Inqilab Logo

সোমবার, ২০ মে ২০২৪, ০৬ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১, ১১ জিলক্বদ ১৪৪৫ হিজরী

মানবাধিকার ছাড়া কখনো গণতন্ত্র চলতে পারবে না

সেমিনারে মির্জা ফখরুল

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ১১ ডিসেম্বর, ২০২১, ১২:০০ এএম

মানবাধিকার ও গণতন্ত্র দুটিকে পরস্পরের পরিপূরক উল্লেখ করে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, গণতন্ত্র ছাড়া মানবাধিকার কোনোদিন রক্ষা হতে পারে না, আর মানবাধিকার ছাড়া কখনো গণতন্ত্র চলতে পারবে না। মানবাধিকার ও হিউম্যান রাইটস বডিগুলোর তথ্য অনুযায়ী কয়েকবছরের মধ্যে দেশে প্রায় ৬০৭ জন গুম হয়ে গেছে। বিএনপির প্রায় সহাস্রাধিক রাজনৈতিক কর্মী তারা নিহত হয়েছেন, তাদের হত্যা করা হয়েছে। ৩৫ লাখ মানুষের নেতা-কর্মীর বিরুদ্ধে মামলা। যে কোর্টে, আদালতগুলোতে যান দেখবেন ৯০ ভাগ আসামীই বিএনপির নেতা-কর্মী।

গতকাল শুক্রবার গুলশানে হোটেল লেকসোরে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার দিবস উপলক্ষে বিএনপির স্বাধীনতার সূর্বণ জয়ন্ত উদযাপনে জাতীয় কমিটির উদ্যোগে আয়োজিত সেমিনারে তিনি এসব কথা বলেন। এতে প্রধান অতিথি হিসেবে লন্ডন থেকে যুক্ত হয়ে বক্তব্য রাখেন দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান।
খালেদা জিয়াও বর্তমানে মানবাধিকার থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন অভিযোগ করে মির্জা ফখরুল বলেন, দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া মানুষের গণতান্ত্রিক আন্দোলনের প্রতীক, স্বাধীনতা-সার্বেভৌমত্বে প্রতীক তিনিও আজকে তার মানবাধিকার, ন্যূনতম যে অধিকার, তার চিকিৎসার অধিকার থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। আমাদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান দেশে ফিরতে পারছেন না, তাকে অন্যায়ভাবে সাজা দিয়ে দেশের নির্বাসিত অবস্থা রেখে দেয়া হয়েছে।

গুম হওয়া পরিবারের সদস্যদের বেদনার কথা তুলে ধরে বিএনপি মহাসচিব বলেন, আজকে (গতকাল) এখানে আপনারা গুম হওয়া পরিবারের কথা শুনেছেন। গত ৮ বছর ধরে আমরা এই পরিবারগুলোর কান্না শুনেছি, শিশুদের কান্না শুনেছি। এখনো তাদের শিশুরা অপেক্ষা করে থাকে কখন তার বাবা ফিরে আসবে। এরকম একটা ভয়াবহ মর্মস্পর্শী পরিস্থিতির মধ্যে আমরা আছি। বাংলাদেশে আমরা যারা আছি আমাদের বার বার একথা বলার আর প্রয়োজন নেই যে, বাংলাদেশে কিভাবে মানবাধিকার লঙ্ঘন হচ্ছে।

দেশের বিচার বিভাগ ও প্রশাসন দলীয়করণের অভিযোগ তুলে মির্জা ফখরুল বলেন, আজকে দুর্ভাগ্যজনকভাবে এমন একটা অবস্থা হয়েছে যে, বিচার বিভাগের ওপর এদেশের মানুষ কোনো আস্থা রাখতে পারছে না। কারণ বিচার বিভাগের কাছে মানুষ কোনো বিচার পাচ্ছে না। প্রশাসন সম্পূর্ণভাবে দলীয়করণ করে ফেলা হয়েছে। সবচেয়ে ভয়াবহ অবস্থা হচ্ছে, গণমাধ্যমকে সম্পূর্ণ ভাবে নিয়ন্ত্রণ করে ফেলা হয়েছে। বলতে কোনো দ্বিধা নেই আজকে যারা গণমাধ্যম কর্মী আছেন তারা সবচেয়ে অসহায় অবস্থার মধ্যে পড়েছেন। ডিজিটাল সিকিউরিটির এ্যাক্টের মাধ্যমে এখন কথা বলার স্বাধীনতাকে নিয়ন্ত্রণ করা হচ্ছে। এই অবস্থা থেকে উত্তরণে দলমত নির্বিশেষে সকলকে ‘জাতীয় ঐক্য’ সৃষ্টি করার আহবান জানান বিএনপি মহাসচিব।
ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেনের সভাপতিত্বে ও অ্যাডভোকেট ফারজানা শারমিনের সঞ্চালনায় সেমিনারে গণফোরামের অ্যাডভোকেট সুব্রত চৌধুরী, নাগরিক ঐক্যের মাহমুদুর রহমান মান্না, বিএনপির আবদুল মঈন খান, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, হাফিজ উদ্দিন আহমেদ, অর্থনীতিবিদ মাহবুবউল্লাহ, প্রফেসর তাজমেরী ইসলাম, আবদুস সালাম, অ্যাডভোকেট মো. আসাদুজ্জামান বক্তব্য রাখেন।

অনুষ্ঠানে ‘গুম’ হওয়া সাবেক এমপি ইলিয়াস আলীর ছেলে ব্যারিস্টার আবরার ইলিয়াস, বিএনপির সাজেদুল ইসলাম সুমনের ভাগ্নি আফরা আনজুম, ওমর ফারুকের স্ত্রী পারভীন আখতার, ছাত্র দলের মাহবুবুর রহমান বাপ্পীর বোন ঝুমুর আখতার তাদের স্বজনদের সন্ধান চেয়ে আবেগময় কন্ঠে বক্তব্য রাখেন। অনুষ্ঠানে জাতিসংঘ, কানাডা, ডেমোক্রেসি ইন্টান্যাশনাল, ইন্টারন্যাশনাল ডেমোক্রেসির প্রতিনিধি উপস্থতি ছিলেন।

এই সেমিনারে গণফোরামের মোস্তফা মহসিন মন্টু, বিএনপির গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, নজরুল ইসলাম খান, সেলিমা রহমান, ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু, শওকত মাহমুদ, ইসমাইল জবিহউল্লাহ, এম এ কাইয়ুম, হাবিবুর রহমান হাবিব, মজিবুর রহমান সারোয়ার, মাহবুবু উদ্দিন খোকন, খায়রুল কবির খোকন, শ্যামা ওবায়েদ, আবদুল মালেক রতন, শিরিন সুলতানা, জহির উদ্দিন স্বপন, জেড খান রিয়াজ উদ্দিন নসু, তাবিথ আউয়াল, জিয়াউদ্দিন জিয়া, জাহেদুল আলম হিটু, ফরিদা ইয়াসমীন, আতিকুর রহমান রুম্মন, রাষ্ট্র বিজ্ঞানের অধ্যাপক আবদুল লতিফ মাসুম, সাংসদ রুমিন ফারহানা, শায়রুল কবির খান, শামসুদ্দিন দিদার প্রমূখ উপস্থিত ছিলেন।

এদিকে অনুষ্ঠানের প্রতিবাদ জানাতে লেকসোর হোটেলের সড়কের ফুটপাতে ‘১৯৭৭ সালের জিয়ার আমলে গুম ষড়যন্ত্রের শিকার ক্ষতিগ্রস্থ পরিবার’‘বিএনপির আগুন সন্ত্রানে ক্ষতিগ্রন্থব্যানারে ক্ষমতাসীন দলের সমর্থিত অর্ধশতাধিক সদস্য বিক্ষোভ প্রদর্শন করে। তারা জিয়াউর রহমানের আমলে মানবাধিকার লঙ্ঘনের নানা অভিযোগ করে। যতক্ষন সেমিনার চলে ততক্ষণ তারা ফুটপাতে দাঁড়িয়ে তাদের প্রতিবাদ কর্মসূচি চালায়।



 

Show all comments
  • Mominul Haque Chowdhury ১১ ডিসেম্বর, ২০২১, ১১:২২ এএম says : 0
    ক্ষমতার অপব্যবহারের খেলা দেখতে আর ভালো লাগেনা। জনগণের ক্ষমতা এবং জনগণের প্রকৃত স্বাধীনতা ফিরিয়ে দেয়া হোক।
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: মির্জা ফখরুল


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ