রাজধানীর মাতুয়াইলে প্যাকেজিং কারখানায় আগুন
রাজধানীর মাতুয়াইলে গতকাল বৃহস্পতিবার একটি প্যাকেজিং কারখানায় অগ্নিকান্ডের ঘটনা ঘটে। ফায়ার সার্ভিসের ছয়টি ইউনিটের চেষ্টায় আগুন নিয়ন্ত্রণে আসে। এতে কোনো হতাত না হলেও ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি
ঢাকার দৃষ্টিনন্দন হাতিরঝিলের পানিতে এখন ময়লা ও উৎকটগন্ধ। পর্যাপ্ত পানি পরিশোধনের ব্যবস্থা না থাকায় এ ঝিলের পানির গুণগত মান খারাপ হতে হতে প্রকট আকার ধারণ করেছে। পয়োনিষ্কাশনের ময়লা, আবর্জনা ও নোংরা পানি ঢুকে বিবর্ণ হয়ে উঠেছে ঝিলের পানি। বাতাসে উৎকট গন্ধ। ২ হাজার ২৩৬ কোটি টাকা ব্যয়ে বাস্তবায়িত হাতিরঝিল প্রকল্পে ভ্রমণ পিপাসুদের আনন্দকে মøান করে দিচ্ছে ময়লা ও উৎকট গন্ধযুক্ত পানি।
হাতিরঝিল ঘুরে দেখা গেছে, ঝিলের প্রায় সব অংশ থেকেই পচা পানির দুর্গন্ধ ভাসছে বাতাসে। ঝিলের মগবাজার এবং রামপুরা অংশে এই দুর্গন্ধ অনেক বেশি। এই অংশে পানিতে ময়লা আর শেওলার পুরু আস্তরণ জমে কোথাও নীলচে, আবার কোথাও কিছুটা সবুজ রং ধারণ করেছে। এই পানি জীববৈচিত্র্য ও পরিবেশের জন্য মারাত্মক হুমকিস্বরূপ। এ ময়লা পানি মশার প্রজনন ক্ষেত্রে পরিণত হয়েছে। এ ছাড়া এ নোংরা পানির স্পর্শে এসে আশপাশের বস্তির শিশুরা নানান চর্ম রোগে আক্রান্ত হচ্ছে।
নগর পরিকল্পনাবিদ স্থপতি ইকবাল হাবিব ইনকিলাবকে বলেন, হাতিরঝিলের সৃষ্টি বৃষ্টির পানি ধারণ করার জন্য। কিন্তু সেখানে ওয়াসার ড্রেনের মাধ্যমে স্যুয়ারেজের বর্জ্য ঢুকছে। সে কারণে হাতিরঝিলের পানি দুর্গন্ধযুক্ত হচ্ছে। হাতিরঝিলে স্যুয়ারেজ বা শিল্পবর্জ্যরে সংযোগ বন্ধে যেসব উদ্যোগ গ্রহণ করা দরকার ছিল, সেগুলো করা হয়নি। এ কারণে বিপুল অর্থ খরচ করে এ প্রকল্প বাস্তবায়ন করলেও তার সুফল মিলছে না। এ বিষয়ে রাজউক পানি শোধনের জন্য প্রকল্প নিয়ে কাজ করেছে বলে শুনেছি। এতেও বিদ্যমান সমস্যার সমাধান হয়নি। এখনতো এ বিষয়ে বাস্তবায়নকারী সংস্থাগুলোকে জবাবদিহি করা উচিত।
হাতিরঝিল প্রকল্পটি উদ্বোধনের পর থেকে প্রতিবছর শুষ্ক মৌসুমে দুর্গন্ধযুক্ত পানির কারণে রাজউক ব্যাপকভাবে সমালোচিত হয়। তাই হাতিরঝিল লেকের পানির দুর্গন্ধ দূর করতে ২০১৮ সালে ৪৮ কোটি ৯০ লাখ টাকার একটি প্রকল্প অনুমোদন দেয় একনেক। পরে প্রকল্পের মেয়াদ ১ বছর বাড়িয়ে চলতি বছর জুন মাসে প্রকল্পের কাজ সমাপ্ত করা হয়েছে। কিন্তু কাজের কাজ কিছুই হয়নি। হাতিরঝিলের লেক আগের মতোই ময়লা দুর্গন্ধময় পানিতে পরিপূর্ণ। অনেকে বলছে পানি শোধনের জন্য ব্যয় করা অর্ধকোটি টাকা পানিতেই গেল।
হাতিরঝিলের পানি শোধন প্রকল্পের পরিচালক রাজউকের প্রধান প্রকৌশলী (প্রজেক্ট এন্ড ডিজাইন) এ এস এম রায়হানুল ফেরদৌস ইনকিলাবকে বলেন, আগের প্রকল্পের কাজ শেষ হয়েছে। করোনার কারণে এর কাজ কিছুটা ব্যাহত হয়েছে। প্রকল্পের বরাদ্দ কম থাকায় পুরোপুরিভাবে কাজ শেষ করা যায়নি। অসম্পূর্ণ কাজ শেষ করতে নতুন করে আবার প্রকল্প নেয়া হচ্ছে।
বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলনের নির্বাহী সভাপতি ড. আবদুল মতিন ইনকিলাবকে বলেন, হাতিরঝিলের পানি শোধন প্রকল্পের অর্ধকোটি টাকা ব্যয় হলেও এতে কোনো লাভ হয়নি। ঝিলের পানি এখনো ময়লা ও দুর্গন্ধময়। ময়লাপানির দুর্গন্ধ আশপাশের পরিবেশকে মারাত্মকভাবে দূষিত করছে। আসলে প্রকল্পের টাকা যথাযথভাবে ববহৃত হয়নি। আসলে আমাদের দেশে প্রকল্প নেয়া হয় লুটপাট করে খাওয়ার জন্য। এক্ষেত্রেও তাই হয়েছে। আবার প্রকল্প নেয়া হবে, লুটপাট হবে কাজের কাজ কিছুই হবে না। এর জন্য জবাবদিহিতা না থকলে এরকম লুটপাট চলতেই থাকবে।
গতকাল হাতিরঝিল প্রকল্পের বিভিন্ন স্থান ঘুরে দেখা গেছে, আশপাশের বাসাবাড়ির গৃহস্থালি ময়লা-আবর্জনা, দর্শনার্থীদের ফেলা বিভিন্ন খাবারের উচ্ছিষ্ট, চানাচুর ও চিপসের প্যাকেট, পানির প্লাস্টিকের বোতলসহ বিভিন্ন ধরনের ময়লা লেকের পাড়ে এবং পানিতে ভাসছে। হাতিরঝিলের চারপাশে গড়ে ওঠা দোকান ও রেস্তোরাঁর ময়লাও ফেলা হচ্ছে ঝিলের পানিতে। কয়েকটি ড্রেন দিয়ে আশপাশে এলাকার স্যুয়ারেজের পানি ও পচা আবর্জনা ঝিলে প্রবেশ করে নষ্ট করছে পানির স্বচ্ছতা। এ পানি অনেক দিন ঝিলে আটকে থাকায় ক্রমেই পানির রং কালো হয়ে বাড়ছে দুর্গন্ধ। বাতাসের সঙ্গে উৎকট দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছে ঝিলপাড় ও আশপাশের এলাকায়।
হাতিরঝিলে চলাচলরত ওয়াটার ট্যাক্সিতে রামপুরা ঘাট থেকে গুলশান-বাড্ডা গুদারাঘাটে নিয়মিত আসা-যাওয়া করেন নজরুল ইসলাম। গতকাল তার সাথে কথা হলে তিনি বলেন, রাস্তার ভয়াবহ জ্যাম এড়াতে ওয়াটার ট্যাক্সিতে নিয়মিত গুলশানের অফিসে আসা যাওয়া করি। বর্ষাকালে এ লেকের পানি বেশ ভালো থাকে। কিন্তু শীতকাল এলেই শুরু হয় ভোগান্তি। এখন পানি ধীরে ধীরে ময়লা এবং দুর্গন্ধময় হচ্ছে। এ দুর্গন্ধ কিছুদিন পরে অসহনীয় পর্যায় পৌঁছাবে। তখন আবার বাধ্য হয়ে জ্যামের ভোগান্তি মাথায় নিয়েই বাসে চলাচল করি। আসলে আমাদের মতো সাধারণ মানুষের জন্য কোনো স্থানেই স্বস্তির কিছু নেই।
হাতিরঝিলের সৌন্দর্য উপভোগ করতে ও ঝিল এলাকায় ঘুরতে নগরীর বিভিন্ন স্থান থেকে এমনকি ঢাকার বাইরে থেকেও প্রতিদিন বহু দর্শনার্থী আসেন। এছাড়া এর আশপাশের এলাকার বহু মানুষ সকাল-সন্ধ্যায় নিয়মিত ব্যায়ামও করেন এই ঝিলপাড়ের উন্মুক্ত স্থানে। অথচ রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে শহরের কোলাহলের মাঝে স্বস্তির নিঃশ্বাস নিতে গড়ে ওঠা বিনোদন কেন্দ্র হাতিরঝিলের পরিবেশ এখন দূষিত। গুলশান লেক, কারওয়ান বাজার ও বেগুনবাড়ী দিয়ে হাতিরঝিলের পানিতে প্রতিনিয়ত ঢুকছে ময়লা পানি। আর এতে দূষিত হচ্ছে লেকের পানি।
হাতিরঝিলের নান্দনিক সৌন্দর্য উপভোগ করতে বাসাবো থেকে বন্ধুদের সাথে এসেছেন আরমান। তিনি বলেন, হাতির ঝিলের পরিবেশ এখন বেশ নোংরা। বিভিন্ন স্থানে ময়লা আবর্জনার স্তূপ। ময়লা পানির দুর্গন্ধ ঝিলপাড়ের আশপাশের এলাকাগুলোতেও ছড়িয়ে পড়ছে। এখনো মুখে মাস্ক পরা থাকে বলে দুর্গন্ধ থেকে কিছুটা রেহাই পাওয়া যায়। আসলে দুর্গন্ধময় পানি ও ময়লা-আবর্জনা হাতিরঝিলের সৌন্দর্য নষ্ট করে দিচ্ছে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।