পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
বিশেষ সংবাদদাতা : পার্থক্যটা এখন স্পষ্ট। ইন্দোনেশিয়া ও ভারতের কোচের মধ্যে আকাশ-পাতাল ব্যবধান খুঁজে পাচ্ছেন খোদ রেলওয়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। ঝকঝকে চকচকে ইন্দেনেশিয়ান ইনকা কোচগুলো দেখার পর অনেকেই প্রশ্ন তুলেছেন ভারতীয় এলএইচবি কোচগুলো আদৌ নতুন ছিল কিনা? তবে এ বিষয়ে রেলওয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা মুখ খুলতে নারাজ। পরিচালক মর্যাদার একজন কর্মকর্তা বলেন, দুই দেশের তৈরি কোচগুলোর মধ্যে কোয়ালিটির ভিন্নতা থাকতেই পারে।
রেলের বহরে যুক্ত হয়েছে ভারত ও ইন্দোনেশিয়া থেকে আনা বিলাসবহুল কোচ। ব্রডগেজের জন্য ভারত থেকে আনা হয়েছে ৮০টি এলএইচবি কোচ। ইন্দোনেশিয়া থেকে আনা হবে ৫০টি। ইতোমধ্যে ইন্দোনেশিয়ার ইনকা কোম্পানির কোচগুলো চলে এসেছে। খুব অল্প সময়ের মধ্যে কয়েকটির লোড ট্রায়ালও সম্পন্ন হয়েছে। যেখানে ভারতীয় কোচগুলোর ট্রায়াল রানের জন্য প্রস্তুত করতে দেড় মাসেরও বেশি সময় লেগেছিল।
জানা গেছে, শুরু থেকেই ভারতের তৈরি এলএইচবি কোচ নিয়ে আলোচনার পাশাপাশি সমালোচনাই বেশি হয়েছে। অনেকের অভিযোগ, ভারতের এলএইচবি কোচের রঙ ও বডির ফিনিশিং ভালো নয়। লাল-সবুজ রঙের ধরন নিয়েও সমালোচনা করেছেন অনেকেই। কয়েকদিন আগের ঘটনা। কমলাপুর রেল স্টেশনের ৩ নং প্লাটফর্মে দাঁড়ানো খুলনাগামী চিত্রা এক্সপ্রেস। রেলওয়ের একজন কর্মী ট্রেনটির কোচগুলো দেখিয়ে বলেন, বডিগুলোর দিকে ভালো করে তাকিয়ে দেখেন তো এগুলো নতুন মনে হয় কিনা? একথা শুনে আরেক কর্মী বলেন, পুরাতন এবড়ো-থেবড়ো বডিগুলোকে সোজা করার প্রমাণ কোচগুলোতে স্পষ্ট। নতুন কোচ হলে এরকম ঢেউ ঢেউ, আঁকা-বাঁকা থাকবে কেন? ভারত থেকে এলএইচবি কোচ বাংলাদেশে আনার পর সেগুলো সৈয়দপুর রেলওয়ে ওয়ার্কশপে নিয়ে যাওয়া হয় চলার উপযোগী করার জন্য। ভারত থেকে ইঞ্জিনিয়ার ও টেকনিশিয়ানরা এসে সৈয়দপুর কারখানায় অবস্থান করে কোচগুলোকে চলাচলের উপযোগী করার চেষ্টা চালিয়ে যান। তাদের সেই চেষ্টা কয়েক মাস ধরে চলে। সে সময় এলএইচবি কোচের গুণগত মান নিয়ে প্রশ্ন ওঠে। রেল কর্মীদের তোপের মুখে পড়েন ভারতীয় প্রকৌশলী ও টেকনিশিয়ানরা। কিন্তু রেলওয়ের ঊর্ধ্বতন কতিপয় কর্মকর্তার হুমকি ধমকিতে কেউ মুখ খোলার সাহস করেনি।
রেল সূত্র জানায়, ইন্দোনেশিয়া থেকে ব্রডগেজের কোচ আসার পর থেকে ভারতীয় কোচের সাথে মেলাতে শুরু করেছে রেল কর্মীরা। কয়েকজন কর্মী দুই দেশের কোচের মধ্যে পার্থক্য বিবেচনা করে বলেছেন, দুটোর মধ্যে আকাশ-পাতাল ব্যবধান। ভেতরে-বাইরে দেখলে যে কেউ বলবে ভারতীয় কোচগুলো অত্যন্ত নি¤œমানের এবং পুরাতন। বিশেষ করে বডিগুলো জোড়াতালি দিয়ে করা তা সহজেই বোঝা যায়। আর ভেতরের সিট, জানালা, দরজা, শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত মেশিন, লাইট, সুইচ, বাথরুমের ফিটিংস, এসি কেবিনের ফিটিংস সবকিছুতেই পার্থক্য স্পষ্ট। ইন্দোনেশিয়ান কোচগুলোতে এসব অনেক উন্নত। পক্ষান্তরে ভারতীয় কোচগুলোতে এসব একেবারে নি¤œমানের। শুরুতে বলা হয়েছিল ভারতীয় কোচগুলোর বডি হবে স্টেইনলেস স্টিলের। কিন্তু প্রকৃতপক্ষে কোচগুলো স্টেইনলেস স্টিলের নয়। এছাড়া কোচগুলোর ইলেকট্রিক ওয়্যারিং, ফ্যানহীন এসি মেশিন ও ফ্রিজের ভেতরের কিছু যন্ত্রাংশ নিয়ে আশঙ্কা প্রকাশ করেন বাংলাদেশের প্রকৌশলীরা। তাদের আশঙ্কা সত্যি হয় কোচগুলো ট্রেনের বহরে যুক্ত হওয়ার পর। কাপলিং না লাগা এবং ইলেক্ট্রিক সরবরাহে সমস্যার কারণে সময়মত ট্রেন ছাড়তে পারেনি এরকম ঘটনা বহু ঘটেছে। ভারতীয় কোচগুলো দিয়ে ব্রডগেজের ট্রেনের গতিবেগ ৯৫ থেকে বাড়িয়ে ঘণ্টায় ১২০ কিলোমিটার করার কথা থাকলেও শেষ পর্যন্ত গতিবেগ বাড়ানো যায়নি। বরং এলএইচবি কোচ নিয়ে বিপাকে পড়েছে রেলওয়ের পশ্চিম বিভাগ। নতুন কোচ দিয়ে ঢাকা-রাজশাহী রুটে তিনটি ট্রেন চালাতে গিয়ে শুরুর দিকে হিমশিম খেতে হয়েছে পশ্চিমাঞ্চলের রেলওয়ের কর্মকর্তাদের। শুরু থেকেই তিনটি ট্রেনের কোচগুলোতে প্রতিদিনই কোনো না কোনো ত্রুটি দেখা দিয়েছে। ঘন্টার পর ঘন্টা চেষ্টা চালিয়ে সে সব ত্রুটি সারানো যায়নি। গত ১ আগস্ট সোমবার রাতে রাজশাহী স্টেশনে ঢাকামুখি ধুমকেতু এক্সপ্রেস ট্রেনটি ছাড়তে চার ঘন্টা দেরি হয়। এসময় ট্রেনের যাত্রীরা বিক্ষোভ শুরু করলে স্টেশন থেকে রেল কর্মীরা সটকে পড়েন। ওই ঘটনায় দুজন রেল কর্মীকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়। এলএইচবি কোচের বৈদ্যুতিক সমস্যা ছাড়াও ইঞ্জিনের সাথে কোচের জয়েন্ট এবং এয়ারকন্ডিশনিং নিয়েও নানা সমস্যা ট্রেনের সিডিউল বিপর্যয়ের কারণ বলে স্বীকার করেন সংশ্লিষ্ট বিভাগের কর্মচারিরা।
রেলওয়ে সূত্র জানায়, ভারতীয় কোচের সবচেয়ে বড় সমস্যা হলো ট্রেনের সাথে ইঞ্জিনের সংযোগ বা জয়েন্ট (কাপলিং) না লাগা। ইঞ্জিন লাগানো বা খোলার জন্য সর্বোচ্চ তিন মিনিট সময় লাগার কথা। কিন্তু ভারতীয় কোচগুলোতে কাপলিং লাগানো বা খোলার জন্য কখনও আধা ঘন্টা বা তারও বেশি সময় লাগে। এতো কসরত করে লাগানোর পর সেই কাপলিং আবার খুলেও যায়। ঢাকা-রাজশাহী রুটে নতুন কোচের ট্রেন চালু হওয়ার পর ঈদুল ফিতরের আগে ঘটে একটি ঘটনা। ওই দিন ঢাকাগামী ট্রেনের ইঞ্জিন এলএইচবি কোচ ফেলে প্রায় এক কিলোমিটার সামনে আসার পর চালক বুঝতে পারেন। পরে ইঞ্জিন ফিরে এসে কাপলিং লাগিয়ে ফের যাত্রা শুরু করে। চলন্ত ট্রেন থেকে এভাবে ইঞ্জিন খুলে যাওয়া খুবই বিপদজনক। এতে করে বড় ধরণের দুর্ঘটনার আশংকা থাকে। কাপলিং নিয়ে এ সমস্যা দিন দিন জটিল আকার ধারণ করছে। বিকল্প হিসেবে ক্লিপ সিস্টেম করা হলেও তা মজবুত ও স্থায়ী করা যাচ্ছে না বলে জানান রেল সংশ্লিষ্টরাই। ইন্দোনেশিয়ার কোচগুলোতে এরকম কোনো সমস্যা এখনও চোখে পড়েনি বলে জানান রেলওয়ের যন্ত্রকৌশল বিভাগের একাধিক কর্মকর্তা। তাদের মতে, ইন্দোনেশিয়ার কোচগুলোর মান উন্নত। এর আগেও ইন্দোনেশিয়া থেকে যে সব কোচ আনা হয়েছিল সেগুলো অন্যান্য দেশের তুলনায় এখনও ভালো সার্ভিস দিচ্ছে বলে জানান একজন কর্মকর্তা। তার মতে, এতোদিনে ভারতীয় কোচগুলোর দোষত্রুটি চাপা পড়েছিল। ইন্দোনেশিয়ার কোচ আসার পর সেগুলো আবার চোখে পড়ছে। দুই দেশের কোচের মধ্যে তুলনা করতে গিয়েই পার্থক্যগুলো স্পষ্ট হচ্ছে বলে মনে করেন ওই কর্মকর্তা।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।