Inqilab Logo

শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ০৭ বৈশাখ ১৪৩১, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

‘ম্যাজিস্ট্রেট চলে গেলেই মুখ থেকে নেমে যাচ্ছে মাস্ক’

ইনকিলাব ডেস্ক | প্রকাশের সময় : ১৬ জানুয়ারি, ২০২২, ৪:৫৪ পিএম | আপডেট : ৪:৫৬ পিএম, ১৬ জানুয়ারি, ২০২২

গত এক দিনে ২৯৪ জন করোনা রোগী সুস্থ হয়ে উঠলেও নতুন করে শনাক্ত হয়েছে ৩ হাজার ৪৪৭ জন। শনাক্তের হার ১৪.৩৫ শতাংশ। ঢাকা জেলায় শনাক্তের হার ১৬ শতাংশ ছাড়িয়ে গেছে। তবুও স্বাস্থ্যবিধি মানার বালাই নেই কোথাও। সরকারের জারি করা ১১ দফা বিধিনিষেধে কর্ণপাত করছেন না কেউ।স্বাস্থ্যবিধি নিশ্চিত করতে দেশের বিভিন্ন স্থানে ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযান শুরু হলেও তার প্রভাব খুব একটা পড়েনি। ম্যাজিস্ট্রেট চলে গেলেই মুখ থেকে নেমে যাচ্ছে মাস্ক।

এদিকে এভাবে সংক্রমণ বাড়তে থাকলে আবারও লকডাউনের ঘোষণা দিয়েছেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক। গতকাল স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ মন্ত্রী জাহিদ মালেক মানিকগঞ্জে এক অনুষ্ঠানে বলেছেন, প্রতিদিন এক থেকে তিন শতাংশ হারে করোনা আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বেড়ে যাচ্ছে, আর এই হারে বাড়াটা খুবই উদ্বেগজনক। বর্তমানে প্রায় এক শতাংশ লোকের আইসিইউ প্রয়োজন হচ্ছে। এই হারে রোগীর সংখ্যা বাড়তে থাকলে হাসপাতালে জায়গা হবে না। লকডাউন দিলে দেশের ক্ষতি, তাই আমরা সেদিকে যেতে চাই না। আমরা চাই সবাই স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলুক। কিন্তু সরকারের ১১ বিধিনিষেধ না মানলে দেশের পরিস্থিতি হবে ভয়াবহ, তখন বাধ্য হয়ে লকডাউনে যেতে হবে। এর আগে দুই দফা লকডাউনে বিপর্যয়ের মুখে পড়ে দেশের অর্থনৈতিক কর্মকান্ড। স্থবির হয়ে পড়ে ব্যবসা-বাণিজ্য। কর্মসংস্থান হারান লাখ লাখ মানুষ। বিপদে পড়ে কোটি কোটি নিম্ন আয়ের মানুষ। বর্তমানে সেই সংকট কিছুটা কাটিয়ে উঠলেও এখনো পুরোপুরি স্বাভাবিক হয়নি। এমন অবস্থায় লকডাউনের বদলে কঠোরভাবে স্বাস্থ্যবিধি নিশ্চিত করার পরামর্শ দিয়েছেন অর্থনীতিবিদ ও ব্যবসায়ী নেতারা।

করোনা সংক্রমণ ঠেকাতে ১৩ জানুয়ারি থেকে ঘরের বাইরে সর্বত্র মাস্ক পরাসহ ১১ দফা বিধিনিষেধ জারি করেছে সরকার। গতকাল বিধিনিষেধের তৃতীয় দিনেও রাজধানীতে মাস্কের ব্যবহার খুব একটা দেখা যায়নি। গণপরিবহন, বাজার, চায়ের দোকান, অলিগলিতে আগের মতোই মাস্ক ছাড়া ঘুরতে ও দল বেঁধে আড্ডা দিতে দেখা গেছে নগরবাসীকে। স্বাস্থ্যবিধি নিশ্চিত করতে প্রশাসনের তৎপরতা ছিল খুবই কম। সারা দেশের চিত্রও একই রকম বলে আমাদের সংবাদকর্মীদের পাঠানো খবরে জানা গেছে। স্বাস্থ্যবিধি নিশ্চিত করতে গতকাল রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করে ঢাকা জেলা প্রশাসন। পল্টন এলাকায় অভিযান চালানো নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট জান্নাতুল রাবেয়া মিশকাত বলেন, অনেকেই তুচ্ছ অজুহাতে মাস্ক পরছেন না। তিনি নয়জনকে জরিমানা করেছেন। এ ছাড়া অনেককে সতর্ক করেছেন।

বরিশাল : করোনা সচেতনতা বাড়াতে বরিশাল শহরের বিভিন্ন স্থানে গতকাল অভিযান চালায় জেলা প্রশাসনের ভ্রাম্যমাণ আদালত। এ সময় বেশির ভাগ মানুষের মধ্যে দেখা গেছে মাস্ক পরায় উদাসীনতা। জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সমাপ্তি রায় অসন্তোষ প্রকাশ করে বলেন, বেশ কিছু হোটেল ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে অভিযান পরিচালনা করা হয়েছে। কোথাও মানা হয়নি বিধিনিষেধ। তারা জানিয়েছেন, নির্দেশনার বিষয়ে জানেন না। সতর্ক করার পাশাপাশি আইন অমান্যকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া লঞ্চে মাস্কবিহীন যাত্রীদের ওঠানামা ঠেকাতে কঠোর ভূমিকায় ছিল বিআইডব্লিউটিএ। লঞ্চে স্বাস্থ্যবিধি মানাতে তদারকি অব্যাহত থাকবে বলে জানিয়েছেন নদীবন্দর কর্মকর্তারা।

চট্টগ্রাম : জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সুবল চাকমার নেতৃত্বে গতকাল নগরীর বিভিন্ন বাজার ও মার্কেটে চালানো হয়েছে অভিযান। এ সময় স্বাস্থ্যবিধি না মানায় ক্রেতা-বিক্রেতাদের জরিমানা করা হয়। সুবল চাকমা বলেন, যারা স্বাস্থ্যবিধি ভঙ্গ করছেন তাদের আমরা সীমিতভাবে জরিমানা করেছি। যাদের মুখে মাস্ক ছিল না, তাদের মধ্যে মাস্ক বিতরণ করেছি। সবাইকে সতর্ক করেছি। করোনামুক্ত হয়ে আমরা যাতে স্বাভাবিক চলতে পারি সেই জন্য আমাদের এ ব্যবস্থা।

বগুড়া : মাস্ক না পরায় ও সরকারি বিধিনিষেধ অমান্য করায় বগুড়ার আদমদীঘির সান্তাহার পৌর এলাকায় ছয়জনকে জরিমানা করেছে ভ্রাম্যমাণ আদালত। নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ও সহকারী কমিশনার (ভূমি) মাহবুবা হক বলেন, জনসচেতনতা বৃদ্ধি করতে উপজেলায় মাইকিং করা হচ্ছে। মাস্ক ব্যবহার ও স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার অনুরোধ জানানো হচ্ছে। তার পরও যারা নির্দেশনা অমান্য করছেন তাদের জরিমানা করা হচ্ছে।

চাঁপাইনবাবগঞ্জ : বিধিনিষেধের তৃতীয় দিনেও ছিল স্বাস্থ্যবিধির বেহাল দশা। অধিকাংশের মুখেই দেখা যায়নি মাস্ক। বিভিন্ন যানবাহনেও স্বাস্থ্যবিধির বালাই ছিল না।

সিরাজগঞ্জ : মাস্ক ছাড়া দূরপাল্লার বাসে কাউকে উঠতে দেননি সুপারভাইজার, হেলপার ও কাউন্টার কর্তৃপক্ষ। তবে লোকাল বাসগুলোতে স্বাস্থ্যবিধির বালাই ছিল না।

নাটোর : গণপরিবহনে চলাচলকারী যাত্রীসহ অধিকাংশই মানছেন না মাস্ক পরিধানসহ স্বাস্থ্যবিধি। স্বাস্থ্যবিধি নিশ্চিত করতে প্রশাসনের নজরদারিও দেখা যায়নি।

এদিকে গত ২৪ ঘণ্টায় করোনায় আরও সাতজনের মৃত্যু হয়েছে। মোট মৃতের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ২৮ হাজার ১৩৬ জনে। শনাক্ত মোট রোগী বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৬ লাখ ১২ হাজার ৪৮৯ জনে। সবচেয়ে দ্রুত সংক্রমণ বাড়ছে ঢাকায়। গত ২৪ ঘণ্টায় মোট নমুনা পরীক্ষার ৭৩.২৮ শতাংশ হয়েছে ঢাকা জেলায়। শনাক্ত মোট রোগীর ৮১.৭৮ শতাংশই পাওয়া গেছে এই জেলায়।

ঢাকা জেলায় শনাক্তের হার ১৬ শতাংশ ছাড়িয়ে গেছে। বিভাগীয় হিসাবে গত ২৪ ঘণ্টায় শনাক্তের হার ছিল যথাক্রমে ঢাকায় ১৫.৫৯ শতাংশ, খুলনায় ১১.৪৩ শতাংশ, চট্টগ্রামে ১১.২৬ শতাংশ, সিলেটে ১০.৭২ শতাংশ, বরিশালে ৯ শতাংশ, ময়মনসিংহে ৮.৪৩ শতাংশ, রংপুরে ৮.১১ শতাংশ ও রাজশাহীতে ৬ শতাংশ।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ