Inqilab Logo

শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

ইরাক যুদ্ধকে ‘অবৈধ’ বলা আইনি দলিল পুড়িয়ে ফেলতে বলেছিল টনি ব্লেয়ারের দফতর

অনলাইন ডেস্ক | প্রকাশের সময় : ৬ জানুয়ারি, ২০২২, ১১:২৬ এএম

ইরাকের বিরুদ্ধে যুদ্ধে যাওয়া আন্তর্জাতিক আইনের দৃষ্টিতে অবৈধ বলে তৎকালীন ব্রিটিশ প্রতিরক্ষামন্ত্রীর কাছে যে আইনি পরামর্শ পাঠানো হয়েছিল, সেটি তাকে পুড়িয়ে ফেলতে বলা হয়েছিল টনি ব্লেয়ারের দফতর থেকে। এই চাঞ্চল্যকর দাবিটি করেছেন সেসময়কার প্রধানমন্ত্রী টনি ব্লেয়ারের অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ সাবেক প্রতিরক্ষামন্ত্রী জেফ হুন তার লেখা আত্মজীবনীতে।

ইরাক যুদ্ধে যাওয়ার বিতর্কিত সিদ্ধান্তের কারণে স্যার টনি ব্লেয়ার যখন ব্রিটেনে আবারও নতুন করে তীব্র সমালোচনার মুখে আছেন, তখন নতুন করে এই তথ্য ফাঁস হলো। টনি ব্লেয়ারকে মাত্রই ব্রিটেনের রানি নাইটহুড উপাধি দিয়েছেন তার 'বীরত্বের' জন্য। কিন্তু সাথে সাথেই তা ব্রিটেনের রাজনীতিতে এবং জনগণের একটি অংশের মধ্যে তীব্র ক্ষোভ তৈরি করেছে।

স্যার টনির নাইটহুড প্রত্যাহারের জন্য এরই মধ্যে একটি আবেদনে সই করেছেন ছয় লাখের বেশি মানুষ। এই আবেদনের নিচে অনেকে মন্তব্য করেছেন, নাইটহুড উপাধি দেয়ার পরিবর্তে বরং তার বিচার হওয়া উচিৎ ইরাকের বিরুদ্ধে বেআইনি যুদ্ধে যাওয়ার জন্য। টনি ব্লেয়ার যখন প্রধানমন্ত্রী, তখন ১৯৯৯ সাল হতে ২০০৫ সাল পর্যন্ত তার প্রতিরক্ষামন্ত্রী ছিলেন জেফ হুন। তিনি ছিলেন টনি ব্লেয়ারের সবচেয়ে ঘনিষ্ঠ রাজনীতিকদের একজন। মজেফ হুনের স্মৃতিকথার নির্বাচিত অংশ আজ প্রকাশ করেছে ব্রিটেনের পত্রিকা দ্য ডেইলি মেইল। ব্রিটেনের আরও অনেক সংবাদপত্রে জেফ হুনের এই দাবি গুরুত্বের সঙ্গে ছাপা হয়েছে।

২০০৩ সালে যখন ইরাকের বিরুদ্ধে যুদ্ধে যাওয়ার জন্য যুক্তরাষ্ট্র এবং ব্রিটেন পুরোদমে প্রস্তুতি চালিয়ে যাচ্ছে, তখন ব্রিটেনে এর বিরুদ্ধে জোর প্রতিবাদ চলছিল। আন্তর্জাতিক আইনে এই যুদ্ধের বৈধতা নিয়ে যখন নানা বিতর্ক চলছে, তখন তৎকালীন ব্রিটিশ এটর্নি জেনারেল লর্ড গোল্ডস্মিথ এ নিয়ে প্রথম যে আইনি পরামর্শ পাঠান, তাতে বলা হয়েছিল এই যুদ্ধ 'অবৈধ' বলে গণ্য হতে পারে।

জেফ হুন তার লেখা স্মৃতিকথা 'সি হাউ দে রান' বইতে লিখেছেন, লর্ড গোল্ডস্মিথ যে আইনি পরামর্শ তৈরি করেছিলেন, ডাউনিং স্ট্রিট থেকে সেটির একটি কপি অত্যন্ত কঠোর গোপনীয়তায় তার কাছে পাঠানো হয়। তিনি লিখেছেন, "আমাকে বলা হয়েছিল, এটি শুধু আমার জন্য, এবং এর বিষয়বস্তু যেন আমি আর কারও সঙ্গে আলাপ না করি। এই আইনি পরামর্শের কপি আর কে পেয়েছেন আমার কোন ধারণা ছিল না।"

জেফ হুন বইতে আরও লিখেছেন, এরপর তার মন্ত্রণালয় থেকে একজন কর্মকর্তা তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী টনি ব্লেয়ারের মুখ্য সচিবের কাছে জানতে চান, এই দলিলটি নিয়ে এরপর তারা কী করবেন। তখন তাদেরকে স্পষ্ট ভাষায় জানিয়ে দেয়া হয়, তারা যেন এটি পুড়িয়ে ফেলেন।

জেফ হুন তার বইতে আরও লিখেছেন, তার একজন আমলা পিটার ওয়াটকিন্স ছিলেন খুবই নীতিবান অফিসার। তিনি যখন জানতে চাইলেন, এটা নিয়ে কী করা হবে, তখন তারা দুজনে মিলে সিদ্ধান্ত নেন, এই দলিলটি বরং প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের কোন নিরাপদ সিন্দুকে বাক্সবন্দী করে রাখা হোক। তিনি বলছেন, দলিলটি হয়তো এখনো সেখানেই আছে।

তৎকালীন ব্রিটিশ এটর্নি জেনারেল লর্ড গোল্ডস্মিথ অবশ্য পরে দাবি করেছিলেন, তিনি ইরাক যুদ্ধ 'অবৈধ' বলে কোন পরামর্শ দেননি। তার দফতর থেকে দ্বিতীয়বার যে পরামর্শটি পাঠানো হয়, তাতে ইরাকের বিরুদ্ধে যুদ্ধে যাওয়া 'বৈধ' হবে বলে অভিমত দেয়া হয়েছিল।

নতুন বছরে ব্রিটেনের রানি টনি ব্লেয়ারকে নাইটহুড উপাধি দেয়ার পর গত কয়েকদিন ধরে সাবেক এই প্রধানমন্ত্রীর বিরুদ্ধে তা আবার ক্ষোভ এবং বিতর্ক উস্কে দিয়েছে। এরই মধ্যে ছয় লাখের বেশি মানুষ একটি আবেদনে সই করেছেন তার এই উপাধি কেড়ে নেয়ার জন্য। আবেদনে বলা হয়েছে, ইরাক যুদ্ধে বহু মানুষের মৃত্যুর জন্য টনি ব্লেয়ার ব্যক্তিগতভাবে দায়ী। এতে তার বিরুদ্ধে 'যুদ্ধাপরাধের' অভিযোগ আনা হয়েছে।

টনি ব্লেয়ারের দল লেবার পার্টির নেতা স্যার কিয়ের স্টারমার অবশ্য বলছেন, স্যার টনি এই নাইটহুড পাওয়ার যোগ্য। অন্যদিকে কনজারভেটিভ পার্টির সরকারের একজন মন্ত্রীও বলেছেন, সাবেক প্রধানমন্ত্রী অনেক ভালো কাজও করেছেন, কাজেই তাকে এটা দেয়া যেতেই পারে। চেঞ্জ ডট অর্গ নামের ওয়েবসাইটে টনি ব্লেয়ারের নাইটহুড কেড়ে নেয়ার আবেদনটি করেন একজন অভিনেতা এবং উপস্থাপক অ্যাঙ্গাস স্কট।

৫৫ বছর বয়সী মিস্টার স্কট বিবিসিকে জানান, বছরের শেষ দিনটিতে যখন তিনি খবর দেখছিলেন, তখন জানলেন টনি ব্লেয়ারকে নাইটহুড দেয়া হচ্ছে। সাথে সাথে তিনি সিদ্ধান্ত নেন, এটি প্রত্যাহারের জন্য তিনি একটি আবেদন জানাবেন। "আমার মনে হয়েছে এটি একটি ভয়ংকর সিদ্ধান্ত। আমি তখনই কিছু একটা করার সিদ্ধান্ত নিলাম।

"অগণিত নিরপরাধ বেসামরিক মানুষের এবং সামরিক বাহিনী সদস্যের মৃত্যুর জন্য সে (টনি ব্লেয়ার) ব্যক্তিগতভাবে দায়ী। কেবল এই একটি মাত্র কারণে তাকে যুদ্ধাপরাধের জন্য জবাবদিহি করা উচিৎ," চেঞ্জ ডট অর্গে পেশ করা আবেদনে মিস্টার স্কট লিখেছেন। সূত্র: বিবিসি।



 

Show all comments
  • shirajumazumder ৬ জানুয়ারি, ২০২২, ১:৫৩ পিএম says : 0
    As of my sense that come to know wold ICC have been taken action against them those are involved with Ist war &2nd war. so it can be done almost everyone not particular one individual. Because of once a day we all have to meet with ALLAH(ALMIGHTY )at the End of final day .So to get safety from the Court of ALLAH (ALMIGHTY) honor the responsibility of real justice. Because of no identity is adopted their that is you are christian, you MUslim you HINDU, you Buddah you Yahoodi OR you other.If not found reality Final day Will have been coming soon
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: যুক্তরাজ্য


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ