Inqilab Logo

বুধবার, ১৭ এপ্রিল ২০২৪, ০৪ বৈশাখ ১৪৩১, ০৭ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

কৃষকের পাশে দাঁড়াতে হবে

| প্রকাশের সময় : ৯ ডিসেম্বর, ২০২১, ১২:০৪ এএম

ঘুর্ণিঝড় জাওয়াদ দেশের উপকুলে শক্ত আঘাত না হানলেও দুর্বল হয়ে পড়া ঘূর্ণীঝড়ের প্রভাবে দেশের দক্ষিণ ও মধ্যাঞ্চলে কয়েকদিনের বৃষ্টিতে রবিশস্য ও উঠতি ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। বিনিয়োগে দীর্ঘমেয়াদী খরার মধ্যেই করোনাকালীন লকডাউনের প্রভাবে দেশের অর্থনীতিতে বড় ধরণের সংকট হয়ে দেখা দিয়েছে। বৈদেশিক কর্মসংস্থান, গার্মেন্ট রফতানির মত প্রধান অর্থনৈতিক খাতে মন্দার কারণে রেমিটেন্স আয়সহ সামগ্রিক অর্থনীতিতে নেতিবাচক প্রভাব দেখা দিয়েছে। করোনাকালীন বাস্তবতা পেরিয়ে বিশ্ব অর্থনীতি যখন সচল হতে শুরু করেছে তখন করোনার নতুন ধরন ওমিক্রণের অশনিসংকেত শোনা যাচ্ছে। এহেন বাস্তবতায় আমাদের দেশে জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধি এবং নিত্যপণ্যের অব্যাহত মূল্যবৃদ্ধির কারণে সবচেয়ে বেশি সমস্যায় পড়েছে দেশের কৃষক সমাজ। কৃষি উৎপাদনে খরচ বেড়ে গেলে তার প্রভাব সামগ্রিক অর্থনীতি ও সাধারণ মানুষের জীবনমানের চলমান ধারাকে বাধাগ্রস্ত করে। ঘূর্ণিঝড় জাওয়াদ এসব চ্যালেঞ্জের উপর দেশের কৃষক সমাজ ও সামগ্রিক অর্থনৈতিক সংকটকে আরো ঘণীভ’ত করে তুলেছে। কয়েকদিনের লাগাতার ঝিরঝিরে বৃষ্টিতে দেশের উত্তরাঞ্চলের কোথাও কোথা রবিশস্যের জন্য সুফল বয়ে আনলেও দেশের মধ্য ও দক্ষিণের নিম্নাঞ্চলে ফসলি জমিতে পানি জমে হাজার হাজার হেক্টর জমির ফসল নষ্ট করে দিয়েছে। ঝালকাঠি জেলায় ৩৬ হাজার হেক্টর জমির পাকা আমন ধানের ক্ষতি হয়েছে বলে প্রকাশিত এক রিপোর্টে জানা যায়। জেলায় আবাদ হওয়া আমন ধানের প্রায় ৭৫ শতাংশই ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। শীতকালীন রবিশস্যেরও ব্যাপক ক্ষতির কথা জানিয়েছে স্থানীয় কৃষি বিভাগ।

দেশ ক্রমশ শিল্প-বাণিজ্য নির্ভর অর্থনীতির দিকে ধাবিত হলেও দেশের সামগ্রিক অর্থনীতিতে কৃষিখাতের অবদান এখনো সর্বোচ্চ। ‘কৃষক বাঁচলে দেশ বাঁচবে’, এই পুরনো শ্লোগান এখনো সর্বাত্মকভাবে প্রযোজ্য। এটি শুধু জিডিপিতে কৃষির অবদানের গাণিতিক হিসাবের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়। এর সাথে জড়িত রয়েছে দেশের ১৭ কোটি মানুষের খাদ্য নিরাপত্তা, অর্থনৈতিক বিকাশ ও জীবনমান উন্নয়নের প্রশ্ন। খাদ্য নিরাপত্তা জাতীয় নিরাপত্তার অন্যতম অনুষঙ্গ। এ কারণে কৃষি উৎপাদন ও কৃষকের নিরাপত্তার বিষয়টিকে মামুলি অর্থনৈতিক হিসাবে সীমাবদ্ধ রাখার সুযোগ নেই। অন্য সব সেক্টরের অবস্থা যা’ই হোক, কৃষিখাত ও খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করা গেলে অন্য সব সমস্যা সমাধানের বিকল্প উপায় বের করা সম্ভব। জাতীয় স্বার্থেই কৃষি ও কৃষকের নিরাপত্তাকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিতে হবে। জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধি অথবা আকষ্মিক প্রাকৃতিক দুর্যোগের ক্ষতি থেকে কৃষক ও কৃষিখাতকে রক্ষায় সরকারের অগ্রাধিকার নিশ্চিত করতে হবে। অসময়ের অতি বর্ষণে ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের পাশে দাঁড়াতে হবে। তাদের নগদ অর্থ, খাদ্য সহায়তা, পুনরায় আবাদের জন্য প্রয়োজনীয় মূলধনের যোগান নিশ্চিত করা প্রয়োজন।

বাম্পার ফলনের পরও যখন কৃষক তার উৎপাদন খরচ উঠাতে পারেনা, তখন ভরা মওসুমেও চাল-ডাল-আলু-পেঁয়াজের মূল্যবৃদ্ধি নিম্ন আয়ের মানুষের অস্তিত্বের সংকট ঘণীভুত করে। সংগত কারণ ছাড়াই গত কয়েকমাস ধরে দেশের বাজারে সব ধরণের চালের দাম বেড়েছে। সকলেই আশা করেছিল, আমন ধান উঠলে চালের মূল্য কমে আসবে। আমন ধান ঘরে উঠলেও মূল্য কমেনি। এখন ঘুর্ণিঝড় জাওয়াদের প্রভাবে অতিবর্ষণে দেশের বেশ কয়েকটি জেলায় উঠতি আমন ও রবিশস্যের ক্ষতি নিত্যপণ্যের মূল্যস্ফীতি আরো বাড়িয়ে তোলার আশঙ্কা তৈরী করেছে। ধান ঘরে তোলার আগেই যে সব জমি পানিতে তলিয়ে গেছে, যে সব কৃষক তাদের বীজতলা ও উঠতি ফসল হারিয়ে নি:স্ব হয়েছেন তাদেরকে জমিতে নতুনভাবে বিনিয়োগের ব্যবস্থা করে দিতে হবে। তারা যেন মহাজনি ঋণে জজর্রিত হয়ে না পড়ে, সেদিকে লক্ষ্য রেখে স্থানীয় প্রশাসন ও জনপ্রতিনিধিদের তত্ত্বাবধানে অর্থায়ণের ব্যবস্থা করতে হবে। এ ক্ষেত্রে সময় ক্ষেপণের কোনো সুযোগ নেই। ঘূর্ণিঝড় জাওয়াদের অতিবৃষ্টির আগে থেকেই আমনের ভরা মওসুমে অব্যাহতভাবে চালের মূল্যবৃদ্ধির কোনো সংগত কারণ নেই। এ প্রবণতার কারণে ইতিমধ্যেই সরকার কয়েক লাখ টন চাল আমদানির অনুমোদন দিয়েছে। তা’ ছাড়া দেশের সব অঞ্চলের কৃষক ফসলহানির সম্মুখীন হননি। অতএব প্রাকৃতিক দুর্যোগে ফসলহানির কারণে আবারো চালের মূল্যে ঊধ্বংমুখী প্রবণতা রোধে সরকারের নজরদারি বাড়াতে হবে। ভোক্তা পর্যায়ে মূল্যবৃদ্ধি পেলেও প্রান্তিক পর্যায়ের কৃষকরা সব সময়ই ফসলের ন্যায্যমূল্য থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। দেশের কৃষকদের এই বঞ্চনা থেকে মুক্ত করতে আমদানিকারক ও মধ্যস্বত্বভোগীদের মনোপলি তৎপরতা বন্ধ করতে হবে। কৃষিখাতের ভর্তুকি এবং সরকারি খাদ্য সংগ্রহ তথা কৃষকের কাছ থেকে ধান-চাল ক্রয়ে দুর্নীতি ও অস্বচ্ছতা দূর করতে হবে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন