Inqilab Logo

বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

যুক্তরাষ্ট্র ইরাকে আর কতদিন থাকবে কত অর্থ ব্যয় করবে

ইরাক আগ্রাসনের ১৩ বছর অতিক্রান্ত

প্রকাশের সময় : ২২ অক্টোবর, ২০১৬, ১২:০০ এএম

ইনকিলাব ডেস্ক : ২০০৩ সালে যুক্তরাষ্ট্র ও তার মিত্র যুক্তরাজ্য প্রেসিডেন্ট সাদ্দাম হোসেনকে ক্ষমতাচ্যুত করতে ইরাকে হামলা চালিয়েছিল। তারা বলেছিল, ইরাকি জনগণকে তারা সাদ্দাম হোসেনের কবল থেকে মুক্ত করবে। সাদ্দাম হোসেন আজ নেই। কিন্তু তার ১৩ বছর পরও ইরাকি জনগণ মুক্ত জীবনের দেখা পায়নি।
আজ সহিংসতা ও রক্তপাত গোটা ইরাককে বিপর্যস্ত করেছে। সন্ত্রাসী হামলা ও আত্মঘাতী বোমা হামলা সাধারণ ব্যাপারে পরিণত হয়েছে। গোষ্ঠিগত বিভেদ, বিশেষ করে শিয়া ও সুন্নীদের মধ্যে সংঘাত আগের চেয়ে অনেক বেশি বৃদ্ধি পেয়েছে। ইরাক বিপুলভাবে বৈদেশিক সাহায্য নির্ভর। তার অর্থনীতি অব্যাহতভাবে নিম্নগামী।
ইরাকের কেন্দ্রীয় সরকার রাজধানী বাগদাদকে নিয়ন্ত্রণ করে। কিন্তু দেশের বাকি অংশের উপর সরকারের নিয়ন্ত্রণ কম। এমন কিছু এলাকা আছে যেখানে সরকারের নিয়ন্ত্রণ নেই। আইএসের দখল থেকে মসুল পুনরুদ্ধারের অভিযান চলছে।
ইরাকের একটু সাফল্য আছে, তা তার সংবিধান প্রণয়নে। আর ইরাকি সেনাবাহিনীর সামর্থের কিছু উন্নতি দেখা যায়। সম্প্রতি তারা কিছু সাফল্য লাভ করেছে যদিও তার পিছনে রয়েছে যুক্তরাষ্ট্র ও তার মিত্রদের কার্যকর সমর্থন। তাদের ব্যাপক সমর্থনেই ইরাকি সেনাবাহিনী এবার গ্রীষ্মে ফাল্লুজা থেকে আইএসকে বিতাড়িত করেছে এবং মসুল পুনর্দখলের প্রস্তুতি নিচ্ছে যা ২০১৪ সালের জুন থেকে ইসলামিক স্টেটের (আইএস) দখলে রয়েছে।
একমাত্র সম্পদ নির্ভর ইরাকের অর্থনীতির অবস্থা ভীষণ দুর্বল। ইরাকের রফতানির ৯৯ শতাংশই হচ্ছে তেল এবং সরকারের ৯০ শতাংশ রাজস্ব আসে এ তেল থেকে। কিন্তু তেলের দাম একেবারেই পড়ে গেছে। ফলে ইরাকের আয় বিপুল পরিমাণে হ্রাস পেয়েছে। আবার ইরাকের সামরিক বাহিনী যৎকিঞ্চিৎ সাফল্য লাভ করলেও দেশটির রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে অগ্রগতি দৃশ্যমান নয়।
ইরাকে যুক্তরাষ্ট্র তার শক্তিশালী উপস্থিতি অব্যাহত রেখেছে। সেখানে ৫ হাজারের মত মার্কিন সৈন্য রয়েছে যারা সরাসরি যুদ্ধে জড়িত না হয়ে ইরাকি বাহিনীকে প্রশিক্ষণ দিচ্ছে ও তাদের সামরিক উপদেষ্টা হিসেবে কাজ করছে। ইরাকে রয়েছে ব্যাপক মার্কিন গোয়েন্দা তথ্য সংগ্রহের কার্যক্রম। যুক্তরাষ্ট্র গোয়েন্দা তথ্য সংগ্রহ ও আইএসের শীর্ষ নেতাদের হত্যা করতে ড্রোন ব্যবহার করছে। ইরাকি সৈন্যদের সামরিক প্রশিক্ষণ দিতে শত শত কোটি ডলার ব্যয় করেছে ও করছে। ইরাক সরকারকে সমর্থন দিতে তাদের সাথে শত শত দ্বিপাক্ষিক চুক্তি স্বাক্ষর করেছে।
এর জন্য যুক্তরাষ্ট্রের প্রচুর অর্থ ব্যয় হচ্ছে। কিছু হিসাব অনুযায়ী যুক্তরাষ্ট্র সরকার ২০০৩ সাল থেকে ইরাকে প্রায় ১ ট্রিলিয়ন ডলার ব্যয় করেছে এবং প্রতি বছর শত শত কোটি ডলার দিচ্ছে। অন্যদিকে ইরাকে মার্কিন সৈন্যদের প্রাণহানি অব্যাহত রয়েছে। এ পর্যন্ত ইরাকে সাড়ে ৪ হাজার মার্কিন সৈন্য নিহত ও ৩২ হাজার আমেরিকান আহত হয়েছে।
ইরাকের সাফল্যের জন্য যুক্তরাষ্ট্রকে মূল্য দিতে হচ্ছে। আজ এ বিষয়ে ব্যাপক ঐকমত্য পরিলক্ষিত হচ্ছে যে যুক্তরাষ্ট্রের ইরাক আগ্রাসন ভুল ছিল। ইরাকের পারমাণবিক ক্ষমতা সম্পর্কে ভুল গোয়েন্দা রিপোর্টের উপর ভিত্তি করে এ আগ্রাসন চালানো হয়। তারপর সাদ্দাম হোসেনের ক্ষমতাচ্যুতির পর পরবর্তীতে করণীয় বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত ছিল না এবং আগ্রাসন-উত্তর সময়ে ইরাক অব্যবস্থাপনার শিকার হয়।
যুক্তরাষ্ট্রের বর্তমান নীতির কিছু সমালোচক এ সমস্যা ভালোভাবে বিশ্লেষণ করেছেন মনে হয়। তবে তার অর্থ এই নয় যে তারা সমাধান খুঁজে পেয়েছেন।
তারা চান যে যুক্তরাষ্ট্র ইরাকে একটি টেকসই বাহিনী গঠন ও তাদের প্রশিক্ষণ দিক যারা দেশের নিরাপত্তা রক্ষায় সক্ষম হবে এবং আইএসকে পরাজিত করতে পারবে। এটা করার জন্য তারা ইরাকে আরো ৫ হাজার অতিরিক্ত সৈন্য পাঠানোর প্রস্তাব করেছেন।
তারা ইরাক সরকারের প্রতি আরো জোরালো সমর্থন প্রদান এবং নতুন ক্ষমতা ভাগাভাগি চুক্তির জন্য কূটনৈতিক প্রচেষ্টা আরো জোরদার করার আহ্বান জানিয়েছেন। তারা আরো কার্যকর ইরাকি সরকার চান যা জরুরি সেবাসমূহ দিতে সক্ষম হবে। তারা এ অঞ্চলে ইরানের প্রভাব বিস্তারের কোনো চেষ্টাও ব্যর্থ করে দিতে চান।
এসব কথাবার্তার সাথে প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার দৃষ্টিভঙ্গির পার্থক্য সামান্যই। যদিও তিনি ২০১১ সালেই ইরাকে মার্কিন যোদ্ধা সৈন্যদের কার্যক্রমের অবসান ঘোষণা করেন তিনিই আবার ইরাকে সম্প্রতি আরো সৈন্য পাঠিয়েছেন। ইরাক ও সিরিয়ার সাথে আফগানিস্তানেও মার্কিন বিমান হামলা অব্যাহত রয়েছে।
ওবামার সমালোচকরা বলছেন, যুক্তরাষ্ট্রকে আরো কিছু করতে হবে এবং তা ভালোভাবে করতে হবে। কিন্তু ব্যাপারটি সহজ নয়। প্রথমত, এখানে মার্কিন রাজনীতিতে প্রতিবন্ধকতা আছে। ১৫ বছর যুদ্ধ করার পর, যার মধ্যে ইরাকেই চলছে ১৩ বছর, আমেরিকার জনগণ কি যুদ্ধ চালিয়ে যেতে যায়? যে লক্ষ্য স্পষ্ট নয়, তার জন্য কি তারা আরো আমেরিকানের প্রাণ বিসর্জন দিতে ইচ্ছুক? আমেরিকার জনগণ কি প্রজন্মের পর প্রজন্ম না হলেও দশকের পর দশক ধরে ইরাকে যুদ্ধ চালিয়ে যেতে চায়? যে কোনো প্রেসিডেন্টের জন্যই ইরাকে অবস্থানের জন্য যে বিপুল পরিমাণ সম্পদ প্রয়োজন তা প্রদানের অঙ্গীকার রক্ষা করা অসম্ভব না হলেও কঠিন হয়ে পড়বে।
দ্বিতীয়ত, এ অঞ্চলে বিপুল চ্যালেঞ্জের মধ্যে ইরাক হচ্ছে অংশমাত্র। ইরাকের সমস্যা সিরিয়া, আফগানিস্তান ও লিবিয়া এবং সমগ্র মধ্যপ্রাচ্যব্যাপী দৃশ্যমান হবে। যুক্তরাষ্ট্র ইরাক সমস্যাকে বিচ্ছিন্ন করে দেখতে পারবে না এবং তা করলে যুক্তরাষ্ট্রের গৃহীত যে কোনো ব্যবস্থাই জটিল হয়ে উঠবে।
এ অঞ্চলের যেসব দেশ অশান্তির শিকার এবং যাদের সাহায্য জরুরি প্রয়োজন, যুক্তরাষ্ট্র একা সে দেশগুলোকে নিয়ে মাথা ঘামাতে পারে না। একটি সমাধানে আঞ্চলিক অংশগ্রহণ প্রয়োজন হবে এবং ইসরাইল, মিসর, তুরস্ক, ইরান ও সম্ভবত রাশিয়াসহ অংশীদারদের সাথে একটি সার্বিক কৌশল গ্রহণ করতে হবে। যুক্তরাষ্ট্রকে এ অঞ্চলে স্বার্থ আছে এমন সকল আগ্রহী দেশকে একই টেবিলে আনতে হবে। কিন্তু সকল দেশের উপরই যেমন আস্থা রাখা যায় না তেমনি সবার সাথে কাজও করা সম্ভব নয়। ইরান তাদের মধ্যে প্রধান।
সর্বশেষ, প্রশাসনিক নীতির সমালোচকরা কিছু সুনির্দিষ্ট পরামর্শ দিয়েছেন। কী ধরনের ক্ষমতা ভাগাভাগি যুক্তরাষ্ট্র চায় এবং কীভাবে তার বাস্তবায়ন চায়? যে দেশে গোষ্ঠি সংঘাত মারাত্মক সে দেশে সরকারকে কীভাবে উন্নত করা যাবে? যুক্তরাষ্ট্র ইরাকে আর কতদিন থাকবে, কত অর্থ ব্যয় করবে?
ইরাকে কোনো একটি নীতির প্রস্তাব করা সহজ, কিন্তু তা বাস্তবায়ন করা কঠিন ও ব্যয়সাপেক্ষ।
২০০৬ সালে ইরাক স্টাডি গ্রুপ তাদের সুপারিশে বলেছিল, যুক্তরাষ্ট্র ইরাকে যে সব সমস্যার সম্মুখীন তা সমাধানের কোনো ‘ম্যাজিক বুলেট’ নেই। দুর্ভাগ্যক্রমে ১০ বছর পরও সে কথা সত্য। সূত্র হাফিংটন পোস্ট।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: যুক্তরাষ্ট্র ইরাকে আর কতদিন থাকবে কত অর্থ ব্যয় করবে
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ