Inqilab Logo

শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ০৭ বৈশাখ ১৪৩১, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

মেয়াদ উত্তীর্ণ কমিটি দিয়েই চলছে রাবির ছাত্রলীগ সম্মেলনের দাবি পদপ্রত্যাশীদের

রাবি সংবাদদাতা | প্রকাশের সময় : ২৩ নভেম্বর, ২০২১, ৪:৩৯ পিএম

মেয়াদ উত্তীর্ণ কমিটি দিয়েই চলছে রাজশাহী বিশ^বিদ্যালয় (রাবি) শাখা ছাত্রলীগ। চার বছর আগে কমিটির মেয়াদ শেষ হলেও নতুন কমিটি দেয়ার বিষয়ে কেন্দ্রের কোন তৎপরতা লক্ষ করা যায়নি। ইতোমধ্যে বর্তমান কমিটির অনেক নেতা ক্যাম্পাস ছেড়েছে। আবার যারা সক্রিয় আছে তাদের ছাত্রত্ব নিয়েও রয়েছে প্রশ্ন! এতে নতুন নেতৃত্ব যেমন তৈরি হচ্ছে না, তেমনি ভেঙে পড়েছে সাংগঠনিক কাঠামো।

বারবার আশ্বাস দিয়েও কমিটি না দেয়ায় নতুন পদপ্রত্যাশী নেতা-কর্মীদের মধ্যে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে। বাড়ছে গ্রæপিং, তৈরি হচ্ছে অভ্যন্তরীণ কোন্দল। আবার যারা রাজনীতিতে সক্রিয় ছিল, তারাও হতাশা নিয়ে নিষ্ক্রিয় হয়ে যাচ্ছে। দীর্ঘদিনের এই কমিটি ভেঙে দ্রæত সম্মেলনের মাধ্যমে নতুন কমিটি দেয়ার দাবি জানিয়েছে রাজশাহী বিশ^বিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের পদপ্রত্যাশী নেতা ও কর্মীরা।

জানা গেছে, ২০১৬ সালের ৮ ডিসেম্বর বিশ^বিদ্যালয় ছাত্রলীগের ২৫ তম সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। পরে ১১ ডিসেম্বর গোলাম কিবরিয়াকে সভাপতি ও ফয়সাল আহমেদ রুনুকে সাধারণ সম্পাদক করে রাবি ছাত্রলীগের ১৩ সদস্যের প্রাথমিক কমিটি ঘোষণা করা হয়। প্রাথমিক কমিটির প্রায় ছয় মাস পর পূর্ণাঙ্গ কমিটির অনুমোদন দেয় কেদ্রীয় ছাত্রলীগ। ২০১৭ সালে এই কমিটির মেয়াদ শেষ হয়েছে।

দীর্ঘ ১৯ মাস পর ক্যাম্পাস খোলায়, নতুন সম্মেলনের আশায় চাঙা হচ্ছেন রাবি শাখা ছাত্রলীগের পদপ্রত্যাশী নেতা-কর্মীরা। সম্মেলনকে ঘিরে পদপ্রত্যাশী নেতা-কর্মীরা ইতিমধ্যেই দৌড়ঝাপ শুরু করেছেন। ক্যাম্পাসে নিয়মিত মিছিল মিটিং করছেন। ব্যাপক উৎসাহ উদ্দীপনা নিয়ে নিজেদের পছন্দনীয় পদে জায়গা পেতে জনবল গোছাতে শুরু করেছে প্রায় ডজনখানেক নতুন পদপ্রত্যাশী।

জানা গেছে, তৎকালীন রাবি শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি মিজানুর রহমান রানা ও সাধারণ সম্পাদক খালিদ হাসান বিপ্লবের নেতৃত্বে সর্বশেষ ২০১৫ সালের ১৯ জানুয়ারি বিশ^বিদ্যালয়ের ৮ টি হলের কমিটি ঘোষণা করা হয়। এরপর বর্তমান কমিটি হল কমিটি দিতে সক্ষম হয়নি।

গতবছর ক্যাম্পাস বন্ধের আগে ৫ ফেব্রæয়ারিতে হল সম্মেলনের উদ্যোগ নেয় বর্তমান মেয়াদ উত্তীর্ণ কমিটি। কিন্তু সম্মেলনের ঠিক দুদিন আগে তা স্থগিত করে দেয়া হয়। ফলে হল সম্মেলনকে ঘিরে সক্রিয় হয়ে ওঠা নেতাকর্মীরা অনেকটা হতাশ হয়। কাঙ্খিত প্রত্যাশা পূরণ না হওয়ায় নিষ্ক্রিয় হয়ে গেছে অনেক নেতাকর্মী। অনেকেই আবার রাজনীতি থেকে গুটিয়ে নিয়েছেন নিজেকে।
এদিকে কেদ্রীয় নির্দেশনা না পেলেও এরই মধ্যে সম্মেলন ঘিরে ঝিমিয়ে পড়া নেতাকর্মীরা রীতিমতো নড়েচড়ে বসছেন। শুরু হয়ে গেছে পদপ্রত্যাশীদের দৌড়ঝাঁপ। শাখা ছাত্রলীগের গুরুত্বপূর্ণ পদে আসীন হতে প্রত্যেকেই তাদের অবস্থান জানান দিচ্ছেন নিজ নিজ ভাবে। অনেকেই সম্মেলনের দাবি জানিয়ে ধরণা দিচ্ছেন রাজশাহী সিটি কর্পোরেশনের মেয়র এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটন ও ছাত্রলীগের কেদ্রীয় সাবেক সহ-সভাপতি ডা. আনিকা ফারিহা জামান অর্ণার কাছে।

বিশ^বিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগ সূত্রে জানা গেছে, শাখার গুরুত্বপূর্ণ পদে আসীন হতে ইতোমধ্যেই বর্তমান কমিটির সহ-সভাপতি কাজী আমিনুল হক লিংকন, হাবিবুল্লাহ নিক্সন, মেজবাহুল ইসলাম, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক শাহিনুল ইসলাম সরকার (ডন), সাংগঠনিক সম্পাদক এনায়েত হক রাজু, মেহেদী হাসান মিশু, প্রশিক্ষণ বিষয়ক সম্পাদক আসাদুল্লাহ-হিল-গালিব ও উপ-ধর্মবিষয়ক সম্পাদক তৌহিদ দুর্জয় এবার আলোচনায় রয়েছে। ক্যাম্পাসে তাদের অনুসারি নিয়ে নিয়মিত মিছিল মিটিং করছেন।

শাখা ছাত্রলীগের পদপ্রত্যাশী বর্তমান কমিটির সহ-সভাপতি কাজী আমিনুল হক লিংকন বলেন, যখনই বিশ^বিদ্যালয়ের মূল কমিটি দেয়ার বিষয়ে কথা হয়, তখনই বর্তমান কমিটি হল সম্মেলনকে ট্রাম কার্ড হিসেবে ব্যবহার করে। এক বছরের কমিটিতে পাঁচ বছর অতিক্রম করেছে। এই সময়ে এসে হল কমিটি আগে দিলে সুফল বয়ে আনবে না। পরবর্তীতে এটার জন্য সমস্যার সম্মূখীন হতে হবে। এমনকি নেতৃত্ব সংকট দেখা দিতে পারে। এজন্য এই মূহুর্তে আমরা বিশ^বিদ্যালয়ের মূল কমিটি চাচ্ছি।

পদপ্রত্যাশী বিশ^বিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি মেজবাহুল ইসলাম বলেন, অনেকেই নেতৃত্বের জন্য দীর্ঘদিন ধরে রাজনীতি করছে। আবার অনেকেই বিশ^বিদ্যালয়ের মাস্টার্স শেষ করে এখন পর্যন্ত কোন সাংগঠনিক পরিচয় পায়নি। যার ফলে বর্তমান শাখা ছাত্রলীগের কার্যক্রম অনেকাংশে মন্থর হয়ে পড়েছে। বিশ^বিদ্যালয়ের সাংগঠনিক কাজে গতিশীলতা ফিরিয়ে আনতে দ্রæত সম্মেলন দেয়া প্রয়োজন।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক শাখা ছাত্রলীগের পদপ্রত্যাশী এক নেতা বলেন, ‘অনেকেই পাঁচ বছর যাবৎ রাজনীতি করছে কিন্তু এখন পর্যন্ত তাদের কোন রাজনৈতিক পরিচয় নেই। আমি চাই যারা পদ পাওয়ার যোগ্য তারা একটা রাজনৈতিক পরিচয় নিয়ে ক্যাম্পাস থেকে বের হোক। আবার অনেকেই মূল কমিটিতে পাচ বছর ধরে এক পদে থেকেই অতিবাহিত করেছে। অনেকেই ক্যাম্পাস ছেড়ে চলে গেছে। কমিটি দেয়ার বিষয়ে দীর্ঘসূত্রিতা তৈরি হলে পরবর্তী কমিটিতে নেতৃত্ব দেয়ার মতো উপযুক্ত জনবল পাওয়া যাবে না। সেক্ষেত্রে রাবি শাখা ছাত্রলীগের নেতৃত্ব সংকটে পড়ার সম্ভাবনা তৈরি হবে।

পদপ্রত্যাশী শাখা ছাত্রলীগের উপ-ধর্মবিষয়ক সম্পাদক বলেন, বিশ^বিদ্যালয়ে সবাই আসে পাঁচ বছরের জন্য। সেখানে এক কমিটিতেই পাঁচ বছর পার হয়ে গেছে। ফলে অনেকেই রাজনৈতিক পরিচয় না পেয়ে রাজনীতি ছেড়ে অন্যদিকে ঝুঁকছে। দীর্ঘদিন কমিটি না হলে সেখানে নেতৃত্বের জায়গাটা থাকে না। ফলে যারা বিরোধী শক্তি আছে তারা এই সুযোগটা নেয়ার চেষ্টা করবে। কমিটি সচল না থাকলে রাজনৈতিক উর্বরতায় মরিচিকা পড়ে যায়। এজন্য খুব দ্রæত বিশ^বিদ্যালয়ের কমিটি দেয়া প্রয়োজন।

বিশ^বিদ্যালয়ের বর্তমান কমিটির শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক ফয়সাল আহমেদ রুনু বলেন, আমরা দায়িত্ব নেয়ার পর থেকে বিশ^বিদ্যালয়ের সাধারণ শিক্ষার্থী ও ছাত্রলীগের জন্য কাজ করে যাচ্ছি। করোনা মহামারির কারণে আমরা হল সম্মেলন করতে পারিনি। এখন আমরা আগে হল কমিটি দেব তারপর সম্মেলনের প্রস্তুতি নেব। তারপরও আমরা প্রস্তুত আছি। কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক যখনই বলবে আমরা সম্মেলন করার জন্য প্রস্তুত আছি।

তবে এবিষয়ে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের সাথে বারবার যোগাযোগের চেষ্টা করেও তাদের বক্তব্য পাওয়া যায়নি।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: রাবি


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ