পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
পুরনো রূপেই ফিরেছে গণপরিবহন। কোনও আসন ফাঁকা না রেখেই যাত্রী নিয়ে চলাচল। সিট খালি না থাকলেও দাঁড়িয়ে যাত্রী পরিবহন। যাত্রীদের কাছ থেকে বেশি পরিমাণ ভাড়া আদায়। করোনাভাইরাসের নতুন ধরন ওমিক্রন সংক্রমণ রোধে গণপরিবহনগুলো সরকার ঘোষিত গাইডলাইন মানছে না। স্বাস্থ্যবিধির দিকে নেই কারোরই খেয়াল। যাত্রীবাহী বাসগুলো এখন দেখা যায় কানায় কানায় পূর্ণ। পরিবহন সংশ্লিষ্টরা যেন এখন যাত্রী তোলায় বেপরোয়া আচরণ শুরু করে দিয়েছে। প্রত্যেকটি গণপরিবহনের যাত্রী নেয়ার প্রবল প্রতিযোগিতা। গতকাল সোমবার রাজধানীর মতিঝিল, পল্টন, আরামবাগ, ফকিরাপুল, গুলিস্তান, রামপুরা, মালিবাগ, খিলগাঁও রেলগেট, বাসাবো, সায়েদাবাদ, শাহবাগ, বাংলামোটরসহ বিভিন্ন এলাকায় এমন চিত্র দেখা গেছে।
এদিকে, রাজধানীতে বাসে হ্যান্ড স্যানিটাইজার না থাকা ও যাত্রীদের মাস্ক না পরায় জরিমানা করা হয়েছে। গতকাল মহাখালী বাস টার্মিনাল এলাকায় অভিযান চালিয়ে এ জরিমানা করে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআরটিএ)। এসময় পৃথক ১৬টি মামলায় ১২ হাজার পাঁচ টাকা জরিমানা করা হয়। সকাল ১০টা থেকে বিকেল পর্যন্ত চলে অভিযান। বিআরটিএ সূত্র জানায়, দেশে করোনা সংক্রমণ ফের বেড়ে যাওয়ায় গণপরিবহনে স্বাস্থ্যবিধি নিশ্চিতে গত কয়েক দিন ধরে এই অভিযান চালানো হচ্ছে। তারই ধারাবাহিকতায় সোমবার মহাখালী বাস টার্মিনালে অভিযান পরিচালনা করেন বিআরটিএ’র নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ইয়াসমিন মনিরা।
সরেজমিনে দেখা গেছে, অফিস শুরু ও শেষ হওয়ার সময় গণপরিবহনে কোনও স্বাস্থ্যবিধি মানা হচ্ছে না। দিনের অন্যান্য সময় কিছুটা আসন ফাঁকা থাকলেও এই সময়ে বাসের প্রতিটি আসনেই যাত্রী নেয়া হচ্ছে। প্রতিটি বাসেই সবগুলো আসনে যাত্রী বহন করা হচ্ছে। যাত্রীদের মাঝেও স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা বা সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখার লক্ষণ দেখা যায়নি। পরিবহন চালক ও তাদের হেলপাররাও বাসে অতিরিক্ত যাত্রী ওঠায় বাধা দিচ্ছেন না, বরং তারাই ডেকে ডেকে যাত্রীদের পরিবহনে ওঠাচ্ছেন।
যাত্রীবাহী বাসের ভিতরে দাঁড়ানো যাত্রীদের জটলা। প্রত্যেকটি বাসস্ট্যন্ডে যাত্রীদের ভিড়। এসব নানা কারণে গতকাল সোমবার রাজধানীর বিভিন্ন রুটে সৃষ্টি হয়েছে যানজট। ঢাকা আন্তঃমহানগর রুটে যে সকল বাস চলে সেগুলোতে শুরুর দিকে স্বাস্থ্যবিধি ও সামাজিক দূরত্ব মানার প্রবণতা থাকলেও বর্তমানে তা একেবারে নেই বললেই চলে। যাত্রী ওঠানোর ক্ষেত্রে গা ঘেঁষে যাত্রী উঠানো হচ্ছে। বাসের কর্মীদের অনেকের মাস্ক নেই, আর কারো কারো থাকলেও তা মুখের নিচে নামানো থাকে।
রাজধানীর আন্তঃজেলা বাস টার্মিনালগুলোতে যাত্রী ও বাস শ্রমিকদের সুরক্ষার জন্য জীবাণুনাশক যেসব টানেল স্থাপন করা হয়েছিলো সেসব টানেল বেশিরভাগ সময় বন্ধ থাকতে দেখা যায়। জীবাণুনাশক টানেলগুলো স্বয়ংক্রিয়ভাবে স্প্রে করার কথা থাকলেও বন্ধ থাকায় এখন সেগুলো কাজ করে না। শ্রমিকদের মধ্যে অনেকেই স্বাস্থ্যবিধি ও সামাজিক দূরত্ব মানার ক্ষেত্রে একেবারেই অমনোযোগী। আবার দেখা যায় বাসে যাত্রী ওঠাতে গিয়ে সামাজিক দূরত্ব না মেনে যাত্রীদের গা ঘেঁষে কথা বলতে।
পরিবহন মালিক সমিতি থেকে ১২ তারিখ জানানো হলো অর্ধেক আসনে যাত্রী নিয়ে বাস চলবে এবং কোনো ভাড়া বাড়ানো হবে না। তার পরদিনই ১৩ জানুয়ারি পরিবহন মালিক নেতারা বিবৃতি দিয়ে জানাচ্ছেন-বিআরটিএর চেয়ারম্যান তাদের যত সিট তত যাত্রী পরিবহনে মৌখিক সম্মতি দিয়েছেন। একটা সিদ্ধান্ত বিআরটিএ’র চেয়ারম্যানের মৌখিক সিদ্ধান্তে পাল্টে গেলো। এ নিয়ে বিআরটিএর কর্মকর্তাদের সঙ্গে পরিবহন মালিকদের দফায় দফায় বৈঠক হয়েছে। কিন্তু বাস এবং লঞ্চে বরবারের মতোই মানা হচ্ছে না তা। ট্রেনে আন্তঃনগরে অর্ধেক যাত্রী পরিবহন এবং স্বাস্থ্যবিধি কিছুটা মানা হলেও লোকাল ট্রেনে আসন তো বটেই দাঁড়িয়েও যাত্রী চলাচল করছে। এনিয়েও যাত্রীদের মধ্যে দেখা গেছে নানা রকম প্রতিক্রিয়া।
এসব নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করছেন সাধারণ যাত্রীরাও। ৫০ শতাংশ আসন ফাঁকা না রেখেই বাস চলাচলের দাবি তাদের। স্বাস্থ্যবিধি যদি মানা না-ই হয়, তাহলে করোনা অক্রান্তের ঝুঁকি বেড়ে যেতে পারে বলে জানান যাত্রীরা। কেউ কেউ বলছেন সাধারণ মানুষ করোনাকে ভয় পাচ্ছে না। তাই তারা গণপরিবহনে স্বাস্থ্যবিধিও মানতে চায় না। এজন্য তারাও আগের মতোই যাতায়াত করছে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, গণপরিবহনে স্বাস্থ্যবিধি ও সামাজিক দূরত্ব মানা হচ্ছে কি না সে বিষয়ে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কঠোর নজরদারি প্রয়োজন। বিধিনিষেধেই ১১ দফার মধ্যে এমন কিছু বিধিনিষেধ রয়েছে যেগুলো বাস্তবসম্মত নয় বলে মনে করেন কেউ কেউ। বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে অনেক বিধিনিষেধ মানা সম্ভবনা অথবা কার্যকর হবে না। যেমন হোটেল-রেস্তোরাঁয় খেতে কিংবা হোটেল থাকতে করোনা সনদ দেখানো বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। কিন্তু এখনো দেশের কয়েক কোটি মানুষ টিকার আওতায় আসেনি। তারা কিভাবে বাইরে কাজ করবে। এক্ষেত্রে একজনকে যদি সংক্রমণের হাত থেকে রক্ষা করতে পারি তাহলে অনেকেই নিরাপদ থাকবে। পরিস্থিতির পরিবর্তন না হলে সংক্রমণ বাড়ার আশঙ্কা থেকেই যাচ্ছে।
রামপুরা এলাকায় দেখা গেছে প্রতিটি পরিবহনের সবকটি আসন ভর্তি। দাঁড়িয়েও যাত্রী বহন করা হচ্ছে। পরিবহন চালকরা বর্ধিত ভাড়া আদায় করছেন। এ নিয়ে চালক, হেলপার ও যাত্রীদের সঙ্গে বাক-বিতণ্ডাও হতে দেখা যায়।
একটি বাসের হেলপার কামাল বলেন, কেউ কারও কথা শুনছে না। যাত্রীদের অনেক বাধা দেই। তারা কথা শুনে না। সবাই বাসে উঠে পড়ে। এখন যাত্রীরাও স্বাস্থ্যবিধি মানতে চায় না। আমাদের তেমন কিছুই করার থাকে না।
সুলতান নামে এক যাত্রী বলেন, অফিস আওয়ার ও অফিস ছুটির সময় যাত্রীদের অনেক চাপ থাকে। তাছাড়া এখন সব অফিস-আদালত খুলা। সব রুটেই যাত্রীর সংখ্যা অনেক বেশি। তাই গণপরিবহনগুলো যাত্রীতে ঠাসা থাকে। স্বাস্থ্যবিধি এখন আর আগের মতো মানা হয় না। আমরা যারা যাত্রী, তারা আসন না থাকলেও বাধ্য হয়ে বাসে উঠি। কারণ না উঠলে ঠিক সময়ে বাসায় ফিরতে পারবো না।
ঢাকা পরিবহন মালিক সমিতির এক নেতা জানান, সরকার নির্দেশিত স্বাস্থ্যবিধি ও সামাজিক দূরত্ব মানার বিষয়ে পরিবহন মালিক সমিতির পক্ষ থেকে বিভিন্ন রুটে তদারকি করা হচ্ছে। তারা এগুলো দেখাশোনা করছেন। কোন অভিযোগ পেলে বিষয়ে খতিয়ে দেখা হচ্ছে। মালিকদের পক্ষ থেকে পরিদর্শনে গেলে চালক ও হেলপাররা ভালো কাজ করে। তবে তারা চলে আসার পর হয়তো কিছু সমস্যা থাকতে পারে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।