Inqilab Logo

শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৬ বৈশাখ ১৪৩১, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

শীতের তীব্রতায় দুর্ভোগ

ইনকিলাব ডেস্ক | প্রকাশের সময় : ১৫ জানুয়ারি, ২০২২, ১২:০০ এএম

কয়েকদিন ধরে দেশের বিভিন্ন জায়গায় হচ্ছে গুঁড়িগুঁড়ি বৃষ্টি। এতে উত্তরাঞ্চলসহ সারা দেশেই বেড়েছে শীতের দাপট। বেশি দুর্ভোগে আছেন ছিন্নমূল মানুষ। আবহাওয়া অফিস বলছে, আরও কয়েকদিন থাকতে পারে বৃষ্টির আনাগোনা। কমতে পারে তাপমাত্রাও।

কুয়াশার চাদরে শীত এসেছে ঠিকই সঙ্গে কালো মেঘে অসময়ে বৃষ্টিও ঝরছে কোথাও কোথাও। পৌষের বিদায় বেলায় এমন বৃষ্টি জনজীবনে গেঁথে দিয়েছে ছন্দপতনের রূপরেখা। যদিও প্রকৃতির এমন পালা বদল সবার জন্য সুখের নাও হতে পারে। ঘন কুয়াশার ফাঁকগলে সূর্যের হাসিটা কিছু এলেও মেঘের খামখেয়ালিপনায় সব মিলিয়ে যাচ্ছে। কষ্টের সাথে বাড়ছে টিকে থাকার লড়াইটাও। আমাদের সংবাদদাতাদের পাঠানো প্রতিবেদন-
পঞ্চগড় : শীতপ্রবণ জেলা হিসেবে পরিচিত পঞ্চগড়ে তাপমাত্রা কিছুটা বেড়েছিল। তিনদিন না যেতে আবারও মৃদু শৈত্যপ্রবাহ শুরু হয়েছে। এতে শীতের তীব্রতাও বেড়েছে। ভোগান্তিতে পড়েছেন খেটে খাওয়া মানুষ। গতকাল সকাল ৯টায় ৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করেছে জেলার তেঁতুলিয়া আবহাওয়া অফিস। বৃহস্পতিবার সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল ১৪ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস।

বৃহস্পতিবার বিকেলের পর থেকেই শুরু হয় উত্তরের হিমেল হাওয়া। এর আগে গুঁড়িগুঁড়ি বৃষ্টিও ছিল থেমে থেমে। চলতি শীত মৌসুমের তৃতীয় দফায় শৈত্যপ্রবাহের কারণে শীতের তীব্রতা আরও বেড়েছে। ঘন কুয়াশার কারণে দুপুর পর্যন্ত হেডলাইট জ্বালিয়ে চলাচল করছে যানবাহন। কনকনে শীতে কাহিল হয়ে পরেন দুস্থ আর খেটে খাওয়া মানুষ। চলতি সপ্তাহে শীতের তীব্রতা আরও বাড়বে বলে জানিয়েছে তেঁতুলিয়া আবহাওয়া পর্যবেক্ষণ কেন্দ্র।
এদিকে ঠান্ডার কারণে বেড়েছে শীতজনিত নানান রোগ বালাই। বিশেষ করে শিশু ও বৃদ্ধরা জ্বর, সর্দি, শ্বাসকষ্ট, ডায়রিয়াসহ নানা রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন। পঞ্চগড় আধুনিক সদর হাসপাতালে বেড়েছে শীতজনিত রোগীর সংখ্যা। হাসপাতালের বহির্বিভাগে প্রতিদিন অসংখ্য শীতজনিত রোগী চিকিৎসা নিচ্ছেন। জেলার বিভিন্ন উপজেলার স্বাস্থ্যকেন্দ্রে শিশু রোগীদের জায়গা সঙ্কুলান হচ্ছে না।

তেঁতুলিয়া আবহাওয়া পর্যবেক্ষণ কেন্দ্রের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. রাসেল শাহ জাগো নিউজকে বলেন, শুক্রবার সকাল ৯ টায় সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ৯ দশমিক শূন্য ডিগ্রি সেলসিয়াস রেকর্ড করা হয়েছে। বৃহস্পতিবার সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল ১৪ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস। চলতি সপ্তাহের শীতের তীব্রতা আরও বাড়তে পারে।
হিলি : উপজেলায় গত দুই দিনের বৃষ্টির কারণে আবারও জেঁকে বসেছে শীত। বৃষ্টির মতো ঝড়ছে কুয়াশা। সেই সঙ্গে উত্তরের হিমেল বাতাস। বিপাকে পড়েছে দরিদ্র ও নিম্নআয়ের মানুষ। সকাল সাড়ে ৮টা পর্যন্ত রোদের দেখা মিলেনি। রফিক নামে এক রিকশাচালক জানান, গত দুই দিন আগে সকাল করে রোদের দেখা মিলতো। যার জন্য সকাল সকাল কাজে যেতে পারতাম। আজ শীত বেশি। সেই জন্য কাজে যেতে পারিনি।

দিনাজপুর আবহাওয়া অফিসের ইনচার্জ তোফাজ্জল হোসেন জানান, গতকাল দিনাজপুরে সকাল ৬টায় সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল ১২.২ ডিগ্রি সেলসিয়াস। বাতাসের আর্দ্রতা ৯৬ শতাংশ, বাতাসের গতিবেগ ঘণ্টায় ৩-৪ কিলোমিটার; তবে বেলা বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে এটি উত্তর বা উত্তর-পশ্চিম দিক থেকে ঘণ্টায় ৮-১০ কিলোমিটার গতিতে ধাবিত হতে পারে।

বগুড়া : ঘন কুয়াশা আর কনকনে ঠাণ্ডায় কাবু হয়ে পড়েছে বগুড়ার মানুষ। তাপমাত্রার পারদ নিচে নামায় ক্রমশই বাড়ছে ঠাণ্ডার দাপট। অনেক জনপদ ঢাকা পড়েছে কুয়াশার চাদরে। ব্যাহত হচ্ছে যানবাহন চলাচল। মধ্যরাত থেকে কুয়াশার সঙ্গে সঙ্গে বাড়তে থাকে শীতের তীব্রতা। গরম কাপড়েও নিবারণ হচ্ছেনা শীত। বিপাকে শিশু ও বয়োবৃদ্ধরা। কুয়াশার কারণে বগুড়া ঢাকা মহাসড়কে বিকেলের পর থেকেই হেড লাইট জ্বালিয়ে যানবাহন চলাচল করতে যায়।

গুরুদাসপুর (নাটোর) : গতকাল শুক্রবার ভোর থেকে দুপুর পর্যন্ত কুয়াশার চাদরে ঢাকা ছিল গুরুদাসপুর। সকালে খড়কুটো জ্বালিয়ে শীত নিবারণ করেছে খেটে খাওয়া ছিন্নমূল মানুষ। শীতে ব্যাহত হচ্ছে কৃষিকাজ। তীব্র ঠান্ডায় দেখা দিচ্ছে শীতজনিত নানা রোগ। হাসপাতালে বাড়ছে রোগীর সংখ্যা। সরকারি বেসরকারি অফিসে কর্মজীবীরা এলেও কাজেকর্মে চলছে স্থবিরতা। জীবিকার তাগিদে নিম্ন আয়ের খেটে খাওয়া মানুষ বের হলেও কাজ না পেয়ে অনেকে চরম দুর্ভোগে পড়ছে। কনকনে এ শীতে ব্যাহত হচ্ছে দৈনন্দিন কাজ। দিনের বেলায় সড়কে হেড লাইট জ্বালিয়ে চলছে যানবাহন।

বরিশাল ব্যুরো : দিনভর কুয়াশাচ্ছন্ন মেঘলা আকাশ। সেই সাথে দেখা নেই সূর্যের। তন্মধ্যে নগরীর বেশীরভাগ এলাকায় ছিল বিদ্যুৎ সরবারহ বন্ধ। প্রচণ্ড শীতে সমগ্র দক্ষিণাঞ্চলের মত বরিশাল মহানগরীতেও শুক্রবার জনজীবন ছিল বিপর্যস্ত। গত বুধবারও এ অঞ্চলে সূর্যের দেখা মেলেনি। মাঝে বৃহস্পতিবার একটি রৌদ্রকরোজ্জল দিন অতিবাহিত হলেও শুক্রবার সূর্যের দেখা মেলেনি গোটা দক্ষিণাঞ্চলে। তবে তাপমাত্রার পারদ স্বভাবিকের অনেক ওপরে থাকলেও মৌসুমী পূবালী হাওয়ায় জনজীবন আরো বিপর্যস্ত হয়ে পড়ে।

একই সাথে বরিশাল মহানগরীর হাতেম আলী কলেজ, আলেকান্দা ও সার্কিট হাউজ ফিডারে দিনভর বিদ্যুৎ সরবারহ বন্ধ থাকায় নগরীর বিশাল এলাকা জুড়ে আরো বিপর্যয় নেমে আসে। নগরীতে পানি সরবারহসহ অনেক জরুরি পরিষেবাও প্রায় বন্ধ ছিল। অনেক বেসরকারি ক্লিনিক ও হাসপাতালে জরুরি অস্ত্রপচারও বিঘ্নিত হয়। মাত্র ১৫ দিন আগেও পর পর দুদিন এ নগরীর বেশীরভাগ এলাকায় সকালÑসন্ধা বিদ্যুৎ সরবারহ বন্ধ ছিল।

এদিকে আবহাওয়া বিভাগ থেকে বরিশালসহ উপকূলীয় এলাকায় হালকা-গুড়ি গুড়ি বৃষ্টিপাতের সম্ভবনার কথা জানিয়ে মধ্যরাত থেকে সকাল পর্যন্ত মেঘনা অববাহিকা মাঝারি থেকে ঘণ কুয়শায় ঢেকে যাবার সম্ভবনার কথাও বলা হয়েছে। তবে শনিবারের পরবর্তি সময়ে বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা দূর হয়ে রাতের তাপমাত্রা হ্রাস পাবার সম্ভনার কথাও জানিয়েছে আবহাওয়া বিভাগ। গতকাল শুক্রবার সকালে বরিশালে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা স্বাভাবিকের ৪.১ ডিগ্রী সেলসিয়াস বেশি, ১৬ ডিগ্রি থাকলেও উত্তর-পূবের হীমেল হাওয়ার সাথে দিনভর সূর্যের দেখা না মেলায় শীতের অনুভুতি ছিল অনেক বেশি।

কলাপাড়া (পটুয়াখালী) : কলাপাড়ায় গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি হচ্ছে। আকাশ ঘন মেঘাচ্ছন্ন রয়েছে। শুক্রবার সকাল থেকে সূর্যের দেখা মেলেনি। সেই সঙ্গে শীতের তীব্রতা বেড়েছে। একই সাথে সকাল থেকেই ঘন কুয়াশায় ঢাকা পড়েছে ছিল গ্রামীন জনপদ। স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, হিমেল হাওয়ার করনে অনেকেই ঘর থেকে বের হচ্ছেনা। শহর ও গ্রামাঞ্চলের বাজারগুলোতে কমে যাচ্ছে মানুষের আনাগোনা। ভোগান্তিতে পড়েছে নিম্ন আয়ের খেটে খাওয়া মানুষ। গভীর সাগরে অবস্থানরত মাছ ধরা ট্রলারের জেলেদের দূর্ভোগ রেড়ে গেছে বলে সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন। ভ্যানচালক রহিম ঘরামী জানান, রাস্তায় ক্ষ্যাপও তেমন একটা নাই। দুইদিন ধরে ইনকাম একেবারেই কমে গেছে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: শীত

৩১ জানুয়ারি, ২০২৩
৬ জানুয়ারি, ২০২৩
৫ জানুয়ারি, ২০২৩
৫ জানুয়ারি, ২০২৩
৩ জানুয়ারি, ২০২৩

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ