Inqilab Logo

শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৬ বৈশাখ ১৪৩১, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

পুরোনো রূপে থাই স্বর্গ ফি ফি দ্বীপপুঞ্জ

অনলাইন ডেস্ক | প্রকাশের সময় : ২৮ ডিসেম্বর, ২০২১, ১০:২৩ এএম

থাইল্যান্ডের ফি ফি দ্বীপপুঞ্জের মায়া উপদ্বীপ যেন একখণ্ড স্বর্গ৷ পর্যটকদের চাপে গত কয়েক বছরের পরিবেশগত বিপর্যয় কাটিয়ে দ্বীপটি ফিরেছে তার পুরোনো রূপে৷

মানবজাতির জন্য করোনা মহামারি ভয়াবহ বিপদ বয়ে আনলেও প্রকৃতির জন্য হয়ে এসেছে আশির্বাদ৷ ধরা যাক থাইল্যান্ডের ফি ফি লেহ দ্বীপপুঞ্জের কথা৷ লকডাউনের কারণে আন্তর্জাতিক পর্যটকের চাপ কমে যাওয়ায় স্বর্গীয় দ্বীপটি ফিরে পেয়েছে তার হারানো সৌন্দর্য৷

সাম্প্রতিক বছরগুলোতে এখানকার মায়া উপদ্বীপটি পর্যটকদের কাছে ভীষণ জনপ্রিয় হয়ে ওঠে৷ লিওনার্দো ডি ক্যাপ্রিওর ‘দ্য বিচ’ চলচ্চিত্রটি এখানেই ধারণ করা হয়েছিল৷ পর্যটকদের চাপে এক পর্যায়ে এর জীববৈচিত্র্য হুমকিতে পড়ে৷ তাই ২০১৮ সালেই কর্তৃপক্ষ এই স্থানটিকে বছরের চার মাস পর্যটকশূন্য রাখার নির্দেশ দেয়৷

ফি ফি দ্বীপপুঞ্জে মহামারির আগে বছরে ২০ লাখ পর্যটক পা রাখতেন৷ তাদের প্রধান গন্তব্য ছিল মায়া৷ সুউচ্চ সবুজ পর্বত আর ফিরোজা জলে ঘেরা এর নজরকাড়া সৌন্দর্য ২০০০ সালে নির্মিত ডি ক্যাপ্রিওর মুভিতে উঠে আসে৷ এরপর দৈনিক ছয় হাজারের বেশি পর্যটক ২৫০ মিটার দীর্ঘ এই সৈকতে পা রাখতে শুরু করেন৷

পর্যটকের স্রোত মায়ার মায়াবি সৌন্দর্যের জন্য ডেকে আনে বিপদ৷ থাইল্যান্ডের কাসেটস্টার্ট ইউনিভার্সিটির গবেষক থন থামরংনাওয়াসাওত বার্তা সংস্থা এএফপিকে জানিয়েছেন, মাত্র দশ বছরে দ্বীপটির প্রবাল প্রাচীরের ৬০ শতাংশ ক্ষয়ে গেছে৷ তার প্রস্তাবে সরকার পরবর্তীতে একটি নির্দিষ্ট সময়ের জন্য দ্বীপটিতে পর্যটকদের আনাগোনা বন্ধের সিদ্ধান্ত নেয়৷

এক বছরের মাথায় মহামারি আঘাত হানে বিশ্বে৷ দ্বীপটিতে পর্যটকদের যাওয়া আপনা আপনি বন্ধ হয়ে যায়৷ থাই সরকারের কড়া ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞায় এক পর্যায়ে সেখানে মানুষের উপস্থিতি প্রায় শূন্যে নেমে আসে৷ এই সুযোগে বিজ্ঞানীরা সেখানকার জীববৈচিত্র্য আগের অবস্থায় আনতে কাজ শুরু করেন৷ জীববিজ্ঞানী কুলাউইট লিমচুলারাত ও তার দল সমুদ্রে ব্যাম্বু শার্ক বা বাদামিদাগি বাঁশ হাঙ্গরের বাচ্চা ছাড়েন৷

আশার কথা এই সময়ের মধ্যে মায়াতে প্রতিস্থাপন করা প্রবালের ৪০ শতাংশই টিকে গেছে৷ সুখবর আছে অন্য সামুদ্রিক প্রাণীদের ক্ষেত্রেও৷ ব্ল্যাকটিপ বা কালোনাক হাঙ্গর, হকসবিল টার্টল বা বাজঠোঁটি সামুদ্রিক কাছিম, হোয়েল শার্ক বা তিমি হাঙ্গরের মতো বিপন্ন প্রাণীরা আবারো মায়ার পানিতে বিচরণ শুরু করেছে৷

সম্প্রতি থাই সরকার দ্বীপটিকে পর্যটকদের জন্য উন্মুক্ত করে দিয়েছে৷ এখন মূলত থাই পর্যটকরা আসলেও ধীরে ধীরে বিদেশিদের আনাগোনাও শুরু হয়েছে৷ দ্বীপটির পরিবেশ নিয়ে তাদের কেউ কেউ সচেতন৷ প্যারিস থেকে আসা ফ্রাঙ্ক নামের একজন পর্যটক এএফপিকে বলেন, ‘‘আমরা কেবল এখানকার ফিরোজা জলে ডুব দিতে আসিনি৷ আমরা সহযোগিতাও করতে চাই৷ দ্বীপের পরিবেশ এমন শান্ত থাকাটাই চমৎকার হবে৷’’

তবে কর্তৃপক্ষ আগের মতো পর্যটকদের যথেচ্ছ স্বাধীনতা দিচ্ছে না এবার৷ বেলাভূমিতে বিচরণ, বা সমুদ্রে স্নান করতে পারবেন তারা, কিন্তু কঠোর নিয়ম-কানুনও মানতে হবে তাদের৷ দৈনিক মাত্র ৩০০ পর্যটক সেখানে ভ্রমণের সুযোগ পাবেন৷ নৌকা নিয়ে এখন তারা যত্রতত্র ঘুরে বেড়াতে পারবেন না৷ থাইল্যান্ডের আশা এই যাত্রায় তারা ফি ফি দ্বীপপুঞ্জকে টেকসই পর্যটনের রোল মডেলে পরিণত করবেন৷ সূত্র: ডয়চে ভেলে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: থাইল্যান্ড


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ