিসেম্বর, ২০২১

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ