Inqilab Logo

বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ০৫ বৈশাখ ১৪৩১, ০৮ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

বরিশাল-চট্টগ্রাম রুটে যাত্রীবাহী স্টিমার সার্ভিস চালু হচ্ছে ২ ডিসেম্বর

বরিশাল ব্যুরো | প্রকাশের সময় : ২২ নভেম্বর, ২০২১, ২:২০ পিএম

প্রায় দশ বছর পরে ডিসেম্বরের প্রথম সপ্তাহে পুনরায় চালু হতে যাচ্ছে বরিশাল-চট্টগ্রাম উপক’লীয় যাত্রীবাহী স্টিমার সার্ভিস। ২০১১ সারেল মধ্যভাগে নির্ভরযোগ্য নৌযানের অভাবে এ উপক’লীয় সার্ভিসটি বন্ধ হয়ে যায়। এ ব্যাপারে সোমবার বিআইডব্লিউটসি’র পরিচালক-বানিজ্য এবং যাত্রী সেবা ইউনিট প্রধানের সাথে আলাপ করা হলে ২ ডিসেম্বর বরিশাল-চট্টগ্রাম উপক’লীয় যাত্রীবাহী সার্ভিসটির সম্ভাব্য পরিক্ষামূলক পরিচালন শুরুর কথা বলা হয়েছে।

প্রথমিকভাবে সপ্তাহে ৪দিন ‘ এমভি বার আউলীয়া’ ও ‘এমভি তাজউদ্দিন আহমদ’ নামের দুটি উপক’লীয় নৌযান বরিশাল ও চট্টগ্রামের উভয়প্রান্ত থেকে সকাল ৭টায় যাত্রা করে সন্ধার ৭টার মধ্যে গন্তব্যে পৌছার কথা বলা হয়েছে। তবে ভাটি মেঘনার প্রবল শ্রোত অতিক্রম করে তা কতটা নির্ধারিত সময়ে পৌছতে পারবে সে ব্যপারে কিছুটা সন্ধিহান ওয়াকিবাহল মহল। পথিমধ্যে ভোলার ইলিশাঘাট ও হাতিয়া’তে যাত্রা বিরতি করবে নৌযানগুলো। ফলে ভোলা ও হাতিয়া’র সাথেও বরিশাল এবং চট্টগ্রামের নিরাপদ ও সহজ নৌযোগাযোগ প্রতিষ্ঠত হবে বলে কতৃপক্ষ আশা করছেন।
বিআইডব্লিউটিসি’র উচ্চ পর্যায় থেকে আগষ্টের মধ্যেই বরিশাল-চট্টগ্রাম উপক’লীয় সার্ভিসটি পুণর্বহালের সিদ্ধান্ত থাকলেও ‘এমভি বার আউলীয়া’র পূণর্বাশন বিলম্বিত হওয়ায় তা ক্রমাগত পেছাতে থাকে। ২০০২ সালে চীন থেকে সংগ্রহ করা নৌযানটির পেছনে ইতোপূর্বে আরো প্রায় ১০ কোটি টাকা ব্যায়ের পরে এবার পুরনোর পরিবর্তেন নতুন ইঞ্জিন সংযোজন করা হল।
ইতোমধ্যে বিআইডব্লিউটসি’র তরফ থেকে বরিশালÑচট্টগ্রাম নৌপথে জরিপ সম্পন্ন করে রুট ম্যাপ সরবারহের জন্য আইডব্লিউটিএ’কে বলা হলেও তাও বিলম্বিত হচ্ছে। সংস্থাটি ২৫ নভেম্বর বরিশাল-চট্টগ্রাম নৌপথে উপক’লীয় যাত্রীবাহী স্টিমার সার্ভিসটি চালুর প্রস্তুতি নিলেও বিআইডব্লিউটিএ’র তরফ থেকে জরিপ সম্পন্ন না হওয়ায় সে তারিখটিও ঠিক থাকল না।
১৯৬৪ সালে তৎকালীণ পূর্ব পাকিস্তান শিপিং করপোরেশন পশ্চিম জার্মেনী থেকে সংগ্রহ করা ৪টি নৌযানের সাহায্যে বরিশাল-হাতিয়া-সন্দ্বীপ-চট্টগ্রাম উপক’লীয় নৌপথে যাত্রীবাহী স্টিমার সার্ভিস চালু করে। ঐসব নৌযানের মধ্যে ‘এমভি মনিরুল হক’ ও ‘এমভি আবদুল মতিন’ ২০০৭ থেকে ২০০৯ সালের মধ্যে পূর্ণবাশনও করা হয়। কিন্তু ব্যপক দূর্নীতি ও অনিয়মের কারনে ঐসব নৌযান খুব বেশীদিন নির্বিঘেœ চলেনি। নতুনের পরিবর্তে রিকন্ডিশন ইঞ্জিন সংযোজন সহ নানামুখি দূর্নীতির কারণে ঐসব নৌযান নিয়ে বরিশাল থেকে চট্টগ্রামের প্রায় পৌনে ৩শ কিলোমিটার নৌপথ অতিক্রম করতে ঝুকি নেয়নি বিআইডব্লিউটিসি’র দায়িত্বশীল মহল।
ফলে প্রায় ৪৭ বছর পরে অত্যন্ত জনগুরুত্বপূর্ণ ঐ সার্ভিসটি বন্ধ হয়ে যাওয়ায় উপক’লের বিশাল জনগোষ্ঠী চরম দূর্ভোগে পরেন। অথচ রাষ্ট্রীয় সংস্থাটির উপক’লীয় ঐ সার্ভিটিকে খোদ বিশ^ব্যাংকও ‘গন দায়বদ্ধ সেবাখাত’ হিসেবে চিঞ্হিত করেছে। দেশের উপক’লীয় নৌযোগাযোগ পরিচালন-এর জন্য সরকার প্রতিবছর বিঅইডব্লিউটিসি’কে ৫০লাখ টাকা নগদ ভতর্’কিও প্রদান করে আসছে। ইতোমধ্যে ২০০২ সালে সংগ্রহ করা ‘এমভি বার আউলীয়া’ নৌযানটির কারিগরি ও যান্ত্রিক ত্রুটি শুরু হয়।
এসব বিবেচনায় প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে উপক’লীয় নৌযোগাযোগ নির্বিঘœ করার লক্ষে উপক’লীয় নৌপথের জন্য মাঝারী সাইজের দুটি উপক’লীয় যাত্রীবাহী নৌযান সংগ্রহের সিদ্ধান্ত গ্রহন করা হয়। ২০১৪ সালের ৩০ ডিসেম্বর ৫০ কোটি ৭৩ লাখ টাকা ব্যায় সাপেক্ষ দুটি উপক’লীয় নৌযান নির্মান প্রকল্প একনেক-এর চুড়ান্ত অনুমোদন লাভ করে। এর প্রায় বছরখানেক পরে ২০১৫ সালের ২৩ ডিসেম্বর ৭শ যাত্রী বহনক্ষম উপক’লীয় নৌযান নির্মানের লক্ষে বিআইডব্লিউটসি’র সাথে ‘থ্রি এ্যাংগেল মেরিন লিমিটেড এন্ড দি কুমিল্লা শিপ বিল্ডার্স লিমিটেড জেভি’র ১৭ কোটি ৬৪ লাখ টাকার চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়।
চুক্তি অনুযায়ী প্রায় ১৯৭ ফুট দৈর্ঘ ও প্রায় ৪০ ফুট প্রস্থ নৌযানটির নির্র্মান কাজ ২০ মাসে শেষ হবার কথা থাকলেও তিন দফায় আরো ৪ বছর সময় বাড়িয়ে গত মার্চে তা হস্তান্তর করা হয়েছে। ২০ মসের নির্মান কাজ নৌ নির্মান প্রতিষ্ঠানটি শেষ করেছে মাত্র ৬৮ মাসে। গত ৫ মে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ‘এমভি তাজউদ্দিন আহমদ’ নামের এ নৌযানটি আনুষ্ঠনিকভাবে উদ্বোধন করেন।
১১.৪৮ ফুট মোলডেড ও ৭.৩৮ সর্বোচ্চ লোডেড ড্রাফটের এ নৌযনটিতে ইকনোমি ক্লাসে ৭১২ জন, স্টন্ডার্ড ক্লাসে ১৭২ জন ছাড়াও স্টান্ডার্ড ও বিজনেস ক্লাসে ৮ জন করে ১৬ জন যাত্রী বহন করবে। নৌযানটিতে যাত্রী ও পণ্য মিলিয়ে ধারন ক্ষমতা ১৭৫ টন। বেলজিয়ামের ‘ এবিসি’ ব্রান্ডের ৭৫০ অশ^শক্তির দুটি মূল ইঞ্জিন সমৃদ্ধ এ নৌযানটি ঘন্টায় ১০ নটিক্যাল মাইল বা ১৮.৫২ কিলোমিটার বেগে চলতে সক্ষম।
বরিশালÑচট্টগ্রাম রুটে প্রায় ৭শ যাত্রী বহনক্ষম অপর নৌযান ‘এমভি বার আউলীয়া’তে প্রথম ও ডিলাক্স কক্ষ ছাড়াও বেশ কিছু দ্বিতীয় শ্রেণীর কিছু কক্ষ সহ প্রায় দেড়শ টন পণ্য পরিবহন সুবিধা রয়েছে। যা বরিশাল ও চট্টগ্রাম থেকে বিচ্ছিন্ন দ্বীপ হাতিয়া’তে নিত্যপণ্য সামগ্রী ছাড়াও বিভিন্ন ধরনের পণ্য পৌছে দেয়ার ক্ষেত্রে যথেষ্ঠ সহায়ক ভ’মিকা পালন করবে বলেও কতৃপক্ষ আশা করছেন।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ