Inqilab Logo

শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

নবীনগরে দুর্বৃত্তদের গুলিতে চেয়ারম্যান প্রার্থীসহ নিহত ২

ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা সংবাদদাতা : | প্রকাশের সময় : ১৯ ডিসেম্বর, ২০২১, ১২:০০ এএম

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নবীনগরে একদল দুর্বৃত্তের গুলিতে ইউপি চেয়ারম্যান প্রার্থীসহ ২ জন নিহত হয়েছে। গত শুক্রবার রাত সোয়া ১০টার দিকে উপজেলার নাটঘর ইউনিয়নের মহেশ রোডের কুড়িঘর গ্রামের আহুববাড়ির সামনে এ ঘটনা ঘটে। পুলিশের ধারণা, পূর্ব বিরোধের জের ধরেই এ হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে। এদিকে রাতেই প্রতিপক্ষের বাড়িঘর ভাংচুর ও লুটপাটের ঘটনা ঘটেছে। নিহতরা হলেন, ইউপি চেয়ারম্যান প্রার্থী মো. এরশাদুল হক নাটঘর ইউনিয়ন পরিষদের বর্তমান চেয়ারম্যান পশু চিকিৎসক আবুল কাশেমের ছেলে ও নাটঘর ইউনিয়নের নান্দুরা গ্রামের সন্তোষ সরকারের ছেলে বাদল সরকার।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, নাটঘর ইউনিয়ন পরিষদের বর্তমান চেয়ারম্যান আবুল কাশেম বার্ধক্যজনিত কারণে প্রায় সময় অসুস্থ থাকেন। তাই আসন্ন ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে আবুল কাশেমের স্থলে তার বড় ছেলে মো. এরশাদুল হক এবার চেয়ারম্যান পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন। তিনি নিয়মিত জনসংযোগ চালিয়ে আসছিলেন।
গত শুক্রবার রাতে ওই ইউনিয়নের কুড়িঘর গ্রামের বাজার এলাকায় ওয়াজ মাহফিল চলছিল। ওয়াজ মাহফিলে চেয়ারম্যান প্রার্থী হিসেবে উপস্থিত মুসল্লীদের কাছে দোয়া চান তিনি। সেখান থেকে ফেরার পথে ঘটনাস্থলে পৌঁছালে একদল দুর্বৃত্ত তাদের লক্ষ্য করে গুলি ছোঁড়ে। সামনে চালকের আসনে বসা থাকা বাদল মাথায় গুলিবিদ্ধ হয়ে মাটিতে লুটিয়ে পড়ে ঘটনাস্থলেই মারা যান। এসময় এরশাদুলকে লক্ষ্য করে এলোপাতারি গুলি ছোঁড়ে দুর্বৃত্তরা। এরশাদুল কানে ও গলায় গুলিবিদ্ধ হয়ে গুরুতর আহত হন। তাকে উদ্ধার করে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা সদর হাসপাতালে নিয়ে আসলে কর্তব্যরত চিকিৎসক আশঙ্কাজনক অবস্থায় ঢাকায় প্রেরণ করে। পথিমধ্যে এরশাদুল মারা যান।
এ খবর ছড়িয়ে পড়লে রাতেই ওই ইউনিয়নের নান্দুরা গ্রামের আবু নাসেরের গোষ্ঠীর ৪টি ঘর, সফরের গোষ্ঠীর ৫টি ঘর ভাঙচুর করে এবং খায়ের মিয়া ৩টি গরু লুট করে নিয়ে যায় দুর্বৃত্তরা। নিহত এরশাদুলের ভাই কাতার প্রবাসী আকতারুজ্জামান জানান, আম্বরের বাড়ি আবু নাসেরের ছেলে নজরুলের নেতৃত্বে মোটর সাইকেলে করে একদল সন্ত্রাসী এসে আমার ভাইকে লক্ষ্য করে গুলি ছোঁড়ে। এতে এ হতাহতের ঘটনা ঘটে। এদিকে মৃত্যুর সংবাদ এলাকায় পৌঁছানোর পরপরই প্রতিপক্ষের নারী-পুরুষ সবাই বাড়ি ছেড়ে পালিয়ে যান। এলাকায় চরম আতঙ্ক ও উত্তেজনা বিরাজ করছে। পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে কয়েক রাউন্ড গুলির খোসা উদ্ধার করেছে। এ ঘটনায় এখন পর্যন্ত কোন মামলা দায়ের হয়নি।
ছেলের এই নৃশংস হত্যাকাণ্ডের সুষ্ঠু তদন্ত ও বিচার দাবি করেছেন নাটঘর ইউনিয়ন পরিষদের বর্তমান চেয়ারম্যান আবুল কাশেম। ব্রাহ্মণবাড়িয়ার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন ও অপরাধ) মোল্লা মোহাম্মদ শাহীন জানান, দুর্বৃত্তদের গুলিতে বাদল ঘটনাস্থলে নিহত হয়েছেন। এরশাদুলকে ঢাকায় নেওয়ার পথে মারা গেছেন। আমি নিজেও ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছি। হত্যাকাণ্ডের রহস্য উদঘাটনের চেষ্টা চলছে। নবীনগর থানার ওসি আমিনুর রশীদ জানান, এখন পর্যন্ত সোহাগ নামে একজনকে আটক করা হয়েছে। তবে তদন্তের স্বার্থে গ্রেফতারকৃত সোহাগের ব্যাপারে বিস্তারিত তথ্য দেয়া যাবে না বলে তিনি উল্লেখ করেন। উল্লেখ্য, ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নবীনগরে দুর্বৃত্তদের গুলিতে নিহত নাটঘর ইউনিয়ন পরিষদের বর্তমান চেয়ারম্যান আবুল কাশেমের ছেলে এরশাদুল হকের চাচাতো ভাই মো. সাইফুল্লাহকে প্রায় আড়াই বছর আগে হত্যা করা হয়। ওই হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় দায়ের করা মামলার বাদী ছিলেন এরশাদুল।
এ ঘটনায় এরশাদুল বাদী হয়ে ২০১৯ সালের ২ এপ্রিল ২০ জনকে আসামী করে নবীনগর থানায় মামলা দায়ের করেন। পূর্বের এই বিরোধের জের এবং আসন্ন ইউপি নির্বাচনে তার তুমুল জনপ্রিয়তা থাকায় এই ঘটনা ঘটে থাকতে পারে বলে ধারণা করছে নিহতের পরিবার ও স্থানীয়রা।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: চেয়ারম্যান প্রার্থীসহ নিহত ২
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ