Inqilab Logo

শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ০৭ বৈশাখ ১৪৩১, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

মানুষের কৃতকর্মেই বিপর্যয় ছড়িয়ে পড়ে

খুৎবা পূর্ব বয়ান

শামসুল ইসলাম | প্রকাশের সময় : ১৬ জানুয়ারি, ২০২২, ১২:০৭ এএম

আল্লাহতায়ালা পবিত্র কোরআনে এরশাদ করেন, ‘মানুষের কৃতকর্মের দরুন স্থলে ও সাগরে বিপর্যয় ছড়িয়ে পড়ে। ফলে তিনি তাদের কোনো কোনো কাজে শাস্তি আস্বাদন করান, যাতে তারা ফিরে আসেন।’ বিশ্বে ওমিক্রনের প্রাদুর্ভাব দেখা দিয়েছে। হাজার হাজার মানুষ এই রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন। এ বিপর্যয় থেকে রক্ষা পেতে স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণ করে তাওবা জারি রাখতে হবে। গতকাল জুমার খুৎবা পূর্ব বয়ানে পেশ ইমাম এসব কথা বলেন। নগরীর মসজিদগুলোর অধিকাংশ মুসল্লিদের মাস্ক পড়ে জুমার নামাজ আদায় করতে দেখা গেছে।

বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদের পেশ ইমাম ও ভারপ্রাপ্ত খতিব মুফতি মুহাম্মদ মুহিব্বল্লাহিল বাকী গতকাল জুমার খুৎবা পূর্ব বয়ানে বলেন, বিশ্বে করোনার নতুন রূপ ওমিক্রনের প্রাদুর্ভাব দেখা দিয়েছে। হাজার হাজার মানুষ এই রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন। মানুষ যত ধরনের বিপর্যয়, মুসিবত অসুস্থতার সম্মুখীন হয়ে থাকে তা তাদের কৃতকর্মের কারণে হয়ে থাকে।

আল্লাহতায়ালা এরশাদ করেন, ‘মানুষের কৃতকর্মের দরুন স্থলে ও সাগরে বিপর্যয় ছড়িয়ে পড়ে। ফলে তিনি তাদের তাদের কোনো কোনো কাজে শাস্তি আস্বাদন করান, যাতে তারা ফিরে আসেন।’ সুরা আর-রূম-৪১। মুসিবত, অসুস্থতা বান্দার জন্য নেয়ামত না আজাব এটা নির্ভর করে বান্দার সবর ও তাওবার ওপর। বান্দা যদি এই রকম অসুস্থতা বা বিপর্যয়ের শিকার হওয়ার পর ধৈর্যধারণ করে তাওবার মাধ্যমে আল্লাহতায়ালার দিকে ফিরে যায়, তখন বান্দার এই অসুস্থতা ও বিপর্যয় হয় নেয়ামত।

অন্যদিকে বান্দা যদি এরকম অবস্থায় ধৈর্যধারণ না করে ও আল্লাহতায়ালার দিকে ফিরে না যায়, তখন বান্দার এ বিপর্যয় ও অসুস্থতা হয় আজাব। খতিব বলেন, হযরত মাহমুদ ইবনে লাবিদ (রা.) হতে বর্ণিত, রাসূলে পাক (সা.) এরশাদ করেন, ‘মহান আল্লাহতায়ালা কোনো সম্প্রদায়কে যখন ভালোবাসেন, তখন তাদের পরীক্ষা করেন, যে ব্যক্তি ধৈর্যধারণ করে তাহার জন্য ধৈর্যধারণের সাওয়াব লেখা হয়। যে ব্যক্তি ধৈর্যধারণ করে না তার জন্য ধৈর্যহীনতার গোনাহ লেখা হয়।’ ওমিক্রন রোগকে আমরা ধৈর্যধারণ ও তাওবার মাধ্যমে আল্লাহতায়ালার অনুগ্রহে রূপান্তরিত করতে পারি। তবে এর সাথে সাথে স্বাস্থ্যবিধিও মেনে চলতে হবে।

খতিব বলেন, রোগ থেকে বাঁচার জন্য স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলাও সুন্নাত। যদিও স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার পর বা প্রতিষেধক গ্রহণ করার পরও কেউ আক্রান্ত হতে পারে বা মৃত্যুর শিকার হতে পারে। স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার পরও কেউ কেউ অসুস্থতার শিকার হতে পারে। অতএব, স্বাস্থ্যবিধি মেনে লাভ কি? এই অজুহাতে স্বাস্থ্যবিধি লঙ্ঘন করা জায়েজ হবে না। কারণ বান্দার দায়িত্ব রোগ থেকে বাঁচার জন্য স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণ করা, আক্রান্ত হয়ে গেলে ধৈর্যধারণ করে প্রতিষেধক গ্রহণ করা। অনুরূপ যারা সুস্থ থাকবে তারা আক্রান্ত ব্যক্তিদের পাশে দাঁড়ানো।
রাসূলে পাক (সা.) এরশাদ করেন, ‘কোনো ব্যক্তি যখন রোগীর সেবা করেন, তখন আকাশ থেকে একজন ফেরেস্তা ঘোষণা করেন, তুমি নিজেও পবিত্রতা অর্জন করেছ, তোমার চালচলনও পবিত্র হয়েছে এবং তুমি জান্নাতে একটি প্রাসাদ অর্জন করেছ।’ খতিব বলেন, এই করুণ অবস্থায় প্রত্যেকের উচিৎ কৃতকর্মের জন্য তাওবা কারা। রোগ থেকে মুক্ত থাকার জন্য স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা সাধ্যানুযায়ী আক্রান্ত ব্যক্তিদের পাশে দাঁড়ানো। আল্লাহতায়ালা যেন আমাদের এ কাজগুলো করার তৌফক দান করেন- আমিন।

মিরপুরের বাইতুল আমান কেন্দ্রীয় জামে মসজিদ খতিব মুফতি আবদুল্লাহ ফিরোজী বয়ানে বলেন, দুনিয়াতে বহু অনিষ্টের কারণ হলো রাগ বা ক্রোধ। মানুষ রাগের বশবর্তী হয়ে অনেক নির্দয় ও গোনাহের কাজে লিপ্ত হয়। রাগের ফলে অনেক সম্মানিত মানুষ লজ্জা ও অবজ্ঞার শিকার হয়। তাই কারো দ্বারা কোনো ক্ষতি বা অন্যায়মূলক কাজ হয়ে গেলে রাগ না করে, ক্ষমা ও ধৈর্যধারণ করার কথা কোরআন হাদিসে বর্ণিত হয়েছে। কারণ রাগ নয় বরং ক্ষমায় রয়েছে মোমিনের সাফল্য। আল্লাহতায়ালা মোমিন মুত্তাকি লোকদের প্রশংসা করে বলেন, ‘যখন তারা রাগান্বিত হয়, তখন তারা ক্ষমা করে দেয়। (সূরা শুরা : আয়াত ৩৭)। অন্য আয়াতে আল্লাহতায়ালা মোমিনের বৈশিষ্ট্য তুলে ধরেন বলেন, ‘যারা সচ্ছল ও অসচ্ছল উভয় অবস্থায় ব্যয় করে এবং যারা রাগ সংবরণকারী আর মানুষের প্রতি ক্ষমাশীল। আল্লাহ নেককারদের ভালোবাসেন। (সূরা আল-ইমরান : আয়াত ১৩৪)। নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘ওই ব্যক্তি বীর পুরুষ নয়; যে অন্যকে ধরাশায়ী করে দেয়। বরং রাগের সময় যে ব্যক্তি নিজের রাগ সংবরণকারী, সেই ব্যক্তিই প্রকৃত বীর (পুরুষ)।’ (বোখারি, মুসলিম, মিশকাত)।

খতিব আরো বলেন, নবীজি (সা.) বলেন, রাগ বা ক্রোধ শয়তানের তরফ থেকে আসে। শয়তান আগুনের তৈরি। আর আগুনকে পানি ঠান্ডা করে দেয়। যদি কারো ক্রোধ বা রাগ আসে তবে তার উচিত অজু করে নেয়া।’ (বোখারি, মিশকাত)। নবীজি (সা.) আরো বলেন, ‘যদি দাঁড়ানো অবস্থায় কেউ রাগান্বিত হয় তবে সে যেন বসে যায়। এতেও যদি রাগ না কমে, তবে সে যেন শুয়ে পড়ে।’ (মুসনাদে আহমদ, তিরমিজি)। আল্লাহতায়ালা আমাদের রাগকে নিয়ন্ত্রণ করে ক্ষমার মানসিকতা পোষণ করার তৌফিক দান করুন- আমিন।

দিনাজপুর গোর-এ-শহীদ কেন্দ্রীয় জামে মসজিদের খতিব মাওলানা রেজাউল করিম খুৎবার বয়ানে বলেন, কিছু মানুষ আধুনিক শিক্ষার দোহাই দিয়ে কোরআনে কারিম না বুঝে পড়ার বিষয়টি অবজ্ঞার চোখে দেখেন। অথচ কোরআনে কারিমে স্বয়ং আল্লাহতায়ালা বলেন, ঈমানদারের ওপর অনুগ্রহ করেছেন, তাদের মাঝে তাদের নিজেদের মধ্য থেকে নবী পাঠিয়েছেন। তিনি তাদের জন্য তার আয়াতগুলো পাঠ করেন। তাদের পরিশোধন করেন এবং তাদের কিতাব ও কাজের কথা শিক্ষা দেন। বস্তুত, তারা ছিল পূর্ব থেকেই পথভ্রষ্ট। (সূরা ইমরান আয়াত নাম্বার ১৬৪)।
তিনি বলেন, আয়াতে আমরা দেখতে পাই রাসূলের রিসালাতের অন্যতম একটি দায়িত্ব ছিল কোরআনে কারিমের বিশুদ্ধ তেলাওয়াত শিক্ষা দেয়া। বুঝে হোক আর না বুঝে হোক। না বুঝে পড়লেও কোরআনের একেকটি হরফের বিনিময় দশটি করে নেকি হয়। হযরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত। অতএব, যারা আধুনিক শিক্ষার নামে শুধুই কোরআনে কারিমের বিশুদ্ধ তেলাওয়াত ও হেফজ করা অনর্থক মনে করেন তারা বিভ্রান্তির বেড়াজালে। আল্লাহতায়ালা উম্মতকে সহি বুঝ দান করুন- আমিন।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: খুৎবা পূর্ব বয়ান


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ