Inqilab Logo

শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৬ বৈশাখ ১৪৩১, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

পাচারকারীর টাকা তুলতে ফ্রান্সে মাহমুদের সংগ্রাম

অনলাইন ডেস্ক | প্রকাশের সময় : ২ ডিসেম্বর, ২০২১, ১২:৩৩ পিএম

ইউরোপে স্থায়ী হতে ইরাক থেকে প্রথমে সুইডেনে যান দেওয়ান আনোয়ার মাহমুদ। সুইডেনে থাকা হয়নি। ফ্রান্স থেকে ব্রিটেনে যাওয়াও হয়ে ওঠেনি টাকার অভাবে। এখন চা, স্যান্ডউইচ বিক্রি করে টাকা জমাচ্ছেন মাহমুদ।

মাহমুদের বয়স এখন ৩০ বছর। কয়েকদিন আগে পাচারকারীকে ১ হাজার ৬০০ পাউন্ড দিয়েছিলেন ফ্রান্স থেকে নৌকায় ব্রিটেনে পৌঁছে দিতে। কিন্তু নৌকার পরিস্থিতি দেখে আর সাহস হয়নি। ডুবে মরার ভয়ে পাচারকারীকে জানিয়ে দেন এই দফা তিনি যাবেন না। না গেলেও টাকা ফেরত পাননি। উল্টে পাচারকারীর লোকজন তাকে পিটিয়েছে, মোবাইল কেড়ে নিয়ে ভেঙে ফেলেছে। তারপর আবার আশায় বুক বেঁধেছেন মাহমুদ।

গত সপ্তাহে মাহমুদ ছিলেন ফ্রান্সের উত্তরাঞ্চলের দুঁকির্ক অঞ্চলের রেল লাইনের কাছের জঙ্গলে গড়ে তোলা অস্থায়ী তাঁবুতে। শীতে এমন জায়গায় বাস করা খুব কঠিন। প্রচণ্ড ঠান্ডার সঙ্গে বৃষ্টি যোগ হলে গাছের ডাল, প্লাস্টিকের বোতল ইত্যাদি না পুড়িয়ে আগুন না পোহালে তাঁবুতে বেঁচে থাকা মুশকিল। বার্তা সংস্থা রয়টার্সের সঙ্গে কথা বলার পরের দিনই মাহমুদ জানতে পারেন, ফ্রান্সের পুলিশ তাদের এই জায়গা ছাড়ার নির্দেশ দিয়েছে। সুতরাং আবার যেতে হবে নতুন ঠিকানায়। আরেক জায়গায় শুরু হবে অস্তিত্ব রক্ষার অবর্ণনীয় কষ্ট।

১০ বছর আগে সরকারবিরোধী বিক্ষোভে অংশ নেয়ায় ইরাকের পুলিশ গ্রেপ্তার করেছিল তাকে। ছয় মাসের জেল হলো। জেলে পুলিশের নির্যাতনে একটা পায়ে স্থায়ী সমস্যা দেখা দিলো। ২০১৫ সালে দেশ ছাড়লেন। সুইডেনে চলে গেলেন বোনের কাছে। ছয় বছর চেষ্টা করেও সেখানে থাকতে পারেননি। তার অভিবাসনের আবেদন প্রত্যাখ্য্যান করে সুইডেন সরকার।

সুইডেনে থাকার সময় কুর্দিদের এক রেস্তোরাঁয় কাজ করতেন মাহমুদ। ওই অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়েই এখন অস্থায়ী তাঁবুতেও বাড়তি আয়ের চেষ্টা করেন। স্যান্ডউচ, চা, কাবাব, রুটি, মুরগির কলিজা ইত্যাদি রান্না করে যা আয় হয় তা থেকে কিছু টাকা জমিয়ে রাখেন। পাচারকারীকে টাকা দিতে হবে, পাচারকারী তাকে নিরাপদে ব্রিটেনে পৌঁছে দেবে- এই স্বপ্ন স্থায়ী হয়ে গেছে মাহমুদের মনে।

ব্রিটেনে যাওয়ার জন্য এক পাচারকারীকে ১৬০০ পাউন্ড দিয়েছিলেন মাহমুদ। নির্দিষ্ট দিনে গিয়ে দেখেন নৌকায় তিল রাখার জায়গা নেই। ছোট নৌকায় ৪৮ তম যাত্রী হওয়ার সাহস হয়নি বলে পিটুনি খেয়ে, মোবাইল হারিয়েও ফিরে এসেছেন মাহমুদ। তবে আশা ছাড়েননি। ভাবছেন ২৫০০ থেকে ৩০০০ পাউন্ড খরচ করে কম মানুষ নেয়া হয় এমন নৌকায় যাবেন। আরেকটু বেশি টাকা জমাতে পারলে যাবেন ট্রাকে। ট্রাকে যেতে চাইলে ৪০০০ পাউন্ড দিতে হবে মানবপাচারকারীকে।

স্যান্ডউইচ, চা, কাবাব, রুটি ইত্যাদি বিক্রি করে দিনে ৪০ থেকে ৭০ ইউরো আয় করেন মাহমুদ। তবে পুরো টাকা সঞ্চয় করতে পারেন না। নিজের খাওয়ার খরচ তো আছেই, পাশাপাশি দুজন সহকারীকে প্রতিদিন দিতে হয় ২৫ ইউরো।

সুইডেনে থাকতে পারেননি। ফ্রান্সেও মেলেনি উন্নত জীবনের নিশ্চয়তা। তাতে কী! মাহমুদের ভবিষ্যৎ লক্ষ্য একটাই এবং সেই লক্ষ্যের কথা সরাসরিই জানান সবাইকে, ‘‘আমার কাছে ফ্রান্স বা ইউকে বা জার্মানি বা বেলজিয়াম- সবই সমান। আমি এখানে এসেছি নতুন করে জীবন শুরু করতে। এখনো তা-ই চাই।’’ সূত্র: ডয়চে ভেলে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ