Inqilab Logo

শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১, ১৭ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

সরকার ও আওয়ামী লীগ নির্ভার

প্রকাশের সময় : ১৩ ফেব্রুয়ারি, ২০১৬, ১২:০০ এএম | আপডেট : ১১:৩৬ পিএম, ১২ ফেব্রুয়ারি, ২০১৬

তারেক সালমান : বিরোধীদলের অংশগ্রহণ ছাড়া ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির নির্বাচনের পরপর বেশ অস্বস্তিতে ছিল ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। কঠোর দমননীতির ফলে রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বীরা রাজপথে পাত্তা না পেলেও সরকার আন্তর্জাতিক মহলের চাপে ছিল। কিন্তু সময়ের প্রেক্ষাপটে একের পর এক কূটনৈতিক সাফল্যে প্রায় সব চাপ সামলে উঠেছে সরকার। বিশেষ করে দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর সঙ্গে সম্পর্ক একটি বিশেষ উচ্চতায় নিয়ে যেতে পেরে তারা এখন অনেকটাই ফুরফুরে। সর্বশেষ ভারতের সঙ্গে স্থল সীমান্ত চুক্তি এবং চীন, জাপানের সঙ্গে বড় বড় কয়েকটি বাণিজ্য চুক্তি ও সমঝোতা হওয়ায় সরকারের স্বস্তি নতুন মাত্রায় পৌঁছেছে। বলতে গেলে সকল ধরনের চাপ সামলে বর্তমানে অনেকটাই নির্ভার ক্ষমতাসীনরা। দলের নেতাকর্মীরাও রয়েছেন আগের চেয়ে ফুরফুরে মেজাজে।
নির্বাচনকে বিতর্কিত, ভোটারবিহীন ও জোর-জবরদস্তির অভিযোগ করলেও কার্যত এর বিরুদ্ধে কার্যকর কোনো আন্দোলন গড়ে তুলতে প্রচ- ব্যর্থ হয়েছে বিরোধীদল। গেল বছর সরকারের বছরপূর্তিকে কেন্দ্র করে বিরোধী দল নতুন করে আন্দোলনের পালে গতি সঞ্চারের চেষ্টা চালালেও প্রশাসন বিশেষ করে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর কঠোরতায় তা ভেস্তে যায়। এছাড়া বিরোধীদলের আন্দোলনকে কেন্দ্র করে বিভিন্ন তৎপরতা সরকার ও আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর পাশাপাশি দেশের গণমাধ্যমও নেতিবাচক হিসেবে গুরুত্বের সঙ্গে তুলে ধরে। ফলে এক পর্যায়ে বিরোধীদলই নিজেদের আন্দোলন নিয়ে উল্টো চাপের মুখে পড়ে। অন্যদিকে নির্বাচনকে কেন্দ্র করে থাকা চাপ থেকে ধীরে ধীরে থেকে বের হয়ে আসে সরকার। এরপর থেকে আর বিরোধীদল মাঠে নামতে পারেনি। আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীসহ প্রশাসন রয়েছে সরকারের একচ্ছত্র নিয়ন্ত্রণে। দেশের বিনিয়োগ পরিস্থিতিও আগের তুলনায় আশাব্যঞ্জক। অর্থনীতির সূচকেও ঘটেছে ব্যাপক অগ্রগতি। আগের তুলনায় বিদেশী বিশেষ করে প্রভাবশালী দাতা দেশগুলোর কূটনৈতিক চাপও কমে এসেছে। মোট কথা, আওয়ামী লীগ সভানেত্রী, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার চৌকস নেতৃতে সব কিছুই চলছে তার ইচ্ছা ও নিয়ন্ত্রণের মধ্যে।
তবে, সরকার সব চাপ সামলে নির্ভার আছে এ দাবির সঙ্গে একমত পোষণ করেন না ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞানের শিক্ষক অধ্যাপক গোবিন্দ চন্দ্র চক্রবর্তী। তিনি ইনকিলাবকে বলেন, সরকার নির্ভার নেই। নেই ফুরফুরে মেজাজেও। এটা সবার ভুল ধারণা। সরকার অবশ্যই চাপের মুখে আছে।
বিশিষ্ট এ রাষ্ট্রবিজ্ঞানী বলেন, আমরা ধরেই নিলাম দেশের প্রধান বিরোধীদল বিএনপি এখন আন্দোলনে নেই। বিগত সময়ের বিএনপির যে আন্দোলন তা সরকার নেতিবাচক হিসেবে জনগণ ও বিশ্বের কাছে তুলে ধরতে পেরেছে। জামায়াতে ইসলামীও আছে চাপের মুখে। তাদের ’৭১ ভূমিকা নিয়ে সরকার একটি জনমত গড়ে তুলতে পেরেছে। সংসদে যে বিরোধীদল রয়েছে- তারাও অনেকটা সরকারবান্ধব। সেই দিক দিয়ে বলা যায়, সরকার খোশ মেজাজেই আছে। কিন্তু আদৌ কি তাই? তা নয়। সরকার অবশ্যই মনস্তাত্ত্বিক চাপের মুখে আছে। তা হচ্ছে- দেশে পুরোপুরি গণতন্ত্রের চর্চা নেই। একটি রাজনৈতিক শূন্যতা আমাদেরকে মোকাবেলা করতে হচ্ছে। যা শুধু ক্ষমতাসীনদের জন্যই নয়, কারও জন্য সুখকর নয়।
রাষ্ট্রবিজ্ঞানী গোবিন্দ চন্দ্র চক্রবর্তী আরও বলেন, আপনি যেসব বললেন যে, সরকার কূটনৈতিক চাপ মোকাবেলা করতে সফল হয়েছে। ভারতের সঙ্গে দীর্ঘদিনের সীমান্ত চুক্তির সফল সমাপ্তি ঘটাতে পেরেছে। বিদেশী বিনিয়োগ বা অর্থনীতির পরিস্থিতিও সন্তোষজনক। চীন, জাপান, যুক্তরাষ্ট্র ও অন্যান্য দেশের সঙ্গে বাণিজ্য ও বিনিয়োগেও সফল হচ্ছে সরকার। দেশে মাথা পিছু আয় কিছুটা বেড়ে ১৩১৬ ডলারে উন্নীত হয়েছে। বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ বেড়েছে। সব ঠিক আছে। তবে এসবই হচ্ছে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বের দৃঢ়তা ও সফলতা। সব কিছুর জন্যই তিনি সাধুবাদ পাওয়া যোগ্য। সম্প্রতি গার্ডিয়ান পত্রিকা যেভাবে বলেছে, বাংলাদেশে ধীরে ধীরে কর্তৃত্ববাদের প্রসার ঘটছে। আমি তা মনে করি না। আমরা এখনও কর্তৃত্ববাদের মধ্যে নেই। তবে গণতন্ত্র ঘাটতির যে চাপ; সরকার তার মধ্যে রয়েছে।
তিনি বলেন, সরকার এখন জনগণ থেকে, সংগঠন থেকে দূরে সরে পুরোপুরিভাবে প্রশাসন ও পুলিশ নির্ভর হয়ে পড়েছে। এটা সরকারের জন্য অস্বস্তি। সম্প্রতি আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের সঙ্গেই কি সরকার গণতান্ত্রিক আচরণ করেছে, প্রশ্ন রেখে তিনি বলেন, একটি গণতান্ত্রিক সরকারের কাছে তা কোনোভাবেই কাম্য হতে পারে না। অনেকের কাছে মনে হতে পারে, চারদিকে উন্নয়ন করছে সরকার। হ্যাঁ তা দৃশ্যমানও হচ্ছে। তবে ঢাকা শহরে ১৫ মিনিটের রাস্তা পৌঁছাতে তিন ঘণ্টা লাগছে। এটা কি সরকারকে স্বস্তিতে থাকতে দিচ্ছে। দিচ্ছে না। তাই আমি মনে করি, সরকারকে এ গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলো উপলব্ধি করতে হবে। যা শুধু সরকার নয়, সকলের জন্যই সুখকর হবে। আমাদের দেশ ও গণতন্ত্রের জন্যও মঙ্গলজনক হবে।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, আন্তর্জাতিক মহল, বিশেষ করে দাতারাষ্ট্রগুলোর সঙ্গে বাংলাদেশের সুসম্পর্ক আগেও ছিল। তবে দীর্ঘ চার দশক পর প্রতিবেশী রাষ্ট্র ভারতের সঙ্গে স্থল সীমান্ত চুক্তি এবং চীনের সঙ্গে বেশ কয়েকটি চুক্তি ও সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরিত হওয়ায় সম্পর্কে নতুন মাত্রা এসেছে। দীর্ঘ ৬৮ বছরের ক্ষতি মুছে ছিটমহল বিনিময়ের পর ভারতের সঙ্গে আওয়ামী সরকারের সম্পর্কের নেতিবাচক সব বাধাই বলতে গেলে এখন অপসারিত। যদিও পানি সমস্যা সমাধানে বাংলাদেশের প্রবল দাবি এখনও দেশটি উপেক্ষা করে চলেছে। তবে সরকার এখনও আশাবাদী বাংলাদেশের ন্যায্য পাওনা মিটাতে দেশটি যত দ্রুত তিস্তা চুক্তিতে ইতিবাচক সাড়া দেবে। সেক্ষেত্রে দেশটির সঙ্গে রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক ক্ষেত্রেও উন্মোচন হবে নতুন অধ্যায়ের।
এ ব্যাপারে আওয়ামী লীগের সভাপতিম-লীর সদস্য ও স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম বলেন, আওয়ামী লীগ সব সময়ই আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সঙ্গে সুসম্পর্ক বজায় রেখেছে। ক্ষমতায় থাকাকালে বঙ্গবন্ধু এটা করেছিলেন, বর্তমানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও করছেন। স্থল সীমান্ত বিনিময়ের পাশাপাশি চীনের সঙ্গে চুক্তি এবং সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরের বিষয়টি শেখ হাসিনার দৃঢ় নেতৃত্বের সফলতা।
নাসিম বলেন, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের হাতে চুক্তি সম্পাদন আর তার কন্যা শেখ হাসিনার হাতে বাস্তবায়ন এ ধরনের ঐতিহাসিক সীমান্ত চুক্তি ইতিহাসে বিরল। শেখ হাসিনার সফল নেতৃত্বের কারণেই কয়েক দশক ধরে ঝুলে থাকা ওই চুক্তি সম্প্রতি বাস্তবায়ন সম্ভব হয়েছে। সময়ের ব্যবধানে তিস্তা চুক্তিও হবে বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি।
২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত একতরফা নির্বাচন এবং নির্বাচন-পরবর্তী সহিংসতায় ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া দেখায় আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়। দেশি-বিদেশি মানবাধিকার সংগঠনগুলোও বাংলাদেশের গণতন্ত্র ও নির্বাচন প্রক্রিয়া নিয়ে নিন্দা ও হতাশা প্রকাশ করে। নির্বাচনে সব দলের অংশগ্রহণ না থাকায় মধ্যবর্তী নির্বাচনের তাগিদ দেয় যুক্তরাষ্ট্র, কানাডাসহ ইউরোপীয়ন ইউনিয়নের দেশগুলোসহ দাতা দেশগুলো। নির্বাচনে মানুষের আকাক্সক্ষার বিশ্বাসযোগ্য প্রতিফলন ঘটেনি উল্লেখ করে রাজনৈতিক সংকট নিরসনে দ্রুত সংলাপে বসার আহ্বানও জানায় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রসহ বিশ্বের বেশ কয়েকটি প্রভাবশালী দাতা দেশ। একই সঙ্গে বিগত নির্বাচনে মানুষের ভোটের অধিকার রক্ষা হয়নি দাবি করে হতাশা প্রকাশ করেন খোদ জাতিসংঘের মহাসচিব বান কি মুনও। একই সঙ্গে ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ), যুক্তরাজ্য, অস্ট্রেলিয়া, কানাডা, সুইডেন, ডেনমার্ক এবং হিউম্যান রাইটস ওয়াচসহ আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংগঠন ও ভোট পর্যবেক্ষক কমিটিগুলোও একই ধরনের মত প্রকাশ করতে থাকে। তারা বারবার সকলের অংশগ্রহণে একটি অবাদ ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের পথে হাঁটতে সরকারের প্রতি আহ্বান জানায়। এতে ক্ষমতায় থেকেও অনেকটাই চাপে পড়ে ক্ষমতাসীনরা। অস্বস্তি সৃষ্টি হয় দল এবং সরকারের ভেতরে-বাইরে।
কিন্তু সময়ের ব্যবধানে সম্পর্কের সেই অনাস্থার দেয়াল অনেকটাই সরিয়ে ফেলতে সামর্থ হয়েছে টানা দ্বিতীয় মেয়াদে ক্ষমতায় আসা শেখ হাসিনার সরকার। শুধু তা-ই নয়, কিছু কিছু ক্ষেত্রে অবস্থা এতটাই পরিবর্তন হয়েছে যে, দশম জাতীয় নির্বাচন নিয়ে তীব্র নিন্দা ও ক্ষোভ জানানো দেশগুলোও এখন সরকারের ঘনিষ্ঠ সহযোগী হিসেবে কাজ করতে সম্মত হচ্ছে।
এদিকে, সরকারী সংবাদ সংস্থা বাসস সূত্রে জানা যায়, জাতিসংঘ পানি বিষয়ক একটি উচ্চপর্যায়ের প্যানেল গঠন করতে যাচ্ছে। এই প্যানেলের সদস্য হওয়ার জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে প্রস্তাব দিয়েছেন জাতিসংঘের মহাসচিব বান কি মুন। শেখ হাসিনা ওই প্রস্তাব গ্রহণ করেছেন। প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব ইহসানুল করিম জানান, গত রোববার রাত আটটায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে টেলিফোন করেন বান কি মুন। শুভেচ্ছা বিনিময়ের পর তিনি জানান, জাতিসংঘ পানি-বিষয়ক একটি উচ্চপর্যায়ের প্যানেল গঠন করতে যাচ্ছে। তিনি এই প্যানেলের সদস্য হওয়ার জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে প্রস্তাব দেন। তিনি জাতিসংঘ মহাসচিবের প্রস্তাবে সম্মতি জানান।
বাংলাদেশের বিদ্যমান রাজনৈতিক অবস্থা সম্পর্কে আলাপকালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জাতিসংঘ মহাসচিবকে জানান, বাংলাদেশের পরিস্থিতি স্থিতিশীল এবং সব রাজনৈতিক দল স্থানীয় সরকার নির্বাচনে অংশ নিচ্ছে। শেখ হাসিনা উল্লেখ করেন, এর আগে অনুষ্ঠিত পৌর নির্বাচন সব রাজনৈতিক দলের অংশগ্রহণের মাধ্যমে অনুষ্ঠিত হয়েছে। দেশের উন্নয়ন কর্মকা- অব্যাহত রয়েছে। বান কি মুনের এ প্রস্তাবও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও সরকারের জন্য একটি উল্লেখযোগ্য সফলতা হিসেবেই দেখছে আওয়ামী লীগ।
আওয়ামী লীগ সূত্রে জানা যায়, বির্তকিত নির্বাচনের মাধ্যমে দ্বিতীয় মেয়াদে ক্ষমতায় আসার প্রায় অর্ধ বছর পর রাষ্ট্রীয় সফরে প্রথম জাপানে যান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সেই সময় বিভিন্ন প্রকল্প বাস্তবায়নে বাংলাদেশকে ৬০০ কোটি ডলার প্রদানের প্রতিশ্রুতি দেয় জাপান। এছাড়া বঙ্গোপসাগর ঘিরে শিল্পাঞ্চল গড়ে তোলার ব্যাপারে সম্মত হয় দুই দেশ। পরে পররাষ্ট্র দপ্তরের পক্ষ থেকে দাবি করা হয়, সরকারের প্রতি জাপানের দৃষ্টিভঙ্গি ও সমর্থন অতীতের যে কোনো সময়ের চেয়ে ভালো। ভবিষ্যতে তা আরও এগিয়ে যাবে।
শেখ হাসিনার ওই সফরের পরপরই গেল বছরের সেপ্টেম্বরে ঢাকা সফরে আসেন জাপানের প্রধানমন্ত্রী শিনজো আবে। জাপানের প্রধানমন্ত্রী আগামী বাংলাদেশকে ৬০০ কোটি ডলার সহায়তা দেয়ার প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত করেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিনিয়োগের লক্ষ্যে বাংলাদেশে শুধু জাপানের জন্য একটি পৃথক অর্থনৈতিক অঞ্চল (ইপিজেড) প্রতিষ্ঠার ঘোষণা দেন। পরে উভয় দেশের দেয়া যৌথ বিবৃতিতে দুই প্রধানমন্ত্রী বিদ্যুৎ, অর্থনৈতিক অঞ্চল উন্নয়ন এবং বেসরকারি খাতের উন্নয়নে সহযোগিতার আগ্রহ প্রকাশ করেন। জাপান সফরের পর মাত্র দুই সপ্তাহের ব্যবধানে ওই বছরের জুনে চীন সফরে যান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। স্বাক্ষর করেন ৫টি চুক্তি ও সমঝোতা স্মারক। ওই সফরে চীনের জন্য বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠা এবং বাংলাদেশে একটি কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র প্রতিষ্ঠায় চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়।
তবে ভারতের সঙ্গে সরকারের স্থল সীমান্ত চুক্তি কূটনৈতিক সাফল্য অর্জনে সবচেয়ে বেশি অবদান রাখে। দীর্ঘদিন ঝুলে থাকা বিল ভারতীয় পার্লামেন্টে পাস হয়। এতে প্রায় ৬০ হাজার ছিটমহলবাসীর আস্থা ও বিশ্বাস অর্জন করে সরকার। ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি বাংলাদেশ সফরে হাসিনা-মোদি স্মারক স্বাক্ষরের মাধ্যমে ছিটমহল বিনিময় এবং সীমান্ত প্রটোকল বাস্তবায়ন হয়।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের চেয়ারম্যান ড. নুরুল আমিন বেপারী ইনকিলাবকে এ ব্যাপারে বলেন, বিএনপি বেকায়দায় পড়েছে তাদের নেতৃত্বের ব্যর্থতার জন্য। ফলে আওয়ামী লীগ ও সরকার দিন দিন ক্ষমতাশালী হয়ে উঠছে। তারা সব প্রতিকূলতা কাটিয়ে নির্ভার অবস্থায় পৌঁছাতে পারছে।
তিনি বলেন, আমাদের দেশে একটি প্রবাদ আছে- শক্তের ভক্ত নরমের যম। এটা আন্তর্জাতিক মহলের ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য। উদাহরণ হিসেবে দেখুন, রাশিয়া যখন সব বাধা অবজ্ঞা করে সিরিয়াতে গিয়ে ঘাঁটি গেড়ে বসল, তখন আমেরিকা একেবারে চুপ করে গেল। বাংলাদেশ নিয়েও আন্তর্জাতিক মহল একই ভূমিকা নিয়েছে। তারা দেখছে, সরকার সব বাধা ডিঙ্গিয়ে সব কিছুতে নিজেদের একচ্ছত্র নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করতে পেরেছে, তখন তারা সরকারকে সহযোগিতা করতে এগিয়ে এসেছে।
বিশিষ্ট এ রাষ্ট্রবিজ্ঞানী বলেন, বিএনপি মাঘ মাসের ‘ওয়াজ’ চৈত্র মাসে করেছে। তাদের উচিত ছিল বিগত নির্বাচনের পর আন্দোলন করা। জনগণকে সেই আন্দোলনে সম্পৃক্ত করা। কিন্তু তারা তা না করে নির্বাচনের আগে সেই আন্দোলন করেছে। নির্বাচনের পর আন্দোলন বন্ধ করে দিয়েছে। আপনাদের মনে আছে হয়ত, নির্বাচনের আগে প্রধানমন্ত্রী বারবার বলেছেন, এ নির্বাচন থেকে সরে আসার কোনো উপায় নেই। এটা সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতার নির্বাচন। কেন তিনি এ কথা বলেছেন। হয়ত আন্তর্জাতিক চাপের কারণেই তিনি এ কথা বলেছেন। হয়ত আন্তর্জাতিক মহলের কাছেও তিনি প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন, নির্বাচনটি হয়ে গেলে একটি সুবিধাজনক সময়ে দ্রুত একটি নির্বাচন তিনি ব্যবস্থা করবেন। কিন্তু বিএনপি সেই নির্বাচন আদায় করতে পারেনি। যে আন্দোলন তারা করেছে, সেই আন্দোলনও জামায়াতের সম্পৃক্ততার কারণে সহিংসতার সিল পড়েছে। যা বিএনপিকে ব্যাকফুটে যেতে বাধ্য করেছে।
নুরুল আমিন বেপারী আরও বলেন, মূলত: বিএনপির ব্যর্থতার কারণেই সরকার ও আওয়ামী লীগ ধীরে ধীরে শক্তিশালী ভিতের ওপর দাঁড়াতে পেরেছে। আর শক্ত অবস্থানে থাকলে তো সরকার অবশ্যই নিজেকে নির্ভার মনে করবে। তাদের মেজাজ ফুরফুরে থাকবে।
এদিকে, দক্ষিণ এশিয়ার শক্তিশালী এই দেশগুলোর পাশাপাশি আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সঙ্গে সরকারের ধীরে ধীরে সম্পর্ক বৃদ্ধিতে আওয়ামী লীগ শিবিরে উচ্ছ্বাস বইছে। ৫ জানুয়ারির নির্বাচনের পর শেখ হাসিনা বাংলাদেশে যে স্থিতিশীলতা বজায় রেখেছেন তার জন্য জাতিসংঘ মহাসচিব বান কি মুনও প্রশংসা করেছেন। এ নিয়ে আগের চেয়ে নির্ভার ও ফুরফুরে মেজাজে রয়েছেন হাই কমান্ডসহ দলের সব পর্যায়ের নেতাকর্মীরা। এসব নিয়ে শীর্ষ থেকে শুরু করে তৃণমূল পর্যন্ত সকলেই সন্তুষ্ট। আর এ কারণে সরকারকে এসব নিয়ে আগের মতো একটা বেগ পেতে হচ্ছে না। দলীয় নেতারা বলছেন, সীমান্ত বিজয়সহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক ফোরামে প্রধানমন্ত্রীর কূটনৈতিক সাফল্যে শুধু আওয়ামী লীগ নয়, সারাদেশের মানুষ উল্লসিত।



 

Show all comments
  • Sahead ১৩ ফেব্রুয়ারি, ২০১৬, ১০:৫৬ এএম says : 0
    i agree with Nurul Amin Bapary
    Total Reply(0) Reply
  • জাবের ১৩ ফেব্রুয়ারি, ২০১৬, ১১:২১ এএম says : 0
    বিএনপি জনগণকে আন্দোলনে সম্পৃক্ত করতে ব্যর্থ হয়েছে।
    Total Reply(0) Reply
  • Syful Islam ১৩ ফেব্রুয়ারি, ২০১৬, ১২:৪৮ পিএম says : 0
    শক্ত অবস্থানে থাকলে তো সরকার অবশ্যই নিজেকে নির্ভার মনে করবে।
    Total Reply(0) Reply
  • Sabbir ১৩ ফেব্রুয়ারি, ২০১৬, ১২:৪৯ পিএম says : 0
    BNP ke dea ar andolon hobe bole mone hosse na.
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: সরকার ও আওয়ামী লীগ নির্ভার

১৩ ফেব্রুয়ারি, ২০১৬
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ