Inqilab Logo

মঙ্গলবার, ১৬ এপ্রিল ২০২৪, ০৩ বৈশাখ ১৪৩১, ০৬ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

মাদকের তথ্য দেয়ায় সায়মনকে হাত-পায়ের রগ কেটে হত্যা

গ্রেফতার পাঁচ

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ১৮ জানুয়ারি, ২০২২, ১২:০০ এএম

আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে মাদক সিন্ডিকেটের তথ্য দেয়ায় কেরানীগঞ্জে সায়মন ওরফে নূরে আলমকে হাত-পায়ের রগ কেটে নৃশংসভাবে হত্যা করা হয়। সায়মন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সোর্স হিসেবে কাজ করতো। এ ঘটনায় হত্যাকা-ের মূলহোতা মো. সুমন ওরফে গ্লাস সুমনসহ পাঁচজনকে গ্রেফতার করেছে র‌্যাব। চাঞ্চল্যকর ও আলোচিত এ হত্যাকা- নিয়ে র‌্যাব কর্মকর্তারা বলছেন, নিহত সায়মন ছিলেন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সোর্স। এই হিসেবে কিছুদিন আগে তিনি গ্লাস কোম্পানি মাদক সিন্ডিকেটটির কয়েকজন সদস্য সম্পর্কে তথ্য দেয়। এরপরই সিন্ডিকেটের কয়েকজন মাদক কারবারি গ্রেফতার হয়। গ্রেফতার সুমন ও তার সহযোগীরা ভিকটিম সায়মনকে তথ্য সরবরাহকারী হিসেবে সন্দেহ করে। এরপরই প্রতিহিংসার বশবর্তী হয়ে এ হত্যাকা- সংঘটিত করে।

গতকাল কারওয়ান বাজার র‌্যাব মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে র‌্যাবের লিগ্যাল আ্যন্ড মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন বলেন, গ্র্রেফতারকৃতরা হলো- মো. সুমন ওরফে গ্লাস সুমন (২৯), মো. সোহাগ ওরফে লম্বু সোহাগ (২৮), শরীফ ওরফে গরীব (২৯), জনি ওরফে হর্স পাওয়ার জনি (৩২) ও হারুন (৩২)। এসময় তাদের কাছ থেকে হত্যাকা-ে ব্যবহৃত সুইচগিয়ার ও অন্যান্য ধারালো অস্ত্র উদ্ধার করা হয়। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেফতাররা হত্যাকা-ের সঙ্গে সংশ্লিষ্টতার তথ্য দিয়েছে। তিনি আরো বলেন, গত ১৫ জানুয়ারি ঢাকার কেরানীগঞ্জ এলাকায় সায়মনকে বিভিন্ন ধারালো অস্ত্র দিয়ে হাত ও পায়ের রগ কেটে নৃশংসভাবে হত্যা করা হয়। এ ঘটনায় নিহত সায়মনের ভাই মো. আরস আলম ঢাকা কেরানীগঞ্জ মডেল থানায় ৭/৮ জন অজ্ঞাতনামা আসামির বিরুদ্ধে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। মামলা নং-১৪। হত্যাকা-টি সারাদেশে ব্যাপক চাঞ্চল্যের সৃষ্টি করে। র‌্যাব ঘটনার ছায়া তদন্ত শুরু করে ও জড়িতদের আইনের আওতায় নিয়ে আসতে গোয়েন্দা নজরদারি বাড়ায়। এরই ধারাবাহিকতায় গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে র‌্যাব সদরদপ্তর গোয়েন্দা শাখা ও র‌্যাব-১০ এর অভিযানে গত রোববার রাত থেকে সোমবার ভোর পর্যন্ত কেরানীগঞ্জের বিভিন্ন এলাকা থেকে তাদের গ্রেফতার করা হয়।
প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেফতাররা জানায়, সুমন একটি মাদক সিন্ডিকেটের মূলহোতা। সে দীর্ঘদিন ধরে মাদক কারবারের সঙ্গে জড়িত। কেরানীগঞ্জসহ পাশ্ববতী এলাকায় সে গ্লাস কোম্পানি নামে একটি মাদক সিন্ডিকেট গড়ে তোলে। এ চক্রে সক্রিয় সদস্য সংখ্যা ১২-১৫ জন। গ্র্রেফতারকৃতরা হত্যাকা-ের কারণ সম্পর্কে জানায়, কিছুদিন আগে নিহত সায়মন গ্লাস কোম্পানি মাদক সিন্ডিকেটের কয়েকজন সদস্য সম্পর্কে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর কাছে তথ্য দেয়। এর প্রেক্ষিতে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে সিন্ডিকেটের কয়েকজন মাদক কারবারি গ্রেফতার হয়। এরপরই সায়মনকে তারা সন্দেহ করে এবং প্রতিহিংসার বশবর্তী হয়ে হত্যাকা-টি সংঘটিত করে।
র‌্যাব মুখপাত্র আরও বলেন, ঘটনার কয়েক দিন আগে বালুরচর মুক্তিরবাগ বালুর মাঠ এলাকায় গ্লাস সুমন ও তার অন্যান্য সহযোগী গ্রেফতার সোহাগ ওরফে লম্বু সোহাগ ওরফে ঘটি সোহাগসহ আরও কয়েকজন হত্যাকা-ের চূড়ান্ত পরিকল্পনা করে। পরিকল্পনায় ৫-৬ জন অংশ নেয়। পরিকল্পনা অনুযায়ী, গত ১৫ জানুয়ারি গ্লাস সুমন সিন্ডিকেট মুক্তিরবাগ বালুর মাঠে হত্যাকা-টি সংঘঠিত করে। গ্রেফতারকৃত হারুন তথ্য দিয়ে হত্যাকারীদের সহযোগিতা করে। এরপর সুমন ও তার সহযোগীরা কেরানীগঞ্জ মডেল থানাধীন মুক্তিরবাগ বালুর মাঠ এলাকায় সায়মনকে পার্শবর্তী নির্মানাধীন ভবন থেকে জোরপূর্বক ধরে ঘটনাস্থলে নিয়ে যায়।

এরপর ভিকটিমকে চেপে ধরে ধারালো অস্ত্র দিয়ে তার হাত ও পায়ের রগ কেটে দেয় ও এলোপাতাড়ি কুপিয়ে গুরুতর আহত করে সেখান থেকে পালিয়ে যায় তারা। প্রায় ৩০ মিনিট ধরে তারা এ হত্যাকা- চালায়। পরবর্তীতে স্থানীয়রা আহত সায়মনকে হাসপাতালে নিলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
র‌্যাবের লিগ্যাল আ্যন্ড মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক বলেন, গ্রেফতারকৃত গ্লাস সুমন হত্যাকা-ের মূল পরিকল্পনাকারী; সে হত্যাকা-ের পরিকল্পনা থেকে শুরু করে হত্যাকা- সংঘটনের সময় সশরীরে উপস্থিত ছিল এবং নিজে ভিকটিমের রগ কাটে। এছাড়া গ্রেফতার লম্বু সোহাগ ও শরীফ ওরফে গরিব রগ কাটায় অংশ নেয়। জনি ও গ্লাস সুমন তখন সায়মনকে ধরে রাখে। সুমনের বিরুদ্ধে বিভিন্ন থানায় মাদক ও ছিনতাই সংক্রান্ত পাঁচটি মামলা রয়েছে জানিয়ে কমান্ডার মঈন বলেন, সুমন আগে গ্লাসের দোকানে কাজ করতো এবং ভাঙা গ্লাস দিয়ে মানুষকে বিভিন্ন সময়ে আক্রমণ ও জখম করার কারণে এলাকায় গ্লাস সুমন নামে পরিচিতি পায়। এছাড়াও গ্রেফতার লম্বু সোহাগ, হর্স পাওয়ার জনি ও হারুনের বিরুদ্ধে রাজধানীর বিভিন্ন থানায় একাধিক মামলা রয়েছে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: হাত-পায়ের রগ কেটে হত্যা
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ