Inqilab Logo

বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১, ১৪ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

মাথাভাঙ্গায় অবৈধ বাঁধ দিয়ে মাছ শিকার নীরব দর্শকের ভূমিকায় প্রশাসন

প্রকাশের সময় : ২৬ অক্টোবর, ২০১৬, ১২:০০ এএম

নুরুল আলম বাকু, দামুড়হুদা (চুয়াডাঙ্গা) থেকে

দেশকে বিপন্ন পরিবেশের হাত থেকে রক্ষা করতে যখন সরকার, বিভিন্ন এনজিও, পরিবেশবাদী ও সামাজিক সংগঠন “নদী বাঁচাও, দেশ বাঁচাও” শ্লে­াগান নিয়ে শত শত কোটি টাকা খরচ করে দেশের নদীগুলোর নাব্যতা ফেরাতে ব্যস্ত, সেই মুহূর্তে দামুড়হুদার উপর দিয়ে বয়ে যাওয়া একমাত্র নদী মাথাভাঙ্গায় অবৈধভাবে আড়াআড়ি বাঁধ দিয়ে চলছে অবাধে মৎস্য শিকার। বাঁধ দিয়ে পানির স্বাভাবিক ¯্রােত বন্ধ করার ফলে নদী তার নাব্যতা হরাচ্ছে, সেইসাথে নদী হয়ে পড়ছে মাছশূন্য। দীর্ঘদিন এভাবে চলতে থাকলেও এ ব্যাপারে প্রশাসনের পক্ষ থেকে কোন পদক্ষেপ নিতে দেখা যাচ্ছে না। জানা গেছে, চুয়াডাঙ্গা জেলার দামুড়হুদা উপজেলার উপর দিয়ে বয়ে যাওয়া একমাত্র নদী মাথাভাঙ্গার বিভিন্ন স্থানে অবৈধভাবে আড়াআড়ি বাঁধ দিয়ে মাছ শিকারের মহোৎসব শুরু হয়েছে। মাথাভাঙ্গা নদীর দামুড়হুদা উপজেলার সীমানার মধ্যে পাটাচোরা, রঘুনাথপুরের দক্ষিণে, গোবিন্দপুর গ্রামের চরের মাঠ, জিরাট ঘাটের অদুরে, রুদ্রনগরের বাঁক, মদনার ভিমখালি ঘাটে, দর্শনার পাইপঘাটের অদূরেসহ ৭-৮টি স্থানে নদীতে আড়াড়িভাবে বাঁধ দিয়ে চলছে মাছ শিকার। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, উপজেলার চন্ডিপুর গ্রামের রঘু হালদার, গনো হালদার, রামনগর গ্রামের ডাকাত ছালাম, পারকৃষ্ণপুরের অর্জুন হালদারসহ ১০-১২জন মিলে দীর্ঘদিন যাবৎ নদীর বিভিন্ন স্থানে বাঁধ দিয়ে ও কোমর ঘিরে অবাধে মাছ শিকার করে আসছে। একাধিক সূত্রে জানা গেছে, প্রশাসনের এক শ্রেণির অসাধু কর্মকর্তা-কর্মচারী ও স্থানীয় নামধারী দলীয় লোকজনকে বিশেষ ব্যবস্থায় ম্যানেজ করেই তারা মাছ শিকার করে। ফলে এলাকার সাধারণ মানুষ তাদের কিছু বলতে সাহস পায় না। এছাড়াও অভিযোগ রয়েছে, এসব বাঁধে ধরা পড়া মাছের একটি অংশ প্রশাসনের কিছু অসাধু কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বাসায় নিয়মিত পাঠানো হয়। নদীতে আড়াআড়ি বাঁধ দিয়ে বা ¯্রােত বাধাগ্রস্ত করে মাছ শিকার আইনগতভাবে সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ হলেও এভাবেই মাথাভাঙ্গা নদীতে অবাধে চলছে মাছ শিকার। নদীতে আড়াআড়িবাবে বাঁধ দেয়ার কারণে স্রোত বাধাপ্রাপ্ত হয়ে পলি পড়ে ভরাট হচ্ছে নদীর তলদেশ। এছাড়া এসব বাঁধে ঘুনিজাল পেতে রাখার কারণে বড় থেকে ছোট মাছ এমনকি মাছের ছোট ছোট পোনা পর্যন্ত ধরা পড়ছে। সরেজমিনে দেখার জন্য দর্শনার পাইপঘাটের অদূরে মাথাভাঙ্গা নদীতে দেয়া বাঁধের কাছে গিয়ে কাউকে পাওয়া যায়নি। বাঁধের আশপাশে নদীর ধারে মাঠে কর্মরত কৃষকরা জানান, রামনগর গ্রামের ছালাম, পারকৃষ্ণপুরের অর্জুন হালদার ও তার সাথীরা এ স্থানে বাঁধ দিয়েছে। প্রতিদিন বিকেলে এখানে আসে এবং সারারাত মাছ ধরে সকালে মাছ নিয়ে চলে যায়। বাঁধ দিয়ে অবৈধভাবে মাছ শিকারের বিষয়টি চেপে রাখতে ও সেইসাথে বেশি দাম পেতে স্থানীয় বাজারে এসব মাছ বিক্রি না করে এলাকার বাইরে নিয়ে বিক্রি করে থাকে। এমনকি কেউ বাঁধের কাছে গেলেও তার কাছে মাছ বিক্রি করা হয় না বলেও রয়েছে অনেকের অভিযোগ। বাঁধ ছাড়াও নদীতে কারেন্ট জাল ও ঘুনি জাল দিয়ে মাছ ধরার কারণে বড় থেকে খুব ছোট মাছও ধরা পড়ছে। ফলে দিনদিন মাছশূন্য হয়ে পড়ছে নদী। নদীতে বাঁধ দিয়ে মাছ ধরা সরকারিভাবে নিষেধ হওয়া সত্ত্বেও স্থানীয় প্রভাবশালীদের মদদে শুরু হয়েছে মাছ ধরার হিড়িক। এ ব্যাপারে নদীপাড়ের অনেকেই বলেন, আগে আমরা এ নদীতে জাল, পলো, দোয়াড়ি, বিত্তি, খাদম, বড়শি ইত্যাদি দিয়ে নানারকম মাছ ধরতাম। কিন্তু অবৈধভাবে বাঁধ দিয়ে মাছ ধরার ফলে আমরা বর্তমানে মাছ ধরার সুযোগ পাইনে। তারা আরও বলেন, নদীতে বাঁধ দিয়ে যেভাবে পাইকারিহারে ছোটবড় মাছ ধরছে তাতে অচিরেই নদীর পানি মাছশূন্য হয়ে পড়বে। এ ব্যাপরে দামুড়হুদা উপজেলার অতিরিক্ত দায়িত্বপ্রাপ্ত মৎস্য কর্মকর্তা আয়ুব আলি নদীতে বাঁধ দিয়ে মাছ শিকারের সত্যতা স্বীকার করে বলেন, এসমস্ত বাঁধ অপসারণের জন্য মৎস্য শিকারীদের এক সপ্তাহ সময় বেঁধে দিয়ে ৩/৪দিন আগে নোটিশ দিয়েছি। এসময়ের মধ্যে বাঁধ অপসারণ না করলে আমরা তাদের বিরুদ্ধে আইনী পদক্ষেপ নেব।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: মাথাভাঙ্গায় অবৈধ বাঁধ দিয়ে মাছ শিকার নীরব দর্শকের ভূমিকায় প্রশাসন
আরও পড়ুন
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ