Inqilab Logo

শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫ হিজরী

রাষ্ট্রীয় নৌ পরিবহন বন্ধের সুযোগে বেসরকারী নৌযানের বাড়তি ভাড়ায় বরিশাল ঢাকা রুটে যাত্রীদের নভিশ্বাস

বিআডিব্লিউটিসি’র নৌযান বসিয়ে রেখে যাত্রী সেবা সংকোচন

বরিশাল ব্যুরো | প্রকাশের সময় : ২৭ নভেম্বর, ২০২১, ২:০৬ পিএম

কতৃপক্ষের লাগাতর উদাশীনতা আর অবহেলায় রাষ্ট্রীয় নৌ পরিবহন প্রায় বন্ধের ফলে রাজধানীর সাথে বরিশাল সহ দক্ষিণাঞ্চলের নিরাপদ নৌ নিরাপত্তা ঝুকির সাথে বেসরকারী নৌযানে ভাড়া নিয়ে নৈরাজ্যে সাধারন মানুষের নভিশ‌বাস উঠছে। অতি সম্প্রতি ডিজেলের মূল্য বৃদ্ধির পরেই সরকারকে চাপে রেখে বেসরকারী নৌযান মালিকরা বরিশাল ঢাকা নৌপথে ডেক শ্রেণীর ভাড়া ২শ টাকা থেকে সাড়ে ৩শ টাকায় বৃদ্ধি করেছে। অথচ রাষ্ট্রীয় বিআইডব্লিউটিসি’র স্টিমারে ভাড়া ১৭০ টাকা। কিন্তু সংস্থাটি ভাড়া বৃদ্ধি না করলেও সাধারন যাত্রীরা সে সুযোগ ভোগ করতে পারছেন না।

একাধীক নৌযান বসিয়ে রেখে সংস্থাটি দেশের একমাত্র অভ্যন্তরীন যাত্রীবাহী স্টিমার সার্ভিসটি পরিচালন করছে সপ্তাহে মাত্র ৩দিন। নানামুখি উদাশীনতায় রাষ্ট্রীয় বিআইডব্লিউটসির দৈনিক রকেট স্টিমার সার্ভিস এখন সপ্তাহে ৩ দিন চলছে। অথচ এরুটের জন্য ৩টি প্যাডেল জাহাজ ছাড়াও ২০১৪ ও ২০১৫ সালে সংগ্রহ করা দুটি আধুনিক নতুন নৌযান রয়েছে সংস্থাটির হাতে। নানা অজুহাতে সংস্থাটির হাতে থাকা ব্যায় সাশ্রয়ী ‘পিএস টার্ণ’, ‘পিএস লেপচা’ ও ‘পিএস মাহসুদ’ জাহাজগুলো বন্ধ রয়েছে। এরমধ্যে পিএস মাহসুদ প্রায় দেড় বছর বসিয়ে রাখার পরে গত এপ্রিল মাস থেকে সংস্থাটির ডকইয়ার্ডে মেরামতে। আগামী সাসের মাঝামাঝি নৌযানটি যাত্রী পরিবহনে ফিরবে বলে সংস্থাটির প্রধান প্রকৌশলী জানিয়েছেন।
সংস্থার অপর প্যাডেল নৌযান ‘‘পিএস অষ্ট্রিচ’ বিনা দরপত্রে এক ব্যক্তিকে দীর্ঘ মেয়াদী ইজারা দিয়ে গেছেন সাবেক নৌ পরিবহন মন্ত্রী। রেলওয়ে থেকে সংগ্রহ করা অপর যাত্রীবাহী নৌযান ‘এমভি সোনারগও’ একটি ব্যক্তি মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠান বিআইডব্লিউটসি’র কাছ থেকে দীর্ঘ মেয়াদী ইজারা নিয়ে রাষ্ট্রীয় পর্যটন করপোরশেনের কাছে পুনরায় ইজারা দিয়েছে। জনগনের অর্থ কেনা এসব নৌযান সাধারন মানুষের পরিবর্তে কতিপয় ব্যাক্তির বানিজ্য সহায়ক হয়ে উঠেছে সম্পূর্ণ অনৈতিক ও অনিয়মিতভাবে।
এমনকি ‘এমভি বাঙালী’ ও ‘এমভি মধুমতি’ নামের নতুন দুটি ব্যায়বহুল নৌযানে প্রতি ট্রিপে ৩Ñ৪ লক্ষ টাকা লোকশানের কারণেও সার্ভিসটি সম্প্রসারন করছে না সংস্থাটি। আর নিয়মিত সার্ভিস না থাকায় সাধারন মানুষ ইতোমধ্যেই রাষ্ট্রীয় এ সংস্থার নৌযানে ভ্রমনে আগ্রহ হারিয়ে ফেলেছেন। অথচ এরুটের জন্য নির্ধারিত ব্যায় সাশ্রয়ী প্যাডেল জাহাজগুলো দীর্ঘদিন নিয়মিত মেরামত ও রক্ষণাবেক্ষন সহ বানিজ্যিক পরিচালন না করে বসিয়ে রাখা হয়েছে।
এক্ষেত্রে প্রায় ৮০ বছরের পুরেনো প্যাডেল জাহাজ চলাচলে নৌ পরিবহন অধিদপ্তর সার্ভে সনদ দিতে চাচ্ছেনা বলে জানাচ্ছে সংস্থাটির দায়িত্বশীল মহল। কিন্তু এখানে দায়িত্বশীল মহল একটি বাস্তবতা এড়িয়ে যাচ্ছেন বলে অভিযোগ রয়েছে। সংস্থার হাতে থাকা এ ৪টি প্যাডেল জাহাজই ১৯৭৮ থেকে ১৯৮২ সালে প্রথমবার পরিপূর্ণ পূণর্বাশন ও আধুনিকায়ন ছাড়াও ১৯৯৫-৯৬ সালে দ্বিতীয়বার পূণর্বাশন করা হয়েছে। এসময়ে বাস্পীয় প্যাডেল হুইলের এসব নৌযানগুলোর খোল ও তলা থেকে উপরী কাঠামোর সম্পূর্ণ পরিবর্তন ছাড়াও নতুন ইঞ্জিন সংযোজন সহ গীয়ার পরিবর্তন করা হয়। ফরে ৮০ বছরের পুরনোর তকমা কতটা গ্রহনযোগ্য সে বিষয়টি বিবেচনার দাবী রয়েছে ওয়াকিবাহল মহল থেকে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সংস্থাটির একাধীক কারিগরি বিশেষজ্ঞ এসব নৌযান ভাড়ি মেরামত সহ প্রয়োজনীয় পূণর্বাশন করে আরো নুন্যতম ২৫ বছর যাত্রী পরিবহন করা সম্ভব বলেও মত প্রকাশ করেছেন। তাদের মতে, পিএস মাহসুদ পরিপূর্ণ মেরামত করে আগামী মাসে যদি যাত্রী পরিবহনে ফিরতে পারে, তবে ‘পিএস লেপচা’ ও ‘পিএস টার্ণ’এর ক্ষেত্রে বাধা কোথায় ? পাশাপাশি ‘পিএস অষ্ট্রিচ’ নৌযানটির ইজারাও অবিলম্বে বাতিল করে যাত্রী পারিবহনে ফিরিয়ে আনার তাগিদ দেয়া হয়েছে ওয়াকিবাহল মহল থেকে।
এব্যাপারে বিআইডব্লিউটিসি’র পরিচালক-বানিজ্য আশিকুজ্জামানের সাথে আলাপ করা হলে তিনি ৪টি প্যাডেল জাহাজ ব্যায় সাশ্রয়ী এবং যাত্রী বান্ধব বলে স্বীকার করে পূণর্বাশনের মাধ্যমে চলাচলের বিষয়টির সাথে ব্যাক্তিগতভাবে একমত পোষন করেন। সংস্থার প্রধান প্রকৌশলী ও জিএম ইঞ্জিনিয়ারিং মোঃ গফুর সরকার প্যাডেল জাহাজগুলো পূণর্বাশনের মাধ্যমে পরিচালনের বিষয়টি নিয়ে উর্ধতন কতৃপক্ষের সাথে সময় সুযোগমত কথা বলবেন বলেও জানান।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ