Inqilab Logo

শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

পলিথিনের ভয়াবহ দূষণ রোধে কঠোর পদক্ষেপ নিতে হবে

| প্রকাশের সময় : ২২ ডিসেম্বর, ২০২১, ১২:০২ এএম

পলিথিন ও প্লাস্টিক বর্জ্যরে ভয়াবহ দূষনের শিকার হয়ে আমাদের পরিবেশ, প্রাণ-প্রকৃতি ও জনস্বাস্থ্য ভয়াবহ হুমকির সম্মুখীন। জলবায়ু পরিবর্তনের বৈশ্বিক ইনিশিয়েটিভে বাংলাদেশের নাম উঠে আসছে। সেখানে জণবায়ু পরিবর্তনে বাংলাদেশের ঝুঁকির বিষয়গুলোর পাশাপাশি জ্বালানি ব্যবস্থাপনা, বায়ু, পানি ও পরিবেশ দূষণের মত বিষয়গুলো আলোচিত হচ্ছে। পলিথিন বর্জ্যের ক্ষতিকর দিকগুলো নানাভাবে আলোচিত হচ্ছে। ঢাকাসহ সারাদেশে পলিথিনের ব্যবহার কমিয়ে আনতে আইনের পরিবর্তনের পাশাপাশি বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় বেশকিছু উদ্যোগের কথা শোনা গেলেও বাস্তবে তার কোনো সুফল দেখা যায়নি। আইন থাকলেও আইনের সঠিক বাস্তবায়নের কার্যকর উদ্যোগ না থাকায় তা কোনো কাজে আসছে না। বাংলাদেশে প্লাস্টিক বর্জ্যরে ভয়াবহতা নিয়ে আন্তর্জাতিক মহলও উদ্বিগ্ন। বিশ্বব্যাংক পরিচালিত এক গবেষণা রিপোর্টে ২০২০ সালে বাংলাদেশে প্লাস্টিক পণ্যের ক্রমবর্ধমান ব্যবহার ও প্লাস্টিক বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় চরম ব্যর্থতার চিত্র উঠে এসেছে। সোমবার ঢাকার একটি হোটেলে বিশ্বব্যাংকের সহায়তায় পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয় আয়োজিত সেমিনারে ‘টুয়ার্ডস এ মাল্টিসেক্টারাল অ্যাকশন প্ল্যান ফর সাসটেইনেবল প্লাস্টিক ম্যানেজমেন্ট ইন বাংলাদেশ’ শীর্ষক একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়। বিশ্বব্যাংকের কান্ট্রি ডিরেক্টর তার বক্তব্যে বাংলাদেশে প্লাস্টিক পণ্যের ব্যবহার বৃদ্ধি ও প্লাস্টিক বর্জ্য অব্যবস্থাপনার তথ্য-উপাত্ত তুলে ধরেছেন। প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, ক্রমবর্ধমান ঝুঁকি ও প্রতিক্রিয়া সত্তে¡ও গত দেড় দশকে দেশে প্লাস্টিক পণ্যের উৎপাদন ও ব্যবহার বেড়েছে তিন গুণের বেশি। এ এক ভয়াবহ চিত্র, যা দেশের সামগ্রিক পরিবেশের জন্য হুমকি স্বরূপ।

প্লাস্টিক দূষণ রোধে জাতীয় মহাপরিকল্পনার অংশ হিসেবে ২০২৫ সালের মধ্যে ৫০ শতাংশ প্লাস্টিক পুন:ব্যবহারের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারিত থাকলেও ২০২০ সালে প্লাস্টিক রিসাইক্লিংয়ের পরিমান ছিল ৩ লাখ টনের মত, যা মোট ব্যবহারের প্রায় ২০ ভাগ। বিশ্বব্যাংকের রিপোর্ট অনুসারে, এ সময়ে উৎপাদিত ১৪ লাখ ৯ হাজার টন প্লাস্টিক পণ্যের অর্ধেকের বেশি ব্যবহৃত হয়েছিল পণ্যের মোড়ক ও প্যাকেজিং খাতে। বিশেষত পলিথিনের ভয়ংকর আগ্রাসন আমাদের সামগ্রিক পরিবেশ ও বাস্তু ব্যবস্থাপনাকে চরম ঝুঁকির মুখে ঠেলে দিচ্ছে। ঢাকা শহর ইতিমধ্যে বিশ্বের অন্যতম বসবাসের অযোগ্য শহরের তালিকায় স্থান করে নিয়েছে। পলিথিন ও প্লাস্টিক পণ্যের অপরিমিত ও অনিয়ন্ত্রিত ব্যবহার এর জন্য অনেকাংশে দায়ী। বুড়িগঙ্গাসহ ঢাকার চারপাশের নদীগুলোর তলদেশ কয়েক মিটার গভীর পলিথিনের আস্তরণে ঢেকে আছে। অনিয়ন্ত্রিত প্লাস্টিক ও শিল্পকারখানার রাসায়নিকে নদীর পানি দূষণ ছাড়াও মাটির গুরাগুল ও ভূগর্ভে পানি নিস্কাশনের স্বাভাবিক প্রক্রিয়া ব্যহত হওয়ায় পানির স্তর দ্রত নিচে নেমে যাচ্ছে। ঢাকা শহরের খাল ও নি¤œাঞ্চলেও কয়েক ফুট গভীর পলিথিনের স্তর জমে আছে। শহরের স্যুয়ারেজ লাইনে পলিথিন জমার কারণে সামান্য বৃষ্টিতেই রাস্তাগুলো পানিবদ্ধতার শিকার হচ্ছে। এ বছর ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের আওতাধীন ২২টি খাল থেকে ৭৯ হাজার টন পলিথিন বর্জ্য অপসারণের তথ্য জানা গেছে। অন্যদিকে, অপসারিত পলিথিন-প্লাস্টিক ও নাগরিক বর্জ্য ব্যবস্থাপনা, ল্যান্ডফিল ও ভাগাড়গুলোর ব্যবস্থাপনায়ও চরম ব্যর্থতা পরিলক্ষিত হচ্ছে।

পলিথিন পন্য উৎপাদন ও অবাধ ব্যবহার বন্ধে আইনের পরিবর্তনের পাশাপাশি এক সময় পলিথিনের বিরুদ্ধে মোবাইল কোর্টের অভিযান পরিচালনা করতেও দেখা গেছে। ঢাকার আশপাশে বৈধ-অবৈধ শত শত পলিথিন ও প্লাস্টিক পণ্য নির্মাণ কারখানায় উৎপাদন ও বিপণন অবাধে অব্যাহত রেখে প্লাষ্টিক পণ্যের ব্যবহার কমানো অসম্ভব। দেশে উৎপাদিত পরিবেশবান্ধব পাটের মোড়ক ব্যবহার বাধ্যতামূলক করার পাশাপাশি দেশীয় উদ্ভাবকদের সফল গবেষণায় পাটের সেলুলয়েড থেকে পচনশীল সোনালী ব্যাগ উদ্ভাবনের মত কৃতিত্ব অর্জিত হলেও গত এক দশকেও এসব বিষয়ের সম্ভাবনাকে কাজে লাগানোর কার্যকর উদ্যোগ নেয়া হয়নি। শুধু উদ্বেগ আর সভা-সেমিনার করে অবস্থার পরিবর্তন সম্ভব নয়। প্রয়োজন বাস্তবমুখী উদ্যোগ। পলিথিনসহ প্লাস্টিক পণ্যের বিকল্প হিসেবে পরিবেশবান্ধব মোড়ক ও পণ্যের ব্যবহার বৃদ্ধিতে বিনিয়োগ ও বিপণন ব্যবস্থাপনাকে উৎসাহিত করতে হবে। পলিথিন ও প্লাস্টিকের কাঁচামাল আমদানি ও উৎপাদনের যথার্থতা নিরূপন ও নিয়ন্ত্রণে পরিবেশ অধিদফতরসহ সংশ্লিষ্ট সকলকে আরো কঠোর হতে হবে। পলিথিন নিষিদ্ধ করে পাটের ব্যাগ ব্যবহার বাধ্যতামূলক করার পাশাপাশি আইনের যথাযথ প্রয়োগ ও মনিটরিং নিশ্চিত করতে হবে। পলিথিনের ব্যবহার কমিয়ে আনার সাথে সাথে এর পুর্নব্যবহার ও রিসাইক্লিংসহ সামগ্রিক বর্জ্য ব্যবস্থাপনাকে বিশ্বমানে উন্নীত করার কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে।

 

 



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: পলিথিন

১৪ আগস্ট, ২০২১

আরও
আরও পড়ুন