Inqilab Logo

শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ০৭ বৈশাখ ১৪৩১, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

সৃষ্টিশীল নির্মাণশৈলী আনতে পারে সুন্দর আগামী

বিলুপ্তির পথে মীরসরাইয়ের তাঁত শিল্প

প্রকাশের সময় : ২৭ অক্টোবর, ২০১৬, ১২:০০ এএম

আমিনুল হক, মীরসরাই (চট্টগ্রাম) থেকে

চট্টগ্রাম বিভাগের পার্বত্য জনপদ ও পর্যটন নগরী কক্সবাজার ছিল এক সময় তাঁত ও হস্তশিল্পের জন্য বিখ্যাত। কিন্তু দিনে দিনে এই তাঁত এর অগ্রযাত্রা থেকে পিছিয়ে পড়ছে যেন। পার্বত্য জনপদের খাগড়াছড়ি রাঙ্গামাটি জেলায় তাঁতের শৈল্পিক বুননের নানার কর্মকা- পিছিয়ে পড়লে ও দিনে দিনে জেগে উঠছে যেন মীরসরাই উপজেলার উপজাতীয় ও গ্রামীণ জনপস্পোটি পাতার হস্তশিল্প ও তাঁত শিল্প। নিজেদের মধ্যে স্বাবলম্বী হবার উদ্দীপনায় অনেক মীরসরাই উপজেলার করেরহাটের অনেক উপজাতী পাড়ায় এখন তাঁত বৃদ্ধি পাবার খবর সত্যিই আশান্বিত করছে শিল্প সত্তার সৃজনশীল অনুরাগী মানুষদের। উপজাতীয় পাড়াগুলোতে শিক্ষার আলো থেকে পিছিয়ে থাকা কিছু মানুষ এখন দিনে দিনে হাঁটছে আলোর পথে। নিজেরাই এখন তৈরি করতে চলেছে নিজেদের নিজেদের পরিধানের নানা বস্ত্র। মাত্র কয়েকটি কাঠের টুকরো দিয়েই অনন্য শৈল্পিকভাবে করে যায় ওদের শিল্পকর্ম। শৈল্পিক এসকল শিল্পকর্ম চলছে করেরহাটের পাহাড়ি জনপদ সাইবেনিখীল, ঘেড়ামারা, কয়লা, রামগড়, মীরসরাই তালবাড়িয়া ত্রিপুরা পাড়াসহ পাহাড়ি জনপদে। আবার উপজেলার মিঠানালা, দুর্গাপুর, হাইতকান্দি, ইছাখালী, কাটাছরা এলাকার অবসর সময়ের নারীদের মধ্যে পাটি বুনন ও পাটি পাতা দিয়ে বিভিন্ন উপকরণ তৈরির প্রবণতা বৃদ্ধি পাচ্ছে দিনে দিনে। যন্ত্রচালিত তাঁতের সঙ্গে টিকতে না পেরে বিলুপ্তির পথে হারিয়ে যেতে বসেছিল এই শিল্পটি। তবে যারা এই পেশাকে আঁকড়ে ধরে আছেন, তাদের যুদ্ধ করতে হচ্ছে উচ্চমূল্যের কাঁচামাল আর কমতির দিকে থাকা চাহিদার সঙ্গে। এসব কারণে অনেকেই ছেড়ে দিচ্ছেন পূর্ব পুরুষের রেখে যাওয়া শখের এই পেশাটি। তবে সময়ের প্রয়োজনে সহজসাধ্য এই পেশা এখন নানান শৈল্পিক উপকরণের সমন্বয়ে ধরা দিচ্ছে গ্রাম বাংলার ইতিহাস ঐতিহ্য সংরক্ষণের দাবিতে। উপজেলার প্রবীণ ব্যক্তিদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, শুধু উপজাতী পাড়া নয়, মীরসরাই উপজেলার ১৬টি ইউনিয়ন এবং দুই পৌরসভায় তৈরি হচ্ছে তাঁতের শাড়ি, লুঙ্গি, গামছা, টুপি, হাতব্যাগ, লেডিস পার্টস ও নানান রকম সুন্দর ওয়ালমেট। আবার রয়েছে মীরসরাই উপজেলার ঐতিহ্যম-িত বহুল প্রসিদ্ধ পাটিপাতার নানান উপকরণও। সাথে শীতল পাটি তো রয়েছেই। পাটের তৈরি শীতল পাটির হাতব্যাগ, শোপিচ, ঝুড়ি, ওয়ালমেটসহ নানান সামগ্রী দিন দিন জনপ্রিয় হয়ে উঠছে। একসময় মীরসরাই উপজেলার শীতলপাটির সুনাম ছিল দেশজুড়ে। এখানকার পাটি সরবরাহ হতো দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে ও দেশ-বিদেশে। করেরহাটের উপজাতি পাড়ার বৃদ্ধা চারুবালা বলে কিছু প্রতিকূলতার জন্য এগুতে পারছে না এই তাঁত ও কারুশিল্প। বিশেষ করে সুতা ও উপকরণগুলো সুদূর খাগড়াছড়ি থেকে আনতে হয়। আবার এখানে নেই কোন ক্রয়বিক্রয় কেন্দ্র ও। হাতের কাছে কাঁচামাল ক্রয় ও উৎপাদিত পণ্য ক্রয়বিক্রয় করার সুবিধা থাকলে আমাদের এই পাহাড়ে অনেক সুন্দর তাঁত শিল্প সম্ভব বলে জানালেন উপজাতী পাড়ার সকলেই। স্থানীয় করেরহাট ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান এনায়েত হোসেন নয়নের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমি চাইছি খুব শীঘ্রই আমার এলাকার তাঁতের পোশাক উৎপাদনকারীদের নিয়ে তাদের সুবিধা অসুবিধা নিয়ে একটি মত বিনিময় করবো। তিনি বলেন, আমাদের গৃহায়ন ও গণপূর্তমন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন এর উত্তরসূরী আইটি বিশেষজ্ঞ মাহবুবুর রহমান রুহেলও ইতোমধ্যে উপজাতীদের কল্যাণে বিভিন্ন উদ্যোগ নিবেন বলে জানিয়েছেন। আবার মীরসরাই উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা জসিম উদ্দিন বলেন, উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নে পাটি শিল্প ও পাটি শিল্পের বিভিন্ন পণ্য উৎপাদনে তিনি বিভিন্ন সামাজিক সংস্থাগুলোর উদ্যোগের আহ্বান জানাবেন। এছাড়া উদ্যোক্তাদের জন্য সহজ ঋণের ও সুপারিশ করার উদ্যোগ নেবেন বলে জানান।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: সৃষ্টিশীল নির্মাণশৈলী আনতে পারে সুন্দর আগামী
আরও পড়ুন
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ