Inqilab Logo

শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ০৭ বৈশাখ ১৪৩১, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

বাতিল হচ্ছে রেলের ২৭০৮ কোটি টাকার ৭ প্রকল্প

প্রতিশ্রুত বৈদেশিক সাহায্য মেলেনি

প্রকাশের সময় : ২২ অক্টোবর, ২০১৬, ১২:০০ এএম

বিশেষ সংবাদদাতা : বছরের পর বছর অপেক্ষা করেও বৈদেশিক সাহায্য মেলেনি। শেষ পর্যন্ত বাতিল করতে হচ্ছে রেলওয়ের ৭টি গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্প। এসব প্রকল্পের মধ্যে ছিল, ১২৫টি ব্রডগেজ (বিজি) যাত্রীবাহী কোচ সংগ্রহ প্রকল্প, ১৫০টি মিটার গেজ (এমজি) যাত্রীবাহী কোচ সংগ্রহ প্রকল্প, ২৬৪টি এমজি কোচ ও ২টি বিজি ইন্সপেকশন কার সংগ্রহ প্রকল্প, বিজি ডিজেল ইলেকট্রিক মাল্টিপল ইউনিট (ডিইএমইউ) সংগ্রহ প্রকল্প, রফতানি অবকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়নের লক্ষ্যে প্রকল্প প্রস্তুতির জন্য কারিগরি সহায়তা শীর্ষক প্রকল্প ইত্যাদি। রেলওয়ে সূত্র জানায়, এসব প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্য বছরের পর বছর অপেক্ষা করেও প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী অর্থ পাওয়া যায়নি। আবার এসব প্রকল্প বাস্তবায়নের মেয়াদও শেষ হয়ে গেছে। সূত্র জানায়, এ অবস্থায় প্রকল্প বাতিলের বিষয়ে পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়কে জানিয়ে দিয়েছে রেলপথ মন্ত্রণালয়। বলা হয়েছে, বিশ্বব্যাংকসহ অন্য দাতাদের সাড়া না পাওয়ায় এসব প্রকল্প বাতিলের প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে।
জানা গেছে, ৭ প্রকল্প বাস্তবায়নে মোট ব্যয় ধরা হয়েছিল ২ হাজার ৭০৮ কোটি টাকা। এর মধ্যে বৈদেশিক সহায়তার প্রতিশ্রুতি ছিল ২ হাজার ৪৪২ কোটি টাকা। এগুলোর মধ্যে একটি প্রকল্পে সরকারি তহবিলের সামান্য অর্থ ব্যয় করা হয়েছে। বাকিগুলোর কাজই শুরু করা হয়নি।
জানা গেছে, বাংলাদেশ রেলওয়ের জন্য ১২৫টি ব্রডগেজ (বিজি) যাত্রীবাহী কোচ সংগ্রহ প্রকল্পটি বাস্তবায়নে মোট ব্যয় ধরা হয়েছিল ৩৫৩ কোটি টাকা। এর মধ্যে বৈদেশিক সহায়তা প্রয়োজন ছিল প্রায় ২৪৫ কোটি টাকা। প্রকল্পটি ২০১০ সালের ১ আগস্ট থেকে ২০১৩ সালের ৩০ জুনের মধ্যে বাস্তবায়নের কথা ছিল। এখন অসমাপ্ত অবস্থায়ই প্রকল্পটি সমাপ্ত ঘোষণার সিদ্ধান্ত নিয়েছে রেলপথ মন্ত্রণালয়। রফতানি অবকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্পটি ২০০৯ সালের জুলাই থেকে ২০১১ সালের জুনের মধ্যে বাস্তবায়নের কথা ছিল। পরবর্তীকালে মেয়াদ বাড়িয়ে ২০১৩ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত করা হয়। এটি বাস্তবায়নে মোট ব্যয় ধরা হয়েছিল ১ হাজার ১৪০ কোটি টাকা। এর মধ্যে বৈদেশিক সহায়তার অংশ ছিল ৮৫০ কোটি ৬৩ লাখ টাকা। কিন্তু বৈদেশিক অর্থায়ন নিশ্চিত না হওয়ায় শেষ পর্যন্ত প্রকল্পটির কাজই শুরু করা সম্ভব হয়নি।
বাতিলের তালিকায় থাকা অন্য প্রকল্পগুলোর মধ্যে রয়েছে, রেলওয়ের জন্য ১৫০টি মিটার গেজ (এমজি) যাত্রীবাহী কোচ সংগ্রহ প্রকল্প। ২০১০ সালের ১ ডিসেম্বর থেকে ২০১২ সালের ৩০ জুনের মধ্যে বাস্তবায়নের কথা ছিল। এতে মোট ব্যয় ধরা হয় ৫৫৬ কোটি ১১ লাখ টাকা। এর মধ্যে বৈদেশিক সহায়তা ছিল ৩৯৭ কোটি ৫৬ লাখ টাকা। প্রকল্পটি প্রসঙ্গে রেলপথ মন্ত্রণালয় বলছে, দুইবার দরপত্র আহ্বান করা হয়েছিল। কিন্তু প্রত্যাশা অনুযায়ী দরদাতা পাওয়া যায়নি। এরপর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অনুমোদন সাপেক্ষে ভারতীয় লাইন অব ক্রেডিট (এলওসি) থেকে বাদ দেয়া হয়েছে। পরবর্তীকালে অন্য কোনো দাতা না পাওয়ায় অসমাপ্ত রেখেই প্রকল্পটি সমাপ্ত করার কার্যক্রম প্রক্রিয়াধীন। একই অবস্থা ২৬৪টি এমজি কোচ ও ২টি বিজি ইন্সপেকশন কার সংগ্রহ প্রকল্পেরও। ৯৮৩ কোটি ২৪ লাখ টাকা ব্যয়ে ২০১০ সালের ডিসেম্বর থেকে ২০১২ সালের ডিসেম্বরের মধ্যে বাস্তবায়নের লক্ষ্য ধরা হয়েছিল। এর মধ্যে বৈদেশিক সহায়তার অংশ ছিল ৬৮৮ কোটি ৪১ লাখ টাকা। কিন্তু দু’বার দরপত্র আহবান করা হলেও ভারতীয় কৃতকার্য দরদাতা না পাওয়ায় প্রধানমন্ত্রীর অনুমোদন নিয়ে ভারতীয় এলওসি থেকে বাদ দেয়া হয়। পরবর্তীকালে অন্য কোনো দাতা না পাওয়ায় এখন বাস্তবায়ন অসমাপ্ত রেখেই প্রকল্পটি বাতিল করা হচ্ছে। বাংলাদেশ রেলওয়ের বিজি ডিজেল ইলেকট্রিক মাল্টিপল ইউনিট (ডিইএমইউ) সংগ্রহ প্রকল্পটি ২০১০ সালের ১ ডিসেম্বর থেকে ২০১৩ সালের ৩০ জুনের মধ্যে বাস্তবায়নের লক্ষ্য ছিল। এরপর মেয়াদ বাড়িয়ে ২০১৫ সালের জুন পর্যন্ত করা হয়। এতে মোট ব্যয় ধরা হয়েছিল ৩৩১ কোটি ৩২ লাখ টাকা। এর মধ্যে বৈদেশিক সহায়তার অংশ ছিল ২৩০ কোটি ৮৬ লাখ টাকা। রেলপথ মন্ত্রণালয় বলছে, বৈদেশিক অর্থায়ন নিশ্চিত না হওয়ায় অসাপ্ত রেখেই প্রকল্পটি বাতিলের কার্যক্রম প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।
অন্যদিকে, রফতানি অবকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়নের লক্ষ্যে প্রকল্প প্রস্তুতির জন্য কারিগরি সহায়তা শীর্ষক প্রকল্পটি ২০০৮ সালের জুলাই থেকে ২০১০ সালের মার্চের মধ্যে বাস্তবায়নের কথা ছিল। পরে মেয়াদ বাড়িয়ে ২০১২ সালের জুন পর্যন্ত করা হয়। এটি বাস্তবায়নে মোট ব্যয় ধরা হয়েছিল ১১ কোটি ২ লাখ টাকা। এর মধ্যে বৈদেশিক সহায়তা ছিল ১০ কোটি ১১ লাখ টাকা। প্রকল্পটি বাস্তবায়নে বিশ্বব্যাংকের অর্থায়ন করার কথা থাকলেও সেই অর্থায়ন নিশ্চিত হয়নি। এটিও বাতিল করা হচ্ছে। রেলওয়ের বাস্তবায়িতব্য প্রকল্পগুলোর সম্ভাব্যতা সমীক্ষা, সেফগার্ড পলিসিগুলোর সমীক্ষা, বিস্তারিত ইঞ্জিনিয়ারিং ডিজাইন, টেন্ডারিং সার্ভিস প্রদানের লক্ষ্যে কারিগরি সহায়তা প্রকল্পটি ২০০৭ সালের সেপ্টেম্বর থেকে ২০০৯ সালের জুনের মধ্যে বাস্তবায়নের কথা ছিল। পরবর্তীকালে মেয়াদ বাড়িয়ে ২০১৩ সালের জুন পর্যন্ত করা হয়। এটি বাস্তবায়নে মোট ব্যয় ধরা হয়েছিল ২০ কোটি ৫৮ লাখ টাকা। এর মধ্যে বৈদেশিক সহায়তা ধরা হয় ১৮ কোটি ৩১ লাখ টাকা। বিশ্বব্যাংকের অর্থায়ন করার কথা থাকলেও পরবর্তীকালে তা নিশ্চিত হয়নি। এই প্রকল্পটিও বাতিল করা হচ্ছে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: বাতিল হচ্ছে রেলের ২৭০৮ কোটি টাকার ৭ প্রকল্প
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ