Inqilab Logo

শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৬ বৈশাখ ১৪৩১, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

মদের চাহিদা বাড়ছে বাংলাদেশে, উৎপাদনও বাড়াচ্ছে কেরু অ্যান্ড কোং

ইনকিলাব ডেস্ক | প্রকাশের সময় : ১৯ জানুয়ারি, ২০২২, ৩:৪৬ পিএম

বাংলাদেশের একমাত্র অ্যালকোহল উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান কেরু অ্যান্ড কোং বলছে, গত ছয় মাসে তাদের উৎপাদিত দেশি মদের বিক্রি ৫০ শতাংশ বেড়েছে। সেই সঙ্গে দেশে অ্যালকোহলের চাহিদাও বেড়েছে বলে বলছে প্রতিষ্ঠানটি।

কেরু অ্যান্ড কোং বলছে, নতুন বছরে তারা তাদের উৎপাদন আরো বাড়াচ্ছে। সেই সঙ্গে, সরকার দেশের প্রথম বিয়ার কারখানাও চালু করতে যাচ্ছে। সরকারি কয়েকটি সংস্থা এবং আমদানিকারক প্রতিষ্ঠানগুলোর তথ্য অনুযায়ী, বাংলাদেশে গত পাঁচ বছর ধরে ক্রমাগত বেড়ে চলেছে অ্যালকোহল বা মদের চাহিদা।

মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর এবং শিল্প মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা বলছেন, ২০১৬ সাল থেকে স্থানীয়ভাবে অ্যালকোহলের চাহিদা বাড়ছে। স্থানীয় মানুষের পাশাপাশি দেশের বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্পে কাজ করা বিদেশী প্রকৌশলী এবং কর্মীদের মধ্যে চাহিদার কারণে অ্যালকোহলের চাহিদা এবং উৎপাদন একটু একটু করে বেড়েছে গত কয়েক বছরে।,একই সাথে বেড়েছিল আমদানিও।

দেশের একমাত্র অ্যালকোহল উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান কেরু অ্যান্ড কোং-এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোঃ মোশারফ হোসেন বিবিসিকে বলেছেন, ২০১৯-২০ অর্থবছরে প্রতিষ্ঠানটি ৪২ লাখ ৬২ হাজার লিটার মদ বিক্রি করেছে। কিন্তু ২০২০-২১ অর্থবছরে তাদের কোম্পানি প্রায় ৪৭ লাখ লিটার মদ বিক্রি করেছে। মি. হোসেন বলছেন, কোভিডের কারণে দেশে চাহিদা থাকলেও এখন আমদানিকৃত বিদেশি মদের সরবারহ অনেক কম। ফলে ২০২১ সালের শুরুতে ভেজাল মদ খেয়ে অনেক মানুষ অসুস্থ হয়েছিল, কয়েকজন মারাও গিয়েছিল।

বিদেশি মদের আমদানি কম হওয়াকেও তিনি দেশি মদের চাহিদা বাড়ার আরেকটি কারণ বলে মনে করেন। ২০২১ সালে করোনাভাইরাসের ডেল্টা সংক্রমণে বাংলাদেশে ব্যাপক সংখ্যক মানুষ আক্রান্ত হন ও মারা যান। সংক্রমণ এবং মৃত্যুর গতি কিছুটা কমলে সরকার চলাচলে বিধিনিষেধ শিথিল করে।

এরপর সেপ্টেম্বর-অক্টোবরের দিকে মানুষ ব্যাপক হারে দেশের বিভিন্ন স্থানে, পর্যটন কেন্দ্রে বেড়াতে যেতে শুরু করে। মি. হোসেন বলেছেন, সেসময় আরেক দফা বাড়ে দেশি মদের চাহিদা। তিনি বলছেন, চলতি অর্থবছরে অর্থাৎ ২০২১-২২ সালের অক্টোবর থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত তিন মাসে কেরু অ্যান্ড কোং কোম্পানির উৎপাদিত মদের বিক্রি প্রায় ৫০ শতাংশ বেড়েছে।

মাসে সাধারণত কেরু অ্যান্ড কোং উৎপাদিত প্রায় ১৩ হাজার কেস মদ বিক্রি হতো। সাধারণত প্রতি কেসে ৭৫০ মিলিলিটারের ১২টি বোতল, ৪৬৫ মিলিলিটারের ২৪টি বোতল এবং ১৮০ মিলিলিটারের ৪৮টি মদের বোতল থাকে। চলতি বছরের অক্টোবর মাসে বিক্রির সংখ্যা দাঁড়ায় সাড়ে ১৮ হাজারেরও বেশি কেসে। নভেম্বরে প্রায় সাড়ে ১৯ হাজার এবং ডিসেম্বরে ২০ হাজারের বেশি কেস মদ বিক্রি করেছে প্রতিষ্ঠানটি। এখন বর্ধিত চাহিদা মেটাতে দর্শনার দুটি কারখানাতেই উৎপাদন বাড়িয়েছে কেরু অ্যান্ড কোং।

বাংলাদেশে মাদক নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের হিসাব অনুযায়ী, ২০২০-২১ অর্থবছরে দেশে বৈধভাবে এক লক্ষ পাঁচ হাজার লিটারের মত অ্যালকোহল আমদানি হয়েছে। কিন্তু অধিদপ্তরের ঊর্ধ্বতন একজন কর্মকর্তা বিবিসিকে বলেছেন, দেশের বার এবং ওয়্যারহাউজগুলোতে এর চেয়ে কয়েকগুণ বেশি মদ বিক্রি হয়েছে বলে তাদের কাছে খবর আছে।

এদিকে, দেশে ধারাবাহিকভাবে চাহিদা বৃদ্ধির প্রেক্ষাপটে আমদানিও বেড়েছিল, কিন্তু মহামারির শুরুতে আমদানিকৃত অ্যালকোহল বিক্রি প্রায় বন্ধ হয়ে যায়। কর্মকর্তারা বলেছেন, করোনাভাইরাসের কারণে কয়েকমাস বার এবং ওয়্যারহাউজগুলো বন্ধ থাকার পর, বিদেশি অ্যালকোহল আমদানিকারকেরা আমদানি শুল্ক কমানোর দাবি তোলে।

ওই একই সময়ে করফাঁকির অভিযোগে বিভিন্ন বার এবং ওয়্যারহাউজে অভিযান চালায় মাদক নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর ও পুলিশ। এর মধ্যে জুলাই মাসে চোরাইপথে আনা এবং শুল্কমুক্ত আমদানি সুবিধা ব্যবহার করে আনা মদ বিক্রি ঠেকাতে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড একটি সফটওয়্যার চালুরও উদ্যোগ নেয়। এর বিরোধিতা করে বন্ডেড ওয়্যারহাউজগুলো। ফলে আমদানি প্রায় বন্ধ হয়ে যায় বিদেশি মদের।

নিয়মিত মদ্যপান করেন এমন মানুষের হাতে তখন একমাত্র বিকল্প থাকে কেরু অ্যান্ড কোং উৎপাদিত মদ। কেরু অ্যান্ড কোং জানিয়েছে, কয়েক বছর টানা লোকসান গোনার পর ২০২০-২১ অর্থবছরে মদ বিক্রি করে ১৯৫ কোটি টাকা মুনাফা করেছে প্রতিষ্ঠানটি। এখন উৎপাদন বাড়ানোর উদ্যোগ নিয়েছে তারা। অন্যদিকে শিল্প মন্ত্রণালয়ও বিয়ার তৈরির কারখানা চালুর উদ্যোগ নিয়েছে।

এজন্য একশো দুই কোটি টাকার বেশি অর্থ ব্যয়ে একটি প্রকল্প হাতে নিয়েছে সরকার, যা ২০২২ সালের শেষদিকে চালু হবে বলে কর্মকর্তারা আশা করছেন। ১৯৩৮ সালে প্রতিষ্ঠিত চুয়াডাঙ্গা জেলার দর্শনায় কেরু অ্যান্ড কোম্পানিতে রয়েছে ৯টি ব্র্যান্ড---ইয়েলো লেবেল মল্টেড হুইস্কি, গোল্ড রিবন জিন, ফাইন ব্র্যান্ডি, চেরি ব্র্যান্ডি, ইম্পেরিয়াল হুইস্কি, অরেঞ্জ কুরাকাও, জারিনা ভদকা, রোসা রাম এবং ওল্ড রাম।

দেশে এ মূহুর্তে ১৩টি ওয়্যারহাউজ ও তিনটি বিক্রয়কেন্দ্রের মাধ্যমে বিক্রি করা হচ্ছে কেরু অ্যান্ড কোম্পানির মদ। এছাড়া কক্সবাজার ও কুয়াকাটায় দুটি নতুন বিক্রয়কেন্দ্র স্থাপন করা হচ্ছে। অ্যালকোহলজাতীয় পানীয়ের পাশাপাশি ভিনেগার, হ্যান্ড স্যানিটাইজার, সার, চিনি ও গুড় উৎপাদন করে কেরু অ্যান্ড কোম্পানি। সূত্র: বিবিসি বাংলা।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: কেরু অ্যান্ড কোং
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ