Inqilab Logo

শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৬ বৈশাখ ১৪৩১, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

বিমানবন্দরে যাত্রী হয়রানি বন্ধ করতে হবে

| প্রকাশের সময় : ১৫ ডিসেম্বর, ২০২১, ১২:০২ এএম

দেশের প্রধান আন্তর্জাতিক গেটওয়ে হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে বিশৃঙ্খলা ও যাত্রী হয়রানি চরম আকার ধারণ করেছে। টার্মিনালের একাধিক প্রবেশ দ্বার বন্ধ রেখে ঘন্টার পর ঘন্টা লাইনে দাঁড়িয়ে থাকতে বাধ্য করা হচ্ছে যাত্রীদের। এ কারণে অনেক যাত্রীর ফ্লাইট মিস করার মত ঘটনাও ঘটে চলেছে বলে জানা যায়। যাত্রীদের জিম্মি করে বিমানবন্দরের একশ্রেণীর অসাধু কর্মকর্তা লাইন বাণিজ্য করছে বলেও অভিযোগ রয়েছে। দেশের প্রধান আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে এমন অনিয়ম অব্যবস্থাপনা, যাত্রী হয়রানি ও দুর্ভোগের শিকার হওয়ার ঘটনা বিশ্বে বিরল। আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের ব্যবস্থাপণা, শৃঙ্খলা, পরিচ্ছন্নতা ও যাত্রী পরিষেবার মান দেখে দেশের সংস্কৃতি ও সামাজিক-অর্থনৈতিক বাস্তবতা অনেকটাই আঁচ করা যায়। আমাদের দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়ন-অগ্রগতির কথা বলা হলেও, প্রধান বিমান বন্দরের টার্মিনালে প্রবেশ করার সাথে সাথে দেশের প্রকৃত অবস্থা নিয়ে যাত্রীদের হতাশ হতে হয়। প্রবাসী কর্মীরা আমাদের জাতীয় অর্থনীতিতে রেমিটেন্স প্রবাহের অন্যতম লাইফলাইন। বিশ্বের শতাধিক দেশে এক কোটির বেশি প্রবাসী শ্রমিক রেমিটেন্স পাঠিয়ে অর্থনীতিকে সচল রাখছে। সেসব রেমিটেন্স যোদ্ধারা নিজ দেশের বিমানবন্দরে এসে প্রতিনিয়ত সীমাহীন দুর্নীতি, অব্যবস্থাপনা, অস্বচ্ছতা ও হয়রানির শিকার হচ্ছে। প্রবাসী কর্মীরা ছাড়াই রফতানি বাণিজ্যের অংশীদার, বিনিয়োগকারি, পর্যটক এবং কূটনীতিকরাও এ বিমানবন্দর দিয়ে যাতায়াত করে থাকেন। বিমানবন্দরের অব্যবস্থাপনা ও যাত্রী দুর্ভোগ আমাদের সামগ্রিক অর্থনীতি ও ভাবমর্যাদার উপর নেতিবাচক প্রভাব সৃষ্টি করছে।

দেশের প্রায় সব মেগা প্রকল্প বাস্তবায়নে নানাবিধ সমস্যা, অদূরদর্শিতা ও ভুলভ্রান্তি চোখে পড়ে। ঢাকার যানজট নিরসন ও যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়নে গৃহীত প্রকল্পগুলোর বাস্তবায়ন বছরের পর বছর ধরে প্রলম্বিত হওয়ায় লাখ লাখ মানুষকে প্রতিদিন চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। নাগরিকরা বাধ্য হয়ে এসব দুর্ভোগ মেনে নিলেও দেশের প্রধান বিমানবন্দরের উন্নয়নে অনুরূপ অব্যবস্থাপনা ও দীর্ঘসুত্রতা মেনে নেয়া যায় না। বিমানবন্দরের সংস্কার ও উন্নয়ন একটি চলমান প্রক্রিয়া। একসাথে অধিক যাত্রীর স্বাচ্ছন্দে আগমন-বর্হিগমন ও সেবা নিশ্চিত করতেই এমন উন্নয়নের কাজ করা হয়। বিদ্যমান সুবিধা অক্ষুন্ন রেখেই এমন সংস্কারের কাজে হাত দিতে হয়। যাত্রীদের চরম দুর্ভোগে ঠেলে দেয়ার আগে বিকল্প পন্থা যথাযথভাবে সচল না করা বেবিচক ও সংশ্লিষ্টদের অদূরদর্শিতার পরিচয় বহন করে। বিমান বন্দরের থার্ড টার্মিনালের কানেক্টিং ট্যাক্সিওয়ে নির্মাণের জন্য প্রতিরাতে ৮ ঘন্টা রানওয়ে বন্ধ রাখার কারণে আগামী ৬ মাস ধরে যাত্রীদের এমন ভোগান্তি পোহাতে হবে বলে ইনকিলাবে প্রকাশিত রিপোর্টে জানা যায়। বিমান বন্দরের ট্যাক্সিওয়ে নির্মাণে এক দীর্ঘ সময় লাগার যুক্তিসঙ্গত কোনো কারণ আছে কিনা আমাদের জানা নেই। কাজের গতি বাড়িয়ে এ সময় আরো দ্রুতায়িত করতে বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষকে কার্যকর উদ্যোগের কথা ভাবতে হবে।

বিমানবন্দরের পরিসর বৃদ্ধি ও সেবার মানোউন্নয়নের জন্য গৃহীত পদক্ষেপগুলো যেন চলমান পরিষেবাকে বিঘ্নিত করতে না পারে সর্বাগ্রে সেদিকে নজর দিতে হবে। যেখানে ডিজিটালাইজেশনের মাধ্যমে দেশের বিভিন্ন সেক্টরে ওয়ানস্টপ সার্ভিস দেয়া শুরু হয়েছে, সেখানে আমাদের আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের যাত্রীদের ঘন্টার পর ঘন্টা লাইনে দাড়িয়ে থাকতে হচ্ছে। লম্বা লাইনে যাত্রীদের সময় ক্ষেপনের দুর্ভোগ ছাড়াও ইমিগ্রেশন কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে অসদাচরণ এবং অনৈতিক ঘুষ বাণিজ্যের অভিযোগ উঠেছে। এর শিকার হচ্ছেন প্রবাসী যাত্রীরা। প্রবাসী কর্মীরা জমিজিরাত বিক্রি করে বিদেশ গিয়ে দিনরাত পরিশ্রম করে দেশে ফেরার পথে শ্রমলব্ধ আয়ে কেনা মূল্যবান জিনিসপত্র বিমান বন্দরে খুইয়ে নি:স্ব হয়ে বাড়ি ফেরার ঘটনাও ঘটেছে। বছরের পর বছর ধরে এমন অনিয়ম চলছে। বিমানবন্দরের মনিটরিং ব্যবস্থায় কি এসব দেখার কেউ নেই? বিমান বন্দরের এমন অনিয়ম-দুর্নীতি, অব্যবস্থাপনা ও যাত্রী হয়রানি কঠোর হাতে বন্ধ করতে কার্যকর ব্যবস্থা নিতে হবে। দেশের প্রধান আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরকে শুধু অবকাঠামোগতভাবে বিশ্বমানে উন্নীত করলেই হবে না। এর পরিচালন ব্যবস্থাপনাকেও স্বচ্ছ, গতিশীল, দুর্নীতিমুক্ত, নিরাপদ ও যাত্রীবান্ধব করার কার্যকর উদ্যোগ নিতে হবে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: বিমানবন্দর

১৩ জানুয়ারি, ২০২৩

আরও
আরও পড়ুন