Inqilab Logo

শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৬ বৈশাখ ১৪৩১, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

আল্লাহ পাকের অফুরন্ত রহমত-২

এ. কে. এম. ফজলুর রহমান মুন্শী | প্রকাশের সময় : ৩০ ডিসেম্বর, ২০২১, ১২:০০ এএম

মহান আল্লাহপাক সৃষ্টিকর্তা ও পরম কৌশুলী। সৃষ্টি জগতের সর্বত্রই তাঁর প্রজ্ঞা ও কৌশলের ছাপ পরিদৃষ্ট হয়। উপরস্থ আরশে আজীম হতে শুরু করে তাহতাছ ছারা অর্থাৎ ভূগর্ভের নিম্নতম স্তর পর্যন্ত তাঁর অনন্ত ও অবিনশ্বর সৃষ্টি কৌশল পরিব্যাপ্ত রয়েছে। আর প্রতিটি সৃষ্টির মাঝেই তাঁর দয়া ও করুণার জোয়ারধারা সমভাবে প্রবাহিত। তিনিই আল্লাহ, সর্বময় ক্ষমতার অধিকারী। তিনি নিজেকে খালেক অর্থাৎ সৃষ্টিকর্তা গুণে বিভূষিত করেছেন। আল কুরআনের ৮টি স্থানে মহান রাব্বুল আলামীন স্বীয় সৃষ্টিকর্তা সুলভ গুণের কথা বিবৃত করেছেন। যথা : ইরশাদ হয়েছে : (ক) তিনিই তোমাদের আল্লাহ, তোমাদের প্রতিপালক, তিনি ছাড়া কোনো উপাস্য নেই, তিনি সকল বস্তুর স্রষ্টা, তোমরা একমাত্র তাঁরই এবাদত করো। (সূরা আনয়াম : ১০২)। (খ) বলে দিন, আল্লাহই সকল বস্তুর সৃষ্টিকর্তা, তিনি একক ও প্রতিশোধ গ্রহণকারী (সূরা রায়াদ : ১৬)।

(গ) আর যখন তোমার প্রতিপালক ফিরিশতাদের বললেন : অবশ্যই আমি শুকনো, ঠনঠনে মৃত্তিকা হতে মানুষ সৃষ্টি করব। (সূরা হিজর : ২৮)। (ঘ) তবে কি আল্লাহ ছাড়া কোনো সৃষ্টিকর্তা আছেন, যিনি তোমাদের আকাশ ও জমিনে রিজিক প্রদান করেন? (সূরা ফাতির : ৩)। (ঙ) যখন তোমার প্রতিপালক ফিরিশতাদের বললেন : আমি মাটি দ্বারা মানুষ সৃষ্টি করবই। (সূরা সোয়াদ : ৭১)।

(চ) আল্লাহই সকল বস্তুর সৃষ্টিকর্তা এবং তিনিই সকল বস্তুর অভিভাবক। (সূরা যুমার : ৬২)। (ছ) তিনিই তোমাদের আল্লাহ্ তোমাদের প্রতিপালক, সকল বস্তুর সৃষ্টিকর্তা, তিনি ছাড়া কোনো উপাস্য নেই। (সূরা মুমিন : ৬২)। (জ) তিনিই আল্লাহ, সৃষ্টিকর্তা, নবউদ্ভাবনকারী, আকৃতি দানকারী তাঁর জন্যই সুন্দর নামসমূহ নিবেদিত। (সূরা হাশর : ২৪)।

সুতরাং এই আয়াতসমূহের অর্থ ও মর্মের প্রতি লক্ষ করলে সহজেই অনুধাবন করা যায় যে, সৃষ্টিকুলের সব কিছুতেই আল্লাহ পাকের রহমত, দয়া ও করুণা বিরাজমান। আল কুরআনে চূড়ান্তভাবে এই ঘোষণাই প্রদান করা হয়েছে। যথা : ইরশাদ হয়েছে : (ক) যদি তারা আপনাকে মিথ্যা সাব্যস্ত করে, তাহলে বলে দিন, তোমাদের প্রতিপালক সুবিশাল রহমতের অধিকারী। (সূরা আনয়াম : ১৪৭)।

(খ) হে আমাদের প্রতিপালক! প্রতিটি বস্তুতেই আপনি আপনার প্রজ্ঞা ও রহমতকে সম্প্রসারিত করেছেন। (সূরা মুমিন : ৪)। (গ) আমার বিধান মোতাবেক আমি যাকে ইচ্ছা শাস্তি দেবো এবং আমার রহমত সকল বস্তুতে সম্প্রসারিত আছে। (সূরা আরাফ : ১৫৬)।

আর এ কথাও স্মরণ রাখা দরকার যে, ভূমন্ডলস্থ বস্তু নিচয়ের জন্য যে সকল উপাদান জরুরি তার সব কিছুই আল্লাহ পাকের রহমত ও করুণার ফল মাত্র। আল কুরআনে অত্যন্ত মর্মস্পর্শী ভাষায় এই বিশেষত্বটি তুলে ধরা হয়েছে। যথা : ইরশাদ হয়েছে : (ক) তিনিই সেই সত্তা যিনি আমার সম্মুখে বাতাস প্রবাহিত করেন স্বীয় রহমত ও শুভ সংবাদ হিসেবে। (সূরা আরাফ : ৫৭)।

(খ) আল্লাহর রহমতের নমুনা এই যে, তিনি তোমাদের জন্য দিন এবং রাতের ব্যবস্থা করেছেন, যাতে তোমরা এতে জীবনযাপন করতে পার এবং তাঁর অনুগ্রহ তালাশ করতে পার। (সূরা কাসাস : ৭৩) (গ) তিনিই আল্লাহ্, যিনি মানুষের ওপর নিরাশ হওয়ার পর বৃষ্টি বর্ষণ করেন এবং তাঁর রহমতকে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে দেন। (সূরা শুরা : ২৮)।

আল্লাহ তাবারাকা ওয়া তায়ালা মেহেরবানি করে দু’টি বস্তু নিজের জন্য অপরিহার্য করে নিয়েছেন। অর্থাৎ তিনি সৃষ্টিকুলের প্রতি রহমত বর্ষণ করেই থাকেন। আল কুরআনে এতদপ্রসঙ্গে সুস্পষ্ট দিকনির্দেশনা প্রদান করা হয়েছে। যথা : ইরশাদ হয়েছে : (ক) আল্লাহপাক নিজের ওপর রহমত বর্ষণ করাকে অপরিহার্য করে নিয়েছেন। অবশ্যই তিনি কিয়ামতের দিন তোমাদের একত্র করবেন, যাতে কোনোই সন্দেহ নেই। (সূরা আনয়াম : ১২)।

(খ) অবশ্যই আল্লাহ স্বীয় রহমতের সাথে যাকে ইচ্ছা সংশ্লিষ্ট করেন, নিশ্চয়ই আল্লাহ সুবৃহৎ অনুগ্রহকারী। (সূরা বাকারাহ : ১০৫)। (গ) বলে দিন, হে ওই সকল বান্দাহ! যারা নিজেদের ওপর জুলুম করেছ, তোমরা আল্লাহর রহমত হতে নিরাশ হয়ো না। (সূরা যুমার : ৫৩)। এ জন্য প্রত্যেক ঈমানদারের উচিত কায়মনে আল্লাহ পাকের দরবারে তাঁর করুণা ও রহমত লাভের আশায় দোয়া ও মোনাজাত করা। এতেই নিহিত রয়েছে উত্তম সফলতা।



 

Show all comments
  • Mostafa Kamal ৩০ ডিসেম্বর, ২০২১, ৬:৫০ এএম says : 0
    আল্লাহতায়ালার ক্ষমাশীলতার সীমা-পরিসীমা নেই। পবিত্র কোরআন ও হাদিসে আল্লাহর ক্ষমার মহাসমুদ্রের কথা বার বার উল্লেখিত হয়েছে।
    Total Reply(0) Reply
  • মোঃ কামরুজ্জামান ৩০ ডিসেম্বর, ২০২১, ৬:৫১ এএম says : 0
    মহিম্বান্বিত সত্তা! আমাদের সর্বদা অপরাধ সত্ত্বেও আমাদের দান করেন, ক্ষমা করেন। বান্দা যতক্ষণ পর্যন্ত অপরাধ করতে থাকে এবং অনুতপ্ত হয়ে ক্ষমা ভিক্ষা করে, আল্লাহ ততক্ষণ পর্যন্ত ক্ষমা করতে থাকেন।
    Total Reply(0) Reply
  • মামুন আহাম্মাদ ৩০ ডিসেম্বর, ২০২১, ৬:৫১ এএম says : 0
    ক্ষমা করার ক্ষমতা ও এখতিয়ার একমাত্র আল্লাহরই রয়েছে। কারণ তিনিই একমাত্র মালিক সারা জাহানের। অতএব তারই (মালিকের) রয়েছে ক্ষমার মহান গুণ ও ক্ষমা করার পূর্ণ এখতিয়ার ও ক্ষমতা।
    Total Reply(0) Reply
  • সাইমুম চট্টগ্রাম ৩০ ডিসেম্বর, ২০২১, ৬:৫১ এএম says : 0
    আল্লাহতায়ার অনুগত বান্দার লক্ষণ হলো, তারা কখনোই গোনাহে অটল হয়ে বসে থাকে না। ভুল করলেও ভুল বা অপরাধের স্বীকারোক্তি দিয়ে ক্ষমা চায়। অপরাধ করলে লজ্জিত হয়। আল্লাহ এসব অনুতপ্ত, লজ্জিত, তওবাকারীকে ভালোবাসেন, ক্ষমা করেন।
    Total Reply(0) Reply
  • কায়কোবাদ মিলন ৩০ ডিসেম্বর, ২০২১, ৬:৫২ এএম says : 0
    জীবনের সর্বক্ষণ আল্লাহতায়ালার অসীম রহমত ও ক্ষমার ছায়াতলে আশ্রয় গ্রহণ করাই হবে মুসলিমের প্রধান কর্তব্য।
    Total Reply(0) Reply
  • মিফতাহুল জান্নাত ৩০ ডিসেম্বর, ২০২১, ৬:৫২ এএম says : 0
    জীবনের সব সময় তওবা করার মাধ্যমে পরিশুদ্ধি লাভ করারই মুমিন-মুসলমানের লক্ষ্য হওয়া উচিত। এবং কখনোও নিরাশ না হয়ে সর্বাবস্থায় আল্লাহতায়ালার রহমত অন্বেষণ করাই প্রত্যেক মুসলমান নর-নারীর একান্ত কর্তব্য।
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: ইসলাম

৩ মার্চ, ২০২৩
২ মার্চ, ২০২৩
১ মার্চ, ২০২৩
২৮ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩
২৬ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩

আরও
আরও পড়ুন