Inqilab Logo

শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৬ বৈশাখ ১৪৩১, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

ঝরল ৪১৩ জনের প্রাণ

নভেম্বরে ৩৭৯ সড়ক দুর্ঘটনা সবচেয়ে বেশি ঢাকা বিভাগে

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ৬ ডিসেম্বর, ২০২১, ১২:০৬ এএম

থামছেনা সড়ক দুর্ঘটনার ভয়াবহতা। কিছুতেই যেন রোধ করা যাচ্ছে না এর ব্যাপকতা। প্রতিদিনই দীর্ঘ হচ্ছে মৃত্যুর মিছিল। গত নভেম্বর মাসে সড়কে ৩৭৯ টি দুর্ঘটনার ঘটনা ঘটে। এতে প্রাণ হারিয়েছেন ৪১৩ জন। আর সবচেয়ে বেশি দুর্ঘটনা ঘটে ঢাকা বিভাগে। সড়কে এসব দুর্ঘটনায় বেদনাদায়ক পরিস্থিতির মুখোমুখি হতে হয় মৃত্যু কিংবা পঙ্গুত্ববরণকারী পরিবারগুলোকে। নিরাপদ সড়কের দাবিতে এত আন্দোলন, সুপারিশ-পরামর্শ কোন কিছুই কাজে আসেনা। পরামর্শ ও সুপারিশ যেন অরণ্যে রোদনই থেকে যায়। সড়ক ব্যবস্থাপনার দায়িত্বে সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও সংস্থাসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান যুক্ত থাকলেও দুর্ঘটনার হার কমিয়ে আনার ক্ষেত্রে কারও কোনো কার্যকর ভ‚মিকা লক্ষ করা যায় না।

এছাড়াও মহাসড়কে নিষিদ্ধ যানবাহনের দৌরাত্ম্য। নসিমন, করিমন, আলমসাধু, ভটভটি, ইজিবাইক ও সিএনজি চালিত অটোরিকশা দুর্ঘটনার জন্য অনেকাংশে দায়ী। কোন ধরনের নিবন্ধন ছাড়াই সড়ক-মহাসড়কে রাজত্ব করছে এসব নিষিদ্ধ যানবাহন। আইন মানার ক্ষেত্রে পথচারীরাও সচেতন নন। ঝুঁকি নিয়ে বাসে ওঠানামা ছাড়াও জেব্রাক্রসিং ও ফুটওভার ব্রিজ ব্যবহার না করে চলন্ত বাসের সামনে হাত উঁচিয়ে দৌড়ে রাস্তা পার হওয়া একটি সাধারণ বিষয়ে পরিণত হয়েছে। এসব নানা করণেও সড়ক দুর্ঘটনা ঘটছেই।

চলতি বছরের নভেম্বর মাসে সারাদেশে ৩৭৯টি সড়ক দুর্ঘটনায় ৪১৩ জন নিহত হয়েছেন। এসব দুর্ঘটনায় আহত হয়েছেন ৫৩২ জন। এর মধ্যে ঢাকা বিভাগে সবচেয়ে বেশি দুর্ঘটনা ঘটেছে। নিহতদের মধ্যে ৬৭ জন নারী ও ৫৮ জন শিশু রয়েছে। গতকাল শনিবার রোড সেফটি ফাউন্ডেশনের প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়।
জাতীয় দৈনিক, অনলাইন নিউজ পোর্টাল এবং ইলেক্ট্রনিক গণমাধ্যমের তথ্যের ভিত্তিতে প্রতিবেদনটি তৈরি করা হয়েছে। এসময় সাতটি নৌ-দুর্ঘটনায় নয়জন নিহত এবং পাঁচজন নিখোঁজ রয়েছেন। ১১টি রেলপথ দুর্ঘটনায় ১৩ জন নিহত এবং দুইজন আহত হয়েছেন বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়।

পরিসংখ্যানে দেখা যায়, নিহতদের মধ্যে মোটরসাইকেল চালক ও আরোহী ১৮৪ জন, বাসযাত্রী ২৩ জন, ট্রাক-পিকআপ-কাভার্ডভ্যান-ট্রাক্টর-ট্রলি যাত্রী ১২ জন, মাইক্রোবাস-প্রাইভেটকার-অ্যাম্বুলেন্স-জিপ যাত্রী ৯ জন (২ দশমিক ১৭ শতাংশ), থ্রি-হুইলার যাত্রী (ইজিবাইক-সিএনজি-অটোরিকশা-অটোভ্যান-মিশুক-টেম্পু-লেগুনা) ৬৬ জন (১৫ দশমিক ৯৮ শতাংশ), স্থানীয়ভাবে তৈরি যানবাহনের যাত্রী (নসিমন-ভটভটি-আলমসাধু-বোরাক-মাহেন্দ্র-টমটম) ১৭ জন এবং প্যাডেল রিকশা-রিকশাভ্যান-বাইসাইকেল আরোহী ছয়জন।

সংস্থাটির পর্যবেক্ষণ ও বিশ্লেষণ বলছে, দুর্ঘটনাগুলোর মধ্যে ১৫৬টি জাতীয় মহাসড়কে, ১৩১টি আঞ্চলিক সড়কে, ৫৩টি গ্রামীণ সড়কে, শহরের সড়কে এবং অন্যান্য স্থানে চারটি। দুর্ঘটনাগুলোর মধ্যে ৮৯টি মুখোমুখি সংঘর্ষ, ১৩৩টি নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে, ৯১টি পথচারীকে চাপা/ধাক্কা দেয়া, ৫৯টি যানবাহনের পেছনে আঘাত করা এবং সাতটি অন্যান্য কারণে ঘটেছে। এতে বলা হয়, ঢাকা বিভাগে সবচেয়ে বেশি দুর্ঘটনা ও প্রাণহানি ঘটেছে। ৮৩টি দুর্ঘটনায় নিহত ১০৪ জন। সবচেয়ে কম বরিশাল বিভাগে। ২২টি দুর্ঘটনায় নিহত ২৪ জন। একক জেলা হিসেবে চট্টগ্রাম জেলায় সবচেয়ে বেশি দুর্ঘটনা ও প্রাণহানি ঘটেছে। ২১টি দুর্ঘটনায় ২৯ জন নিহত হয়েছেন। সবচেয়ে কম লালমনিরহাট জেলায়। দুটি দুর্ঘটনা ঘটলেও কেউ হতাহত হয়নি। ত্রæটিপূর্ণ যানবাহন, বেপরোয়া গতি, চালকদের বেপরোয়া মানসিকতা, অদক্ষতা ও শারীরিক-মানসিক অসুস্থতাসহ ১০ কারণে সড়কে দুর্ঘটনা কমছে না।

প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, গত অক্টোবর মাসে ৩৪৬টি সড়ক দুর্ঘটনায় ৪০৭ জন নিহত হয়েছিল। গড়ে প্রতিদিন দুর্ঘটনা ঘটেছিল ১১ দশমিক ১৬টি এবং মারা গেছেন ১৩ জন। নভেম্বর মাসে ৩৭৯টি সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত হয়েছেন ৪০৭ জন। গড়ে প্রতিদিন দুর্ঘটনা ঘটেছে ১২ দশমিক ৬৩টি এবং নিহত হয়েছেন ১৩ জন।

সংস্থাটির তথ্য অনুসারে, ঢাকা বিভাগে দুর্ঘটনা ঘটেছে ২৬ দশমিক ৫৭ শতাংশ, প্রাণহানি ঘটেছে ২৬ দশমিক ৫১ শতাংশ। রাজশাহী বিভাগে দুর্ঘটনা ১৫ দশমিক ৯৪ শতাংশ, প্রাণহানি ১৩ দশমিক ৪২ শতাংশ, চট্টগ্রাম বিভাগে দুর্ঘটনা ১৯ দশমিক ৩২ শতাংশ, প্রাণহানি ২১ দশমিক ৮১শতাংশ, খুলনা বিভাগে দুর্ঘটনা ৯ দশমিক ১৭ শতাংশ, প্রাণহানি ৭ দশমিক ৭১শতাংশ, বরিশাল বিভাগে দুর্ঘটনা ৮ দশমিক ২১ শতাংশ, প্রাণহানি ৬ দশমিক শূন্য ৪ শতাংশ, সিলেট বিভাগে দুর্ঘটনা ৭ দশমিক ২৪ শতাংশ, প্রাণহানি ৭ দশমিক শ‚ন্য ৪ শতাংশ, রংপুর বিভাগে দুর্ঘটনা ৬ দশমিক ৭৬ শতাংশ, প্রাণহানি ৯ দশমিক ৭৩ শতাংশ এবং ময়মনসিংহ বিভাগে দুর্ঘটনা ৭ দশমিক ১৬ শতাংশ, প্রাণহানি ৭.৭১ শতাংশ ঘটেছে।

সংস্থাটির নির্বাহী পরিচালক সাইদুর রহমান বলেন, দুর্ঘটনা ও প্রাণহানির হার ঊর্ধ্বমুখী হলেও এটা নিয়ন্ত্রণে সরকারের তেমন কোনো উদ্যোগ দৃশ্যমান নয়। সড়ক পরিবহন আইন-২০১৮ বাস্তবায়নে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের মধ্যে কোনো আগ্রহ দেখা যাচ্ছে না। সড়ক দুর্ঘটনা ঘটছে মূলত সড়ক পরিবহন খাতের নৈরাজ্য ও অব্যবস্থাপনার কারণে। এ অবস্থার উন্নয়নে সরকারের রাজনৈতিক সদিচ্ছার ঘাটতি রয়েছে। #



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: সড়ক


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ