Inqilab Logo

মঙ্গলবার, ১৬ এপ্রিল ২০২৪, ০৩ বৈশাখ ১৪৩১, ০৬ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশ যথাসময়ে কার্যকর করতে হবে

| প্রকাশের সময় : ৯ জানুয়ারি, ২০২২, ১২:০৫ এএম

গত ৭ জানুয়ারি সরকারের তৃতীয় মেয়াদে ক্ষমতাসীন হওয়ার তিন বছরপূর্তি ও চতুর্থ বছরে পদার্পণ উপলক্ষে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জাতির উদ্দেশ্যে ভাষণ দিয়েছেন। ২৮ মিনিটের ভাষণে বিগত দুই মেয়াদসহ চলমান মেয়াদে সরকারের নানা উন্নয়ন কর্মসূচি ও অর্থনৈতিক উন্নতির বিভিন্ন দিক তিনি তুলে ধরেন। পাশাপাশি দুর্নীতিও দুর্নীতিবাজদের বিরুদ্ধে সরকারের কঠোর অবস্থানের কথা পুর্নব্যক্ত করেন। দুর্নীতির বিরুদ্ধে সামাজিক আন্দোলনের ডাক দিয়ে তিনি বলেছেন, ‘আমরা দুর্নীতির বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান নিয়েছি। দুর্নীতিবাজ যে দলেরই হোক, আর যত শক্তিশালীই হোক, তাদের ছাড় দেয়া হচ্ছে না এবং হবে না। তবে দুর্নীতির এই ব্যধি দূর করতে সামাজিক সচেতনতা তৈরি করা প্রয়োজন।’ প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, বিগত ১৩ বছরে বাংলাদেশ অনেক দূর এগিয়েছে। দারিদ্র্য দূরীকরণ, স্বাস্থ্যব্যবস্থার উন্নয়ন, মাতৃমৃত্যু-শিশুমৃত্যুর হার হ্রাস, গড় আয়ু বৃদ্ধি, নারীর ক্ষমতায়ন, শিক্ষার হার বৃদ্ধিসহ নানা আর্থসামাজিক সূচকে বাংলাদেশ দক্ষিণ এশিয়ার নেতৃত্ব দিচ্ছে। প্রধানমন্ত্রী পদ্মাসেতু, কর্ণফুলি টানেল, মেট্রোরেল এ বছর চালু হওয়ার আশাবাদ ব্যক্ত করে বিভিন্ন মেগাপ্রকল্পের অগ্রগতির কথা বলেন।

দেশের অর্থনৈতিক উন্নতি হয়েছে। বার্ষিক বাজেট ও অর্থনীতির আকার বেড়েছে। মেগা প্রকল্পগুলোর কাজ দ্রুত গতিতে এগিয়ে চলেছে। এগুলো বাস্তবায়ন হলে অর্থনীতির গতি আরও বৃদ্ধি পাবে। কর্মসংস্থান বৃদ্ধিসহ মানুষের অর্থনৈতিক কার্যক্রম গতিশীল হবে। বলার অপেক্ষা রাখে না, উন্নয়নের সাথে দুর্নীতির গতিও বৃদ্ধি পায়। ইতোমধ্যে বিভিন্ন উন্নয়ন খাতে দুর্নীতির চিত্র পত্র-পত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছে। অর্থনীতিতে যোগাযোগ ব্যবস্থা ও অবকাঠামোগত উন্নয়ন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এজন্য সরকার শুরু থেকেই এসব খাতের উন্নয়নে বিভিন্ন মেগা প্রকল্প হাতে নিয়েছে। পদ্মাসেতু, কর্ণফুলি টানেল, মেট্রোরেল, রূপপুর পারমানবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র, পায়রা বন্দর, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান অর্থনৈতিক অঞ্চলসহ অন্যান্য মেগা প্রকল্পের কাজ শেষের পথে। প্রধামন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ২০২২ সাল হবে বাংলাদেশের জন্য অবকাঠামো উন্নয়নের মাইলফলকের বছর। আগামী জুনে বহুল কাক্সিক্ষত পদ্মাসেতু উদ্বোধন করা হবে। এ সেতু জিডিপিতে ১.২ শতাংশ অবদান রাখবে। এ বছরের শেষের দিকে কর্ণফুলি টানেল ও মেট্রোরেল উদ্বোধন হতে পারে। এসব প্রকল্প সরকারের সার্বোচ্চ অগ্রাধিকারভুক্ত। এছাড়া অন্যান্য প্রকল্পের কাজও দ্রুত এগিয়ে চলেছে। এসব প্রকল্প বাস্তবায়ন করতে গিয়ে সময় ও ব্যয় দুটোই বেড়েছে। বিশেষজ্ঞরা এর কারণ হিসেবে বলেছেন, প্রকল্প গ্রহণের আগে সুষ্ঠু পরিকল্পনা এবং নির্দিষ্ট সময়ে সমাপ্ত করার দূরদর্শিতার অভাবের কারণে যথাসময়ে যেমন প্রকল্প শেষ হয় না, তেমনি ব্যয়ও বেড়ে যায়। সম্প্রতি একটি ইংরেজি দৈনিকের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গুরুত্বপূর্ণ বেশকিছু প্রকল্পের কাজ যথাসময়ে শেষ করা যায়নি। এজন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ সময় ও ব্যয় বৃদ্ধির প্রস্তাবনা দিয়েছে। যথাযথ পরিকল্পনা ও অদক্ষতার কারণে এসব প্রকল্পের সময় ও ব্যয় বাড়ছে বলে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে। এতে জনগণের অর্থের অপচয় হচ্ছে এবং তারা উন্নয়ন থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। পর্যবেক্ষকরা মনে করছেন, যেকোনো প্রকল্প গ্রহণ ও বাস্তবায়নের সাথে দুর্নীতির বিষয়টি ওতোপ্রোতভাবে জড়িয়ে থাকে। একটি প্রকল্প মানে সংশ্লিষ্ট কিছু লোকের দুর্নীতির সুযোগ সৃষ্টি হওয়া। আমলাতান্ত্রিক জটিলতা ও নানা কারণ দেখিয়ে তারা প্রকল্পের সময় ও অর্থের বরাদ্দ বৃদ্ধি করে থাকে। পরিকল্পনা মন্ত্রী প্রায়ই বিভিন্ন প্রকল্পে দুর্নীতির বিষয়টি নিয়ে অকপটে কথা বলেন। সময় মতো বড় কিংবা ছোট যেকোনো প্রকল্প বাস্তবায়ন হলে, দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়ন যেমন দ্রুত হতো, তেমনি জনগণও তা থেকে উপকৃত হতো।
দেশের উন্নয়ন ত্বরান্নিত করতে উন্নয়ন প্রকল্পসহ অন্যান্য ক্ষেত্রে দুর্নীতি নির্মূলের বিকল্প নেই। এ কথা মনে রাখতে হবে, জনগণের অর্থেই বিভিন্ন প্রকল্প বাস্তবায়ন ও উন্নয়ন হয়ে থাকে। উন্নয়নের স্বার্থে তারা ধৈর্য্য এবং কষ্ট করে হলেও জীবনযাপন করে। তাদের অর্থের প্রকল্প যখন এক শ্রেণীর দুর্নীতিবাজের আয়ের উৎস হয়ে যায়, তখন কোনোভাবেই তা বরদাশত করা যায় না। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বরাবরই দুর্নীতির বিরুদ্ধে ‘জিরো টলারেন্স’ নীতি অবলম্বন করে চলেছেন। জাতির উদ্দেশ্যে দেয়া ভাষণেও দুর্নীতির বিরুদ্ধে তাঁর দৃঢ় অবস্থান পুনর্ব্যক্ত করেছেন। প্রধানমন্ত্রীর এ নীতি এবং নির্দেশ উন্নয়ন ও প্রকল্পসংশ্লিষ্ট দায়িত্বপ্রাপ্তদের পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে পালন করতে হবে। একশ্রেণীর দুর্নীতিবাজের কারণে তাঁর আন্তরিকতা ও দেশের মানুষের উন্নয়ন আকাক্সক্ষা বাধাগ্রস্থ হতে পারে না। প্রাতিষ্ঠানিক দুর্নীতিবাজদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিতে হবে। ছোট-বড় যেকোনো প্রকল্প সঠিক পরিকল্পনার মাধ্যমে যথাসময়ে বাস্তবায়ন করতে হবে। যেনতেনভাবে প্রকল্পের কাজ শেষ করা যাবে না। এক্ষেত্রে কাজের মান ও স্থায়িত্ব নিশ্চিত করতে হবে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন