Inqilab Logo

শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৬ বৈশাখ ১৪৩১, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

দারাজের বিরুদ্ধে টাকা পাচারের অভিযোগ

অনুসন্ধান করছে সিআইডি

বিশেষ সংবাদদাতা | প্রকাশের সময় : ১ ডিসেম্বর, ২০২১, ১২:০৫ এএম

ই-কমার্স ভিত্তিক প্রতিষ্ঠান দারাজ বাংলাদেশ লিমিটেডের বিরুদ্ধে কোটি কোটি টাকা পাচারের তথ্য পেয়েছে সিআইডি। ইতোমধ্যে অর্থপাচারের অভিযোগে দারাজের কয়েকজন শীর্ষ কর্মকর্তাকে দুই দফা জিজ্ঞাসাবাদ ও টাকা পাচারের বিষয়টি অনুসন্ধান শুরু করেছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ সিআইডি। সিআইডির কর্মকর্তারা বলছেন, ডিজিটাল পণ্য বিক্রির নামে দারাজ অবৈধভাবে বিপুল পরিমাণ অর্থপাচার করেছে বলে তাদের কাছে তথ্য রয়েছে। দারাজের কাছে ডিজিটাল পণ্য বিক্রির নথিপত্র দেখতে চাইলে এখনও পর্যন্ত সংশ্লিস্ট্র কর্মকর্তারা কোনও কিছু দেখাতে পারেনি।

সিআইডির ফাইন্যান্সিয়াল ক্রাইম বিভাগের বিশেষ পুলিশ সুপার হুমায়ুন কবীর সাংবাদিকদের বলেন, দারাজের অর্থপাচারের বিষয়টির অনুসন্ধান চলমান রয়েছে। কোটি কোটি টাকা পাচারের তথ্য রয়েছে সিআইডির হাতে। আমরা দারাজ কর্তৃপক্ষের সঙ্গে দুই দফা কথা বলেছি। তাদের কাছে কিছু নথিপত্র চাওয়া হয়েছে। অনুসন্ধানের পর এ বিষয়ে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।
সিআইডির একজন দায়িত্বশীল কর্মকর্তা গতকাল দৈনিক ইনকিলাবকে বলেন, জিজ্ঞাসাবাদে দারাজ কর্মকর্তারা দাবি করেছে, তারা পণ্য বিক্রির প্ল্যাটফর্ম হিসেবে কাজ করে। অনুমোদনহীন যেসব ডিজিটাল পণ্য বিক্রি করেছে তা অন্য প্রতিষ্ঠানের। তারা নিজেরা সরাসরি বিদেশ থেকে এসব আমদানি করেনি। কিন্তু অনুসন্ধানে দেখা গেছে, দারাজ ডিজিটাল পণ্য বিক্রির বিপরীতে সকল অর্থ নিজেদের মার্চেন্ট অ্যাকাউন্টে নিয়েছে। তাদের দৈনন্দিন বিক্রিত পণ্যের বড় একটি অংশ হলো ডিজিটাল পণ্য। সিআইডি ও বাংলাদেশ ব্যাংকের ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টিলিজেন্ট ইউনিট (বিএফআইইউ)-এর কর্মকর্তারা দারাজের মার্চেন্ট অ্যাকাউন্টের তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখছেন।
সিআইডি সূত্র জানায়, ডিজিটাল পণ্য বিক্রির নামে দারাজ বিদেশি বিভিন্ন ব্যাংকের ভার্চুয়াল কার্ড হিসেবে ফিক্সড কার্ড ও রিচার্জেবল কার্ড বিক্রি করে আসছিল। একইসঙ্গে তারা বিদেশি বিভিন্ন ইন্টারনেট-ভিত্তিক চ্যানেলের সাবস্ক্রিপশন ফি পরিশোধের কার্ড, অ্যামাজনের গিফট কার্ড, গুগল প্লে স্টোর ও অ্যাপস স্টোরের গিফট কার্ড বিক্রি করে আসছিল। বাংলাদেশ ব্যাংকের আইন অনুযায়ী, বিদেশি ব্যাংকের ভার্চুয়াল কার্ড আমদানি নিষিদ্ধ। অথচ দারাজ তাদের ওয়েব সাইটে রীতিমতো প্রমোশনাল বিজ্ঞাপন দিয়ে দীর্ঘ দিন ধরে এসব ডিজিটাল পণ্য বিক্রি করছিল।
সংশ্লিষ্টরা জানান, বিদেশি ব্যাংকের ভার্চুয়াল কার্ড হলো এমন একটি ডিজিটাল পণ্য, যাতে শুধুমাত্র একটি নির্দিষ্ট সংখ্যার নাম্বার এবং একটি পাসওয়ার্ড থাকে। এটি ফিক্সড হওয়ার পাশাপাশি রিচার্জও করা যায়। এগুলো কেনাবেচার মাধ্যমে বিপুল পরিমাণ অর্থ অবৈধভাবে দেশের বাইরে পাচার হয়ে যাচ্ছে। বাংলাদেশে এসব কার্ডের গ্রাহকরা সাধারণত বিভিন্ন সফটওয়্যারের অ্যাক্টিভেশন ফি, বিভিন্ন গেমসের ডেভেলপমেন্ট টুলস ইত্যাদি ক্রয় করে থাকে। একইসঙ্গে দুনিয়াজুড়ে ভার্চুয়াল কার্ডের মাধ্যমে অর্থ পাচার, সন্ত্রাসে অর্থায়ন, মাদক ও অস্ত্র বেচাকেনা, অবৈধ অর্থের লেনদেন, বিদেশি মুদ্রা ক্রয়-বিক্রয়ের অর্থ পরিশোধ করা হয়।
সিআইডির কর্মকর্তারা বলছেন, দারাজ কোনোভাবেই নিজেদের দায় এড়াতে পারে না। নিষিদ্ধ কোনও পণ্য নিজেদের প্ল্যাটফর্মে বিক্রি করাটাই আইনগতভাবে অপরাধ। এছাড়া দারাজ ডিজিটাল পণ্য বিক্রির বিপরীতে পুরো অর্থই তারা তাদের নিজেদের মার্চেন্ট অ্যাকাউন্টে গ্রহণ করেছে। দারাজের বিরুদ্ধে মানি লন্ডারিংয়ের প্রমাণ তারা পেয়েছেন। এখন তারা কী পদ্ধতিতে মানি লন্ডারিং হয়েছে, তার অনুসন্ধান করছেন।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: ই-কমার্স

১ ফেব্রুয়ারি, ২০২২
২৬ ডিসেম্বর, ২০২১

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ